কি কথা তাহার সাথে, তার সাথে? by অজয় দাশগুপ্ত
সকাল সকাল এয়ারপোর্ট যেতে হয়েছিল আজ।
পরমাত্মীয়া যাচ্ছে বস-কান্ট্রি আমেরিকা সফরে। তাকে ছাড়তে সকালে টোস্ট
চিবুতে চিবুতে চায়ের মগ হাতে দে-ছুট।
সিডনি এয়ারপোর্ট
ব্যস্ত, আধুনিক বা বড় যাই হোক না কেন এখানে সময় মত পৌঁছুতে পারলে আর নিয়ম
মেনে চললে কোনো ঝক্কি পোহাবার কারণ নেই। আমার এই চিকিৎসক আত্মীয়াটি কখনোই
বাক্স-প্যাটরা নিয়ে মাতামাতি করে না। আমার গিন্নীর একেবারে বিপরীত। গিন্নীর
সাথে বেড়াতে যাবার আগে অন্ত:ত দু’এক হপ্তা আগে থেকেই আমি গোপনে মাংসপেশীর
ব্যায়াম করতে থাকি। দশাসই বিশাল সাইজের বাক্স ব্যাগ আর মালামাল নিয়ে সফর
করতে থাকা আমাকে দেখে কম্বোডিয়ার ট্যাক্সিচালকের চোখ ছলছল করে উঠেছিল।
বালির গাইড রমণ তো আমার ব্যাগ কাঁধে নিয়েই ঘুরে বেড়াতো। কুয়ালালামপুরের
শফিক এখনো ফোনে প্রশ্ন করে "দাদা আপনার ব্যাক পেইন গেছে তো?` সে দিক থেকে
আমার এই আত্মীয়া শিশু। তার না আছে ব্যাগের বাহুল্য, না কোনো শপিং বাই। শুধু
রোজা বলে একটু উগ্বেগ। হাজার হোক পনের ঘন্টার টানা উড়াল. এয়ারপোর্টে গিয়ে
দেখি বেশ কিছু পরিচিত মুখের আনাগোনা। কেউ ঢুকছে কেউ বেরুচ্ছে। কেউ কেউ লাইন
ধরে অপেক্ষমান।
এমনটা হয় কোনো বরেন্য ব্যক্তি বা সেলিব্রেটির আগমন বা যাবার বেলায়। ঠিক দেশের মতই। নিজের পরিবার পরিজনের বেলায় সময়ের অভাব হলেও বিখ্যাতদের জন্য চাকরি কামাই করে হলে ও লাইন দিই আমরা। গায়ক-নায়ক-অভিনতা-শিল্পী এমন কি রাজনীতিকদের বেলায়ও। রাজনীতি, বিশেষত, দুই বড় দলের রাজনীতির বিরুদ্ধে যত কথাই বলা হোক না কেন এদের নেতারা এখনো সেলিব্রেটি। তাঁদের আগমন-নির্গমনের বেলায় ফুলের তোড়া, মালা বা স্লোগানেরও অভাব নেই। গাঁটের টাকা, থুক্কু ডলার, খরচ করে এমন ধর্না দেওয়া অন্য জাতিতে বিরল। উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর বেলায়ও তা দেখা যায় না।
এযাত্রায় বিদায় নিচ্ছিলেন বিএনপির সচিব মির্জা ফখরুল। ভদ্রলোক তাঁর কন্যা বা জামাতার পিএইচডি প্রাপ্তি,
ডিগ্রি পাওয়া বা শেষ করা এ জাতীয় কোনো কারণে এদেশে, মানে অস্ট্রেলিয়ায়, এসেছিলেন। যতদূর জানতাম তিনি ব্রিসবেনে ছিলেন। ফিরতি রুটে তিনি যে সিডনি হয়ে যাবেন এটা জানা ছিলো না। তাঁকে বিদায় জানাতে আসা বিএনপির লোকজন ও সমর্থকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ সিডনি এয়ারপোর্ট।নতুন কোনো দৃশ্যকল্প বা আবেগ তৈরি না করলেও বিষয়টি ফেলনা নয়। মির্জা ফখরুলকে কখনো অভদ্র আচরণ বা মেজাজ গরম করতে দেখিনি। বরাবরই নিখাদ ভালোমানুষী চেহারার সজ্জনই মনে হয়েছে আমার। বিএনপিতে ঘাপটি মেরে থাকা মওদুদ গং বা আওয়ামী লীগার সুরঞ্জিত গংদের চাইতে তাকে দেখে ভালো লাগে।ঠিক একই মনোভাব সৈয়দ আশরাফের বেলায়ও আছে আমার। মুশকিল এই ভদ্রলোক ও নেহাৎ নরম বলেই হয়তো আমাদের স্তাবক ও বাটপাড়ের রাজনীতি এদের তেমন পছন্দ করে না। আমরা মুখে যতই ‘সুশীল সুশীল’ বলি বা ভাব করি, আমাদের পছন্দ জয়নুল ফারুক বা আবুল হোসেনের মত নেতা। যারা প্রধানমন্ত্রীকেও তোয়াক্কা করে না। যাদের মুখ থেকে উৎকট বুলি নির্গত হয়। ইউ টিউবে একটি ভিডিওতে মির্জা ফখরুলকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেবার দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলাম। তা-ও কোন আওয়ামী লীগার বা শত্রুর দ্বারা নয়। প্রবল প্রতাপশালী জয়নুল ফারুকের গুঁতোয় পড়ে যাওয়া বিএনপি মহাসচিবকে দেখে মনে হয়েছিল এই লোকটি কিভাবে বিএনপির প্রতিক্রিয়াশীল কথাবার্তার সাথে তাল মিলিয়ে চলেন? তাঁর মত মানুষের মুখে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রাজাকার বিষয়ে সহনশীল মতামত আমাকে ব্যথিত করে।
