পদ্মায় বিষ জেনেশুনেই আত্মঘাতী!
পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ও লক্ষ্মীকুণ্ডা এলাকায় পদ্মা নদীতে 'বিষ' ছিটিয়ে
চিংড়ি নিধনের যে ছোট সংবাদটি বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় মুদ্রিত
হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বড় উদ্বেগের কারণ। যে কোনো জলাশয়েই কীটনাশক কিংবা
বিষাক্ত ট্যাবলেট প্রয়োগ বহুমাত্রিক ক্ষতির কারণ হতে বাধ্য।
আর বহতা নদীতে
এমন অপকর্ম গণআত্মহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়। কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশকের
'প্রয়োজনীয়' ব্যবহারের কারণেই আমাদের মৎস্যসম্পদে আকাল দেখা দিচ্ছে। তার
ওপর যদি সরাসরি নদীতেই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়, পরিবেশ ও
প্রকৃতিতে এর সর্বনাশা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে বাধ্য। নদীতে কীটনাশক প্রয়োগ
করে এর হোতারা হয়তো স্বল্প সময়ে বেশি চিংড়ি ধরতে চায়। কিন্তু এর ফলে
অন্যান্য মাছ তো বটেই_ জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীবের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে
যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাছের আবাস আর প্রজননস্থলও। এর অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যতে
মাছের উৎপাদনও ক্ষুণ্নম্ন হবে। ক্ষয়ক্ষতি কেবল ঈশ্বরদী এলাকাতেই আটকে থাকবে
না, নদীর স্রোতের কারণে বিষের প্রভাব ভাটি অঞ্চলকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ডিডিটির মতো এমন অনেক কীটনাশক আছে, যা যুগের পর যুগ সমান ক্ষতিকারক ক্ষমতা
নিয়ে পানি কিংবা মাটিতে টিকে থাকতে পারে। নদীর পানি দূষিত হলে তার প্রভাব
সংশ্লিষ্ট এলাকার ডাঙাতেও পড়বে এবং উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কীটনাশক মেশানো
পানি খেয়ে ও ব্যবহার করে মানুষসহ গবাদি পশু-প্রাণীরও স্বাস্থ্যহানি, এমনকি
প্রাণহানি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আমরা মনে করি, এভাবে যারা বিষ দিয়ে চিংড়ি
আহরণ করতে চাইছে, তাদের সাধারণ জেলে বা মৎস্যজীবী আখ্যা দেওয়ার অবকাশ নেই।
সুদূরপ্রসারী কুফল বিবেচনায় তাদের কর্মকাণ্ড জলদস্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাদের
দমন করতে সে মাত্রার পদক্ষেপই নিতে হবে। আমরা দেখতে চাই, পরিবেশ-প্রকৃতি,
খাদ্য নিরাপত্তা এবং দেশের ভবিষ্যৎ ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি
হিসেবে আবির্ভূত এই দুর্বৃত্তচক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন শূন্য সহিষ্ণুতা
প্রদর্শন করেছে। জেনেশুনে আত্মহত্যার এই আয়োজন আর চলতে দেওয়া যায় না।
No comments