সংসদে বিরোধী দল দেশবাসীর প্রত্যাশা যেন পূরণ হয়
বহুদিন সংসদে নেই বিরোধী দল। সংসদীয়
গণতন্ত্রে বিরোধী দলহীন সংসদ একেবারেই নিষ্প্রভ, প্রাণহীন। দুর্ভাগ্যজনক
হলেও ১৯৯১ সাল থেকে গত প্রায় দুই যুগ ধরে বারবার এই নিষ্প্রাণ সংসদেই চলছে
আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
এ কারণে গণতান্ত্রিক
মূল্যবোধসম্পন্ন কাঙ্ক্ষিত রাজনীতি এ দেশে ইতিবাচক মাত্রায় বিকশিত হয়নি
আজও। বর্তমান সংসদেও অতীতের বর্জন-সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মধ্যে
বিরোধী দল সংসদে গেছে কেবল সদস্যপদ রক্ষার জন্য ৯০ কার্যদিবসের
বাধ্যবাধকতার কারণে। হাজিরা খাতা সই করে আবার প্রত্যাখ্যানের পূর্ব
অবস্থানে ফিরে গেছেন বিরোধী সাংসদরা। সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে
আগামী ৩ জুন। এদিকে বিরোধী দলের সাংসদদের অনুপস্থিতির মেয়াদও ৮৩ কার্যদিবস
এরই মধ্যে অতিক্রান্ত। ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের উপস্থিতি চাই। তা না
হলে সদস্যপদ হারাবেন। সুতরাং তারা যে আসন্ন বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই
সংসদে যোগ দিচ্ছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। '৩ জুন সংসদে যেতে পারে বিএনপি'
শিরোনামে শুক্রবার সমকালের শেষ পৃষ্ঠায় যে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, তাতে
জানা গেছে, বিরোধীদলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দলের পার্লামেন্টারি পার্টির
বৈঠক ডেকেছেন ৩ জুন জাতীয় সংসদ ভবনে। ওইদিন দলের সব সাংসদকে ঢাকায় থাকতে
বলা হয়েছে। এতদিন পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংসদে যাচ্ছে_ নিঃসন্দেহে এ
মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক খবর। বিএনপি যদি আসন্ন বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়,
তা হলে তা হবে জাতীয় সংসদের গত ২২ বছরের ইতিহাসে একটা নতুন ঘটনাও। কেননা
১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো বিরোধী দলই বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়নি।
প্রতিটি বাজেট পাস হয়েছে বিরোধী দলহীন সংসদে। সেদিক থেকেও এই যোগদান হবে
অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা আশা করতে চাই, বিরোধী দল সদস্যপদ রক্ষা তথা নিয়ম
রক্ষার জন্য সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না, জনপ্রতিনিধি
হিসেবে তাদের গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের জন্যই এই যোগদান। এ প্রসঙ্গে এ-ও
বলা দরকার, সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি দল তথা ট্রেজারি বেঞ্চেরও
বিরোধী দলকে সংসদে ধরে রাখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। সরকারি দল
থেকে যেন এমন আচরণ করা না হয়, যাতে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াকআউট করতে বাধ্য
হন। আসন্ন অধিবেশনে যোগদানের আগেই কারাবন্দি দুই সাংসদ এম কে আনোয়ার ও
বরকতউল্লা বুলুর মুক্তির পদক্ষেপ নিতে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে চিঠি
দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে স্পিকারের উদ্যোগ আশা করি আমরা। সংসদে
যোগদানের পর বিরোধী সদস্যদের সংসদে রাখতে বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার ড.
শিরীন শারমিন চৌধুরীর ভূমিকাও খুব তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচিত হবে। আমরা আশা
করি, তিনি যথার্থ অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তার দক্ষতা, দূরদৃষ্টি আর
নিরপেক্ষতা দিয়ে বিরোধী সাংসদদের সংসদে রাখতে সর্বাত্মক ভূমিকা নেবেন।
বিরোধী দলের সদস্যদের সঙ্গে নবনির্বাচিত স্পিকারের সক্রিয় ভূমিকা রাখার
প্রথম সুযোগও এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হবে। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে,
কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, যেখানে বিরোধী দলসহ সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত
অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে, আশা করি সে ব্যাপারে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকেই
অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীও গত বৃহস্পতিবার বিরোধীদলীয়
নেতার উদ্দেশে বলেছেন, 'সংসদে আসুন, কথা বলুন।' আমরা এই আহ্বানকে ইতিবাচক
হিসেবে দেখতে চাই। নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ
থেকেও কিছু করা সম্ভব নয়। আসন্ন অধিবেশনে বিরোধী দলের যোগদান বিদ্যমান সংকট
নিরসন করে ইতিবাচক ফল বয়ে আনুক_ এই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments