ইতালির জাতীয় নির্বাচন- কারা লড়ছেন ও এর তাৎপর্য কি?
আজ
ইতালিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ফাইভ
স্টার মুভমেন্ট ও অভিবাসন-বিরোধী নর্দার্ন লীগসহ সকল প্রধান দলই স্থানীয়
সময় শনিবারের মধ্যে তাদের প্রচারণা থামিয়ে দিয়েছে। সকল দলের দাবি তারাই জয়ী
হতে চলেছে। তবে জনমত জরিপ অনুসারে, কোন দল বা বিদ্যমান জোটই একক
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে যাচ্ছে না। সরকার গঠনের জন্য নতুন করে জোট গঠন
করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে, পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় ব্লকটি থাকবে সাবেক
প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি’র মধ্যপন্থি জোটের দখলে।
তবে একটি কর জালিয়াতি মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আগামী বছরের আগে প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না তিনি। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। উল্লেখ্য, ইতালিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এছাড়া প্রতি বছর অভিবাসন করেন অনেকে। সেদিক দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের জন্য ইতালির এবারের জাতীয় নির্বাচন বেশ গুরুত্ব বহন করে।
খবরে বলা হয়, এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধান ইস্যুগুলো ছিল- অভিবাসন ও যুবকদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্বের হার। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত বলে জানিয়েছেন বিবিসি’র জেমস রেনোল্ডস। অনেক দলই বেশ বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেমন, অবসর ভাতা বৃদ্ধি। কিন্তু যদি জোট সরকার গঠন করতে হয়, তাহলে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। জোট সরকার গঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই প্রতিশ্রুতিগুলো। গত দুই সপ্তাহ ধরে সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক জনমত জরিপ নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে ফাইভ স্টার মুভমেন্ট। দলটির নেতারা কঠোর নিতিমালার বিরোধী ও মুদ্রা হিসেবে ইউরোর বিকল্প খোঁজার পক্ষপাতী। এসবের পাশাপাশি দলটি হাম রোগের জন্য টিকা দেয়া বাধ্যতামূলক করে দেয়া একটি আইনের বিরোধী। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি এক গণভোটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পদত্যাগ করার পর থেকে একটি তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রীপরিষদ ইতালির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
রোববার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৬৩০টি আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর উচ্চকক্ষ সিনেটে ৩১৫ আসনে ভোট দেবেন ইতালিয়ানরা। ইতালির আইন অনুযায়ী, নিম্নকক্ষে ভোট দেয়ার জন্য বয়স ১৮ বছর ও উচ্চকক্ষের জন্য ২৫ বছর হতে হবে। সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ভোটাররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আগামীকাল সোমবার সকাল নাগাদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হতে পারে।
নতুন না পুরনো মুখ?
প্রধানমন্ত্রীর পদে নতুন মুখ দেখতে পারে ইতালি। এই পদে নতুন প্রার্থীদের মধ্যে কিছু মুখ আগ থেকেই পরিচিত আর কিছু অতি পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি’র বর্তমান বয়স ৮১। তিনিও পরোক্ষভাবে নির্বাচনে আছেন। ডানপন্থি মাতেও সালভিনি’র(৪৪) ইউরোস্পেটিক লেগা (নর্দার্ন লীগ) দলের সঙ্গে নিজের ফোরজা ইটালিয়া দলের জোট গঠন করেছেন। অন্যদিকে মধ্যম-বাম অবস্থানে আছেন ডেমোক্রেটিক পার্টি’র(পিডি) রেনজি(৪৩)। আর এই উভয় জোট ও দলকে চ্যালেঞ্জ করছেন ফাইভ স্টার মুভমেন্ট(এমফাইভএস) এর লুইগি দি মাইয়ো(৩১)। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন ইউরোপের সর্ব কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী।
প্রার্থীদের ভাষ্য
