গর্ভবতী মায়ের পাইলস চিকিৎসা by অধ্যাপক ডা: এ কে এম ফজলুল হক
গর্ভবতী
মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ অবস্থায় কিছু বিশেষ
সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিশেষ অবস্থার কথা বিবেচনায়
রেখে চিকিৎসা করা উচিত। অন্যথায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হতে
পারে। এরূপ একটি সমস্যা হচ্ছে গর্ভাবস্থায় মায়ের পাইলসে আক্রান্ত হওয়া।
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের পাইলসে আক্রান্ত হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা এবং তা অনেকের হয়। এ সমস্যা আগে ছিল কিন্তু বর্তমানে এটির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার গর্ভাবস্থার কারণে অনেকের এ সমস্যা নতুন করে শুরু হতে পারে। এ অবস্থায় পাইলস হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- কোষ্ঠকাঠিন্য, হরমোনের পরিবর্তন, জরায়ুর স্ফীতির জন্য পেটের ভেতরের চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, যার কারণে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এ অবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাইলস বিনা অপারেশনে রক্ষণশীল চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব। প্রথমতো আমরা আসছি কোষ্ঠ ব্যবস্থাপনায়। মল যাতে শক্ত না হয় এবং মলত্যাগে কষ্ট না হয়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য বেছে খাবার খেতে হবে, যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। আঁশ বা ভরনবৎ জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন- শাকসবজি, ফলমূল এবং ইসবগুলের ভুসি। গরু ও খাসির গোশত কম খাওয়া ভালো।
এ ছাড়া প্রয়োজনে মল নরম করার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর যথেচ্ছ ব্যবহার ক্ষতিকর। এ ওষুধগুলো সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক মেয়াদে ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় অভ্যাসে পরিণত হবে। সিজ বাথ অর্থাৎ গরম পানির ছ্যাঁক দেয়ায় উপকার পাওয়া যায়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধগামলা গরম পানিতে লবণ দিয়ে নিতম্ব ডুবিয়ে ১০ মিনিট, দিনে ২-৩ বার বসে থাকতে হবে।
এতে যদি রোগীর উন্নতি না হয় তাহলে আমরা ইনজেকশন অথবা আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বিনা অপারেশনে এবং বিনা ব্যথায় এর চিকিৎসা করতে পারি। যেহেতু ইনজেকশনের সফলতা আশাব্যঞ্জক ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই পাইলসের চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে এমন ব্যবস্থা যেমন- রিংলাইগেশন পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।
রিংলাইগেশন পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে একটি ছোট্ট যন্ত্রের সাহায্যে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। এটি ডাক্তারের চেম্বারেই করা সম্ভব। কোনোরূপ অবশ বা অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা-পরবর্তী কিছু দিনের ভেতর পাইলসটি নিজ থেকেই কেটে পড়ে যায়। পদ্ধতিটি প্রয়োগের সময় রোগী কোনোরূপ ব্যথা অনুভব করেন না। আমাদের শরীরে যেহেতু তিনটি পাইলস রয়েছে অতএব কিছু দিন পরপর এটি দুই-তিনবার করা প্রয়োজন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান পাইলস বিশেষজ্ঞ ডা: মারভিন এল করম্যান বলেন, এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার সাফল্য এত চমৎকার যে ৮০ শতাংশ পাইলস রোগী এ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছেন।
পদ্ধতিটি প্রয়োগের পর কিছু বিশেষ ওষুধ ও উপদেশ দেয়া হয়। এ জন্য কোনোরূপ কর্মবিরতি বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসার পর রোগী রিকশা বা গাড়িতে করে অনায়াসে কিছুক্ষণ পরই বাসায় ফিরে যেতে পারেন।
এটি অত্যন্ত লাভজনক; কারণ এটি সময়, ঝুঁকি ও অর্থের সাশ্রয় করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, এটি অপারেশনের একটি যুক্তিসঙ্গত সফল বিকল্প পদ্ধতি। এতে অপারেশনের ঝুঁকিগুলো একেবারেই নেই।
অপারেশন : অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমরা সাধারণত পাইলসের অপারেশন এড়িয়ে থাকি। তবে পাইলসের জটিলতা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, অপারেশন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, তখন অপারেশন করাই শ্রেয়। বিশিষ্ট পাইলস বিশেষজ্ঞ ডা: সালিবী ২৫ জন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পাইলস অপারেশন করে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ওই গর্ভবতী মায়েদের বা তাদের সন্তানদের কোনো অসুবিধা হয়নি। তিনজন বাদে এ ২৫ জনের সবাই গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে ছিলেন। এদের একজনের শুধু অপারেশন-পরবর্তী রক্তপাত হয়েছিল। এ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পাইলস অপারেশনের কোনো অতিরিক্ত ঝুঁকি নেই।
