ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: দেখা করেন নি তিন মুসলিম অভিনেতা
ইসরাইলি
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ভারত সফর নানা কারণে
ব্যাপক বিরোধিতা ও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি যদিও প্রটোকল ভেঙ্গে বিমানবন্দরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে
উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন কিন্তু সেদেশের জনগণ মোদির এ বাড়াবাড়িকে মেনে
নেয়নি।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে তাদের জন্য বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর এ সফরের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করেছে সরকার জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে উপেক্ষা করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের চলচ্চিত্র জগতের প্রখ্যাত তিন অভিনেতার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনাকে সবাই ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, নরেন্দ্র মোদি সরকার দখলদার ইসরাইলের ব্যাপারে ভারতীয় জনগণের চিন্তাচেতনার সঙ্গে এখনো পরিচিত হতে পারেনি।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতিবাদে মোম্বাই নগরীর প্রখ্যাত তিন অভিনেতা সালমান খান, আমির খান ও শাহরুক খান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। ভারতের জনগণ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎপর অসংখ্য মানুষ ওই তিন অভিনেতাকে সত্যিকারের বীর হিসেবে অভিহিত করে এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি'র নেতৃবৃন্দ মনে করেন তারাই হচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘাঁটি। তাদের ধারণা ছিল নির্বাচনের আগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন সংবর্ধনা জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী আরএসএস ও শিবসেনাকে খুশী করা যাবে কারণ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এইসব গোষ্ঠীর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে তিন চলচ্চিত্র অভিনেতার অস্বীকৃতি এবং তাদের এ পদক্ষেপের প্রতি অসংখ্য মানুষের সমর্থন থেকে বোঝা যায়, হিন্দু-মুসলমান সবাই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরোধিতা করেছেন এবং এটাকে তারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী পূর্বপুরুষদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করছেন। ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক এমকে বাহাদুর কুমার মনে করেন, দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এতো ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য খুবই বিপদজনক।
ছয় মাস আগে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ইসরাইল সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের সাবেক কর্মকর্তাদের ইসরাইল সফরের প্রথা ভেঙে সেবারই প্রথম তিনি রামাল্লায় ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করা থেকে বিরত থাকেন। তবে এবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে বোঝা যায়, দু'পক্ষই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারতের অতি আগ্রহের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দখলদার ইসরাইলকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করতে চায় নয়াদিল্লি। দ্বিতীয়ত, ভারত ইসরাইলের সহযোগিতায় নিজের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে চায়। তৃতীয়ত, ভারতীয় কর্মকর্তাদের ধারণা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তগত করা যাবে। চতুর্থত, ফিলিস্তিনিদের দমনের জন্য ইসরাইল যেসব উপায় উপকরণ বা কৌশল ব্যবহার করে থাকে কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধেও ভারত সরকার তা ব্যবহার করতে চাইছে।
তবে ভারত সরকার গত সাত দশক ধরে ইসরাইলের সঙ্গে গোপন কিংবা প্রকাশ্য সম্পর্ক বজায় রেখে চললেও বেসামরিক ক্ষেত্রে তাদের তেমন লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বরং ইসরাইল ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে। ভারত ইসরাইলের কাছ থেকে বছরে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনে থাকে যা কিনা ইসরাইলের জন্য লোভনীয় বাজার। একই সাথে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র বিক্রিকে হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছে ইসরাইল। এ কারণে, নেতানিয়াহুর ভারত সফরের বিরুদ্ধে সেদেশের জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সম্পর্ক বিস্তারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের সঙ্গে এতো ঘনিষ্ঠতাকে ফিলিস্তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করার শামিল বলে মনে করছেন। ভারত সরকার বায়তুল মোকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোট দিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে যেভাবে নেতানিয়াহুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তাতে বোঝা যায়, বিজেপি সরকার দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সর্বাত্মক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিস্তারে বদ্ধ পরিকর।
ভারতে 'ইসরাইলকে বয়কট কর' আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী গিতা হরিহরণ মনে করেন, "ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নয়াদিল্লি সফর ভারতের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিমুখী নীতির প্রকাশ। কারণ সরকার একদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ভোট দিচ্ছে অন্যদিকে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করছে। কিন্তু ভারতের সচেতন হিন্দু সম্প্রদায় সরকারের এ ধরণের দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং তারা বলছে আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব।"
রাজতন্ত্র শাসিত আরব সরকারগুলো ইসরাইলের সঙ্গে আপোশের নীতি গ্রহণ করায় এখন ভারতও ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে যা কিনা সারা বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আবেগ, অনুভূতি ও ইসরাইল বিরোধী চেতনার পরিপন্থী। কিন্তু ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বায়তুল মোকাদ্দাস দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে নয়াদিল্লির সহযোগিতা বিস্তারের পথে জনগণ এখনো বড় বাধা। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জনমতকে উপেক্ষা করতে পারেন না।
ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক তেলমিয আহমাদ মনে করেন, ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে এখনো ব্যাপক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও তার সমর্থকরা ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে প্রচার চালালেও বাস্তবতা হচ্ছে, ওই সম্পর্ক কখনই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছবে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় জনগণের সমর্থন লাভ ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য নয়াদিল্লীতে অবস্থিত ইসরাইলি দূতাবাসের পক্ষ থেকে দরিদ্রদেরকে অর্থ দেয়ার ঘটনা আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। যদিও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোও একই কৌশল অবলম্বন করে দরিদ্র মুসলমানদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের নিজ ধর্ম ত্যাগ করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে ইসরাইল আসলে উপমহাদেশে তার প্রভাব বিস্তার ও স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কভুক্ত দেশগুলোর ওপরও প্রভাব বিস্তার করা। ইসরাইল আশা করছে এভাবে মহাসাগরে তারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে তাদের জন্য বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর এ সফরের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করেছে সরকার জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে উপেক্ষা করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের চলচ্চিত্র জগতের প্রখ্যাত তিন অভিনেতার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনাকে সবাই ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, নরেন্দ্র মোদি সরকার দখলদার ইসরাইলের ব্যাপারে ভারতীয় জনগণের চিন্তাচেতনার সঙ্গে এখনো পরিচিত হতে পারেনি।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতিবাদে মোম্বাই নগরীর প্রখ্যাত তিন অভিনেতা সালমান খান, আমির খান ও শাহরুক খান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। ভারতের জনগণ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎপর অসংখ্য মানুষ ওই তিন অভিনেতাকে সত্যিকারের বীর হিসেবে অভিহিত করে এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি'র নেতৃবৃন্দ মনে করেন তারাই হচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘাঁটি। তাদের ধারণা ছিল নির্বাচনের আগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন সংবর্ধনা জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী আরএসএস ও শিবসেনাকে খুশী করা যাবে কারণ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এইসব গোষ্ঠীর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে তিন চলচ্চিত্র অভিনেতার অস্বীকৃতি এবং তাদের এ পদক্ষেপের প্রতি অসংখ্য মানুষের সমর্থন থেকে বোঝা যায়, হিন্দু-মুসলমান সবাই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরোধিতা করেছেন এবং এটাকে তারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী পূর্বপুরুষদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করছেন। ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক এমকে বাহাদুর কুমার মনে করেন, দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এতো ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য খুবই বিপদজনক।
ছয় মাস আগে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ইসরাইল সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের সাবেক কর্মকর্তাদের ইসরাইল সফরের প্রথা ভেঙে সেবারই প্রথম তিনি রামাল্লায় ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করা থেকে বিরত থাকেন। তবে এবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে বোঝা যায়, দু'পক্ষই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারতের অতি আগ্রহের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দখলদার ইসরাইলকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করতে চায় নয়াদিল্লি। দ্বিতীয়ত, ভারত ইসরাইলের সহযোগিতায় নিজের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে চায়। তৃতীয়ত, ভারতীয় কর্মকর্তাদের ধারণা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তগত করা যাবে। চতুর্থত, ফিলিস্তিনিদের দমনের জন্য ইসরাইল যেসব উপায় উপকরণ বা কৌশল ব্যবহার করে থাকে কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধেও ভারত সরকার তা ব্যবহার করতে চাইছে।
তবে ভারত সরকার গত সাত দশক ধরে ইসরাইলের সঙ্গে গোপন কিংবা প্রকাশ্য সম্পর্ক বজায় রেখে চললেও বেসামরিক ক্ষেত্রে তাদের তেমন লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বরং ইসরাইল ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে। ভারত ইসরাইলের কাছ থেকে বছরে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনে থাকে যা কিনা ইসরাইলের জন্য লোভনীয় বাজার। একই সাথে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র বিক্রিকে হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছে ইসরাইল। এ কারণে, নেতানিয়াহুর ভারত সফরের বিরুদ্ধে সেদেশের জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সম্পর্ক বিস্তারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের সঙ্গে এতো ঘনিষ্ঠতাকে ফিলিস্তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করার শামিল বলে মনে করছেন। ভারত সরকার বায়তুল মোকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোট দিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে যেভাবে নেতানিয়াহুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তাতে বোঝা যায়, বিজেপি সরকার দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সর্বাত্মক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিস্তারে বদ্ধ পরিকর।
ভারতে 'ইসরাইলকে বয়কট কর' আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী গিতা হরিহরণ মনে করেন, "ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নয়াদিল্লি সফর ভারতের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিমুখী নীতির প্রকাশ। কারণ সরকার একদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ভোট দিচ্ছে অন্যদিকে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করছে। কিন্তু ভারতের সচেতন হিন্দু সম্প্রদায় সরকারের এ ধরণের দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং তারা বলছে আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব।"
রাজতন্ত্র শাসিত আরব সরকারগুলো ইসরাইলের সঙ্গে আপোশের নীতি গ্রহণ করায় এখন ভারতও ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে যা কিনা সারা বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আবেগ, অনুভূতি ও ইসরাইল বিরোধী চেতনার পরিপন্থী। কিন্তু ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বায়তুল মোকাদ্দাস দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে নয়াদিল্লির সহযোগিতা বিস্তারের পথে জনগণ এখনো বড় বাধা। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জনমতকে উপেক্ষা করতে পারেন না।
ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক তেলমিয আহমাদ মনে করেন, ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে এখনো ব্যাপক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও তার সমর্থকরা ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে প্রচার চালালেও বাস্তবতা হচ্ছে, ওই সম্পর্ক কখনই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছবে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় জনগণের সমর্থন লাভ ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য নয়াদিল্লীতে অবস্থিত ইসরাইলি দূতাবাসের পক্ষ থেকে দরিদ্রদেরকে অর্থ দেয়ার ঘটনা আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। যদিও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোও একই কৌশল অবলম্বন করে দরিদ্র মুসলমানদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের নিজ ধর্ম ত্যাগ করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে ইসরাইল আসলে উপমহাদেশে তার প্রভাব বিস্তার ও স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কভুক্ত দেশগুলোর ওপরও প্রভাব বিস্তার করা। ইসরাইল আশা করছে এভাবে মহাসাগরে তারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।
No comments