অভিবাসন: ইউরোপের বাকি দেশগুলোর মতো ইতালিতেও অভিবাসন চরমপন্থার উত্থাপন ঘটিয়েছে। মূলধারার রাজনীতিবিদরাও তাদের অবস্থান কঠোর করে তুলেছেন। উদাহরণস্বরূপ বেরলুসকোনির কথাই ধরা যাক। তিনি অভিবাসনকে একটি ‘টাইম বোমা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জয়ী হলে ৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি করেছেন। তার জোট অংশীদার সালিভিনি এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছেন, ইতালি একটি ‘জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র’। অন্যদিকে, ফাইভ স্টার মুভমেন্ট চায় কথিত ডাবলিন নীতিতে পরিবর্তন আনতে। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সদস্য দেশে পৌঁছানোর পর, ডাবলিন নীতি মেনেই কোনো অভিবাসীকে সেখানে থাকার জন্য আশ্রয় চাইতে হয়। পিডি জানিয়েছে, তারা যেসব দেশ অভিবাসী গ্রহণ করে তাদের সঙ্গে সমপর্ক ছিন্ন করতে চায়।
প্রসঙ্গত, ইতালিতে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে। ২০১৩ সালের এক সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে, ইতালিতে ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছিল। বিগত বছরগুলোতে সেদেশে বাংলাদেশিদের অভিবাসন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসন নিয়ে প্রার্থীদের চরমপন্থি অবস্থান অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নিশ্চিতভাবেই সুখবর নয়।
অর্থনীতি: ২০০৭-২০০৮ এর অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে ইতালির অর্থনীতিতে ক্রমাগত হারে নিচের দিকে নেমে এসেছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে অবশ্য পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছে দেশটির অর্থনীতি। তবে এখনো সেখানে, বেকারত্বের হার ১১ শতাংশ। পুরো ইউরোপের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার। এছাড়া, গ্রিসের পরে সবচেয়ে বেশি ঋণ সংকটে ভুগছে দেশটি।
ব্যক্তিগত সুপারিশ ও দুর্নীতির কারণে পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না তরুণ ইতালিয়ানরা। কাজ করার জন্য তাদেরকে যেতে হচ্ছে বিদেশে। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনী প্রচারণার সময় তরুণদের চেয়ে অবসর ভাতা চায় এমন বৃদ্ধদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করেছেন।
ইইউ ত্যাগ: প্রার্থীরা ইতালির ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইইউ’র বাজেট নীতিকে দুষছেন। তাদের দাবি, ইইউ’র বাজেট নীতির কারণে ইতালির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ও ইউরোসেপটিক লেগা জয়ী হলে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এখন অবশ্য ওই ইইউ বিদ্বেষ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
অন্যান্য: টিকা প্রদান। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট চায় হাম রোগের জন্য টিকা দেয়া বাধ্যতামূলক করে দেয়া একটি আইন বাতিল করে দিতে। যদিও দেশটিতে অল্প পরিসরে পুনরায় হাম এর উপস্থিতি দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হবেন কে
নতুন ইলেক্টোরাল আইনে এটিই প্রথম নির্বাচন। এই আইনে নির্বাচনের পূর্বে জোট গঠনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ফাইভ স্টার কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠন করেনি। তাই দলটির সরকার গঠন করার সম্ভাবনা কম। এমনকি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেলেও হয়তো তা সম্ভব হবে না। মধ্যম-ডানপন্থি জোটকে নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় বেরলুসকোনিকে এই নির্বাচনে অংশগ্রণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। বেরলুসকোনির অনুপস্থিতি অ্যান্তোনিও তাজানির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর মধ্য-বামপন্থি জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের তেমন সম্ভাবনা নেই। নিজের জোট বিজয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রেঞ্জি। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ফাইভ স্টার জোটবদ্ধ হলে তারা ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পাবেন। কিন্তু রেঞ্জি উগ্রপন্থিদের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
ইতালিতে সরকার পরিবর্তনের ঘটনা খুবই কম। গত দুই দশক ধরেই দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ইতালিয়ানরাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভোট প্রদান করতে অভ্যস্ত। ব্রেক্সিটের পর ইতালি হবে ইউরোপের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে কোনো অস্থায়ী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে ইতালির এই উন্নতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সময়ের পরিক্রমায় ইউরোজোন থেকে ইতালির বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে গেছে। তবে ইউরোস্পেটিক লীগ ও ফাইভ স্টার জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করলে এই সম্ভাবনা আবারো দেখা দিতে পারে।
