সেই ‘হালখাতা’ আর নেই
পহেলা
বৈশাখ আজ। বর্ষবরণের নানা আয়োজন দেশজুড়ে। রমনার বটমূল থেকে চট্টগ্রামের
ডিসিহিল-সিআরবি, জেলা-উপজেলায় সবখানে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে হালখাতা উৎসব। পুরনো হিসেব চুকিয়ে নতুন হিসেব খোলা মানেই হালখাতা। পুরনো পাওনা আদায় খুশির ব্যাপারই তো বটে। এ নিয়ে চলে মিষ্টিমুখও।
চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র খ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে হাজার বছর ধরে এ ঐতিহ্য চলে আসলেও বর্তমানে সে আনন্দ আর নেই। ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে হালখাতার জৌলুস।
এমন কথাই জানিয়েছেন দুই বাণিজ্য কেন্দ্রের ব্যবসায়ীদের অনেকেই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহম্মদ বলেন, নতুন বছরের শুরুতে পুরনো পাওনা আদায় হলেও এখন আর হালখাতা উৎসব হয় না। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রে আদায় হচ্ছে পুরনো লেনদেন। তবে এ ঐতিহ্য এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কিছু ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ১৫-১৬ বছর আগেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা হালখাতা করতেন বাংলা নববর্ষে। পুরনো রীতিতে নতুন বছরে নতুন খাতায় হিসাব খোলেন তারা। যথাসম্ভব আদায় করে নেন পাওনা টাকা। দোকান সাজাতেন বর্ণিল সাজে। পাওনাদার এলেও হাসিমুখে তুলে দিতেন মিষ্টি। এদিন তারা বেচাকেনা ভুলে মেতে উঠতেন নানা আনন্দ-উৎসবে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জে তিন হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় প্রায় ১৫০০ থেকে ১৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ লেনদেনই হয় বাকিতে। কিন্তু তারপরও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। সীমিত পরিসরে কিছু প্রতিষ্ঠান হালখাতা করে থাকে।
সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, ‘গুটিকয়েক হিন্দু ব্যবসায়ীরা লাল কাপড়ে বাঁধানো খাতায় এখনো হালখাতার রেওয়াজ ধরে রেখেছেন। তবে কয়েক বছর আগেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে যেভাবে জাঁকজমকভাবে হালখাতার অনুষ্ঠান হতো তা এখন আর নেই।
এ প্রসঙ্গে কাঁচামাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, এক সময় খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে হালখাতা খোলার উৎসব জমজমাট করে পালন করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দায় এখন এ ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী রতন রায় বলেন, নতুন বছরটা ভালোভাবে যাবে এমন আশা নিয়ে ব্যবসায়ীরা হালখাতা খোলেন। তবে একসময় বৈশাখের প্রথম দিনটি খাতুনগঞ্জে উৎসবের সঙ্গে পালন করতেন ব্যবসায়ীরা। তবে একের পর এক চেক প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ ও অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে এখন আর হালখাতা সেভাবে উদযাপন করা হয় না।
অন্যদিকে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন ব্যবসায়িক কাজের বেশির ভাগই সম্পন্ন হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। টাকা-পয়সার লেনদেনও হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। এছাড়া দেনা-পাওনার হিসাবও হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে। দেশে অর্থবছরের হিসাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যবসায়ীরাও এখন হিসাব বর্ষ শেষ করেন জুন অথবা ডিসেম্বর। তবে খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ীরা এখনো বংশপরমপরায় চেষ্টা করছেন হালখাতা উৎসব ধরে রাখতে।
নগরীর চাক্তায়ের শত বছরের পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাবা লোকনাথ ট্রেডার্সের মালিক হরিপদ দাশ (৭৬) জানান, হিসাব হালনাগাদ করা থেকেই হালখাতা শব্দের উদ্ভব। ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের শাসনামল থেকে নতুন বছরের শুরুতে হালখাতার প্রচলন শুরু হয়। আর আমাদের দেশে বাংলা সালের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানপাটের হিসাব হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াই ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত হালখাতা হিসেবে।
বছরের প্রথম দিনে দেশের গ্রামাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকারি বাজার ও আড়তে আগের বছরের হিসাব-নিকাশের ফয়সালা করেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নববর্ষের দিন থেকে নতুন খাতায় লেনদেনের তথ্য টুকে রাখতে শুরু করেন। তবে ঐতিহ্যবাহী এ প্রথার জৌলুস এখন আর আগের মতো নেই।
ঢাকাসহ দেশের বড় নগরী ও শহরগুলোর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে আগের মতো হালখাতা নিয়ে মাতামাতি হয় না। দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাতে আলাদা আয়োজনের দৃশ্য চোখে পড়ে না। কিন্তু সেই পুরনো জৌলুস এখন আর নেই। দিনে দিনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ প্রথার প্রচলন কমে যাচ্ছে।
ক্রেতাদেরও পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে লেনদেনের হিসাব চুকিয়ে দিতে দেখা যায় না। তবুও পুরান ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার এবং আড়তের কিছু দোকানে সীমিত পরিসরে হলেও অনেকে ধরে রেখেছেন এ রীতি।
তিনি বলেন, দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে নববর্ষে হিসাবের নতুন খাতা এখনো খোলা হয় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেনাদার ও পাওনাদারদের মুখরোচক মিষ্টি ও ঠাণ্ডাপানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করে পাওনা শোধ করার কথা বিনীতভাবে মনে করিয়ে দেয়া হয় এ দিনে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে হালখাতা উৎসব। পুরনো হিসেব চুকিয়ে নতুন হিসেব খোলা মানেই হালখাতা। পুরনো পাওনা আদায় খুশির ব্যাপারই তো বটে। এ নিয়ে চলে মিষ্টিমুখও।
চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র খ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে হাজার বছর ধরে এ ঐতিহ্য চলে আসলেও বর্তমানে সে আনন্দ আর নেই। ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে হালখাতার জৌলুস।
এমন কথাই জানিয়েছেন দুই বাণিজ্য কেন্দ্রের ব্যবসায়ীদের অনেকেই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহম্মদ বলেন, নতুন বছরের শুরুতে পুরনো পাওনা আদায় হলেও এখন আর হালখাতা উৎসব হয় না। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রে আদায় হচ্ছে পুরনো লেনদেন। তবে এ ঐতিহ্য এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কিছু ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ১৫-১৬ বছর আগেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা হালখাতা করতেন বাংলা নববর্ষে। পুরনো রীতিতে নতুন বছরে নতুন খাতায় হিসাব খোলেন তারা। যথাসম্ভব আদায় করে নেন পাওনা টাকা। দোকান সাজাতেন বর্ণিল সাজে। পাওনাদার এলেও হাসিমুখে তুলে দিতেন মিষ্টি। এদিন তারা বেচাকেনা ভুলে মেতে উঠতেন নানা আনন্দ-উৎসবে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জে তিন হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় প্রায় ১৫০০ থেকে ১৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ লেনদেনই হয় বাকিতে। কিন্তু তারপরও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। সীমিত পরিসরে কিছু প্রতিষ্ঠান হালখাতা করে থাকে।
সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, ‘গুটিকয়েক হিন্দু ব্যবসায়ীরা লাল কাপড়ে বাঁধানো খাতায় এখনো হালখাতার রেওয়াজ ধরে রেখেছেন। তবে কয়েক বছর আগেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে যেভাবে জাঁকজমকভাবে হালখাতার অনুষ্ঠান হতো তা এখন আর নেই।
এ প্রসঙ্গে কাঁচামাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, এক সময় খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে হালখাতা খোলার উৎসব জমজমাট করে পালন করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দায় এখন এ ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী রতন রায় বলেন, নতুন বছরটা ভালোভাবে যাবে এমন আশা নিয়ে ব্যবসায়ীরা হালখাতা খোলেন। তবে একসময় বৈশাখের প্রথম দিনটি খাতুনগঞ্জে উৎসবের সঙ্গে পালন করতেন ব্যবসায়ীরা। তবে একের পর এক চেক প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ ও অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে এখন আর হালখাতা সেভাবে উদযাপন করা হয় না।
অন্যদিকে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন ব্যবসায়িক কাজের বেশির ভাগই সম্পন্ন হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। টাকা-পয়সার লেনদেনও হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। এছাড়া দেনা-পাওনার হিসাবও হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে। দেশে অর্থবছরের হিসাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যবসায়ীরাও এখন হিসাব বর্ষ শেষ করেন জুন অথবা ডিসেম্বর। তবে খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ীরা এখনো বংশপরমপরায় চেষ্টা করছেন হালখাতা উৎসব ধরে রাখতে।
নগরীর চাক্তায়ের শত বছরের পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাবা লোকনাথ ট্রেডার্সের মালিক হরিপদ দাশ (৭৬) জানান, হিসাব হালনাগাদ করা থেকেই হালখাতা শব্দের উদ্ভব। ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের শাসনামল থেকে নতুন বছরের শুরুতে হালখাতার প্রচলন শুরু হয়। আর আমাদের দেশে বাংলা সালের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানপাটের হিসাব হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াই ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত হালখাতা হিসেবে।
বছরের প্রথম দিনে দেশের গ্রামাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকারি বাজার ও আড়তে আগের বছরের হিসাব-নিকাশের ফয়সালা করেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নববর্ষের দিন থেকে নতুন খাতায় লেনদেনের তথ্য টুকে রাখতে শুরু করেন। তবে ঐতিহ্যবাহী এ প্রথার জৌলুস এখন আর আগের মতো নেই।
ঢাকাসহ দেশের বড় নগরী ও শহরগুলোর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে আগের মতো হালখাতা নিয়ে মাতামাতি হয় না। দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাতে আলাদা আয়োজনের দৃশ্য চোখে পড়ে না। কিন্তু সেই পুরনো জৌলুস এখন আর নেই। দিনে দিনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ প্রথার প্রচলন কমে যাচ্ছে।
ক্রেতাদেরও পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে লেনদেনের হিসাব চুকিয়ে দিতে দেখা যায় না। তবুও পুরান ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার এবং আড়তের কিছু দোকানে সীমিত পরিসরে হলেও অনেকে ধরে রেখেছেন এ রীতি।
তিনি বলেন, দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে নববর্ষে হিসাবের নতুন খাতা এখনো খোলা হয় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেনাদার ও পাওনাদারদের মুখরোচক মিষ্টি ও ঠাণ্ডাপানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করে পাওনা শোধ করার কথা বিনীতভাবে মনে করিয়ে দেয়া হয় এ দিনে।
No comments