মানসিকতার বদল দরকার দুই দিকেই এর নাম প্রতিবাদ?
অপরাধী কে, এখনো তা স্পষ্ট না হলেও অপরাধটি যে মোটেই সামান্য নয়, তার সাক্ষী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১২টি কক্ষ। রোগীর সেবাদানে যদি অনিয়ম-অবহেলা হয়েই থাকে, তার বিরুদ্ধে মারামারি-ভাঙচুর সন্ত্রাসী কাজ; প্রতিবাদ নয়।
অন্যদিকে চিকিৎসার নামে রোগীদের হয়রানিও আরেক ধরনের ‘পেশাগত সন্ত্রাস’; সরকারি হাসপাতালগুলোতে যা প্রায়শ দৃশ্যমান।মধ্যরাতে পাবনা থেকে চোখের আঘাত নিয়ে আসা এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে পাঠান চক্ষু বিভাগে। চক্ষু বিভাগ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই দায়িত্ব সারতে চাইলে রোগীর সঙ্গে থাকা ঢামেকেরই এক ছাত্র প্রতিবাদ করে রোগীকে ভর্তি করানোর জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে ঝগড়ার মধ্যে সেই ছাত্র হাসপাতালের এক কর্মচারীকে চড় মারেন এবং পাল্টা মারের মুখে পড়েন। তবে সেই চড়েও সমস্যা ততটা চড়েনি, যতটা চড়ে যায় জরুরি বিভাগ ফের যুবকটিকে নিউরো সার্জারি বিভাগে পাঠালে। সেখানেও তাঁকে ভর্তি করানো হয় না। রোগী নিয়ে এ রকম ঘোরাঘুরির জেরে আবারও ক্ষিপ্ত হন রোগীর সঙ্গে আসা সেই ছাত্র। তিনি এবার নামেন শক্তি প্রদর্শনের পথে। ফোন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুটি হল থেকে সঙ্গীদের ডেকে আনেন। তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মধ্যরাতে হাসপাতালের ১২টি কক্ষ ভাঙচুর করেন।
প্রথমত, হামলা করার দরকার কী ছিল? দ্বিতীয়ত, অন্যায় যদি হয়েই থাকে, তার জবাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করলে কার কী লাভ হয়? তাই এই হামলাকারীদের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। হামলাকারীদের বিষয়ে তাঁদের সংগঠনকেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
একদিকে রোগীকে হয়রানির অভিযোগ, অন্যদিকে তা ঠেকানোর জন্য সন্ত্রাস দেশের বর্তমান বাস্তবতারই প্রতিফলন। প্রায়ই সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে এ রকম অভিযোগ ওঠে এবং প্রায়ই সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়। সমস্যা দুই দিকে হলেও প্রতিকারের বেশি দায়িত্ব কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের। সেবা দেওয়াই যাদের দায়িত্ব, তাদের সেবা দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, তেমনি আইন মেনে চলার মানসিকতাও সবার থাকা দরকার।
No comments