জমানো কাঁধের চিকিৎসা by ডা. জি.এম. জাহাঙ্গীর হোসেন

রোগী যখন নিজে বা চিকিৎসক রোগীর কাঁধের বিভিন্ন নড়াচড়া করাতে পারে না এবং কাঁধে সবসময় ব্যথা হয় তখন একে ফ্রোজেন শোল্ডার বা স্টিফ শোল্ডার বা জমানো কাঁধ বা এডহেসিব ক্যাপসুলাইটিস বলে।  এডহেসিব ক্যাপসুলাইটিস একটি সেল্ফ লিমিটিং রোগ অর্থাৎ এটা আপনা আপনি ভালো হয়; তবে ৫ মাস থেকে ৯ মাস এমনকি ১৮ মাস সময় লাগে ভালো হতে। এই সময়ে যথোপোযুক্ত চিকিৎসা এবং ব্যায়াম না হলে জোড়া চিরস্থায়ীভাবে স্টিফ বা জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রোগে জয়েন্টের পর্দা বা ক্যাপসুলে প্রদাহ, সংকোচন ও স্ক্যার টিস্যু হয়। জোড়ার হাড়গুলির মধ্যে এবং ক্যাপসুল ও ক্যাপসুলের বাহিরের টিস্যুর মধ্যে জমানো বন্ধন (এডহেসন) তৈরি হয়। এজন্য কাঁধ স্টিফ বা শক্ত হয় বা জমে যায়। আবার জোড়ার ফ্লুইড বা পানি শুকিয়ে যাওয়ার জন্যও জয়েন্ট স্টিফ হয় এবং মুভমেন্ট সীমিত হয়। ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধ রোগী ৩টি অবস্থার মধ্যদিয়ে রোগকাল অতিক্রম করে। প্রথম অবস্থা বা ব্যথা অবস্থায়, কাঁধে ব্যথা হয় এবং নড়াচড়া সীমিত হয়। এই অবস্থা সাধারণত  ৬-১২ সপ্তাহ থাকে।

মধ্য অবস্থা বা স্টিফ অবস্থায়, কাঁধ শক্ত বা স্টিফ হয় বা জমে যায়। ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কম। স্টিফ বা জমানো অবস্থা ৪-৬ মাস থাকে। শেষ অবস্থা বা রিকভারী অবস্থায়, স্টিফনেস আস্তে আস্তে কমে আসে এবং ব্যথা কমে যায়। এক বৎসরের অধিক সময় ধরে এই অবস্থা চলতে থাকে।
এই রোগে ঝুঁকিপূর্ণ কারা?
১. ৪০ থেকে ৬০ বৎসর বয়সের মানুষ এই রোগে ভোগে এবং পুরুষের তুলনায় মহিলারা দুইগুণ বেশি ভোগে।
২. ডায়াবেটিক ও থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীদের জমানো কাঁধ বেশি হয়।
৩. হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, স্ট্রোক, পারকিনসোনিসম ও আর্থ্রাইটিস রোগীদের জমানো কাঁধ হয়।
৪. মাথায় ও কাঁধে অপারেশন হলে বা কাঁধে আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন মুভমেন্ট না করলে জমানো কাঁধ হতে পারে।
৫. বার্সাইটিস, টেনডোনাইটিস এবং  পেশীর সমস্যা (টিয়ার, টেনডোনাইটিস, ডিজেনারেটিভ পরিবর্তন) ও ইমপিঞ্জমেন্ট জমানো কাঁধ করে।
রোগের লক্ষণ সমূহ:
১. সব সময় কাঁধে ব্যথা থাকে- রাতে বেশি হয় এবং শীতকালে ব্যথা বেড়ে যায়।
২. কাঁধ বা বাহুর নড়াচড়া সবদিকে সীমিত হয়।
৩. হাত দিয়ে কোনোকিছু তোলা বা হাত উপরে উঠানো যায় না।
৪. চুল আঁচড়ানো যায় না।
৫. জামা পরিধান বা বোতাম লাগানো কষ্টকর।
৬. স্টিফ কাঁধে কাত হয়ে ঘুমানো যায় না ব্যথার জন্য।
৭. পেন্টের পিছনের পকেটে হাত দেয়া যায় না।
চিকিৎসা:
ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধের প্রধান চিকিৎসা হলো ব্যায়াম। তবে রোগীকে পরীক্ষা,এক্স-রে,আলট্রাসনোগ্রাফি করে এর কারণ বের করতে হবে এবং যথোপোযুক্ত চিকিৎসা পদান করতে হবে। চিকিৎসা শুরু করলে প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে ভালো হতে।
১. ক্যাপসুল ও সফ্ট টিস্যুর স্ট্রেসিং ব্যায়াম।
২. পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
৩. ব্যথার ওষুধ সেবন করা।
৪.  ফিজিক্যাল থেরাপি যেমন।
৫.  গরম/ঠাণ্ডা স্যাঁক।
৬. ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্টেরয়েড  ইনজেকশন।
৭. ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্যালাইন থেরাপি।
উপরোক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধ ভালো না হলে সর্বাধুনিক আর্থ্রােস্কোপিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে জোড়ায় আর্থ্রােস্কোপ প্রবেশ করিয়ে ক্যাপসুল রিলিজ ও স্যাব এ্যাকরোমিয়ন বিসঙ্কোচন করা হয়। আর্থ্রােস্কোপিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা। চেম্বার: বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি., শ্যামলী, মিরপুর রোড, ঢাকা-১২০৭। হটলাইন: ১০৬৩৩,০১৭৪৬৬০০৫৮২


No comments

Powered by Blogger.