খুন-অপহরণের শেষ কোথায়?

খুন-অপহরণের শেষ কোথায়?
নারায়ণগঞ্জে সাতজনের গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার পর সারা দেশে এই নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এই সাতজনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে, তা পড়ে যেকোনো মানুষই শিউরে উঠবেন। যেকোনো অপমৃত্যুই বেদনাদায়ক, যেকোনো হত্যাই আসলে ওই পরিবার এবং অন্যদের জন্য যেমন বেদনার, তেমনি আতঙ্কেরও। যখন আমরা এ ধরনের রোমহর্ষক বর্ণনা পড়ি, তখন মনে হয় যে অমানবিকতার এক চূড়ান্ত পর্যায়ে না পেঁৗছালে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে কাউকে এভাবে হত্যা করা সম্ভব নয়। কেবল হত্যাকাণ্ড বলে এসব ঘটনাকে বর্ণনা করলে সামান্যই বলা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র৵াবের সম্পৃক্ততার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জে র৵াবে কর্মরত তিনজন সেনা অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগের নেতার বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে, পলাতক এই ব্যক্তিকে সন্ধানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে। গত কয়েক দিনে এই নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শোনা গেছে বিভিন্নভাবে, অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিভিন্ন ব্যক্তির দিকে। গোড়াতে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরা এ জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেও সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রমাণ সাপেক্ষে যোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে। ঘটনাটি তদন্তাধীন, তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’ লক্ষণীয় যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেছেন র৵াবের সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে; আশা করি তা অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
প্রতিমন্ত্রীর এই কথা আশাব্যঞ্জক, যদিও নিকট এবং দূর অতীতের ঘটনাপ্রবাহ এবং অভিজ্ঞতা খুব বেশি আশাবাদী করতে সাহায্য করে না। সব সরকারের আমলেই আমরা এ ধরনের ঘটনায় রাজনৈতিক বিবেচনার প্রাধান্য এবং দায়িত্বহীন মন্তব্য শুনতে অভ্যস্ত৷ কিন্তু গত কয়েক দিনের এই আলোচনায় একটি প্রবণতা লক্ষ করা গেছে, যা আমার কাছে খানিকটা অস্বস্তিকর এবং নেতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। অনেকের কথাবার্তায় এমন ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যে এটি শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল; কারও কারও ভাষ্য থেকে মনে হয় যেন এটি নারায়ণগঞ্জে দুই নেতার দ্বন্দ্ব, দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব। আওয়ামী লীগের একাংশ যেমন এক ব্যক্তির ওপর দোষ চাপানোর জন্য সচেষ্ট, তেমনি ওপর পক্ষ এটি প্রমাণ করতে বেপরোয়া যে ওই ব্যক্তি তো দোষী নয়ই, বরং অভিযোগকারীদেরই কাঠগড়ায় দঁাড় করিয়ে দেওয়া দরকার। এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থেকে এই ধারণাই তৈরি হচ্ছে যে এটি একটি স্থানীয় ব্যাপার এবং এ রকম গুম ও গুপ্তহত্যা যেন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। গত কয়েক বছরের প্রাপ্ত তথ্যাদি এই মতকে সমর্থন করে না। সারা দেশে গত কয়েক বছরে এ ধরনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, এমনকি যখন দেশে এই নিয়ে তোলপাড় চলছে তখনো যে আরও মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাচ্ছে তার ব্যাখ্যা নিশ্চয় পারিবারিক দ্বন্দ্ব বলে বলা যাবে না। ‘নারায়ণগঞ্জের সাত খুন’ বলে ভবিষ্যতে যে ঘটনা পরিচিত হবে বলে মনে হয়, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যদি আগামীকাল আটক করে যথাযথভাবে বিচার করে শাস্তি দেওয়া হয়, তাতে একটা উদাহরণ সৃষ্টি হবে সেটা ঠিক, কিন্তু এ ধরনের সব ঘটনার পেছনের কারণ কি জানা যাবে? বিচার হলে নারায়ণগঞ্জে যে সাতজন মানুষ: নজরুল ইসলাম, তাজুল, লিটন, স্বপন, জাহাঙ্গীর, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তঁার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত ও নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তঁাদের পরিবার হত্যাকারীদের দেখতে পাবে এবং অন্তত এতটুকু সান্ত্বনা পাবে যে তাদের স্বজনদের হত্যাকারীরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু সেটাই

No comments

Powered by Blogger.