তবে একটি কর জালিয়াতি মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আগামী বছরের আগে প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না তিনি। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। উল্লেখ্য, ইতালিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এছাড়া প্রতি বছর অভিবাসন করেন অনেকে। সেদিক দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের জন্য ইতালির এবারের জাতীয় নির্বাচন বেশ গুরুত্ব বহন করে।
খবরে বলা হয়, এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধান ইস্যুগুলো ছিল- অভিবাসন ও যুবকদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্বের হার। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত বলে জানিয়েছেন বিবিসি’র জেমস রেনোল্ডস। অনেক দলই বেশ বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেমন, অবসর ভাতা বৃদ্ধি। কিন্তু যদি জোট সরকার গঠন করতে হয়, তাহলে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। জোট সরকার গঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই প্রতিশ্রুতিগুলো। গত দুই সপ্তাহ ধরে সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক জনমত জরিপ নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে ফাইভ স্টার মুভমেন্ট। দলটির নেতারা কঠোর নিতিমালার বিরোধী ও মুদ্রা হিসেবে ইউরোর বিকল্প খোঁজার পক্ষপাতী। এসবের পাশাপাশি দলটি হাম রোগের জন্য টিকা দেয়া বাধ্যতামূলক করে দেয়া একটি আইনের বিরোধী। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি এক গণভোটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পদত্যাগ করার পর থেকে একটি তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রীপরিষদ ইতালির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
রোববার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৬৩০টি আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর উচ্চকক্ষ সিনেটে ৩১৫ আসনে ভোট দেবেন ইতালিয়ানরা। ইতালির আইন অনুযায়ী, নিম্নকক্ষে ভোট দেয়ার জন্য বয়স ১৮ বছর ও উচ্চকক্ষের জন্য ২৫ বছর হতে হবে। সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ভোটাররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আগামীকাল সোমবার সকাল নাগাদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হতে পারে।
নতুন না পুরনো মুখ?
প্রধানমন্ত্রীর পদে নতুন মুখ দেখতে পারে ইতালি। এই পদে নতুন প্রার্থীদের মধ্যে কিছু মুখ আগ থেকেই পরিচিত আর কিছু অতি পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি’র বর্তমান বয়স ৮১। তিনিও পরোক্ষভাবে নির্বাচনে আছেন। ডানপন্থি মাতেও সালভিনি’র(৪৪) ইউরোস্পেটিক লেগা (নর্দার্ন লীগ) দলের সঙ্গে নিজের ফোরজা ইটালিয়া দলের জোট গঠন করেছেন। অন্যদিকে মধ্যম-বাম অবস্থানে আছেন ডেমোক্রেটিক পার্টি’র(পিডি) রেনজি(৪৩)। আর এই উভয় জোট ও দলকে চ্যালেঞ্জ করছেন ফাইভ স্টার মুভমেন্ট(এমফাইভএস) এর লুইগি দি মাইয়ো(৩১)। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন ইউরোপের সর্ব কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী।
প্রার্থীদের ভাষ্য
অভিবাসন: ইউরোপের বাকি দেশগুলোর মতো ইতালিতেও অভিবাসন চরমপন্থার উত্থাপন ঘটিয়েছে। মূলধারার রাজনীতিবিদরাও তাদের অবস্থান কঠোর করে তুলেছেন। উদাহরণস্বরূপ বেরলুসকোনির কথাই ধরা যাক। তিনি অভিবাসনকে একটি ‘টাইম বোমা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জয়ী হলে ৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি করেছেন। তার জোট অংশীদার সালিভিনি এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছেন, ইতালি একটি ‘জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র’। অন্যদিকে, ফাইভ স্টার মুভমেন্ট চায় কথিত ডাবলিন নীতিতে পরিবর্তন আনতে। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সদস্য দেশে পৌঁছানোর পর, ডাবলিন নীতি মেনেই কোনো অভিবাসীকে সেখানে থাকার জন্য আশ্রয় চাইতে হয়। পিডি জানিয়েছে, তারা যেসব দেশ অভিবাসী গ্রহণ করে তাদের সঙ্গে সমপর্ক ছিন্ন করতে চায়।
