ইসলামের সর্বজনীন উৎসব ঈদ

‘ঈদুল ফিতর’ কথাটি আরবি। ‘ঈদ’ মানে আনন্দ–উৎসব; যা বারবার ফিরে আসে প্রতিবছর। রমজানের রোজার শেষে এ ঈদ আসে বলে এর নাম ‘ঈদুল ফিতর’। বাংলায় আমরা বলি রোজার ঈদ। মুসলিম মিল্লাতের দুটি ঈদের একটি ঈদুল ফিতর। সুতরাং ঈদুল ফিতর বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহা উৎসব। এটি আরবি হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের প্রথম দিন। রমজান মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘রমজানুল মোবারক’, মানে বরকতময় রমজান। শাওয়াল মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘শাউওয়ালুল মুআজ্জম’, অর্থাৎ মহিমাময় শাওয়াল। এই মাসের প্রথম দিনই ঈদ বা উৎসব। এই দিনে ‘জাকাতুল ফিতর’ বা ‘সদকাতুল ফিতর’ তথা ফিতরা প্রদান করা হয়; তাই এটি ঈদুল ফিতর।
ঈদের আনন্দ
ঈদের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে সবাই হাতে হাত মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মেলানো অর্থাৎ সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহংকার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা, রাগ, ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আনন্দ। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে; দ্বিতীয়টি হলো যখন সে তার মাবুদ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (বুখারি)। রোজাদার প্রতিদিন ইফতার করে; আবার পরের দিন রোজা রাখে। এটি হলো ছোট ইফতার; কারণ এটির পর আবারও রোজা আসে। ইফতার বা ফিতর হলো রোজা পূর্ণ করার পর আহার গ্রহণ করা; পূর্ণ রমজান মাস রোজা পালন শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন সকালে যখন রোজাদার মিষ্টিমুখ করে তখন সে এক বছরের জন্য প্রকৃত অর্থে ইফতার করে বা সিয়াম সাধনা সম্পূর্ণ করে আজ প্রথম সকালের আহার গ্রহণ করে; তাই এটি এক বছরের জন্য বড় ইফতার; সুতরাং ঈদুল ফিতর রোজাদার মুমিন মুসলমানের জন্য পরম আনন্দের দিন।
ঈদের তাৎপর্য
প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠী নির্দিষ্ট দিনে আনন্দ করে থাকে। সাধারণত দেখা যায় যারা ধনী, তারা আনন্দ-ফুর্তি করে, গরিব-অসহায়রা তা থেকে বঞ্চিত থাকে। ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে তা নয়, বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে। মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ ঈদুল ফিতর। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। যাঁরা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাঁদের জন্য ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে। ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য হলো—আমি আল্লাহ পাকের একটা বড় ইবাদত পালন করার তৌফিক পেয়েছি বলে আমি মহাখুশি; তাই তার শোকর আদায় করার জন্য ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি। এ জন্যই ঈদের নামাজকে সালাতুশ শুকর তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামাজ বলা হয়। এতে মুমিন বান্দার জন্য আনন্দও আছে, সেই আনন্দ খুশির বহিঃপ্রকাশ করা হয় আরেকটি হুকুম পালন করার মাধ্যমে। এ হলো আমাদের ঈদের আনন্দ–উৎসবের তাৎপর্য; কারণ, আমাদের আনন্দ–উৎসব সবই ইবাদত। এতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ রয়েছে। ঈদ দিয়েছেন আল্লাহ পাক, তা পালন করতে হবে আল্লাহর বিধান ও রাসুলের নির্দেশিত নিয়মের মাধ্যমে। তাই আমাদের ঈদে সব ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সব ক্ষেত্রে ইসলামি আদর্শ ও সুন্নত নিশ্চিত করতে হবে।
ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ
২৯ রমজান ঈদের চাঁদ দেখা সুন্নত; এদিন চাঁদ না উঠলে ৩০ রমজানও চাঁদ দেখা সুন্নত, যদিও এদিন চাঁদ দেখা না গেলেও পরদিন ১ শাওয়াল তথা ঈদুল ফিতর হবে। ঈদের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। ঈদের রাত হলো ইবাদতের বিশেষ রাতগুলোর অন্যতম; তাই ঈদের রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা উচিত। ঈদের আগেই শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা যেমন: হাত-পায়ের নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা উচিত। ঈদের দিন সকালে গোসল করতে হবে। এরপর নতুন পোশাক বা সাধ্যমতো ও সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর এবং উত্তম ইসলামি সুন্নতি লেবাস পরতে হবে। চাইলে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে। ঈদের দিন সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে (আগে আদায় করলেও হবে)। এরপর পুরুষেরা ঈদগাহে গিয়ে ঈদের জামাতে শামিল হবেন। (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম; আল ফিকহুল ইসলামি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.