সন্তান নিয়ে মায়ের বন্দিজীবনের গল্প
কারাগারেই
সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সন্তানসহ চার বছর কারাগারে আটক থাকার পর মুক্তি
পান গত বছর। বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর সিরিয়ার এই ৩০ বছর বয়সী মা হাসনা
দিবেইস নতুনভাবে জীবন শুরু করেন। তবে সেই জীবনও ঘাতপ্রতিঘাতের।
হাসনার গল্পটি তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। হাসনা জানান, ২০১৪ সালের আগস্টে যখন তাঁকে বন্দী করা হয়, তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে দামেস্কের পূর্বাঞ্চলের ঘাউতা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এই চার বছরে তাঁকে নানা জায়গায় আটক রাখা হয়। এর মধ্যে একটিতে বাবা ও ভাইকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন।
হাসনা বলেন, ‘আমার সামনেই তাঁদের (বাবা ও ভাই) নির্যাতন করা হচ্ছিল। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সিরিয়ার আটক লাখ লাখ মানুষের মধ্যে হাসনা একজন।
ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুসারে, ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর দুই লাখ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
হাসনা জানান, তাঁকে আবর্জনাভর্তি একটি কারাকক্ষে ৪০ দিন একাকী বন্দী করে রাখা হয়। দেয়ালে কীটপতঙ্গ হেঁটে বেড়াত। চারপাশ থেকে নির্যাতনের শিকার বন্দীদের চিৎকার ভেসে আসত। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় একবারের জন্য শুধু তাঁকে কারাগারের বাইরে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে সন্তান এল এবং আমি জানতাম না যে কী করব।’ সন্তানের নাম মোহাম্মদ বলে জানালেন।
সন্তান জন্ম দেওয়ার পর হাসনাকে দামেস্কের ভয়ংকর আল ফেহা কারাগারে পাঠানো হয়। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক ইরাকি মায়েদের সঙ্গে তাঁকে রাখা হয়।
হাসনা সন্তান নিয়ে ইথিওপিয়ার ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে থাকতেন। লামিস নামের ওই তরুণী হাসনাকে তাঁর ছেলের জন্য জামা তৈরিতে সাহায্য করতেন। হাসনাকে যখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হতো, তখন তাঁর ছেলেকে দেখে রাখতেন লামিস।
হাসনাকে কারারক্ষী মধ্যরাতে অন্য কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেতেন। সেখানে নিয়ে তাঁকে মারধর করা হতো। হাসনা বলেন, ‘প্রথমবার প্রশ্নকর্তা আমার বোরকা খুলে নেন। আমার চুলের দিকে তাকিয়ে একটি ছুরি আনান এবং আমার চুল কাটতে থাকেন। এরপর তিনি আমাকে মারতে শুরু করেন।’ মারধরের সময় তাঁর হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এভাবে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হতো। তাঁর যক্ষ্মা ধরা পড়েছিল। ওই সময় চার মাসের বেশি সময় সন্তানের কাছ থেকে তাঁকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি যখন সুস্থ হন, তখন ছেলের বয়স নয় মাস। সে লামিসকেই তার মা বলে মনে করত।
হাসনা বলেন, ‘ও আমাকে চিনত না।’ কারাগারে বেড়ে ওঠা ছেলের জন্য একটু ভালো জীবনের আশা করতেন হাসনা। তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম, রাস্তায় ছেলের সঙ্গে হাঁটছি এবং একটি দোকানে ঢুকে ওর জন্য জামা কিনে দিচ্ছি, যেমন আর সব মা করেন।’
