বগুড়া আলোচিত হত্যা মামলার তদন্তে বিঘ্ন
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বগুড়ার আলোচিত হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে আসামি গ্রেপ্তার অভিযানও।
গত এক বছরে বগুড়া শহর ও শহরতলিতে প্রায় এক ডজন আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ২৬ মে শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবু জাফরের বাসায় খুন হন যুবলীগের নেতা মজনু মিয়া ও তাঁর ভাতিজা নাহিদ হাসান।বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. মোজামেঞ্চল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বগুড়ার রাজনৈতিক সহিংসতা ও চলমান অস্থিরতা সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল-মিছিল-সমাবেশ লেগেই আছে। এসব কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে কাজ করতে হচ্ছে।
এ ছাড়া ৩ মার্চে জেলাজুড়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও তাণ্ডবের ঘটনায় অর্ধশতাধিক মামলার তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তারে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। এসব কাজ করতে গিয়ে আলোচিত খুনের মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। সময়মতো তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। এ সুযোগে কোনো কোনো মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, সময় বেশি লাগলেও তদন্ত কার্যক্রম থেমে নেই।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর শহরের খান্দার-মালগ্রাম ভিআইপি সড়কে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন শহর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ব্যবসায়ী সুজানুর রহমান ওরফে সুজন। ছয় মাসেও ওই মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল আনামকে (২৮) রহমাননগর এলাকায় নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। চার মাসেও এই মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলানোর পাশাপাশি ডিবি পুলিশকে নানা অভিযানে অংশ নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ২৫টি মামলা তদন্ত করতে হচ্ছে। এসব কাজ করতে গিয়ে আলোচিত এই মামলার তদন্ত শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাতে শহরতলির ফুলতলা-চকতানপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে যুবলীগের কর্মী শামিম হোসেন ওরফে বুশকে (২৫)। চার মাসেও মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিয়ার রহমান বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে তদন্তকাজে সময় দেওয়া যাচ্ছে না।
গত বছরের ১২ জুন খুন হন বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের ছাত্র নিরঞ্জন চক্রবর্তী। এ মামলার তদন্তও শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নিরঞ্জনের খুনিরা। একই বছরের ১০ আগস্ট শহরের কাটনারপাড়া কটন মিল মাঠে খুন হয় কিশোর অমিত (১৪) ও রাহাত (১৫)। এখনো এই মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ সহিদ আলম বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। পুলিশ বর্তমানে নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সব হারাম করে দায়িত্ব পালন করছে। তাঁর দাবি, পুলিশ ইচ্ছে করে কোনো মামলার তদন্তকাজে ঢিলেমি করছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আলোচিত মামলার তদন্তকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
No comments