প্রতিবাদের অপর নাম শাহেদ কায়েস by সাজেদা হক
ভালো আছেন কবি শাহেদ কায়েস। হাতের কবজিতে ও
ঘাড়ে দায়ের কোপ আর কিছু কিল-ঘুষির ব্যথা নিয়ে সোনারগাঁও সদর হাসপাতালে
ভর্তি আছেন তিনি। চিকিৎসকরা বলছেন, আঘাত মারাত্মক, তবে আশঙ্কামুক্ত কবি।
দুর্বৃত্তদের
দায়ের কোপে গলা ও হাতের রগ কাটা অবস্থায় সোনারগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি
আছেন কবি শাহেদ কায়েস। এ ঘটনায় বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি মামলাও দায়ের
করেছেন তিনি। ধরা হয়েছে একজন আসামিও।
শাহেদের উপর এমন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। আহত কবিকে দেখতে শনিবার রাজীব নূরের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম লোক সম্পাদক অনিকেত শাহীন, শিল্পী অরূপ রাহী, শাহীনুর রহমান, সাংবাদিক হুমায়ন কবীর, ফিরোজ, জুয়েল, দেবজ্যোতি, সাদিয়া, শিশির, নাসরিন আপাসহ অন্তত ২৫ জন শুভাকাঙ্খী-সমব্যাথী ও সুহৃদ।
শাহেদ কায়েসের মুখেই শুনছিলাম তাকে অপহরণের ঘটনা। তিনি বলছিলেন, বালু ব্যবসায়ীদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা যখন তাদের ধরে নিয়ে যায়, তখন তিনি বার বার মিনতি করে সঙ্গে থাকা বিদেশি ক্রিস্টিকে ছেড়ে দিতে বলেন। সন্ত্রাসীরা তার সেই আকুতি শুনেছে।
ক্রিস্টি ও দোভাষী দীপুকে ছেড়ে দিয়ে কেবল শাহেদ কায়েসকে নিয়েই মায়াদ্বীপ ছাড়িয়ে আরো গভীরের দিকে ছুটে চলে সন্ত্রাসীদের স্পীড বোট।
এদিকে, ঘাটে ফিরেই ক্রিস্টি ও দীপু ফোন দেয় নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের। তাই রক্ষা। সাংবাদিকরা তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাদের ফোর্স নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়ে মেঘনার বুকে। শুধু সোনারগাঁও থানা পুলিশই নয়, উদ্ধার অভিযানে নামে মেঘনা থানা পুলিশও।
একদিকে পুলিশের উদ্ধার তৎপরতা, অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের শাহেদ কায়েস হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। দুইয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
শাহেদ কায়েস বলেন, বৃষ্টি না এলে বোধ হয় আর ফিরেই আসা হতো না?
তা তো বটেই। বৃষ্টি, যথাসময়ে সাংবাদিকদের কাছে সংবাদ পৌঁছানো, পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া- এসবই হয়তো আবার ফিরিয়ে দিয়েছে শাহেদের প্রাণ। এবার হয়তো প্রাণে বেচে গেলো শাহেদ, তারা তো আবারো হামলা চালাতে পারে- এমন আশংকার উত্তরে শাহেদ বলেন, দিদি, জন্ম যখন নিয়েছি, মরবোই। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে মরতে পারলেও স্বার্থক জন্ম।
কত নির্ভিক শাহেদ!! প্রাণের এতটুকুও ভয়-ডর নেই। হাতে কোপ, গলায় কোপ খেয়েও মানুষের জন্য কিছু করার তৃষ্ণা যেনো মেটেনি তার। এ কেমন মাটি দিয়ে তৈরি শাহেদ। কি রঙ সেই রক্তের! যা প্রাণ হারানোর ভয়কেও জয় করে?