২০১৮ সালের এপ্রিলে হাসনা মুক্তি পান। মুক্তির পর তিনি আর ঘাউতায় ফিরে যাননি। এর পরিবর্তে বিদ্রোহী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বহন করে—এমন একটি বাসে চড়ে বসেন। রওনা দেন উত্তরাঞ্চলের আলেপ্পো প্রদেশের বিরোধী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দিকে।
ছেলের টমেটো খাওয়ার এক দৃশ্যের কথা মনে করে হাসনা বলেন, ‘এক জায়গায় টমেটো বিক্রি হচ্ছে দেখে ছুটে যায় মোহাম্মদ। একটি টমেটো তুলে নিয়ে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করে। এর আগে কখনো সে টমেটো দেখেনি।’
তবে পাশের প্রদেশ ইদলিব থেকে তাঁর এক বোনকে তুলে নেওয়ার সময় এক নতুন বিপর্যয়ের মুখে পড়েন হাসনা। তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মা মারা গেছেন। তাঁর স্বামীকে সরকারি বাহিনী হত্যা করেছে। তাঁর দুই বোনকে সরকারি বাহিনী আটক করেছে। আর বাবা ও ভাইয়ের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা কেউ জানে না।
হাসনা বলেন, ‘আমার পরিবারের এমন দুর্ভাগ্যের কথা শোনার পর নতুন করে জীবন শুরুর সিদ্ধান্ত নিই।’ আবার বিয়ে করে ইদলিবে থেকে যান। ওই অঞ্চল এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি হাসনার। বিয়ের মাত্র চার মাস পর তাঁর ২৫ বছর বয়সী স্বামী পেটে বোমার আঘাত পান। তিনি এখন কোনো কাজ করতে পারেন না। অগত্যা পরিবারের খরচ চালাতে শিশুদের কাপড় তৈরির কারখানায় যোগ দেন হাসনা। ওই কারখানায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নারী বন্দীরা কাজ করেন।
হাসনা বলেন, ‘যা আয় করি, পুরোটাই খরচ করি পরিবারে।’
তবে হাসনাদের জীবনে আবারও বিপদ ঘনিয়ে আসছে। গত মাসের শেষ দিকে ইদলিবে সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্র রাশিয়া ব্যাপক বোমা হামলা চালানো শুরু করে। ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন হাসনা। তিনি বলেন, ‘আমি চাই না, ইদলিবে সরকারি বাহিনী ঢুকে পড়ুক। আমি আবার কারাগারে যেতে চাই না।’
হাসনার গল্পটি তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। হাসনা জানান, ২০১৪ সালের আগস্টে যখন তাঁকে বন্দী করা হয়, তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে দামেস্কের পূর্বাঞ্চলের ঘাউতা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এই চার বছরে তাঁকে নানা জায়গায় আটক রাখা হয়। এর মধ্যে একটিতে বাবা ও ভাইকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন।
হাসনা বলেন, ‘আমার সামনেই তাঁদের (বাবা ও ভাই) নির্যাতন করা হচ্ছিল। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সিরিয়ার আটক লাখ লাখ মানুষের মধ্যে হাসনা একজন।
ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুসারে, ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর দুই লাখ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
হাসনা জানান, তাঁকে আবর্জনাভর্তি একটি কারাকক্ষে ৪০ দিন একাকী বন্দী করে রাখা হয়। দেয়ালে কীটপতঙ্গ হেঁটে বেড়াত। চারপাশ থেকে নির্যাতনের শিকার বন্দীদের চিৎকার ভেসে আসত। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় একবারের জন্য শুধু তাঁকে কারাগারের বাইরে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে সন্তান এল এবং আমি জানতাম না যে কী করব।’ সন্তানের নাম মোহাম্মদ বলে জানালেন।
সন্তান জন্ম দেওয়ার পর হাসনাকে দামেস্কের ভয়ংকর আল ফেহা কারাগারে পাঠানো হয়। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক ইরাকি মায়েদের সঙ্গে তাঁকে রাখা হয়।
