ধারণার চেয়েও দ্বিগুণ বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা: আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের by ব্রজেশ উপাধ্যায়
২১০০ সাল নাগাদ ধারণার চেয়েও দ্বিগুণ বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা। এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। জলবায়ু
পরিবর্তন সম্পর্কিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল 'প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল
একাডেমি অব সায়েন্সেস' নামের জার্নালে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে
বলা হয়েছে, বর্তমান মাত্রায় তাপ নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় দুই মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এতোদিন
পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২১০০ সাল নাগাদ এক
মিটারের চেয়ে কিছুটা কম বাড়তে পারে। তবে নতুন গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। এতে
আগের ধারণার চেয়ে দ্বিগুণেরও কিছু বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। আর সেটা
সত্য হলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়তে পারে লাখ লাখ মানুষ। সবচেয়ে অরক্ষিত দেশগুলোর
তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়বে লন্ডন, নিউইয়র্ক ও
সাংহাইয়ের মতো বড় বড় শহরগুলোও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জলবায়ু উদ্বাস্তু হিসেবে
ইউরোপে পাড়ি দিতে পারে ১০ লাখ শরণার্থী।
নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে কার্বন নির্গমন এখন যেভাবে চলছে তা
কমানো না গেলে ৮০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ সাগরের পানির নিচে
চলে যেতে পারে।
বস্তুত দুনিয়াজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে গ্রিনল্যান্ড ও
অ্যান্টার্কটিকায় বেড়েছে বরফ গলার পরিমাণ। ফলে ধারণার চেয়েও বেশি মাত্রায়
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে ৮০ লাখ বর্গ
কিলোমিটার পরিমাণ ভূমি সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের
একটি বড় অংশও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন,
বাংলাদেশের অনেক এলাকা তখন এমন হয়ে যাবে যে, সেখানে লোকজনের বসবাস খুবই
কঠিন হয়ে পড়বে।
যে ৮০ লাখ বর্গ কিলোমিটার পরিমাণ ভূখণ্ড সাগরের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ এবং মিসরের নীল নদ
উপত্যকা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে কোটি কোটি মানুষকে
বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সাত
শতাংশের কিছুটা কম বাড়তে পারে। এতে দেশের ১৭ শতাংশ ভূখণ্ড সাগরের পানিতে
তলিয়ে যেতে পারে। আর সেটা হলে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বেন লাখ লাখ মানুষ। যে
জায়গাগুলো পানির নিচে চলে যাবে তার অনেকগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ফসল উৎপাদন
অঞ্চল। যেমন মিসরের নীল নদের বদ্বীপ। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিণতি
এড়ানোর জন্য এখনও সময় আছে, যদি আগামী কয়েক দশকে কার্বন নির্গমন বড়
আকারে কমানো যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নির্গমন বিদ্যমান হারে চলতে থাকলে
ভবিষ্যতের পৃথিবী হতে এখনকার চাইতে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতর হবে। এতে
করে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৬২ সেন্টিমিটার থেকে ২৩৮
সেন্টিমিটার পর্যন্ত। এর আগে ২০১৩ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছিল সমুদ্রস্তরের
উচ্চতা ৫২ থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। কেননা, গ্রিনল্যান্ড ও
এ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলার প্রক্রিয়ার অনেক দিকই তাতে অন্তর্ভুক্ত
হয়নি।
গবেষণা দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির
অধ্যাপক জোনাথন বামবার। তার আশঙ্কা, বিশ্বের ১৭ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূমি
সাগরের পানিতে হারিয়ে যেতে পারে, যা আয়তনে বাংলাদেশের ১০ গুণেরও বেশি।
No comments