নির্বাচনের বছর, তাই এডিপি কাটছাঁট নয়
নির্বাচন
সামনে রেখে এবারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাটছাঁট করবে না
সরকার। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় চাচ্ছে এডিপির আকার কিছুটা কমাতে। কিন্তু
পরিকল্পনা কমিশন তাতে আপত্তি জানিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, নির্বাচনের
বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বেড়েছে।
রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ
সারাদেশের উন্নয়ন কাজের চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণে বরাদ্দ আরও বেশি দিতে
হবে। ফলে এডিপির আকার কমানো যাবে না। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এবার
রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধির হার গতবারের একই সময়ের তুলনায় কম। ফলে সম্পদের
সীমাবদ্ধতার কারণে এডিপি কিছুটা কমানোর পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়। সে মর্মে
প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, আগামী ৬ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের
(এনইসি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
এবারের বাজেটে মূল এডিপির আকার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থ
মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, মূল এডিপি থেকে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা কমানোর
প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের এক
কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাড়তি
অর্থ বরাদ্দের চাপ আছে।
তাই এবারের এডিপি কাটছাঁট করা যাবে না। বরাদ্দ
কমালে উন্নয়ন কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে
জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৩ শতাংশ। যা গত বছরের
একই সময়ের তুলনায় দেড় থেকে দুই শতাংশ বেশি। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে কাজের গতি
আরও বেড়েছে। গত অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ব্যয়
হয় ৮৭ হাজার কোটি টাকা বা ৮০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক
কর্মকর্তা বর্তমানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড.
আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের বছরে খরচ বাড়ার প্রবণতা আমাদের দেশে
পুরনো। তবে দেখতে হবে ব্যয় কোথায় হচ্ছে? এডিপির আকার বাড়ানোর চেয়ে মানসম্মত
ব্যয়ের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত
:প্রতিবারের মতো এবারও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করেছে অর্থ
মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, মূল বাজেট অপেক্ষা ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে
সংশোধিত বাজেট নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হারে এটি
মূল বাজেট অপেক্ষা ৯ শতাংশ কম। গত ১ জুন চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ঘোষিত মূল
বাজেটের আকার ধরা হয় ৪ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র
বলেছে, এবার রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি আছে।
ফলে এনবিআরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা
অনেক কমানো হয়েছে। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ২৫
হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫
হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, মূল্যস্ম্ফীতি
এবং মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অপরিবর্তিত রাখা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক
অবস্থা ভালো। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশাবাদী
তিনি। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ
ব্যক্ত করেন মুহিত। জানা গেছে, এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের
লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে। মূল বাজেটে এনবিআরের বাইরের অন্যান্য খাত থেকে
আয় ধরা হয় ৩১ হাজার কোটি টাকা। এখান থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে
নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে এনবিআর নন-এনবিআর মিলিয়ে মোট
কমানো হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তার
উৎস থেকে কমানো হয়েছে। সব মিলে মূল বাজেট থেকে ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে
সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা যায়, গত অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার
ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ১৭
হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয় মাত্র ২ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
No comments