মোদির নাম দাঙ্গাবাবু : মমতা

এর আগে বিজেপি নেতা মোদিকে গাধা বলে সম্বোধন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবার তাকে দাঙ্গাবাবু বলে কটাক্ষ করলেন। বৃহস্পতিবার টিটাগড়ের ছাই ময়দানের জনসভায় গুজরাট দাঙ্গায় মোদির বিতর্কিত ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি তাকে এভাবেই সম্বোধন করেন বলে এনডিটিভি জানিয়েছে। ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ওই দাঙ্গায় নারী শিশু কেউ রেহাই পায়নি। তারা ফের ক্ষমতায় এলে দেশকে বিক্রি করে দেবে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হবে। মোদির নাম উল্লেখ না করে তৃণমূল নেত্রী তার ভাষণে বলেন, পশ্চিমবাংলায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করছে এটি দাঙ্গাবাবুর সহ্য হচ্ছে না। এতে তিনি হিংসায় জ্বলেপুড়ে মরছেন এবং এসব কথা বলছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশীদের বাক্স পেটরাসহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে মোদি যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। মোদি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে বিভেদ ধরানোর চেষ্টা করছে বলেও মমতা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, মুসলমান এবং নারীরা মোদিকে ভয় পায়।
তার ভাষায়, ত্যাগের নাম হল হিন্দু, মুসলমান মানে ঈমান, প্রেমের নাম হল খ্রিস্টান। আর এসব মিলেই আমাদের ভারতবর্ষ। তিনি বলেন, যারা বাংলার ধর্মীয় সম্প্রতি নস্যাৎ করতে চায় ভোটের মাধ্যমে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। মমতা এর আগে মোদিকে গাধা এবং লেজযুক্ত হনুমানের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বুধবার এক র‌্যালিতে মোদিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তার একটা লম্বা লেজ আছে, আর সেই লেজে আগুন লাগায় তিনি উড়ে উড়ে লঙ্কার সর্বত্র আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই লাটসাহেবি শুরু করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন, কে এই লাটসাহেব, আপনারা কি এই লাটসাহেবকে চেনেন? প্রধানমন্ত্রিত্ব ইস্যুতে মমতা ব্যানার্জি বলেন, সন্তানের জন্মই হল না। আর তার আগেই বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেল। মোদিকে সামনে রেখে পিএম ফান্ডের নামে জালিয়াতি করে বিজেপি টাকা তুলছে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা।
মোদি মমতাকে ভোট নয়
মোদি সাম্প্রদায়িক আর তার সঙ্গে ভোটের পরে আঁতাত হতে পারে মমতা ব্যানার্জির। তাই ভোট মোদিকে না, মমতা ব্যানার্জিকেও না। ভোট ধর্মনিরপেক্ষ কোনো শক্তিকে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় এক সভায় এমন ঘোষণা দিলেন কলকাতার মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ। শওকত আলি ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভা থেকে ঘোষণা আসে, দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলে নষ্ট হবে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ। খর্ব হতে পারে সংখ্যালঘুদের অধিকার। তৈরি হতে পারে দাঙ্গার পরিবেশ। তাই কোনোভাবেই নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দেয়া যাবে না। অপরদিকে সভায় বক্তারা হতাশা ব্যক্ত করেন মমতা ব্যানার্জির সরকারের ওপর। তারা জানান ভোট পরবর্তী সময়ে বিজেপির সঙ্গে জোট করার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তাই ভোট তৃণমূল কংগ্রেসকেও দেয়া যাবে না।
তবে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত ওই সভা থেকে কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়ার কথা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। কলকাতায় রাহুল গান্ধীর সভা করে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট না দেয়ার ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই টাকা তুলছেন, হলে তো দেশ বেচে দেবেন এ সময় একটি কাগজ বের করেন। কাগজটিতে লেখা রয়েছে মোদি ফর পি এম ফান্ড। এই কাগজটি সব ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলছে, যা আইনবিরুদ্ধ, অসাংবিধানিক এবং ৪২০ ধারার (প্রতারণা) শামিল। এভাবে কোনো ফান্ড তৈরি করা বা টাকা তোলা যায় না। রিলিফ ফান্ড বা সিএম রিলিফ ফান্ড হয়। কিন্তু কারও নামে এভাবে ভোটের সময় টাকা কীভাবে তোলা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, এই ধরনের ফান্ড তৈরি করা বা টাকা তোলার জন্য তদন্ত হওয়া উচিত। এভাবে বেআইনিভাবে কোটি কোটি টাকা ডোনেশন বা অনুদান তুলে কোথায় রাখছে এবং কোথায় খরচ করছে বিজেপি, তারও জবাব চেয়েছেন মমতা।

No comments

Powered by Blogger.