ডালিম বা বেদানার অজানা পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য গুনাগুন
বেদানা
বা ডালিমকে স্বর্গীয় ফল বলা হয়। কারণ এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধের জাদুকরী গুনাগুন। ডালিম বা বেদানা ফল মোটামুটি সারা বছর পাওয়া
গেলেও এখন চলছে ডালিমের ভরা মৌসুম। আপেলের মতো ডালিমও রোগীর উপকারি ফল
হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এর ইংরেজি নাম pomegranate। বৈজ্ঞানিক নাম Punica
granatum। বেদানা, আনার বা ডালিম এক রকমেরই ফল। বাংলাদেশের অনেক স্থানে এটি
বেদানা নামেও পরিচিত।
পাঞ্জাব ও কাশ্মীরেও এ ফলকে বেদানা বলে। বেদানা আকারে ডালিমের চেয়ে অনেক ছোট এবং মিষ্টি স্বাদের। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। কুর্দি ভাষায় ‘হিনার’ এবং আজারবাইজানি ভাষায় একে ‘নার’ বলা হয়। সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় ‘দারিম’। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলোই খেতে হয়। এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ডালিম ফল ডালিমগাছের পাতা, ছাল, মূল, মূলের ছাল সবই ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।
বর্তমানে এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুস্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং ক্রান্তীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। স্পেনীয়রা ১৭৬৯ সালে ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে বেদানা নিয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ও এরিজোনায় এর চাষ হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমে জন্মে। দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি জন্মে।
ডালিম ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ এবং লাল হয়। ফলের ভিতরে বীজের কোষ হয় এবং কোষের উপর পাতলা আবরণ থাকে। পাকা ফলে বীজ গোলাপী ও সাদা হয়। সাধারণত মে মাসে ফুল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। তিন প্রকার স্বাদের ডালিম দেখা যায় যথা, মিষ্টি, টক মিষ্টি এবং অম্লরস। দেশ ভেদে ডালিমের আকৃতি ও স্বাদের পার্থক্য দেখা যায়। ডালিমের সবচেয়ে ভালো প্রজাতির নাম— স্পেনিশ রুবি। এ ছাড়া অন্যান্য ভালো প্রজাতিগুলো হলো— ঢোল্কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, পেপার শেল, মাসকেড রেড, বেদানা ও কান্ধারী। ডালিম ফলের মোট ওজনের বৃহত্তর অংশই খোসা ও বীজ। ফুল ভেদে ডালিমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক প্রকার গাছে শুধুমাত্র পুং ফুল ফোটে অন্যটিতে পুং এবং স্ত্রী দু’প্রকার ফুলই ফোটে।
ডালিম গাছ বেশ সহনশীল বলে অনুর্বর মাটিতে এটি সহজেই জন্মায়। নিয়মিত পরিচর্যা নিলে ডালিম গাছ থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ডালিমের চাহিদা ও বাজার মূল্যও বেশ ভালো। আয়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে অন্য যেকোন ফলের তুলনায় ডালিমের চাষাবাদ কোন অংশেই কম নয়। কেননা, ডালিমের মূল্য বেশি হওয়ায় মধ্যম আকৃতির একটি ডালিম গাছ থেকে বছরে ৩০০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে। তাই বাংলাদেশে ডালিমের চাষাবাদ বেশ লাভজনক ও সম্ভাবনাময়।
পুষ্টিমান ও ব্যবহার :
ডালিমের পুষ্টিমান, ওষুধি গুণ ও বহুবিদ ব্যবহার অনেক ধর্মীয় বই থেকে অনেক স্থানে লেখা আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি, ১.৫ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার সব জায়গায় পরিচিত।
ঔষধিগুনাগুন :
ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পৈথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে ডালিম হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল রক্তস্রাবনাশক।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে:
আমাদের জীবনযাত্রায় অন্যতম আতঙ্ক রোগ হল হৃদরোগ। আর শরীর সুস্থ রাখতে হলে নিজেকে সচল রাখতে হবে। খাওয়া-দাওয়ায় সচেতন থাকতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যস্ততার জন্য আমরা খুব বেশি জাঙ্ক ফুড কে খাবার হিসাবে বেছে নিয়েছি এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের হৃদয়। তাই হৃদরোগ আমাদের জীবনযাত্রার সাথে যেন জড়িয়ে গিয়েছে। আর প্রতিদিন এই সকল তেল চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকার ফলে আমাদের ধমনীর আবরণে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে যাচ্ছে। যার ফলে ধমনী আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে সংকুচিত হতে থাকে। হাতের কাছেই আছে হৃদরোগ ভালো রাখার উপায়। মাংস পেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দেয় বেদানা রস। প্রতিদিন একটা বেদানার রস আপনাকে দিতে পারে হৃদরোগের হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি। নিয়মিত বেদানার রস এই চর্বির স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার করে। বেদানায় উপস্থিত থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। যা আমদের শরীরে রক্তের মধ্যে মোনোসাইট কেমোট্যাকটিক প্রোটিন ক্ষতিকর পদার্থ কমিয়ে ফেলে।
ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে :
ডালিম ত্বক সুস্থ রাখতে অনেক উপকার করে। বেদানা বা ডালিম পোমেগ্র্যানেট অয়েল ময়শ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে ও ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে প্রতিরোধ তৈরি করে থাকে। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক আসিড, ট্যানিন সমৃদ্ধ বেদানা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষ উপকারী।
স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে :
ডালিম বা বেদানার রস ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক উপকারি খাদ্য। এক গবেষণায় দেখা গেছে স্কিন ক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে বেদানার রস সাহায্য করে। এবং অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য বেদানা রস খুবই উপকারি।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে :
রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য বেদানাতে রয়েছে প্রচুর আয়রন। রুচি বৃদ্ধি করে, কোষ্ট কাঠিন্য রোধ করে। জন্ডিস, বুক ধড়ফড়ানি, বুকের ব্যথা, কাশি, কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। পুরনো পেটের অসুখ ও জ্বর সারাতে সাহায্য করে।
হাড় ভালো রাখতে :
হাড়ের সংযোগস্থলে কার্টিলেজ নামে অস্থি রস থাকে যা হাড়ের ক্ষতি করে। বেদানার রসে আছে পটাশিয়াম ও পলিফেনল যা কিনা কার্টিলেজ নামক রোগ রোধ করার জন্য খুবই উপকারী। আর হাড়ের নানাবিধ রোগ যেমন হাড়ের রোগ অস্টিওপোরেসিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই ফলটি থেকে।
দাঁতের যত্নে :
বেদানাতে উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কিনা দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। জিন জিভাইটিস নামে মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করতে বেদানার ভূমিকা অপরিসীম। আমরা আমাদের দাঁত ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন অল্প হলেও বেদানা খাওয়া উচিত।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ :
অনেকে ভাবেন ডায়ারিয়া হলে বেদানা খাওয়া ঠিক না। কিন্তু ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে বেদানার রস খুবই উপকারি। ডায়রিয়া হলে সকাল-বিকাল বেদানার রস খেলে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে :
শীতের সময় সর্দি-কাশি লেগেই থাকে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে আমরা বেদানার রস ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। ঠান্ডায় খুব বেশি কাবু হয়ে গেলে বেদানার রস খেয়ে দেখলে পার্থক্যটা নিজেই অনুভব করতে পারবেন। বেদানাতে আছে পটাশিয়াম ও ফাইবার যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ :
বেদানার প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা টক্সিন দূর করে ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রনে বেদানার রসে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এল ডি যা হার্টের মাসলসে অক্সিজেন সরবরাহ ভাল রাখে। ফ্রি রেডিকেলস্ প্রতিরোধ করে কোলেস্টরেল বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। নিজেকে সুস্থ রাখতে কৃত্রিম ওষুধের ওপরে নির্ভরশীল না হয়ে, প্রাকৃতিক উপায় গুলোর প্রতি মনযোগী হয়ে উঠতে হবে। প্রকৃতির অসাধারণ সব উপাদান আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে যার অল্প একটু ব্যবহারই প্রতিদিন আমাদের রাখবে সুস্থ-সতেজ ও রোগ মুক্ত। আবার আর্টারি পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে বেদানা। বেদানার রস তাই রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকারী। এর পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে রোজ বেদানার রস খাওয়া উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :
বেদানার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। প্রতিদিন বেদানার রস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণও গ্রিন টি বা রেড ওয়াইনের থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে রয়েছে তিন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ট্যানিন, অ্যান্থো সিয়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিড। অ্যান্থোসিয়ানিন দেহ কোষ সুস্থ রাখার ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে পারে। ফলে ফোলা ভাব কমে যায়, ক্ষয় রুখতেও সাহায্য করে।
রক্তচাপ কমাতে :
প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণে বেদানা সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে স্ট্রেস, টেনশন কমে। হার্টের সমস্যা থাকলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।পেশির ব্যথা দূর করতে: বাত, অস্টিওআর্থারাইটিস, পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বেদানা। তরুণাস্থির ক্ষয় রুখতেও উপকারী বেদানা।
দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে :
শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বেদানা সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সার নিজে থেকেই মরে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অ্যাপপটোসিস। এর সাহায্যে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বেদানা। প্রস্টেট ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসারে ভাল কাজ করে বেদানার অ্যান্টিক্যানসার এজেন্ট।
ডালিম বা বেদানা গাছের স্বাস্থ্য গুনাগুন :
(১) রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত উপকারী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে গেলে বা কেঁটে রক্তপাত বের হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে।
(২) হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্তঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়। আঘাত, পলিপ বা কোনো কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
(৩) আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভলো ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভালো।
(৪) ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোনো স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভালো কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু’প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।
(৫) গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোনো কোনো মহিলার একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশংকা দূর হয়।
(৬) ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমিনাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগে। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
(৭) শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বেদানার খোসার উপকারিতাগুলো :
সবাই জানে যে বেদানা মানুষের স্বাস্থের জন্য কতটা ফলদায়ক, কিন্তু আপনি কি জানেন বেদানার খোসা কতটা উপকারি? জেনে নিন এখনই -
(১) বেদানার খোসা থেকে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডাইটিস আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল লেবেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে৷
(২) বেদেনার খোসা শুকিয়ে সেদ্ধ করে ঠান্ডা হওয়ার পর বেঁটে মুখে মাখলে ব্রনর সমস্যা দূর হয়৷
(৩) বেদেনার খোসা শুকিয়ে তার পাউডার বানিয়ে গোলাপ পানির সাথে মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়৷
(৪) কাশি বা গলাব্যাথা হলে বেদানার খোসা থেকে তৈরি পাউডার গরমজলে ফুটিয়ে গারগেল করলে আরাম পাওয়া যায়৷
(৫) বেদানার খোসা থেকে তৈরি পাউডার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের সমস্যা এবং মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা দূর হয়৷
তথ্য এবং ছবি : গুগল
পাঞ্জাব ও কাশ্মীরেও এ ফলকে বেদানা বলে। বেদানা আকারে ডালিমের চেয়ে অনেক ছোট এবং মিষ্টি স্বাদের। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। কুর্দি ভাষায় ‘হিনার’ এবং আজারবাইজানি ভাষায় একে ‘নার’ বলা হয়। সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় ‘দারিম’। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলোই খেতে হয়। এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ডালিম ফল ডালিমগাছের পাতা, ছাল, মূল, মূলের ছাল সবই ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।
বর্তমানে এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুস্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং ক্রান্তীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। স্পেনীয়রা ১৭৬৯ সালে ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে বেদানা নিয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ও এরিজোনায় এর চাষ হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমে জন্মে। দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি জন্মে।
ডালিম ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ এবং লাল হয়। ফলের ভিতরে বীজের কোষ হয় এবং কোষের উপর পাতলা আবরণ থাকে। পাকা ফলে বীজ গোলাপী ও সাদা হয়। সাধারণত মে মাসে ফুল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। তিন প্রকার স্বাদের ডালিম দেখা যায় যথা, মিষ্টি, টক মিষ্টি এবং অম্লরস। দেশ ভেদে ডালিমের আকৃতি ও স্বাদের পার্থক্য দেখা যায়। ডালিমের সবচেয়ে ভালো প্রজাতির নাম— স্পেনিশ রুবি। এ ছাড়া অন্যান্য ভালো প্রজাতিগুলো হলো— ঢোল্কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, পেপার শেল, মাসকেড রেড, বেদানা ও কান্ধারী। ডালিম ফলের মোট ওজনের বৃহত্তর অংশই খোসা ও বীজ। ফুল ভেদে ডালিমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক প্রকার গাছে শুধুমাত্র পুং ফুল ফোটে অন্যটিতে পুং এবং স্ত্রী দু’প্রকার ফুলই ফোটে।