>>>লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব:) কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের পাইলসে আক্রান্ত হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা এবং তা অনেকের হয়। এ সমস্যা আগে ছিল কিন্তু বর্তমানে এটির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার গর্ভাবস্থার কারণে অনেকের এ সমস্যা নতুন করে শুরু হতে পারে। এ অবস্থায় পাইলস হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- কোষ্ঠকাঠিন্য, হরমোনের পরিবর্তন, জরায়ুর স্ফীতির জন্য পেটের ভেতরের চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, যার কারণে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এ অবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাইলস বিনা অপারেশনে রক্ষণশীল চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব। প্রথমতো আমরা আসছি কোষ্ঠ ব্যবস্থাপনায়। মল যাতে শক্ত না হয় এবং মলত্যাগে কষ্ট না হয়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য বেছে খাবার খেতে হবে, যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। আঁশ বা ভরনবৎ জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন- শাকসবজি, ফলমূল এবং ইসবগুলের ভুসি। গরু ও খাসির গোশত কম খাওয়া ভালো।
এ ছাড়া প্রয়োজনে মল নরম করার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর যথেচ্ছ ব্যবহার ক্ষতিকর। এ ওষুধগুলো সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক মেয়াদে ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় অভ্যাসে পরিণত হবে। সিজ বাথ অর্থাৎ গরম পানির ছ্যাঁক দেয়ায় উপকার পাওয়া যায়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধগামলা গরম পানিতে লবণ দিয়ে নিতম্ব ডুবিয়ে ১০ মিনিট, দিনে ২-৩ বার বসে থাকতে হবে।
এতে যদি রোগীর উন্নতি না হয় তাহলে আমরা ইনজেকশন অথবা আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বিনা অপারেশনে এবং বিনা ব্যথায় এর চিকিৎসা করতে পারি। যেহেতু ইনজেকশনের সফলতা আশাব্যঞ্জক ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই পাইলসের চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে এমন ব্যবস্থা যেমন- রিংলাইগেশন পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।
রিংলাইগেশন পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে একটি ছোট্ট যন্ত্রের সাহায্যে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। এটি ডাক্তারের চেম্বারেই করা সম্ভব। কোনোরূপ অবশ বা অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা-পরবর্তী কিছু দিনের ভেতর পাইলসটি নিজ থেকেই কেটে পড়ে যায়। পদ্ধতিটি প্রয়োগের সময় রোগী কোনোরূপ ব্যথা অনুভব করেন না। আমাদের শরীরে যেহেতু তিনটি পাইলস রয়েছে অতএব কিছু দিন পরপর এটি দুই-তিনবার করা প্রয়োজন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান পাইলস বিশেষজ্ঞ ডা: মারভিন এল করম্যান বলেন, এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার সাফল্য এত চমৎকার যে ৮০ শতাংশ পাইলস রোগী এ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছেন।
পদ্ধতিটি প্রয়োগের পর কিছু বিশেষ ওষুধ ও উপদেশ দেয়া হয়। এ জন্য কোনোরূপ কর্মবিরতি বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসার পর রোগী রিকশা বা গাড়িতে করে অনায়াসে কিছুক্ষণ পরই বাসায় ফিরে যেতে পারেন।
এটি অত্যন্ত লাভজনক; কারণ এটি সময়, ঝুঁকি ও অর্থের সাশ্রয় করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, এটি অপারেশনের একটি যুক্তিসঙ্গত সফল বিকল্প পদ্ধতি। এতে অপারেশনের ঝুঁকিগুলো একেবারেই নেই।
অপারেশন : অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমরা সাধারণত পাইলসের অপারেশন এড়িয়ে থাকি। তবে পাইলসের জটিলতা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, অপারেশন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, তখন অপারেশন করাই শ্রেয়। বিশিষ্ট পাইলস বিশেষজ্ঞ ডা: সালিবী ২৫ জন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পাইলস অপারেশন করে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ওই গর্ভবতী মায়েদের বা তাদের সন্তানদের কোনো অসুবিধা হয়নি। তিনজন বাদে এ ২৫ জনের সবাই গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে ছিলেন। এদের একজনের শুধু অপারেশন-পরবর্তী রক্তপাত হয়েছিল। এ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পাইলস অপারেশনের কোনো অতিরিক্ত ঝুঁকি নেই।
>>>লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব:) কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩
No comments