৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী- চিরঞ্জীব মানিক মিয়া by আদিত্য আরাফাত

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। এদেশের সাংবাদিকতার জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৪৩ বছর আগে আজকের এ দিনে অসংখ্য সহকর্মীকে শোকের সাগরে ফেলে চলে গেছেন জীবনের অন্তরালে।
প্রতিবছর ১ জুন এলেই সাংবাদিকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম এ পুরোধা-পুরুষকে গভীরভাবে স্বরণ করে। শনিবার তার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
 
নিজের সম্পাদনায় দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানিক মিয়া বাংলা ভাষার সাংবাদিকতায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অসংখ্য সাংবাদিক তৈরি করেছেন তিনি। ইত্তেফাক হয়ে ওঠে সাংবাদিক তৈরির কারখানা। নানা ঘটনায় ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে তার সম্পাদিত পত্রিকাটি।

গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং হতাশা-বেদনাকে সহজ-সরল অথচ বলিষ্ঠ ভাষায় তুলে ধরার যাদুকরী ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে। সাংবাদিকতার মাধ্যমে জনকল্যাণে নিজেকে সঁপে দিয়ে আমৃত্যু তিনি নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।

১৯৬৯ সালের ২৬ মে মানিক মিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডি যান। সেখানে ৩১ মে রাতে আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তার জন্ম ১৯১১ সালে বর্তমান পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়ায়।

১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৬৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউটের সেক্রেটারি এবং ১৯৫৬ সাল থেকে দুই বছরকাল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের (পিআইএ) পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এ দেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ইতিহাসের এক মাইলফলক। পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সামরিক শাসনের অবসানে মানিক মিয়ার অবদান স্মরণীয়। ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি মানিক মিয়ার দৃঢ় সমর্থন এবং দৈনিক ইত্তেফাকের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে ইত্তেফাকের প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এর ছাপাখানা নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের ২৯ মার্চ মানিক মিয়া মুক্তি লাভ করেন। এর আগেও তাকে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে গ্রেফতার করে জেলখানায় পাঠানো হয় রাজনৈতিক কারণে।
জনতার দাবির মুখে আইউব সরকার ১৯৬৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাকের প্রকাশনার ওপর থেকে বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়।

ইত্তেফাকে ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ নামের জনপ্রিয় কলামটি লিখতেন তিনি ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে। এতে রাজনৈতিক সত্য ভাষণ ও সময়োপযোগী রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনার কারণে কলামটি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তার নিজের `আমাদের মানিক ভাই` শীর্ষক লেখার এক স্থানে বলেছেন, “আমার ব্যক্তিগত জীবনে মানিক ভাই`র প্রভাব যে কত গভীর, তা ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়।”

মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি

দৈনিক ইত্তেফাক সূত্রে জানা গেছে, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের উত্তরসূরিদের পক্ষ থেকে এবং ইত্তেফাক পরিবার শনিবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি-জেপিসহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

এর মধ্যে আজিমপুর করবস্থানে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মাজারে শনিবার সকাল ৭টা থেকে কোরআনখানি শুরুর পর সকাল ১০টায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের জ্যেষ্ঠ ছেলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন শনিবার এতিমখানায় কাঙ্গালিভোজের আয়োজন করেছেন। কনিষ্ঠ ছেলে আনোয়ার হোসেনের ধানমন্ডির বাসায় কোরআনখানি ও তবারক বিতরণ করবেন। জ্যেষ্ঠ মেয়ে মরহুমা আখতারুন্নাহার (বেবী) এর বাসভবনে বাদ এশা মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কাজলার পাড়স্থ ইত্তেফাক ভবনে সকাল থেকে কোরআনখানি এবং বাদ জোহর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.