উজানে ভারতের বাঁধ লালমনিরহাটের তিস্তা শুকিয়ে ধুধু বালুচর
লালমনিরহাট
জেলার পাঁচ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন ধু-ধু বালু
চরে পরিণত হয়েছে। তিস্তার উজানে ভারতের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণের কারণে এর
বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও পুরো কৃষি সেক্টরে। পানি না থাকায়
চলতি বোরো মওসুমে সেচ কাজেও বিঘ্ন ঘটছে নদীসংলগ্ন চরাঞ্চলের কৃষকদের। ১৯৭৯
সালের ১২ ডিসেম্বর প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর দেশের
বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, প্রতি
বছর বন্যা মওসুমে অধিক পরিমাণ বালু ও পলি জমে তিস্তা নদী নিয়মিত ড্রেজিং না
করায় এবং ভারত পানি বণ্টন চুক্তি লঙ্ঘন করায় প্রায় প্রতি বছরেই তিস্তা
নদীতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে
গিয়ে স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে নদী
খননের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করা এবং ভারত শুষ্ক মওসুমে পানির ন্যায্য
হিস্যা না দেয়ায় তিস্তা নদী এখন মৃতপ্রায়। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প
তিস্তা ব্যারাজ থেকে তিস্তা রেল ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১৪০ কিলোমটিার দীর্ঘ
নদীজুড়ে ধু-ধু বালু চর। ফলে কয়েক মাস থেকে নৌ চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। দেখলে
মনে হয় তিস্তা নদী এখন মরুভূমি। নদীতে পানি না থাকায় চরাঞ্চলের শত শত জেলের
ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের
রুজি-রুটির পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা চরের জেলে
আজাদ মিয়া (৬০) জানান, মাছ শিকার করতে না পারায় অনাহারে-অর্ধাহারে তার
পরিবারের দিন কাটছে। তিনি আরো জানান, সংসার চালাতে না পারায় বাপ-দাদার পেশা
বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী ২০২৫
সালের আগেই তিস্তা নদী মরাখালে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়
পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, তিস্তা নদীর উজানে ভারতের গজল ডোবায় বাঁধ
নির্মাণের করায় তিস্তা নদী ক্রমেই তার নাব্যতা হারিয়ে মরা তিস্তায় পরিণত
হচ্ছে।
ফলে নদী লাগোয়া লাখ লাখ মানুষের জীবনে বর্তমানে নেমে এসেছে হাহাকার
অবস্থা। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজসংলগ্ন এলাকার কৃষক মজিদ
মিয়া, আলম মিয়া, নুরনবী হোসেনসহ আরো অনেকেই বলেন, ভারতের বিমাতাসুলভ আচরণ ও
তিস্তা নদীর পানি ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার কারণে শুষ্ক মওসুমে ইরি-বোরো
চাষ করতে পরেন না তারা। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যারাজ পরিচালন ও
রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতি বছর
এ মওসুমে তিস্তা নদীতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। ১৯৭৯ সালের লালমনিরহাটের
হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর প্রায় এক হাজার ৫০০
কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প ‘তিস্তা ব্যারাজ’ নির্মাণ করা হয়। এ
প্রকল্পের উত্তরের আটটি জেলার ৩৫টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার
হেক্টরের ইরি-বোরো মওসুমে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু
তিস্তা ব্যারাজের ১০০ কিলোমিটার উজানে ভারত গজলডোবায় এক বাঁধ নির্মাণ করে
পানি আটকে দেয়ার কারণে পুরো প্রকল্পে ভাটা পড়ে। পরে মাত্র ৬৫ হাজার হেক্টর
জমি নিয়ে সেচ প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাও
পানির অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি
ইরি-বোরো মওসুমে পতিত থাকে। শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশ যেখানে ২০ হাজার কিউসেক
পানির প্রয়োজন সেখানে বাংলাদেশ পায় মাত্র ৪০০ কিউসেক।
No comments