সংলাপে প্রস্তুত জোট-মহাজোট by সফিকুল ইসলাম
সম্প্রতি সময়ে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা
থেকে উত্তরণের জন্য শর্তহীনভাবে সংলাপে বসতে প্রস্তুত জোট-মহাজোট। রাজনৈতিক
সংকট সমাধানে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট এবং বিরোধী দলে থাকা ১৮ দলীয় জোট
নেতাদের বক্তব্যে এমনটি স্পষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু এতকিছুর পরও শর্তের বেড়াজাল আটকে যাচ্ছে সংলাপের পথ।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্প্রতি বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলায় বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় উঠে আসে। গত ৭ মার্চ সংকট নিরসনে যে কোনো বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। আওয়ামী লীগ আলোচনার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলে ও জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি প্রস্তুত থাকলে আওয়ামী লীগ সংলাপে প্রস্তুত। তবে সংলাপ হতে হবে শর্তহীন।
সূত্র আরো জানায়, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় মহাজোটের অধিকাংশ নেতা চায় শর্তহীন সংলাপ। কোনো শর্তের বিনিময়ে সংলাপে বসতে রাজি নয় তারা। একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের শর্তে সংলাপে বসতে চায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানে সরকার সম্মত হলে সংলাপে যাবে এ জোট। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতারা বলেছেন, অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আগের অবস্থানেই ১৪ দলীয় জোট। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করতে পারে। তবে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে বাতিল হওয়া অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে কোনোভাবেই ফিরে যাবে না সরকারি দল। তাদেরমতে, দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট-সংঘাত নিরশনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কি হবে এ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এতে বিএনপি রাজি না হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে ওই সরকারই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে গত বছর মহাজোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত রূপরেখায় নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একটি ছোট মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ধারণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রস্তাব অথবা বিরোধী দলের নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে অন্য কোনো প্রস্তাব থাকলে সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করেন, মহাজোট নেতারা। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে ও মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিশ্বের বড় বড় সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হয়েছে। কিন্তু কোনো অপরাধীর সাথে কেউ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান দিয়েছে বা হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। তিনি বলেন, সংলাপ আমরা ও চাই। বিএনপি যদি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াকে ত্যাগ করে আসে, তবেই সংলাপের দোয়ার খোলতে পারে। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে যেকোনো সময় বিরোধী দলের সাথে আলোচনা হতে পরে। তবে ওই আলোচনা কোনো শর্তদিয়ে নয়। তিনি বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো অস্থিত্ব না থাকায় এ নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন সম্ভব, অনির্বাচিতদের দিয়ে সম্ভব না।
জাতীয় যে কোনো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ সবসময় প্রস্তুত বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে সংলাপের জন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। কারণ আমরা চাই আমাদের দেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাক।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সরকারের নিকট আমাদের একটাই এজেন্ডা। তিনি বলেন, সরকার যদি জনগণ ও দেশের কথা চিন্তা করে, তবে আমাদের এই কথাগুলি বিবেচনা করবে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাই। সরকার যদি জনগণের এ দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখিতভাবে আমাদের প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আচি। তিনি বলেন, দেশের বিরাজমান সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
No comments