রাহার মৃত্যু নিয়ে লুকোচুরি তদন্তে পুলিশ by নূরুজ্জামান
মডেল কন্যা রাহার বাসায় কি ঘটেছিল সেই
রাতে? কেন তার অকাল মৃত্যু হয়েছে? কেনই বা মৃত্যুর কারণ নিয়ে লুকোচুরি করা
হয়েছে? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গতকালই কবর
থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এর
আগে রাহা’র পিতা আলী আজগর মোহাম্মদপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। অবশ্য
মামলা করার আগে তিনি কন্যার মৃত্যু নিয়ে নানা লুকোচুরি করেছেন। একেকবার
একেক রকম তথ্য দিয়েছেন। এমনকি গোপনে লাশ দাফনের সময় রাহার পরিচয় পর্যন্ত
আড়াল করেছিলেন। পরে কবরস্থান থেকে এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তিনি বাধ্য হয়ে
রোববার দিবাগত রাতে থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। এতে উল্লেখ করেছেন, কয়েক
দিন ধরে তার কন্যা রাহা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিল। তাকে ‘অন্যমনা’ মনে
হয়েছে। পরে শনিবার সকালে রাহার বেডরুমে গিয়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা
ওড়নায় ঝুলতে দেখা গেছে। তখন তড়িঘড়ি করে নামিয়ে চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। ওইসময়
চিকিৎসক তার শরীর পরীক্ষা করে জানান, কয়েক ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
সরবরাহ করার কারণে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। এখন লাশ উত্তোলনের পর ময়না তদন্তের
প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তিনি বলেন, আজিমপুর কবরস্থান থেকে লাশ
উত্তোলনের আবেদন করা হয়েছে আদালতে। আদালত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পর লাশ
উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। তদন্ত সূত্রমতে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে রাহার
রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরের দিন শনিবার দুপুরের আগেই আজিমপুর কবরস্থানে তাকে
দাফন করা হয়। কবরস্থানের রেজিস্ট্রার বুকে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে মানসিক
প্রতিবন্ধী হিসেবে। শুধু তাই নয়, তার নাম-ঠিকানা পর্যন্ত আড়াল করা হয়েছে।
এতে লেখা হয়েছে, সুমাইয়া (২২), পিতা আলী আকবর। বাসা ২৯/১৫, তাজমহল রোড।
মৃত্যু হয়েছে ‘শ্বাসকষ্টে’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার
নূরুল হুদা মানবজমিনকে বলেন, সুমাইয়া যে এত বড় নায়িকা ছিলেন সে বিষয়ে কোন
তথ্যই দেননি তারা। লাশের কাগজপত্র চাইলে বলেছিলেন, শ্বাসকষ্টে মারা গেছে।
তাই ময়না তদন্ত হয়নি। পুলিশকেও জানানো হয়নি। লাশ দাফনের সময় সুমাইয়ার
পিতা, খালাতো ভাইসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রায় ২০-২৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কবরস্থানের রেজিস্ট্রারে ‘শ্বাসকষ্ট’, সাংবাদিকদের কাছে ‘হৃদরোগ’ ও
অপমৃত্যু মামলার এজাহারে ‘আত্মহত্যা’র ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেয়ায় রহস্য আরও
ঘনীভূত হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা রাহা আত্মহত্যা করেনি,
তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর নেপথ্যে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত, যারা রাহার
দরিদ্র পিতা-মাতাকে কৌশলে ম্যানেজ করেছে। রাহার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে
ব্ল্যাকমেইল করেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জোনের একজন পুলিশ কর্মকর্তার
বিরুদ্ধেও নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সূত্রমতে, অভিনেত্রী রাহার পিতার নাম
শেখ আজগার আলী। তিনি পিতামাতার সঙ্গে মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিংয়ের ২
নম্বর সড়কের ৪১/সি মেঘহিল ভবনের চতুর্থ তলার বি-১০ ফ্লাটে থাকতেন। শেখ
আজগার আলী বলেন, এমনিতেই নানা কুকথা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিকভাবে হীনম্মন্যতায়
ভুগছিলাম। মেয়েকে নিয়ে নানা ধরণের গুজব শুনে আতঙ্কিত হয়েই গোপনে দাফন
করেছি। পরে ভুল বুঝতে পেরে থানায় আসল কথা প্রকাশ করেছি। এর আগে বলেছিলেন,
শুক্রবার গভীর রাতে রাহা ঘুমাতে যায়। শনিবার সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালেও ঘুম
থেকে ওঠেনি। অনেক ডাকাডাকি করেও তার কক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল
না। এ কারণে আমি নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখি রাহা নিথর হয়ে পড়ে আছে। তার
চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়েও কোন লাভ হয়নি। পরে আমি এবং আমার স্ত্রী ফাতেমা
বেগম মিলে দেখি রাহা আর নেই। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে রাহার দাফনের উদ্যোগ
নিই। কবরস্থানের নিবন্ধক নুরুল হুদা বলেন, শনিবার দুপুরে গোরস্থানে দু’জন
নারীর লাশ দাফন হয়। এর মধ্যে একজন রমনা এলাকার জনৈকা তাহসিনা আক্তার (৪৫)।
তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান বলে তার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে লেখা ছিল।
অন্যজনের লাশ আসে মোহাম্মদপুর থেকে। লাশের নাম নিবন্ধনের খাতায় তার নাম
লেখা হয় সুমাইয়া (২২)। পিতার নাম মো. আলী আকবর। নুরুল হুদা বলেন, সুমাইয়ার
নিবন্ধনে তাকে প্রতিবন্ধী এবং হাঁপানি রোগী দেখিয়ে অভিভাবকের স্থানে জামাল
উদ্দিন নামে একজন স্বাক্ষর করেন। জামাল উদ্দিন নিহতের বড়ভাই বলে পরিচয় দেন।
ওদিকে যে রাতে রাহার মৃত্যু হয়, সেই রাতেই নায়ক এম এ জলিল অনন্ত ও নায়িকা
আফিয়া নুসরাত বর্ষা দাম্পত্য কলহের জের ধরে মোহাম্মদপুর থানায় পাল্টাপালি
জিডি করেন। রাহার মৃত্যুর সঙ্গে অনন্ত-বর্ষার পাল্টাপাল্টি জিডির সম্পর্ক
আছে কিনা জানতে চাইলে ওসি আজিজুল হক বলেন, এখন সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
No comments