আমাদের বড় দোষ আমরা কখনো দলের ঊর্ধ্বে উঠে কথা বলতে পারি না। না পারার একশ একটি কারণ থাকার পরও আমি ফখরুল সাহেবের ব্যাপারে অকারণ নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। কিন্তু যে লোকজন তাঁকে বিদায় দেবার জন্য সমবেত হয়েছিলেন তাদের ভেতর আক্রোশ ও প্রতিহিংসা টগবগ করে ফুটছে। তারা আওয়ামী লীগের পতন ও শাসনের অবসান কামনায় এদেশের সরকারি মহল ও বিরোধী দলে ধর্না দিতে কসুর করেনি। কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে বিচার বন্ধ করার অপচেষ্টা করতেও দ্বিধা করেনি। একেই বলে আত্মঘাতী বাঙালি। একইভাবে আওয়ামী লীগের লোকজনও সমান্তরাল চেষ্টায় বিরোধী দলকে জঙ্গী বানানোর নামে দেশের ভাবমূর্তির বারোটা বাজাচ্ছেন।
এদিকে আমাদের মত সাধারণ প্রবাসীদের হয়েছে যতো বিপদ। কতোজনের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। কারো ভাঙছে আত্মীয়তা। গত কয়েক মাসে এ প্রবণতা বৃদ্ধির হার ভয়াবহ। যে রাজনীতি বা কৌশল দেশ ও দেশের মানুষকে বিদেশেও বিপদে ফেলে বা তার শান্তি নষ্ট করে তার প্রয়োজন কতটা? কি ভাবে এই অপপ্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব?
বাংলাদেশের মেধাবী প্রবাসী জনগোষ্ঠীর বিভাজন আখেরে আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। মালয়েশিয়ার উন্নয়নকালে মহাথির মোহাম্মদ তাঁর দেশের মেধাবী মানুযদের ডেকে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে লাগিয়েছিলেন। দল ভেদ করেননি। সাম্প্রতিক কালে মিয়ানমারের সরকারও তাই করেছে।শুধু আমরাই ভাগ হয়ে লড়াই করছি।আমরা কেউ আসলে বাঙালি বা বাংলাদেশি নই---- আমরা কেউ আওয়ামী লীগ, কেউবা বিএনপি।
মির্জা ফখরুল তাঁর সমর্থকদের কি বলে গেছেন জানি না, তবে শান্তি ও অগ্রযাত্রার কথা না বলে গেলে তাদেরও পস্তাতে হবে, এবং তা খুব দূরের কিছু নয়।
(সিডনি...২৭/৭/১৩)
এমনটা হয় কোনো বরেন্য ব্যক্তি বা সেলিব্রেটির আগমন বা যাবার বেলায়। ঠিক দেশের মতই। নিজের পরিবার পরিজনের বেলায় সময়ের অভাব হলেও বিখ্যাতদের জন্য চাকরি কামাই করে হলে ও লাইন দিই আমরা। গায়ক-নায়ক-অভিনতা-শিল্পী এমন কি রাজনীতিকদের বেলায়ও। রাজনীতি, বিশেষত, দুই বড় দলের রাজনীতির বিরুদ্ধে যত কথাই বলা হোক না কেন এদের নেতারা এখনো সেলিব্রেটি। তাঁদের আগমন-নির্গমনের বেলায় ফুলের তোড়া, মালা বা স্লোগানেরও অভাব নেই। গাঁটের টাকা, থুক্কু ডলার, খরচ করে এমন ধর্না দেওয়া অন্য জাতিতে বিরল। উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর বেলায়ও তা দেখা যায় না।
এযাত্রায় বিদায় নিচ্ছিলেন বিএনপির সচিব মির্জা ফখরুল। ভদ্রলোক তাঁর কন্যা বা জামাতার পিএইচডি প্রাপ্তি,
ডিগ্রি পাওয়া বা শেষ করা এ জাতীয় কোনো কারণে এদেশে, মানে অস্ট্রেলিয়ায়, এসেছিলেন। যতদূর জানতাম তিনি ব্রিসবেনে ছিলেন। ফিরতি রুটে তিনি যে সিডনি হয়ে যাবেন এটা জানা ছিলো না। তাঁকে বিদায় জানাতে আসা বিএনপির লোকজন ও সমর্থকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ সিডনি এয়ারপোর্ট।নতুন কোনো দৃশ্যকল্প বা আবেগ তৈরি না করলেও বিষয়টি ফেলনা নয়। মির্জা ফখরুলকে কখনো অভদ্র আচরণ বা মেজাজ গরম করতে দেখিনি। বরাবরই নিখাদ ভালোমানুষী চেহারার সজ্জনই মনে হয়েছে আমার। বিএনপিতে ঘাপটি মেরে থাকা মওদুদ গং বা আওয়ামী লীগার সুরঞ্জিত গংদের চাইতে তাকে দেখে ভালো লাগে।ঠিক একই মনোভাব সৈয়দ আশরাফের বেলায়ও আছে আমার। মুশকিল এই ভদ্রলোক ও নেহাৎ নরম বলেই হয়তো আমাদের স্তাবক ও বাটপাড়ের রাজনীতি এদের তেমন পছন্দ করে না। আমরা মুখে যতই ‘সুশীল সুশীল’ বলি বা ভাব করি, আমাদের পছন্দ জয়নুল ফারুক বা আবুল হোসেনের মত নেতা। যারা প্রধানমন্ত্রীকেও তোয়াক্কা করে না। যাদের মুখ থেকে উৎকট বুলি নির্গত হয়। ইউ টিউবে একটি ভিডিওতে মির্জা ফখরুলকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেবার দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলাম। তা-ও কোন আওয়ামী লীগার বা শত্রুর দ্বারা নয়। প্রবল প্রতাপশালী জয়নুল ফারুকের গুঁতোয় পড়ে যাওয়া বিএনপি মহাসচিবকে দেখে মনে হয়েছিল এই লোকটি কিভাবে বিএনপির প্রতিক্রিয়াশীল কথাবার্তার সাথে তাল মিলিয়ে চলেন? তাঁর মত মানুষের মুখে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রাজাকার বিষয়ে সহনশীল মতামত আমাকে ব্যথিত করে।
আমাদের বড় দোষ আমরা কখনো দলের ঊর্ধ্বে উঠে কথা বলতে পারি না। না পারার একশ একটি কারণ থাকার পরও আমি ফখরুল সাহেবের ব্যাপারে অকারণ নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। কিন্তু যে লোকজন তাঁকে বিদায় দেবার জন্য সমবেত হয়েছিলেন তাদের ভেতর আক্রোশ ও প্রতিহিংসা টগবগ করে ফুটছে। তারা আওয়ামী লীগের পতন ও শাসনের অবসান কামনায় এদেশের সরকারি মহল ও বিরোধী দলে ধর্না দিতে কসুর করেনি। কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে বিচার বন্ধ করার অপচেষ্টা করতেও দ্বিধা করেনি। একেই বলে আত্মঘাতী বাঙালি। একইভাবে আওয়ামী লীগের লোকজনও সমান্তরাল চেষ্টায় বিরোধী দলকে জঙ্গী বানানোর নামে দেশের ভাবমূর্তির বারোটা বাজাচ্ছেন।
এদিকে আমাদের মত সাধারণ প্রবাসীদের হয়েছে যতো বিপদ। কতোজনের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। কারো ভাঙছে আত্মীয়তা। গত কয়েক মাসে এ প্রবণতা বৃদ্ধির হার ভয়াবহ। যে রাজনীতি বা কৌশল দেশ ও দেশের মানুষকে বিদেশেও বিপদে ফেলে বা তার শান্তি নষ্ট করে তার প্রয়োজন কতটা? কি ভাবে এই অপপ্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব?
বাংলাদেশের মেধাবী প্রবাসী জনগোষ্ঠীর বিভাজন আখেরে আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। মালয়েশিয়ার উন্নয়নকালে মহাথির মোহাম্মদ তাঁর দেশের মেধাবী মানুযদের ডেকে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে লাগিয়েছিলেন। দল ভেদ করেননি। সাম্প্রতিক কালে মিয়ানমারের সরকারও তাই করেছে।শুধু আমরাই ভাগ হয়ে লড়াই করছি।আমরা কেউ আসলে বাঙালি বা বাংলাদেশি নই---- আমরা কেউ আওয়ামী লীগ, কেউবা বিএনপি।
মির্জা ফখরুল তাঁর সমর্থকদের কি বলে গেছেন জানি না, তবে শান্তি ও অগ্রযাত্রার কথা না বলে গেলে তাদেরও পস্তাতে হবে, এবং তা খুব দূরের কিছু নয়।
(সিডনি...২৭/৭/১৩)
No comments