ডালিম গাছ বেশ সহনশীল বলে অনুর্বর মাটিতে এটি সহজেই জন্মায়। নিয়মিত পরিচর্যা নিলে ডালিম গাছ থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ডালিমের চাহিদা ও বাজার মূল্যও বেশ ভালো। আয়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে অন্য যেকোন ফলের তুলনায় ডালিমের চাষাবাদ কোন অংশেই কম নয়। কেননা, ডালিমের মূল্য বেশি হওয়ায় মধ্যম আকৃতির একটি ডালিম গাছ থেকে বছরে ৩০০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে। তাই বাংলাদেশে ডালিমের চাষাবাদ বেশ লাভজনক ও সম্ভাবনাময়।
পুষ্টিমান ও ব্যবহার :
ডালিমের পুষ্টিমান, ওষুধি গুণ ও বহুবিদ ব্যবহার অনেক ধর্মীয় বই থেকে অনেক স্থানে লেখা আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি, ১.৫ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার সব জায়গায় পরিচিত।
ঔষধিগুনাগুন :
ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পৈথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে ডালিম হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল রক্তস্রাবনাশক।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে:
আমাদের জীবনযাত্রায় অন্যতম আতঙ্ক রোগ হল হৃদরোগ। আর শরীর সুস্থ রাখতে হলে নিজেকে সচল রাখতে হবে। খাওয়া-দাওয়ায় সচেতন থাকতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যস্ততার জন্য আমরা খুব বেশি জাঙ্ক ফুড কে খাবার হিসাবে বেছে নিয়েছি এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের হৃদয়। তাই হৃদরোগ আমাদের জীবনযাত্রার সাথে যেন জড়িয়ে গিয়েছে। আর প্রতিদিন এই সকল তেল চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকার ফলে আমাদের ধমনীর আবরণে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে যাচ্ছে। যার ফলে ধমনী আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে সংকুচিত হতে থাকে। হাতের কাছেই আছে হৃদরোগ ভালো রাখার উপায়। মাংস পেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দেয় বেদানা রস। প্রতিদিন একটা বেদানার রস আপনাকে দিতে পারে হৃদরোগের হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি। নিয়মিত বেদানার রস এই চর্বির স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার করে। বেদানায় উপস্থিত থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। যা আমদের শরীরে রক্তের মধ্যে মোনোসাইট কেমোট্যাকটিক প্রোটিন ক্ষতিকর পদার্থ কমিয়ে ফেলে।
ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে :
ডালিম ত্বক সুস্থ রাখতে অনেক উপকার করে। বেদানা বা ডালিম পোমেগ্র্যানেট অয়েল ময়শ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে ও ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে প্রতিরোধ তৈরি করে থাকে। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক আসিড, ট্যানিন সমৃদ্ধ বেদানা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষ উপকারী।
স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে :
ডালিম বা বেদানার রস ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক উপকারি খাদ্য। এক গবেষণায় দেখা গেছে স্কিন ক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে বেদানার রস সাহায্য করে। এবং অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য বেদানা রস খুবই উপকারি।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে :
রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য বেদানাতে রয়েছে প্রচুর আয়রন। রুচি বৃদ্ধি করে, কোষ্ট কাঠিন্য রোধ করে। জন্ডিস, বুক ধড়ফড়ানি, বুকের ব্যথা, কাশি, কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। পুরনো পেটের অসুখ ও জ্বর সারাতে সাহায্য করে।
হাড় ভালো রাখতে :
হাড়ের সংযোগস্থলে কার্টিলেজ নামে অস্থি রস থাকে যা হাড়ের ক্ষতি করে। বেদানার রসে আছে পটাশিয়াম ও পলিফেনল যা কিনা কার্টিলেজ নামক রোগ রোধ করার জন্য খুবই উপকারী। আর হাড়ের নানাবিধ রোগ যেমন হাড়ের রোগ অস্টিওপোরেসিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই ফলটি থেকে।
দাঁতের যত্নে :
বেদানাতে উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কিনা দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। জিন জিভাইটিস নামে মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করতে বেদানার ভূমিকা অপরিসীম। আমরা আমাদের দাঁত ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন অল্প হলেও বেদানা খাওয়া উচিত।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ :
অনেকে ভাবেন ডায়ারিয়া হলে বেদানা খাওয়া ঠিক না। কিন্তু ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে বেদানার রস খুবই উপকারি। ডায়রিয়া হলে সকাল-বিকাল বেদানার রস খেলে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে :
শীতের সময় সর্দি-কাশি লেগেই থাকে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে আমরা বেদানার রস ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। ঠান্ডায় খুব বেশি কাবু হয়ে গেলে বেদানার রস খেয়ে দেখলে পার্থক্যটা নিজেই অনুভব করতে পারবেন। বেদানাতে আছে পটাশিয়াম ও ফাইবার যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ :
