খালেদা জিয়ার পুরো বক্তব্য @১৫ জানুয়ারি ২০১৪
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
শীতের এই পড়ন্ত বিকেলে আমি আপনাদের স্বাগত: জানাচ্ছি।
ইংরেজি ২০১৪ সালের সূচনায় গত ৫ জানুয়ারি আমাদের দেশে গণতন্ত্র আরেকবার নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন মৃত। এদেশের মানুষ তাদের রাষ্ট্রপরিচালনার পদ্ধতি হিসেবে গণতন্ত্রকে বেছে নিলেও বারবার এখানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। জনগণ আবার সম্মিলিত লড়াই-সংগ্রামে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু ৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে পড়লো। পুরোপুরি গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়লো। তাই আবার নতুন করে শুরু হয়েছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
এই সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের পরাজয়ের ইতিহাস নেই। তাই অনিবার্যভাবে গণতন্ত্র আবারো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ আবারো ফিরে পাবে তাদের ভোটের অধিকার। কারসাজি, সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত ও অপপ্রচার Ñ এই চার অস্ত্রে গণতন্ত্রকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা হয়েছে। এগুলো শিগগিরই অকার্যকর হয়ে পড়বে। জনগণের ভোটে জনগণের সরকার কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ্।
ক্ষমা, মহত্ব, ঔদার্য, সংযম, যুক্তিবাদিতা ও সমঝোতার জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানিয়েছি। রাজনীতিকে সুন্দর ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষার মাধ্যমে বৈচিত্রের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছি। একদলীয় স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াসের কাছে আমাদের সে আহ্বান সাড়া জাগাতে পারেনি। এখনো শুনতে হচ্ছে বিনাভোটের সরকারের নির্লজ্জ দম্ভোক্তি।
কারসাজির মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার এই প্রহসনকে বাংলাদেশ ও সারা দুনিয়ার গণতন্ত্রকামী মানুষ মেনে নেয়নি। তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও মতামতের প্রতিফলন ঘটে এমন একটি নির্বাচন আয়োজনের কথা বারবার বলছেন। তার জবাবে বলা হচ্ছে, কারো কাছে মাথা নত করবো না। এই উক্তি স্পর্ধার। এই উক্তি হঠকারি স্বৈরশাসকের। ইতিহাস সাক্ষী, এ ধরণের উক্তির ফলাফল ও পরিণাম কখনো শুভ হয় না।
কেবল বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নয়। শাসক দল ও তাদের মুষ্টিমেয় দোসরদের বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের নামে আওয়ামী প্রহসনে শরিক হয়নি। দেশের মানুষও এই প্রহসনকে বর্জন করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোথাও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায়নি। গড়ে সারাদেশে শতকরা ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি।
অথচ আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন মারফত প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণা দেয়ানো হয়েছে। সকলের চোখের সামনে এতোবড় জালিয়াতি করেও তারা এখনো চড়া গলায় কথা বলছে। প্রতারণা করে, সন্ত্রাস চালিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রহসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতাকে যারা প্রলম্বিত করেছে, তারা বেশি দিন গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও জনগণের দ্বারা পুরোপুরি বর্জিত হয়ে এখন তাদের আচরণ ও ভাষা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অশালীন ও বেসামাল হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্র হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা এখন রাজনীতিকেও সম্পূর্ণ কলুষিত করে ফেলছে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
নির্বাচনের নামে গত ৫ জানুয়ারির আওয়ামী প্রহসন হাতে-কলমে প্রমাণ করেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি কতটা যৌক্তিক। প্রমাণ হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হতে পারে না।
প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগ তরুণ নতুন ভোটারসহ সারা দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অযোগ্য, ব্যর্থ ও আজ্ঞাবহ। প্রমাণ হয়েছে, কারসাজির এই নির্বাচনী প্রহসন দেশে-বিদেশে কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বোপরি বাংলাদেশের জনগণ প্রমাণ করেছে যে, তারা এই সরকারকে চান না। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে চান। এজন্য আমি আমার প্রিয় দেশবাসীকে আবারো অকুণ্ঠ ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। তারা অন্যায়, অবিচার, ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র হত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে গত ৫ জানুয়ারি নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এরজন্য বাংলাদেশের মানুষকে আগামী ২০ জানুয়ারি সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাবো আমরা। জনগণকে ধন্যবাদ জানাবার জন্য ওই দিন সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে গণসমাবেশ ও শোভাযাত্রা হবে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ হবে সোহরাওরার্দী উদ্যানে। এর আগে ১৮ জানুয়ারি শনিবার মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালিত হবে সারাদেশে। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে হবে আলোচনা সভা। গণতন্ত্র হত্যা ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী ২৯ জানুয়ারি বুধবার সারাদেশে বিক্ষোভ দিবস পালন করা হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঐদিন কালো পতাকা মিছিল হবে।
আমাদের নেতৃবৃন্দ এবং আমি নিজেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করবো।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমরা সহিংসতা, হানাহানিতে বিশ্বাস করি না। আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করতে চাই।
