ব্যাংকক অচলের সূচনা
ব্যাংকক অচলের শুভ সূচনা করে সরাকারবিরোধীরা। রাজধানী ব্যাংকক অচল করে দেয়ার আন্দোলনে রাস্তায় নামে থাইল্যান্ডের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। ২ ফেব্র“য়ারির আগাম নির্বাচনের আগে সরকারকে উৎখাত করতে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টানা অবরোধের সূচনা হিসেবে এ অভিযাত্রাকে সফল বলা যায়। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করা ছাড়াও রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়াসহ প্রধান প্রধান মোড়গুলো দখলে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। সরকারকে উৎখাত করে সে জায়গায় একটি অনির্বাচিত ‘গণপরিষদ’ গঠনই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। সরকার আইন-শৃংখলা রক্ষায় ১৮ হাজার পুলিশ মোতায়েন করলেও বিক্ষোভকারীরা বিনা বাধাতেই কর্মসূচি পালন করছে। কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের ওপর কোনো বাধা আসেনি। রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। অনেকে নাচ- গানও করছে। রাজধানী অচল করার কর্মসূচি সফল করতে রাস্তায় নেমেছে হাজারও মানুষ। ‘সরকারকে যেতে হবে, হতে হবে সংস্কার। আমরা একই দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বার বার দেখতে চাই না’, বলেন এক বিক্ষোভকারী। সরকারবিরোধীরা রাস্তার সাতটি প্রধান সংযোগস্থল বন্ধ করে দিয়েছে। রাজধানী অচলের কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো ঘেরাও করা ছাড়াও সেগুলোর বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ারও পরিকল্পনা আছে তাদের। সেই সঙ্গে প্রায় ১৫০টি স্কুলও বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা। বিক্ষোভকারীদের নেতা সুথেপ থাগসুবান এ আন্দোলনকে ‘জনগণের বিপ্লব’ আখ্যা দিয়েছেন। বিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা বিক্ষোভকারীদের নেতা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে বুধবার বৈঠকে ডেকেছেন। নির্বাচন কমিশনের ভোট পেছানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য এ বৈঠক ডাকেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এক ঊর্ধ্বতন সহযোগী এ কথা জানিয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা নির্বাচনী ব্যবস্থা বদলানো এবং অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমের জন্য বর্তমান সরকারের বদলে একটি গণপরিষদ গঠনের দাবিতে এখনও অটল। ‘এ অচলাবস্থার অবসান সহজে হবে না। ব্যাংকক অচলের আন্দোলনে চোখে পড়ার মতো লোক সমাগম হয়েছে।
আর সে কারণে অচলাবস্থা চলতেই থাকবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংককের এক রাজনীতি বিশ্লেষক। ইংলাক তার ভাই ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কথায় দেশ পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। এ কারণে ইংলাকের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ এবং তার ডাকা ২ ফেব্র“য়ারি নির্বাচন প্রতিহত করতে বিক্ষোভ চলছে। রোববার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিক্ষোভকারীদের নেতা সুথেপ থাগসুবান সরকারের সঙ্গে কোনো আপসের সম্ভাবনা নাকচ করলেও গৃহযুদ্ধের হুমকি দেখা দিলে আন্দোলন ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান। রোববার সরকারবিরোধী নেতা সুথেপ থাগসুবান বলেছেন, পরাজিত হই কিংবা জয়লাভ করি আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা কিংবা সমঝোতা করব না। প্রধানমন্ত্রী ইংলাককে পদত্যাগ করতেই হবে। এদিকে ইংলাক সিনাওয়াত্রার সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন ব্যাংককের প্রতিবেশী প্রদেশ উদন থানিতে। সেখানে হাজার হাজার রেড শার্ট আর্মি সমবেত হয়েছেন। এ অবস্থায় দেশটিতে গৃহযুদ্ধের আশংকা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, টেলিকম খাতে দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত থাকসিন বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছে। তবে তার দল এখন পর্যন্ত দেশটিতে অনুষ্ঠিত মোট চারটি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আগামী ২ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনের অংশ নেবে দলটি। তবে থাইল্যান্ডের প্রধান বিরোধী দল ওই নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নভেম্বর থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত প্রায় আটজন নিহত হয়েছেন। বিবিসি, রয়টার্স।
No comments