আবারো ৩টি নতুন ব্যাংক অনুমোদন পেতে যাচ্ছে
আবারো
তিনটি নতুন ব্যাংক অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। এই তিন ব্যাংক হচ্ছে বাংলা
ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক লিমিটেড। বাংলা ব্যাংকের প্রধান
উদ্যোক্তা হলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো: জসিম উদ্দিন। তিনি
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি ছিলেন। পিপলস ব্যাংকের
প্রধান উদ্যোক্তা হলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র
প্রবাসী এম এ কাশেম, যিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অন্যদিকে
সিটিজেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা হচ্ছেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইকবাল। গত বছরের শেষ
দিকে বাংলা ও পিপলস ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে
সুপারিশ করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এখন সিটিজেন
ব্যাংকের বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি চিঠি
পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৫৭টি
বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও নতুন তিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার
অনুমোদনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান
সরকারের আমলে ৯টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এই ব্যাংকগুলোর
মধ্যে অন্ততপক্ষে তিনটির আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। বাদবাকিগুলো অধিকাংশই
কোনো রকমে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে। নতুন ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে জানতে
চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের শীর্ষ
মহলের সম্মতি পাওয়ার পর গত বছর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলা ও পিপলস
ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন
আমরা সিটিজেন ব্যাংক লিমিটেড নামে অপর একটি ব্যাংকের সম্মতির বিষয়ে
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গত সপ্তাহে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। সেখান থেকে সম্মতি
পাওয়া গেলে ওই ব্যাংককেও অনুমোদন দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে
সুপারিশ করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এ বিষয়ে
মন্তব্য করেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নতুন ব্যাংক খোলার বিষয়ে আমাদের
কাছে সুপারিশ করতে পারে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আগামী পরিচালনা পর্ষদে এ
বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এর আগে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক
ব্যাংক রয়েছে। তারপরও দেশের প্রচুর অঞ্চল ব্যাংক সেবার বাইরে রয়েছে। এ
কারণেই নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। আমরা আরো তিন বা চারটি ব্যাংক
প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেবো।
তিনি বলেন, অনেকগুলো ব্যাংক একীভূত (মার্জার)
করার চেষ্টা চলছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরের মতো দেশে নতুন করে ব্যাংক
প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে আসছে। এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে নতুন
ব্যাংক হিসেবে সিটিজেন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে বাংলাদেশ
ব্যাংকের মতামত চেয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়,
‘সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরো সুশৃঙ্খল
করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে ৯টি ব্যাংকের অনুুমোদন প্রদান করা হয়। কিন্তু এই
ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার হার, সম্পদের ওপর মুনাফার হার ক্রমান্বয়ে
হ্রাস পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসব ব্যাংকের ইক্যুইটি মূলধনের ওপর মুনাফার
হারও সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই কয়েকটি নতুন
ব্যাংকের বিরূপ শ্রেণীকরণ ঋণের হার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে নতুন
দুটি ব্যাংকের পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’ নতুন ব্যাংকগুলো লাইসেন্সের
শর্ত পরিপালন করছে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতে তুলে ধরা হয়। এতে বলা
হয়, ‘নতুন ব্যাংকগুলো তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যু,
মোট ঋণ ও অগ্রিমের অন্তত ৫ শতাংশ কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে বিনিয়োগ করার ইত্যাদি
শর্তে প্রদান করা হলেও ব্যাংকগুলো তা পরিপালন করতে সক্ষম হয়নি। এখন এই
প্রেক্ষাপটে ও বিরাজমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে আরো নতুন বেসরকারি
বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা
বজায় রাখার জন্য সহায়ক হবে না বলে ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক মতামত ব্যক্ত
করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতে সর্বশেষ বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে
অর্থমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘বাংলা ব্যাংক লিমিটেড’ ও ‘পিপলস ব্যাংক লিমিটেড’
নামে দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এই
দুটি ব্যাংকের বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর লাইসেন্স
প্রদানসংক্রান্ত বিধিবিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুুসৃত নিয়ম অনুযায়ী
পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় এ পর্যায়ে আরো
একটি নতুন ব্যাংক অনুমতি দেয়ার বিষয়ে উপরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেয়ার
যৌক্তিকতা রয়েছে।’
No comments