আধুনিক দাসত্ব: যুক্তরাজ্যে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের সাজা
যে আটজনের সাজা হয়েছে |
যুক্তরাজ্যে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের আটজন সদস্যকে সাজা দিয়েছে দেশটির আদালত।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে দাসত্বে বাধ্য করেছে।
বলা হচ্ছে এটি যুক্তরাজ্যের আধুনিক যুগের সবচাইতে বড় দাসত্বের ঘটনা।
যে অভিযোগে বিচার হল
সংঘবদ্ধ
এই চক্রটি মূলত পোল্যান্ড থেকে আসা ব্যক্তিদের নানা ভাবে ধোঁকা দিয়ে কাজ ও
ভাল জীবনের লোভ দেখিয়ে পশ্চিম মিডল্যান্ড এলাকায় নিয়ে আসতো।
কিন্তু তাদের কাজের নামে দাসের মতো রাখা হতো। তাদের কখনো কখনো ১৪ ঘণ্টা পর্যন্তও কাজ করানো হতো অথচ কোন পারিশ্রমিক দেয়া হতো না।
তাদেরকে যেসব ঘরে আটকে রাখা হতো তার কিছু ছবি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
যাতে দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ পরিবেশে তাদের থাকতে দেয়া হতো।
ইঁদুরের সাথে একসাথে সেসব ঘরে তাদের থাকতে হতো। ভালো চাকরীর বদলে খুব নিম্ন মানের কাজে খাটানো হতো।
পুলিশ
বলছে, সাজা প্রাপ্তরা নিজেরাও পোল্যান্ডের বংশোদ্ভূত। এমন দুটি পোলিশ
পরিবারের আটজন সদস্যকে আলাদা দুটি মামলায় বিচার করা হয়েছে।
যেখানে তাদের মানব পাচার, জোরপূর্বক শ্রম এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাদের তিন থেকে এগারো বছরের সাজা দেয়া হয়েছে।
যেভাবে বিষয়টি প্রকাশিত হল
২০১৫ সালে বন্দি দশা থেকে দুইজন পালিয়ে যাওয়ার পরই ওই চক্রের সদস্যদের তৎপরতা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
ওই
দুইজন পালিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে কাজ করে 'হোপ ফর জাস্টিস' নামে
একটি দাতব্য সংস্থার কাছে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে। এর পরই বিষয়টি
নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।
এই চক্রের শিকার একজন মিরোস্লো লেহম্যান এর আগে বিবিসিকে দেয়া এক
সাক্ষাৎকারে তার দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, "যে ঘরে আমাদের রাখা
হতো সেটিতে ঘর গরম করার কোন ব্যবস্থা ছিল না। কোন গরম পানির ব্যবস্থা ছিল
না। জানালার ফুটো দিয়ে সারাক্ষণ কনকনে বাতাস ঘরে ঢুকতো।"
হুমকি ও মারধোর করে নিয়ন্ত্রণ
এই চক্রটিতে ছিল পাঁচজন পুরুষ ও তিনজন নারী।
তাদের শিকার ছিল তাদের নিজেদেরই দেশ পোল্যান্ডের ঘরবাড়িহীন ছিন্নমূল মানুষ, সাবেক কারাবন্দী এবং নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা।
তাদের শুরুতে বাসে করে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হতো।
তাদের মূলত আবর্জনা পুনর্ব্যবহার বা রিসাইক্লিং করার প্রতিষ্ঠানে অথবা খামারে কাজ করানো হতো।
সেখান থেকে যে পারিশ্রমিক দেয়া হতো সেটি নেয়ার জন্য তাদের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলানো হতো।
কিন্তু ওই চক্রই সেই অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণে থাকতো এবং নিজেরা পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়ে নিত।
চক্রের সদস্যরা বেন্টলীর মতো দামি গাড়িও ব্যাবহার করতো।
২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই চক্রের সদস্যরা কুড়ি লাখ পাউন্ডের মতো অর্থের মালিক হয়েছে।
কেউ কাজ করতে না চাইলে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হতো, মারধোর করা হতো, পোল্যান্ডে তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হতো।
খুন করার আগে নিজের কবর নিজেকেই খুড়তে হবে এমন ভয় দেখিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো এই চক্র।
যেভাবে কাজ করতো চক্রটি
চক্রের এক একজন ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করতো। একজন পোল্যান্ড থেকে তাদের শিকার খুঁজে আনার দায়িত্বে ছিল।
একজনের দায়িত্ব ছিল তাদের শুভেচ্ছা জানানো।
নারীদের একজন তাদের সাথে শুরুতে খুব অমায়িক ব্যবহার করতো এবং শুরুর দিকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে সহায়তা করতো।
অপর একজন তাদের যুক্তরাজ্যে বেকারদের জন্য চাকরী দেয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাম লেখাতেও সাহায্য করতো।
ব্যাংকে
গিয়ে অ্যাকাউন্টের অর্থ তোলার সময় বন্দিদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া হতো।
কিন্তু ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের অর্থ নিয়ে নেয়া হতো।
সেই ব্যাংকের
বিষয়াদি দেখভাল করার জন্য যিনি ছিলেন তাকে পুলিশ বর্ণনা করেছে 'খুব
পরিশীলিত ও মার্জিতভাবে' নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে এমন কেউ।
কারোর চিকিৎসা দরকার হলে সেটিও পেতেন না এসব লোকেরা । বন্দিদশায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এরকম ভয়াবহ নোংরা পরিবেশে তাদের আটকে রাখা হতো |
No comments