কক্সবাজারে তানিয়াকে পুরুষের হাতে তুলে দেন রোকেয়া by ওয়েছ খছরু
সিলেটের
মা ও পুত্র খুনের ঘটনায় জড়িত তানিয়াকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছিলেন নিহত
রোকেয়া বেগম। সেখানে থ্রি-স্টার হোটেলে রোকেয়া রূপসী তানিয়াকে ঠেলে
দিয়েছিলেন পরপুরুষের হাতে। এতেও রাজি ছিলেন না তানিয়া। কিন্তু রোকেয়ার
নির্দেশের কারণে তিনি কক্সবাজারে গিয়েও ওই পুরুষদের মনোরঞ্জনে জড়িয়ে পড়েন।
গ্রেপ্তারের পর তানিয়া এমনটি জানিয়েছে সিলেটের পুলিশ ব্যুরো
ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের কাছে। পিবিআই সূত্র জানায়, সুন্দরী হওয়ার কারণে
তানিয়ার চাহিদা ছিল সবার কাছে। সিলেটের কয়েক যুবক রোকেয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে
যোগাযোগ করেন। এরপর রোকেয়া তানিয়াকে নিয়ে যান কক্সবাজারে। আর ওখানে একাধিক
পুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে হয়েছে তানিয়াকে। ১লা এপ্রিল নগরীর মিরাবাজারের
খারপাড়ার ১৫-জে নম্বর বাসার নিচ তলা থেকে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল
ইসলাম রূপমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের দিনই আত্মীয় স্বজনরা নিহত
রোকেয়ার ফেসবুক আইডি ঘেটে ছবি সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এ সময় তারা দেখতে পান
সম্প্রতি সময়ে কক্সবাজারে রোকেয়ার বেশ কয়েকটি ছবি রয়েছে। এসব ছবি বেশির
ভাগই ছিল সাগরের তীরে তোলা। নানা ভঙ্গিমায় রোকেয়া এসব ছবি মোবাইল ফোনে
তোলেন। কয়েকটি ছবি ছিল রূপমের সঙ্গেও। এর মধ্যে মা রোকেয়া ও ছেলে রূপমকে
নিয়ে কোমর সমান সাগরের পানিতে নেমে ছবি তোলেন। খুনের ঘটনার পর ওই ছবিটি
কয়েকটি গণমাধ্যম প্রকাশ করে। পুলিশ জানায়, রোকেয়া ও তার ছেলে রূপম খুন
হয়েছে মার্চ মাসের ৩০ তারিখ। আর ওই মাসের প্রথম দিকে তারা কক্সবাজারে
গিয়েছিলেন। সঙ্গে গিয়েছিলেন তানিয়াও। কারা রোকেয়াকে কক্সবাজার নিয়ে
গিয়েছিল- সেটি তানিয়ার মুখ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে, সিলেটের কয়েকজন
যুবক ছিল। রোকেয়া ওই সময় বলেছিল, কক্সবাজার বেড়ানের খরচ তুলতে হবে। বেড়ানোর
খরচ তোলার জন্য তানিয়াকে ব্যবহার করেছে। পুলিশ জানায়, রোকেয়া কক্সবাজার
থেকে ইয়াবা কিনে নিয়ে আসে। সেখানের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে তারা যোগাযোগ
রয়েছে। রোকেয়া শুধু বেড়ানোর জন্যই নয়, ইয়াবার চালান নিয়ে আসার জন্য
কক্সবাজার গিয়েছিল এবং তারা কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালানও নিয়ে এসেছে। এ
বিষয়টি নিয়ে তারা বিশদ তদন্ত করছে। ওদিকে, তানিয়া রোকেয়াকে ‘বড় আপা’ বলে
ডাকতো। রোকেয়াও তানিয়াকে ছোট বোনের মতো মনে করতো। কিন্তু নিহত রোকেয়ার ছেলে
রূপমের বাড়াবাড়ি তার কাছে ছিল অসহনীয়। ঘরের মধ্যে সবার সামনে তানিয়াকে
ঝাপটে ধরতো রূপম। সেটি রোকেয়া দেখলেও কোনো নিষেধ দেননি। বরং তানিয়ার সঙ্গে
রূপমের মেলামেশা তিনি সহজভাবে নিয়েছেন। কিন্তু তানিয়ার কাছে বিষয়টি ছিল