কবি শাহেদ কায়েসের সঙ্গে পরিচয়, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে। সেই উত্তাল দিনগুলোতেই শুনেছি শাহেদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। আর, কাল দেখলাম। সেই প্রতিবাদী মানুষটি হাসপাতালের বিছানায় অর্ধশোয়া, তবুও কি দ্যুতি তাঁর। পরে আরো বেশি জেনেছি মায়াদ্বীপের নামকরণের স্রষ্টা, সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও অসম্ভব পরিশ্রমী অসাধারণ এই মানুষটার নানা কর্মকাণ্ড। আশ্চর্য একটা মানুষ কবি শাহেদ কায়েস। জমের দুয়ার থেকে ফিরে এসেও আগের চেয়েও যেনো বেশি প্রতিবাদী, যেনো আরো শক্ত হাতে অন্যায় দমনে প্রতিশ্রতিবদ্ধ।
শাহেদের জন্য প্রতিবাদমুখর সোনারগাঁওবাসীও। কি কবি, কি সাহিত্যিক, কি রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক। সব পক্ষ থেকেই তীব্র প্রতিবাদ। সবাই বলছে, এ অন্যায়।এই একটা ইস্যুতে সোনারগাঁওয়ের মানুষ এক সূতায় বাঁধা যেনো। প্রতিদিন কোনো না কোনো কর্মসূচি রাখছেন তারা, প্রাণের টানেই। সোনারগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতির আন্তরিক প্রতিবাদী উচ্চারণ যেনো অন্য সব দলের সাংবাদিকদেরও অন্তরের কথা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশও বলছে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তারা।
আমরাও তাই আশা করি। কারণ সর্বোচ্চ শাস্তি যদি সন্ত্রাসীরা না পায়, তাহলে এ অন্যায় নিয়মিতই করবে তারা। চর তো দখল করবেই, সেই সঙ্গে ‘বলি’ হবেন শাহেদ কায়েসের মতো অসংখ্য সাদা মনের মানুষ।
শাহেদের মতো সাদা মনের মানুষদের হয়তো অস্ত্র শক্তি নেই, টাকাও নেই। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসাই তো শাহেদ কায়েসদের মতো মানুষদের বেঁচে উঠার প্রেরণা। তাই সবাইকে দেখে, কাছে পেয়ে খুশিতেই কেঁদে উঠলেন শাহেদ কায়েস। সেই কান্নায় ছিলো প্রতিবাদমাখা অহংকার। যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয়ে চিকচিক করছিলো চোখ দুটো। বারবার বলছিলো, হেরে যাওয়া যাবে না, হারলেই জিতে যাবে শত্রুরা। বিড়বিড় করে বলছিলেন বার বার, এ লড়াইয়ে হারলেই আর কোন বালু ব্যবসায়ীকে আটকানো যাবে না।
ক্ষমতাসীনদের চাপ তো থাকবেই। সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেই বিপদ। যা আমরা ভাবি, কিন্তু করতে ভয় পাই, তা করে দেখান শাহেদ কায়েসরা। তাই শাহেদ কায়েসের এই রক্তঋণ শোধ করার এখনই সময়।
এখনই সময় শক্ত হাতে সন্ত্রাসীদের দমন করার। তা না হলে, কারো আর প্রতিবাদ করার সাহস থাকবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইবে না কেউই। সত্য কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলবেন, সাধারণেরা। সুস্থ্য, স্বাভাবিক, সুন্দর হারিয়ে যাবে প্রকৃতি থেকে। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে ন্যায়।
ইতিহাস সাক্ষী তরুণরাই আমাদের নতুন পথ দেখায়, নতুন পথ তৈরি করে। শাহেদ কায়েস তেমন এক তরুণ। তার হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা পাক ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের আলো। আর সে আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।
সাজেদা হক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন, sajeda_2025@yahoo.com
শাহেদের উপর এমন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। আহত কবিকে দেখতে শনিবার রাজীব নূরের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম লোক সম্পাদক অনিকেত শাহীন, শিল্পী অরূপ রাহী, শাহীনুর রহমান, সাংবাদিক হুমায়ন কবীর, ফিরোজ, জুয়েল, দেবজ্যোতি, সাদিয়া, শিশির, নাসরিন আপাসহ অন্তত ২৫ জন শুভাকাঙ্খী-সমব্যাথী ও সুহৃদ।
শাহেদ কায়েসের মুখেই শুনছিলাম তাকে অপহরণের ঘটনা। তিনি বলছিলেন, বালু ব্যবসায়ীদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা যখন তাদের ধরে নিয়ে যায়, তখন তিনি বার বার মিনতি করে সঙ্গে থাকা বিদেশি ক্রিস্টিকে ছেড়ে দিতে বলেন। সন্ত্রাসীরা তার সেই আকুতি শুনেছে।
ক্রিস্টি ও দোভাষী দীপুকে ছেড়ে দিয়ে কেবল শাহেদ কায়েসকে নিয়েই মায়াদ্বীপ ছাড়িয়ে আরো গভীরের দিকে ছুটে চলে সন্ত্রাসীদের স্পীড বোট।
এদিকে, ঘাটে ফিরেই ক্রিস্টি ও দীপু ফোন দেয় নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের। তাই রক্ষা। সাংবাদিকরা তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাদের ফোর্স নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়ে মেঘনার বুকে। শুধু সোনারগাঁও থানা পুলিশই নয়, উদ্ধার অভিযানে নামে মেঘনা থানা পুলিশও।
একদিকে পুলিশের উদ্ধার তৎপরতা, অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের শাহেদ কায়েস হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। দুইয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
শাহেদ কায়েস বলেন, বৃষ্টি না এলে বোধ হয় আর ফিরেই আসা হতো না?
