শুভ জন্মদিন টেলিফোন যন্ত্রের আবিস্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
আলেকজান্ডার
গ্রাহাম বেল প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক। যাকে দ্য ফাদার অফ দ্য ডিফ
অর্থাৎ বোবাদের পিতা নামে ডাকা হতো। তবে টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে
তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বলা হয়ে থাকে ফোন কানে তুলেই উচ্চারিত Hello
শব্দটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের মুখেই। হ্যালো তার
বান্ধবীর নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো। কথিত আছে ১৮৭৬ সালে টেলিফোন
আবিষ্কারের পর তিনি তার বান্ধবী হ্যালো কেই প্রথম ফোনটি করেছিলেন। যদিও এ
ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে। বির্তক যাই হোক আজ এ টেলিফোন আবিস্কারকর্তার
শুভ জন্মদিন। ১৮৪৭ সালের ৩ মার্চ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে আলেকজান্ডার
গ্রাহাম বেল জন্মগ্রহন করেন। এডিনবার্গের ১৬, চারলোটি স্ট্রিটের একটি
বাড়িতে একটি পাথরের খোদাই থেকে জানা যায় যে এটিই তার পরিবারের আবাসস্থল
এবং তার জন্মস্থান ছিল। জন্মের সময় তার নাম ছিল আলেকজান্ডার বেল, তবে তার
বয়স যখন দশ বছর তখন তিনি তার বাবার কাছে তার বড় দুই ভাইয়ের মধ্যনামের মত
একটি মধ্যনামের জন্য আবদার করেন। তার এগারোতম জন্মদিনে বাবা আলেকজান্ডার
মেলভিল বেল তারই এক কানাডিয়ান বন্ধুর নাম অনুসারে ছেলের মধ্যনাম রাখেন
গ্রাহাম। এর পর থেকেই তার নাম হয় আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। তবে মৃত্যুর আগ
পর্যন্ত পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা তাকে এলেক নামে ডাকত। গ্রাহাম বেলের
বাবা, দাদা এবং ভাই সবাই একক অভিনয় ও বক্তৃতার কাজে জড়িত ছিলেন এবং তার
মা ও স্ত্রী উভয়েই ছিলেন বোবা। এ কারণেই বোবাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে
তিনি অনেক গবেষণা করেছেন।
টেলিফোন উদ্ভাবনের আগে থেকেই তিনি শ্রবণ ও কথন
সংশ্লিষ্ট গবেষণা নিয়োজিত ছিলেন। ১৮৭৬ সালে তাকে টেলিফোনের প্রথম মার্কিন
পেটেন্টের সম্মানে ভূষিত করা হয়। পরবর্তী জীবনে বেল আরও বেশ কিছু
গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে উড়ো নৌকা এবং বিমানচালনবিদ্যা।
১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা
ছিলেন বেল। টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। অথচ এ টেলিফোনকেই
এক উটকো ঝামেলা মনে করতেন তিনি। এজন্য নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে কোন
টেলিফোন রাখতেন না। বেল মারা যাওয়ার পর আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের
জন্য অবিরাম রিং বাজানো হয়। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য মতে যে মহান ব্যক্তি
মানুষে-মানুষে যোগাযোগের এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাকে উপযুক্ত সম্মান
দেখানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে। ভাইদের মত আলেকজান্ডারও ছোটবেলায় পরিবারে
বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করেন। স্কুলে তার ফলাফল খুব একটা ভাল ছিল না
এবং প্রায়শই স্কুল কামাই দেওয়ার প্রবনতা দেখা গিয়েছে। বাবার উচ্চাশা
সত্ত্বেও স্কুলের পাঠ্যবিষয়গুলোর প্রতি আলেকজান্ডারের কোন আগ্রহই ছিল না
বরং বিজ্ঞান এবং বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে তার মারাত্মক আগ্রহ ছিল। স্কুল
ত্যাগ করার পর আলেকজান্ডার তার দাদার সাথে বসবাস করার জন্য লন্ডনে চলে যান।
লন্ডনে তার দাদার সাথে থাকার সময় পরাশুনার প্রতি তার গভীর ভালবাসা
জন্মায় এবং প্রায়শই তার দাদার সাথে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা এবং
পরাশুনা করে তার ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই
আলেকজান্ডার শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে স্কটল্যান্ডের ওয়েস্টন হাউস
একাডেমিতে যোগদান করেন। যদিও তখন তিনি ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষার ছাত্র
ছিলেন, তিনি তার পরিচালিত প্রত্যেকটি ক্লাসের জন্য ১০ পাউন্ড করে পেতেন।
১৮৬৮ সালে স্বপরিবারে কানাডা চলে যাওয়ার আগে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে তার ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেছিলেন। শিশুকাল থেকেই আলেকজান্ডার
প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতূহলি ছিলেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে
তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করতেন।
ছোটবেলায় আলেকজান্ডারের সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলেন বেন হের্ডম্যান।
হের্ডম্যানের পরিবার আলেকজান্ডারের প্রতিবেশি ছিলো এবং একটি ময়দা মিল
পরিচালনা করত। একবার আলেকজান্ডার প্রশ্ন করেছিলো যে, ময়দা প্রস্তুত করতে
হলে কি কি করতে হয়? উত্তরে তাকে বলা হয়েছিলো যে, পরিশ্রমসাধ্য এক
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গমের খোসা ছাড়িয়ে ময়দা প্রস্তুত করতে হয়। মাত্র ১২
বছর বয়সে পেরেকের ব্রাশ এবং ঘুর্ণায়মান প্যাডেলের সমন্বয়ে আলেকজান্ডার
একটি গম পেষাই যন্ত্র তৈরী করেন যা ঐ মিলে অনেক বছর ধরে ব্যবহার করা
হয়েছিল। এই উদ্ভাবনের জন্য জন হের্ডম্যান আলেকজান্ডার এবং বেনকে নতুন নতুন
জিনিস উদ্ভাবন করার গবেষণা করার জন্য একটি ওয়ার্কশপ উপহার দেয়। বিজ্ঞানী
আলেকজান্ডার সংগীতেও তার ঝলক দেখিয়েছেন। কোনরকম প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই
অনেক অল্প বয়সে তিনি একজন পিয়ানোবাদক হয়ে ওঠেন। শৈশবে তিনি মুখাভিনয়
এবং বিভিন্ন প্রকারের শব্দ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারে আগত অতিথিদের মনোরঞ্জন
করতেন।
সুত্র: উইকিপিডিয়া।
সুত্র: উইকিপিডিয়া।
No comments