হাসনা সন্তান নিয়ে ইথিওপিয়ার ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে থাকতেন। লামিস নামের ওই তরুণী হাসনাকে তাঁর ছেলের জন্য জামা তৈরিতে সাহায্য করতেন। হাসনাকে যখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হতো, তখন তাঁর ছেলেকে দেখে রাখতেন লামিস।
হাসনাকে কারারক্ষী মধ্যরাতে অন্য কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেতেন। সেখানে নিয়ে তাঁকে মারধর করা হতো। হাসনা বলেন, ‘প্রথমবার প্রশ্নকর্তা আমার বোরকা খুলে নেন। আমার চুলের দিকে তাকিয়ে একটি ছুরি আনান এবং আমার চুল কাটতে থাকেন। এরপর তিনি আমাকে মারতে শুরু করেন।’ মারধরের সময় তাঁর হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এভাবে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হতো। তাঁর যক্ষ্মা ধরা পড়েছিল। ওই সময় চার মাসের বেশি সময় সন্তানের কাছ থেকে তাঁকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি যখন সুস্থ হন, তখন ছেলের বয়স নয় মাস। সে লামিসকেই তার মা বলে মনে করত।
হাসনা বলেন, ‘ও আমাকে চিনত না।’ কারাগারে বেড়ে ওঠা ছেলের জন্য একটু ভালো জীবনের আশা করতেন হাসনা। তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম, রাস্তায় ছেলের সঙ্গে হাঁটছি এবং একটি দোকানে ঢুকে ওর জন্য জামা কিনে দিচ্ছি, যেমন আর সব মা করেন।’
২০১৮ সালের এপ্রিলে হাসনা মুক্তি পান। মুক্তির পর তিনি আর ঘাউতায় ফিরে যাননি। এর পরিবর্তে বিদ্রোহী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বহন করে—এমন একটি বাসে চড়ে বসেন। রওনা দেন উত্তরাঞ্চলের আলেপ্পো প্রদেশের বিরোধী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দিকে।
ছেলের টমেটো খাওয়ার এক দৃশ্যের কথা মনে করে হাসনা বলেন, ‘এক জায়গায় টমেটো বিক্রি হচ্ছে দেখে ছুটে যায় মোহাম্মদ। একটি টমেটো তুলে নিয়ে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করে। এর আগে কখনো সে টমেটো দেখেনি।’
তবে পাশের প্রদেশ ইদলিব থেকে তাঁর এক বোনকে তুলে নেওয়ার সময় এক নতুন বিপর্যয়ের মুখে পড়েন হাসনা। তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মা মারা গেছেন। তাঁর স্বামীকে সরকারি বাহিনী হত্যা করেছে। তাঁর দুই বোনকে সরকারি বাহিনী আটক করেছে। আর বাবা ও ভাইয়ের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা কেউ জানে না।
হাসনা বলেন, ‘আমার পরিবারের এমন দুর্ভাগ্যের কথা শোনার পর নতুন করে জীবন শুরুর সিদ্ধান্ত নিই।’ আবার বিয়ে করে ইদলিবে থেকে যান। ওই অঞ্চল এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি হাসনার। বিয়ের মাত্র চার মাস পর তাঁর ২৫ বছর বয়সী স্বামী পেটে বোমার আঘাত পান। তিনি এখন কোনো কাজ করতে পারেন না। অগত্যা পরিবারের খরচ চালাতে শিশুদের কাপড় তৈরির কারখানায় যোগ দেন হাসনা। ওই কারখানায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নারী বন্দীরা কাজ করেন।
হাসনা বলেন, ‘যা আয় করি, পুরোটাই খরচ করি পরিবারে।’
তবে হাসনাদের জীবনে আবারও বিপদ ঘনিয়ে আসছে। গত মাসের শেষ দিকে ইদলিবে সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্র রাশিয়া ব্যাপক বোমা হামলা চালানো শুরু করে। ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন হাসনা। তিনি বলেন, ‘আমি চাই না, ইদলিবে সরকারি বাহিনী ঢুকে পড়ুক। আমি আবার কারাগারে যেতে চাই না।’
No comments