প্রসঙ্গত, ইতালিতে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে। ২০১৩ সালের এক সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে, ইতালিতে ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছিল। বিগত বছরগুলোতে সেদেশে বাংলাদেশিদের অভিবাসন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসন নিয়ে প্রার্থীদের চরমপন্থি অবস্থান অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নিশ্চিতভাবেই সুখবর নয়।
অর্থনীতি: ২০০৭-২০০৮ এর অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে ইতালির অর্থনীতিতে ক্রমাগত হারে নিচের দিকে নেমে এসেছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে অবশ্য পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছে দেশটির অর্থনীতি। তবে এখনো সেখানে, বেকারত্বের হার ১১ শতাংশ। পুরো ইউরোপের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার। এছাড়া, গ্রিসের পরে সবচেয়ে বেশি ঋণ সংকটে ভুগছে দেশটি।
ব্যক্তিগত সুপারিশ ও দুর্নীতির কারণে পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না তরুণ ইতালিয়ানরা। কাজ করার জন্য তাদেরকে যেতে হচ্ছে বিদেশে। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনী প্রচারণার সময় তরুণদের চেয়ে অবসর ভাতা চায় এমন বৃদ্ধদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করেছেন।
ইইউ ত্যাগ: প্রার্থীরা ইতালির ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইইউ’র বাজেট নীতিকে দুষছেন। তাদের দাবি, ইইউ’র বাজেট নীতির কারণে ইতালির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ও ইউরোসেপটিক লেগা জয়ী হলে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এখন অবশ্য ওই ইইউ বিদ্বেষ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
অন্যান্য: টিকা প্রদান। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট চায় হাম রোগের জন্য টিকা দেয়া বাধ্যতামূলক করে দেয়া একটি আইন বাতিল করে দিতে। যদিও দেশটিতে অল্প পরিসরে পুনরায় হাম এর উপস্থিতি দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হবেন কে
নতুন ইলেক্টোরাল আইনে এটিই প্রথম নির্বাচন। এই আইনে নির্বাচনের পূর্বে জোট গঠনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ফাইভ স্টার কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠন করেনি। তাই দলটির সরকার গঠন করার সম্ভাবনা কম। এমনকি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেলেও হয়তো তা সম্ভব হবে না। মধ্যম-ডানপন্থি জোটকে নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় বেরলুসকোনিকে এই নির্বাচনে অংশগ্রণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। বেরলুসকোনির অনুপস্থিতি অ্যান্তোনিও তাজানির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর মধ্য-বামপন্থি জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের তেমন সম্ভাবনা নেই। নিজের জোট বিজয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রেঞ্জি। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ফাইভ স্টার জোটবদ্ধ হলে তারা ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পাবেন। কিন্তু রেঞ্জি উগ্রপন্থিদের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
ইতালিতে সরকার পরিবর্তনের ঘটনা খুবই কম। গত দুই দশক ধরেই দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ইতালিয়ানরাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভোট প্রদান করতে অভ্যস্ত। ব্রেক্সিটের পর ইতালি হবে ইউরোপের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে কোনো অস্থায়ী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে ইতালির এই উন্নতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সময়ের পরিক্রমায় ইউরোজোন থেকে ইতালির বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে গেছে। তবে ইউরোস্পেটিক লীগ ও ফাইভ স্টার জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করলে এই সম্ভাবনা আবারো দেখা দিতে পারে।
No comments