ধনী দেশেও যানজটে বিপুল অপচয়
রাস্তায়
ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকাটা সবার জন্যই বিরক্তিকর, আর সে কারণে অনেকেই
এটাকে ‘পথের ক্রোধ’ বলে থাকেন। বস্তুত আধুনিক যুগে ট্রাফিক জ্যামে আটকে
থাকার চেয়ে বেশি ক্লান্তিকর আর কিছু নেই। যানবাহন খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ইনরিক্সের নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাস্তায় এই ভিড়ের কারণে মানুষের
যেমন ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়, তেমনি আবেগীয় ক্ষতির পরিমাণও নেহাত কম নয়।
সংস্থাটি সম্প্রতি বিশ্বের ৩৮টি দেশের ১ হাজার ৩৬০টি শহরে যানবাহন ও
যন্ত্রের ওপর জিপিএসের মাধ্যমে এই গবেষণা করেছে। জিপিএস দিয়ে তারা
পর্যবেক্ষণ করেছে, এই শহরগুলোর কোথায় পাঁচ মাইল দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
এরপর তারা এসব তথ্য-উপাত্ত ডলারে রূপান্তরিত করে তার অর্থনৈতিক প্রভাব
পরিমাপ করেছে। এই প্রক্রিয়ায় তারা যেমন অপচিত সময় ও জ্বালানির মতো
প্রত্যক্ষ কারণ বিবেচনা করেছে, তেমনি যানজটে আটকে থাকার কারণে পরিবহন ব্যয়
বৃদ্ধিজনিত পরোক্ষ প্রভাবও ধর্তব্যে নিয়েছে। ব্রিটেন, জার্মানি ও
যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন দেশে উল্লিখিত অপচয়ের পরিমাণ হিসাব করে তারা দেখিয়েছে,
গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাথাপিছু ৯৭৫ ডলার।
ছোট এক পরীক্ষার মাধ্যমে ইনরিক্স সবচেয়ে বেশি যানজটের শহরের তালিকা করেছে।
তাদের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৭ সালে দিনের ব্যস্ততম সময়ে যানজটে গাড়িচালকদের
সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। এই শহরটির
স্কোর ১০২। তবে এই হলিউড শহরের রাস্তা গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের
রাস্তায় চেয়ে যে বেশি ভারাক্রান্ত থাকে, তা নয়।
বোস্টন শহরের রাস্তায় সময়
নষ্ট হয় সবচেয়ে বেশি, যার পরিমাণ ১৪ শতাংশ। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরটি
ছড়ানো-ছিটানো, তাই সেখানকার মানুষের তুলনামূলকভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি
দূরত্ব পেরোতে হয়। আর যানজটের সময় স্থির ধরা হলে দীর্ঘ দূরত্বের সড়কে সময়
বেশি নষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যানজটে আক্রান্ত শহরগুলোর মধ্যে নিউইয়র্কের
স্থান ২ নম্বরে। যদিও এই শহরটি মেট্রোব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত, ব্যক্তিগত
গাড়ি সংস্কৃতির জন্য নয়। এই শহরের ৪১ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করে।
তা সত্ত্বেও সাবওয়ের ওপর এই শহরের নির্ভরতার কারণে বোঝা যায়, সেখানকার
মানুষেরা এটাই পছন্দ করে। এটা প্রয়োজনীয়তাও বটে। প্রয়োজনীয় এ কারণে যে এই
শহরের যানজট লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর চেয়ে ধীরে ছাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে যানজটের পরোক্ষ প্রভাব অস্বাভাবিক রকম বেশি।
কারণ, ব্যবসায়ীদের সড়কপথেই পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়। সামগ্রিকভাবে ইনরিক্স
হিসাব করেছে, গত বছর এই যানজটের কারণে নিউইয়র্ক শহরের ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার
৪০০ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক পরিসরে দেখা গেছে, এই সমীক্ষায় যেসব দেশের
অবস্থান একদম তলানিতে, তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাপেক্ষে সড়ক ও গণপরিবহন ঢেলে
সাজাতে পারেনি। থাইল্যান্ডের রাস্তায় ব্যস্ততম সময়ে চালকদের বছরে ৫৬ ঘণ্টা
নষ্ট হয়। এরপর আছে ইন্দোনেশিয়া ও কলম্বিয়া, যেখানে এই পরিসংখ্যান যথাক্রমে
৫১ ও ৪৯ ঘণ্টা। অন্যদিকে ইউরোপের মধ্যে রাশিয়ার সড়কের অবস্থা সবচেয়ে
খারাপ।
No comments