মালয়েশিয়ার টেরেঙ্গানু সফরের স্মৃতি by ড. মো. নূরুল আমিন
গত
১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের বাইরে থাকার কারণে ২৩ জুলাই
মঙ্গলবার পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারিনি বলে দুঃখিত। ২৪ তারিখ ভোরে দেশে
ফিরে এসেছি। এই কয়দিন মালয়েশিয়ার টেরেঙ্গানু রাজ্যের ডুয়ং শহরে ফিলিপাইনের
মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্যতম প্রদেশ লানাওডেলসুরের রাজধানী
মারাবীর পুনর্বাসনের উপর আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ
করেছিলাম। টেরেঙ্গানু রাজ্যে মালয়েশিয়ার ইসলামী পার্টি ক্ষমতাসীন রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় এ রকম তিনটি রাজ্য আছে যেখানে ইসলামী পার্টি সংখ্যাধিক্য ভোটে
ক্ষমতাসীন আছে। টেরেঙ্গানু সলিডারিটি ফাউন্ডেশন, ইয়া ইয়াসান আমল ফাউন্ডেশন
এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর রিলিফ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএফআরডি) যৌথভাবে
এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলনটি ১৯ জুলাই থেকে ২১ জুলাই দুপুর
পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১-২২ জুলাই ছিল আইএফআরডির তৃতীয় বার্ষিক সাধারণ
সভা, ২৩ জুলাই সকাল বেলা মালয়েশিয়ান মিন্দানাও বিজিনেস ফোরামের বিশেষ সভা।
তিনটি সভাই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রথম সম্মেলনটিতে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় ৩০টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিঙ্গাপুর, চীন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুদান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, কানাডা, যুক্তরাজ্য, প্রভৃতি প্রধান। এসব দেশের ইসলামী আন্দোলন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরাই মারাবী পুনর্বাসনের এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন। আগেই বলেছি, মারাবী হচ্ছে মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্যতম প্রদেশ লানাও ডেলপুরের রাজধানী। এর জনসংখ্যার শতকরা ১০০ ভাগই ছিল মুসলমান। ফিলিপাইনের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল-এর সহযোগী ইসনিলন হ্যাপিলনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা ২০১৭ সালের মে মাসে শহরটির উপর হামলা করে। খৃস্টান সন্ত্রাসী আবু সায়াফ, ওমর গ্রুপ এবং মাওতি গ্রুপের আবদুল্লাহ মাওতিও এই হামলার নেতৃত্বে ছিল। মুসলিম নামধারী হলেও এদের সবাই খৃস্টান ধর্মাবলম্বী। বলাবাহুল্য অনেকে মনে করেন ফিলিপাইন সরকার মিন্দানাওকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়। তিন বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মুসলিম প্রধান মিন্দানাওকে ফিলিপাইন সরকারের পক্ষ থেকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে তারা স্বীকৃতি দিয়েছে মাত্র। তারই একটি প্রদেশের উপর এই হামলা হলো এবং এই হামলাকে কেন্দ্র করে ফিলিপাইন সেনাবাহিনী তাদের দমনের জন্য সন্ত্রাসীদের উপর হামলা করে। ফলে সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। মারাবী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষ যুদ্ধরত গ্রুপগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। যুদ্ধ ৫ মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং সেপ্টেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতি হয়। এর ফলে বাড়ি ঘর, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দোকান-পাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল, ক্লিনিক ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়। সরকারি জরিপ অনুযায়ী এই যুদ্ধের ফলে গৃহহারা লোকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৬৯,১৯৬ জনে। বাস্তুচ্যুত এই হতভাগ্য লোকেরা লানাও ডেলসুর, লানাও ডেলনরটি, ইলিগান সিটি প্রভৃতি এলাকায় শরণার্থী শিবিরে এখন বসবাস করছে। কিছু কিছু শরণার্থী মারাবী শহরের বাইরে আশপাশ এলাকায় আত্মীয়স্বজন অথবা জানাশোনা লোকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