তা তো বটেই। বৃষ্টি, যথাসময়ে সাংবাদিকদের কাছে সংবাদ পৌঁছানো, পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া- এসবই হয়তো আবার ফিরিয়ে দিয়েছে শাহেদের প্রাণ। এবার হয়তো প্রাণে বেচে গেলো শাহেদ, তারা তো আবারো হামলা চালাতে পারে- এমন আশংকার উত্তরে শাহেদ বলেন, দিদি, জন্ম যখন নিয়েছি, মরবোই। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে মরতে পারলেও স্বার্থক জন্ম।
কত নির্ভিক শাহেদ!! প্রাণের এতটুকুও ভয়-ডর নেই। হাতে কোপ, গলায় কোপ খেয়েও মানুষের জন্য কিছু করার তৃষ্ণা যেনো মেটেনি তার। এ কেমন মাটি দিয়ে তৈরি শাহেদ। কি রঙ সেই রক্তের! যা প্রাণ হারানোর ভয়কেও জয় করে?
কবি শাহেদ কায়েসের সঙ্গে পরিচয়, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে। সেই উত্তাল দিনগুলোতেই শুনেছি শাহেদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। আর, কাল দেখলাম। সেই প্রতিবাদী মানুষটি হাসপাতালের বিছানায় অর্ধশোয়া, তবুও কি দ্যুতি তাঁর। পরে আরো বেশি জেনেছি মায়াদ্বীপের নামকরণের স্রষ্টা, সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও অসম্ভব পরিশ্রমী অসাধারণ এই মানুষটার নানা কর্মকাণ্ড। আশ্চর্য একটা মানুষ কবি শাহেদ কায়েস। জমের দুয়ার থেকে ফিরে এসেও আগের চেয়েও যেনো বেশি প্রতিবাদী, যেনো আরো শক্ত হাতে অন্যায় দমনে প্রতিশ্রতিবদ্ধ।
শাহেদের জন্য প্রতিবাদমুখর সোনারগাঁওবাসীও। কি কবি, কি সাহিত্যিক, কি রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক। সব পক্ষ থেকেই তীব্র প্রতিবাদ। সবাই বলছে, এ অন্যায়।এই একটা ইস্যুতে সোনারগাঁওয়ের মানুষ এক সূতায় বাঁধা যেনো। প্রতিদিন কোনো না কোনো কর্মসূচি রাখছেন তারা, প্রাণের টানেই। সোনারগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতির আন্তরিক প্রতিবাদী উচ্চারণ যেনো অন্য সব দলের সাংবাদিকদেরও অন্তরের কথা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশও বলছে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তারা।
আমরাও তাই আশা করি। কারণ সর্বোচ্চ শাস্তি যদি সন্ত্রাসীরা না পায়, তাহলে এ অন্যায় নিয়মিতই করবে তারা। চর তো দখল করবেই, সেই সঙ্গে ‘বলি’ হবেন শাহেদ কায়েসের মতো অসংখ্য সাদা মনের মানুষ।
শাহেদের মতো সাদা মনের মানুষদের হয়তো অস্ত্র শক্তি নেই, টাকাও নেই। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসাই তো শাহেদ কায়েসদের মতো মানুষদের বেঁচে উঠার প্রেরণা। তাই সবাইকে দেখে, কাছে পেয়ে খুশিতেই কেঁদে উঠলেন শাহেদ কায়েস। সেই কান্নায় ছিলো প্রতিবাদমাখা অহংকার। যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয়ে চিকচিক করছিলো চোখ দুটো। বারবার বলছিলো, হেরে যাওয়া যাবে না, হারলেই জিতে যাবে শত্রুরা। বিড়বিড় করে বলছিলেন বার বার, এ লড়াইয়ে হারলেই আর কোন বালু ব্যবসায়ীকে আটকানো যাবে না।
ক্ষমতাসীনদের চাপ তো থাকবেই। সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেই বিপদ। যা আমরা ভাবি, কিন্তু করতে ভয় পাই, তা করে দেখান শাহেদ কায়েসরা। তাই শাহেদ কায়েসের এই রক্তঋণ শোধ করার এখনই সময়।
এখনই সময় শক্ত হাতে সন্ত্রাসীদের দমন করার। তা না হলে, কারো আর প্রতিবাদ করার সাহস থাকবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইবে না কেউই। সত্য কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলবেন, সাধারণেরা। সুস্থ্য, স্বাভাবিক, সুন্দর হারিয়ে যাবে প্রকৃতি থেকে। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে ন্যায়।
ইতিহাস সাক্ষী তরুণরাই আমাদের নতুন পথ দেখায়, নতুন পথ তৈরি করে। শাহেদ কায়েস তেমন এক তরুণ। তার হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা পাক ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের আলো। আর সে আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।
সাজেদা হক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন, sajeda_2025@yahoo.com
No comments