জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে ঢাকার রাজপথেও শিশুরা by শাহনাজ পারভীন
বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় তিন হাজারের
মতো শিক্ষার্থী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বড়দের জোরালো ভূমিকা রাখার
দাবি নিয়ে একটি মিছিলে অংশ নিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক
সুইডিশ কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গের ডাকে সংহতি জানিয়ে আজ
শুক্রবার বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ শিশু 'ক্লাইমেট স্ট্রাইক' বা 'জলবায়ু
ধর্মঘট' নামের এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে।
শিশুরা একদিন স্কুলে না গিয়ে বরং রাস্তায় জড়ো হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে।
কী বলছেন তারা?
সকালে ঢাকার প্রায় ৩৫টি স্কুল থেকে নানান রঙের পোশাক পরা কিশোর-কিশোরীরা সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হয়।
সেভ
দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই র্যালিতে তারা জলবায়ুর পরিবর্তন
ঠেকাতে স্লোগান দিতে থাকে। তাদের হাতে ছিল নানা বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড।
শিক্ষার্থীদের স্লোগানের মূল কথা: "ক্লাইমেট জাস্টিস।"
শিক্ষার্থীদের স্লোগানের মূল কথা: ক্লাইমেট জাস্টিস |
তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব এখনই পৃথিবীর মানুষের উপরে
পড়ছে, ঝড়-বন্যা-দাবানল-খরা যেভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে, সেগুলো
ভবিষ্যতে আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এর ফলে
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আজকের শিশুরাই। সেকারণে নিজেদের ভবিষ্যৎ
রক্ষায় বড়দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এই ছেলেমেয়েরা।
মোহাম্মদপুর
উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারজানা আক্তার পলি
বলছেন, "বড়রা এই যে গাছপালা কেটে কলকারখানা আর বাসস্থান বানাচ্ছে, তাদের
দোষের কারণে আমাদের ভুগতে হবে। আমরা সমাজে টিকতে পারবো না। আমাদের পরবর্তী
প্রজন্মও টিকে থাকতে পারবে না।"
পথে নামলেন কেন
শিশুরা
বলছেন, বড়রা অনেক ভুল করেছে এবং এখনো ভুল করেই যাচ্ছে। যার ফল হল,
জলবায়ু পরিবর্তের কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক
দুর্যোগ।
শিশুদের হাতে ছিলে নানা বক্তব্যবাহী প্ল্যাকার্ড |
মিরপুরে বিসিআইসি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিয়া
ফায়জা কণিকা বলছেন, "আমরাই পরবর্তী প্রজন্ম যারা ভবিষ্যতে থাকবো। পরিবেশের
যা অবস্থা, সেটা আমাদেরকেই সহ্য করতে হবে। তাই নিজেদের ভালোর জন্য
আমাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।"
তিনি আরও বলছেন, "বড়রা আমাদের কথা ভাবছেন না এবং তারা স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন।"
কী করতে পারবে শিশুরা?
জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বনেতারা আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে বসছেন কিন্তু অনেক গুরুতর বিষয়েই তারা একমত হতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের
মতো প্রভাবশালী দেশও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস চুক্তি
থেকে সরে গেছে। তাহলে এই শিশুদের কথা কে কতটা শুনবেন?
এই প্রশ্নের
জবাব দিতে গিয়ে গ্রেটা থুনবার্গের কথা উল্লেখ করছিলেন ন্যাশনাল
ইন্সটিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী মিজান ইসলাম।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা বড়দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন |
তিনি
বলছেন, "গ্রেটা থুনবার্গের জন্য আজকে আমরা সবাই এখানে এসেছি। হয়তো আমি
আপনাকে বললে আপনি কিছু পরিবর্তন করবেন না। কিন্তু আমরা সবাই যদি বলি তাহলে
আপনি নিশ্চয়ই চিন্তা করবেন যে এখন আমার পরিবর্তন হওয়ার সময় আসছে।"
গ্রেটা থুনবার্গের কথা
১৬ বছর বয়সী সুইডেনের গ্রেটা থুনবার্গ প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গত বছর থেকে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
প্রতি শুক্রবার তিনি সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে "স্কুল স্ট্রাইক ফর দ্য ক্লাইমেট" কথাটি লিখে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে বসে থাকতেন।
এ থেকেই তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন।
তারই ডাকে আজ বিশ্বের নানা দেশে লক্ষ লক্ষ শিশু এই "ক্লাইমেট স্ট্রাইক" আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।
শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই দশ লাখেরও বেশি শিশুকে স্কুল বাদ দিয়ে এই আয়োজনে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
গ্রেটা থুনবার্গ নিজেও নিউ ইয়র্কের সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে ঢাকার রাজপথে সোচ্চার শিশুরা। |
No comments