বেদানার প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা টক্সিন দূর করে ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রনে বেদানার রসে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এল ডি যা হার্টের মাসলসে অক্সিজেন সরবরাহ ভাল রাখে। ফ্রি রেডিকেলস্ প্রতিরোধ করে কোলেস্টরেল বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। নিজেকে সুস্থ রাখতে কৃত্রিম ওষুধের ওপরে নির্ভরশীল না হয়ে, প্রাকৃতিক উপায় গুলোর প্রতি মনযোগী হয়ে উঠতে হবে। প্রকৃতির অসাধারণ সব উপাদান আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে যার অল্প একটু ব্যবহারই প্রতিদিন আমাদের রাখবে সুস্থ-সতেজ ও রোগ মুক্ত। আবার আর্টারি পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে বেদানা। বেদানার রস তাই রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকারী। এর পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে রোজ বেদানার রস খাওয়া উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :
বেদানার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। প্রতিদিন বেদানার রস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণও গ্রিন টি বা রেড ওয়াইনের থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে রয়েছে তিন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ট্যানিন, অ্যান্থো সিয়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিড। অ্যান্থোসিয়ানিন দেহ কোষ সুস্থ রাখার ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে পারে। ফলে ফোলা ভাব কমে যায়, ক্ষয় রুখতেও সাহায্য করে।
রক্তচাপ কমাতে :
প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণে বেদানা সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে স্ট্রেস, টেনশন কমে। হার্টের সমস্যা থাকলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।পেশির ব্যথা দূর করতে: বাত, অস্টিওআর্থারাইটিস, পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বেদানা। তরুণাস্থির ক্ষয় রুখতেও উপকারী বেদানা।
দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে :
শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বেদানা সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সার নিজে থেকেই মরে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অ্যাপপটোসিস। এর সাহায্যে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বেদানা। প্রস্টেট ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসারে ভাল কাজ করে বেদানার অ্যান্টিক্যানসার এজেন্ট।
ডালিম বা বেদানা গাছের স্বাস্থ্য গুনাগুন :
(১) রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত উপকারী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে গেলে বা কেঁটে রক্তপাত বের হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে।
(২) হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্তঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়। আঘাত, পলিপ বা কোনো কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
(৩) আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভলো ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভালো।
(৪) ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোনো স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভালো কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু’প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।
(৫) গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোনো কোনো মহিলার একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশংকা দূর হয়।
(৬) ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমিনাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগে। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
(৭) শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বেদানার খোসার উপকারিতাগুলো :
সবাই জানে যে বেদানা মানুষের স্বাস্থের জন্য কতটা ফলদায়ক, কিন্তু আপনি কি জানেন বেদানার খোসা কতটা উপকারি? জেনে নিন এখনই -
(১) বেদানার খোসা থেকে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডাইটিস আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল লেবেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে৷
(২) বেদেনার খোসা শুকিয়ে সেদ্ধ করে ঠান্ডা হওয়ার পর বেঁটে মুখে মাখলে ব্রনর সমস্যা দূর হয়৷
(৩) বেদেনার খোসা শুকিয়ে তার পাউডার বানিয়ে গোলাপ পানির সাথে মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়৷
(৪) কাশি বা গলাব্যাথা হলে বেদানার খোসা থেকে তৈরি পাউডার গরমজলে ফুটিয়ে গারগেল করলে আরাম পাওয়া যায়৷
(৫) বেদানার খোসা থেকে তৈরি পাউডার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের সমস্যা এবং মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা দূর হয়৷
তথ্য এবং ছবি : গুগল
No comments