বিরক্তিকর। এদিকে, সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশের রিমান্ডে থাকা নিহত
রোকেয়ার প্রেমিক নাজমুলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের রিমান্ডে থাকা
নাজমুল খুনের ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের কাছে মুখ খোলেনি। তবে, রোকেয়ার সঙ্গে
তার প্রেম এবং রাতের পর রাত কাটানোর কথা সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
পুলিশের ধারণা, এই খুনের ঘটনার সঙ্গে নাজমুলসহ একটি চক্র সহযোগী হিসেবে
রয়েছে। খুনের নির্দেশনা দিয়েছে মোবাইল থেকে মোবাইলে একটি মেসেজ পৌঁছে।
তানিয়ার মোবাইলেও এ নির্দেশনা ছিল। ফলে নির্দেশনা কার, সেটি এখনো পরিষ্কার
হয়নি। খুনের ঘটনার দিনও রোকেয়ার ঘরে দীর্ঘসময় একান্তে কাটিয়েছে নাজমুল।
পুলিশ জানায়, নাজমুল নিহত রোকেয়াকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করেছে। এর বাইরেও
রোকেয়ার আরো কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। নাজমুল বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর তারা
রোকেয়ার কাছে আসতো। ওদের সঙ্গে নাজমুলের অজান্তেও রোকেয়ার ইয়াবা ব্যবসা
ছিল। আবার রোকেয়াও তরুণী সরবরাহ করে তাদের চাহিদা পূরণ করতেন। তদন্তে
সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিহত রোকেয়ার বাসা ছিল অপরাধ আস্তানা।
মধ্যবয়সী নারী রোকেয়া। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের পুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ
রয়েছে। এ কারণে তার বাসা গড়ে তোলা হয়েছিল নিরাপদ সেক্স স্পটে। বাসা ছাড়াও
হাই-প্রোফাইল কয়েকজন পুরুষদের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ওই সব
ব্যক্তিদের সঙ্গে রোকেয়ার মোবাইল ফোনে কথা হতো। কললিস্ট ঘেটে এসব তথ্য জানা
যায়। ইয়াবা নেটওয়ার্কেও রোকেয়া ছিল পরিচিত ব্যবসায়ী। গেল এক বছর ধরে
অনেকটা বেপরোয়া ছিলেন রোকেয়া। তার নেটওয়ার্কের অনেককেই পাত্তা দিতো না।
নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় বসবাসকারী দিলারার সঙ্গেও ছিল তার ভালো সর্ম্পক। এক
সময় একসঙ্গে তারা দেহ ব্যবসার নেতৃত্ব দিতো। কিন্তু রোকেয়া ও দিলারার মধ্যে
টাকা আয়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। এ কারণে দিলারার আস্তানার সুন্দরী নারী
তানিয়াকে এক বছর আগে নিজের করে নিয়েছিলেন রোকেয়া। পুলিশ সন্দেহের বাইরে
রাখছে না দিলারাকে। ঘটনার পর থেকে অন্তরালে চলে গেছে দিলারা। সাম্প্রতিক
সময়েও দিলারার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছিল। যাদের সঙ্গে রোকেয়ার সর্ম্পক ছিল,
দিলারার সর্ম্পকও ছিল তাদের সঙ্গে। ফলে দিলারার সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুলিশ
তদন্তে রেখেছে। এখন অনেকটা নীরব দিলারার আস্তানাও। সবাই আড়ালে চলে গেছেন।
তবে, দিলারা নিজেকে রক্ষা করতে তার কাছে থাকা হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের দিয়ে
তদবির চালাচ্ছেন। তার এক ইয়াবা ব্যবসায়ী পার্টনার পুলিশ বিভাগে কর্মরত
রয়েছেন। তিনিও দিলারাকে ঝামেলা থেকে রক্ষা করতে তদবির চালাচ্ছেন।
No comments