সেই পথ বন্ধ করলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার দায় ক্ষমতাসীন ছাড়া আর কারো নয়। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। এ আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য। মানুষের ভোটের অধিকার ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। এ আন্দোলন নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং সর্বস্তরে শান্তি ও সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য। বাংলাদেশের এবং সারা দুনিয়ার গণতন্ত্রকামী মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই আল্লাহ্র ওপর ভরসা রেখে আস্থার সঙ্গে বলতে চাই যে, ন্যায়, সত্য ও গণতন্ত্রের এ আন্দোলনের বিজয় অনিবার্য ও সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ইতোমধ্যে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন তার বিজয়ের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের জেদ এক হাস্যকর প্রহসনে পর্যবসিত হয়েছে।
১৫৩ আসনে কোনো নির্বাচনই করতে পারেনি তারা। বাকী আসনগুলোতে ভোটারবর্জিত জঘণ্য কারসাজি ও জালিয়াতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তারা কতটা জনবিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশের জনগণ বহুমুখী শত অপপ্রচারেও বিভ্রান্ত হয়নি। তারা ওই প্রহসন বর্জন করে সরকারকে সম্পূর্ণ অবৈধ করে দিয়েছে। এখনকার সরকার অগণতান্ত্রিক, জনগণের অনুমোদনহীন এবং কারসাজি ও গায়ের জোরের এক অবৈধ সরকার। এটাই আমাদের আন্দোলনের এক বিরাট সাফল্য।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসন-বিরোধী কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনই ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া সফল হয়না। এ আন্দোলনেও জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
নির্বাচনের নামে তামাশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৫ জানুয়ারিতেই অন্তত: ২২ জন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় দু’শো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকারি এজেন্টদের পরিকল্পিত নাশকতায় আরো অনেক নিরীহ নিরপরাধ মানুষ জীবন দিয়েছেন। পাঁচ বছরে প্রায় ২২ হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে কয়েকশ’ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে। চালানো হয়েছে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করার দায়ে বিরোধী দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। অঘোষিতভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা কার্যত: নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সভা-সমাবেশ-মিছিল করতে গেলেও চালানো হচ্ছে গুলি। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে শাসকদলের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাসস্থানে হামলা চালানো হচ্ছে। তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, মালামাল লুট করা হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন ও মহিলাদেরকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এখনো অনেককে গুম করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এভাবেই মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। বিচার বিভাগ, সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যা করেছে। সব প্রতিবাদ অস্ত্রের ভাষায় স্তব্ধ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে পর্যন্ত গৃহবন্দী করতেও তারা কুণ্ঠিত হয়নি। আওয়ামী লীগ এবারো একই অপরাধ ও অপকর্ম করে যাচ্ছে একটু ভিন্ন পন্থায়। এবার তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে বিরোধী দলীয় নেতাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই গৃহবন্দী করেছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এতো কিছু সত্বেও আজ আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আবারো কথা দিচ্ছি, আমরা কখনো আওয়ামী লীগের এসব অপকর্মের পুনরাবৃত্তি বা অনুসরণ করবো না। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, বঞ্চিত ও উৎপীড়িত দেশবাসী অচিরেই তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
সেই আস্থা থেকেই আমি আগামী দিনে আমাদের কর্মসূচির একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা আজ আবারো তুলে ধরতে চাই :
* বাংলাদেশের মুসলমান - হিন্দু - বৌদ্ধ - খৃষ্টান, পাহাড়ের মানুষ সমতলের মানুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে মিলে আমরা গড়ে তুলবো জাতীয় ঐক্য, অখ- জাতীয় সত্ত্বা।
* নির্ভেজাল গণতন্ত্রই হবে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার পদ্ধতি। সকলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা স্থায়ী রূপরেখা নির্ণয় করা হবে।
* সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
* দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতির ধারা সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে। মেধা ও যোগ্যতাই হবে মূল্যায়নের মাপকাঠি
* নির্বাচন পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার এবং সংসদে শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্ব এবং মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* বিরোধী দলকে যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়া হবে।
* ক্ষমা, ঔদার্য, মহানুভবতা ও যুক্তিশীলতা দিয়ে নির্ধারিত হবে বিরোধী দলের প্রতি আচরণ।
* সমঝোতার ভিত্তিতে হানাহানি ও সংঘাতের রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা হবে।
* দেশের সকল মতের কৃতি ও মেধাবী নাগরিকদের রাজনীতি, সরকার পরিচালনা ও জাতীয় ক্ষেত্রে অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি ও এর জন্য উপযুক্ত কাঠামো গড়ে তোলা হবে।
* সকল দেশের বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব আরো জোরদার করা হবে।
* জাতীয় ও আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তা জোরদার করার নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হবে।
* বিচার বিভাগ ও সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হবে।
* জনপ্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহকে দলীয়করণমুক্ত করে দক্ষ ও কার্যকর করা হবে।
* সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে।
* স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে।
* পরিকল্পিত ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
* নারী শিক্ষা, নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নকে আরো প্রসারিত করা হবে।
* ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম জোরদার করা হবে। গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে। একমাত্র নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূসকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হবে।
* সকলের মিলিত চেষ্টায়, তরুণদের কর্মশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দারিদ্র ও বেকারত্ব হ্রাস করে গড়ে তোলা হবে একটি কর্মমুখর সমাজ।
* বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আগামীতে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে বিশদভাবে তুলে ধরবো।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশে আমরা কেবল গণতন্ত্রই হারাইনি। সব দিক দিয়েই অনেক পিছিয়ে পড়েছি। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার আমাদের সময়ের তুলনায় কমে গেছে। মানুষ আরো গরীব হয়েছে। দুর্নীতি, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজির কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায়। ব্যাংকগুলো লুঠপাট হয়েছে। শেয়ারবাজার লুণ্ঠন করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় প্রায় লক্ষ কোটি টাকা। জিনিষপত্রের দাম নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং শিল্পায়ন ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ঘৃণায়, বিদ্বেষে, বিভেদে, হানাহানিতে সারা দেশ আজ অশান্ত ও অস্থির। সাধারণ মানুষ, ধর্মপ্রাণ মানুষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী কেউ আজ শান্তিতে স্বস্তিতে নেই। তবুও কেবলই চলছে একতরফা প্রচার ও অত্যাচার। এই অবস্থা থেকে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শান্তি, স্বস্তি, সহঅবস্থান এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। সকলের আগে প্রয়োজন, দুর্বল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা বিধান।
প্রহসনের নির্বাচন থেকে জনগণ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ফেরাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলা শুরু করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই বারবার সতর্ক করে আসছিলাম। কিন্তু সরকারের ইঙ্গিতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকায় ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় নির্মম ও ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলকে দায়ী করে অপপ্রচার শুরু এবং নিরপরাধ নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। অথচ আক্রান্তদের বক্তব্য ও সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে যে, শাসকদলের লোকজনই এসব হামলায় জড়িত। আমি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত প্রতিটি এলাকায় আমাদের নেতা-কর্মী ও নাগরিকদের এই ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। এই সব জঘণ্য ও সুপরিকল্পিত হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হামলার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং এ ধরণের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও বিস্তার রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি। এখন যদি এসব পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তাহলে আগামীতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং প্রয়োজনবোধে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে সকল অপরাধীকে চিহ্নিতকরণ ও শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সকলে মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস এবং অসাম্প্রদায়িকতার ঐতিহ্য আমাদের গৌরব। একে আমরা ভুলুণ্ঠিত হতে দেব না।
সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে। এই সংগ্রামের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে আমাদের আহ্বান অব্যাহত রয়েছে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
এ ছাড়া দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমি আজ আবারো অবিলম্বে সেই লক্ষ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংলাপ ও সমাঝোতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অবিলম্বে:
* সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,
* গ্রেফতার, নির্যাতন, হামলা, মামলা বন্ধ,
* বিএনপি সদর দফতরসহ বিরোধী দলের সকল অফিস খুলে দিয়ে স্বাভাবিক তৎপরতার সুযোগ দেয়া,
* শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর থেকে অলিখিত বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে সভা-সমাবেশ, মিছিল-শোভাযাত্রা ও প্রচারাভিযানে হামলা, হুমকি, বাধা দেয়া বন্ধ করা, এবং
* সকল বন্ধ গণমাধ্যমে খুলে দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বর্তমান সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন এবং দেশ পরিচালনার ব্যাপারে সরকারের পেছনে জনগণের কোনো অনুমোদন নেই। যে সংবিধানের দোহাই দিয়ে এবং ক্ষমতার স্বার্থে সংবিধানের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার করে এই নির্বাচনী প্রহসন আওয়ামী লীগ করেছে, তারা নিজেরাই প্রতিপদক্ষেপে সেই সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে।
কাজেই এ সরকার বৈধ সরকার নয়। একটি অবৈধ সরকারের কোনো দায়িত্ববোধ থাকে না জনগণের প্রতি। এমন একটি সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া খুবই বিপজ্জনক।
তাই অনতিবিলম্বে এই বিপজ্জনক সরকারকে সরিয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি জনগণের সরকার, একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পুনরায় সমঝোতা ও সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আমার বক্তব্য আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ্ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
No comments