সরকারি এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ১৬৮ সদস্য, বিদ্রোহী সন্ত্রাসী বাহিনীর ৯২৪ সদস্য, ২৭০ জন পরিচয়হীন ব্যক্তি, ১১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য। এই যুদ্ধে মারাবী শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং মারাবীর মুসলমানরা পথের কাঙ্গালে পরিণত হয়েছেন। মানুষের তৈরি এই মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মারাবীবাসীর অবস্থা গত দু’বছরেও পরিবর্তন হয়নি। হতভাগ্য এই শরণার্থীরা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে এখন বঞ্চিত। বাইরের দুনিয়া তাদের সম্পর্কে খুবই কম জানে। মুসলিম দুনিয়ার অবস্থাও একই রকম। মিল্লাতের একটি অঙ্গের আঘাত ও যন্ত্রণা অন্য অঙ্গে পৌঁছাতে যথেষ্ট সময় লেগেছে। এটা আমাদের যেমন দুর্ভাগ্য তেমনি অযোগ্যতা। সম্মেলনের উদ্যোক্তারা দেরীতে হলেও এই ইস্যুটি মুসলিম জাতির সামনে তুলে এনেছেন এ জন্য তারা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। ২০১৭ সালের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মারাবীর পুনর্বাসনের জন্য ২০১৯ সালে সম্মেলনে বসে তথাপিও আমরা কিছুটা বিব্রত বোধ করেছি।
মিন্দানাও তথা বাংসামারো স্বায়ত্তশাসিত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং মারাবীর অন্যতম বাস্তুহারা ড. সাফরুল্লাহ এবং তার স্ত্রী ড. নুরুন্নাহার আমাদের সাথে ছিলেন। দু’জনই ধ্বংসযজ্ঞের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হৃদয়বিদারক।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখে ফিলিপাইন সেনাবাহিনী যৌথ টাস্কফোর্স ভেঙ্গে দেয় এবং মারাবী পুনর্বাসনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। এরপর সেই দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদের জন্য যুদ্ধাঞ্চল বহির্ভূত এলাকার পুনর্বাসন কল্পে ৫৩ বিলিয়ন পেসো ব্যয় সাপেক্ষ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এই বছরের মে মাসে বাংগন মারাবী টাস্কফোর্স সমগ্র বিধ্বস্ত এলাকার জন্য ৮০ বিলিয়ন পেসোর একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর আলোকে ফিলিপাইন সরকার তার জাতীয় বাজেটে মারাবী পুনর্বাসনের বিপরীতে ২০১৭ সালে ৫ বিলিয়ন, ২০১৮ সালে ১০ বিলিয়ন পেসো বরাদ্দ করে। এছাড়াও এজন্য থোক বরাদ্দ থেকে প্রদান করা হয় পাঁচ বিলিয় পেসো অর্থাৎ সরকারিভাবে পুনর্বাসনের জন্য প্রাক্কলিত ৮০ বিলিয়ন পেসোর বিপরীতে দুই বছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে ২০ বিলিয়ন পেসো। এছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মারাবীর ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়। এদের মধ্যে রয়েছে কানাডা, চীন, জার্মানী, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এডিবি, অক্সফাম প্রভৃতি। লক্ষণীয় যে, দুর্ভাগ্যবশতঃ এই প্রতিশ্রুতি দাতাদের মধ্যে মুসলিম দেশ নাই বললেই চলে। তবে মালয়েশিয়ার আমল, তুরস্কের জানসুয়ু, ইয়াহাহা প্রভৃতি এনজিও যুদ্ধের শুরু থেকে সেখানে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে নিয়োজিত আছে বলে জানা গেছে।
তবে ‘গ্রাউন্ড জিরো’ নামে অভিহিত এই মুসলিম নগরীটি এখন একটি ভুতুড়ে নগরীই রয়ে গেছে বলা যায়। নগরীর ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভবনসমূহের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভগ্নাংশসমূহ এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে সরানো হয়নি। দু’বছর ধরে এ কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তচ্যুত লোকসমূহের প্রায় ২০ শতাংশ হচ্ছে মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ। এদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ লোককে আশপাশের বারাঙ্গাই সমূহের স্কুল ও হাসপাতালসমূহে রাখা হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে আরো ১৮ মাস সময় লাগবে। আবার শুধু ভবনসমূহ পুনঃনির্মাণে ৯০০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। অর্থ অনেকেই দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অর্থ আসছে না। কেউ কেউ বলছেন যে, মারাবী মুসলিম নগরীর পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের জন্য দু’টি M-এর দরকার। একটি M হচ্ছে Mind অন্যটি হচ্ছে Money. মুসলমানদের দুঃসময়ে সহযোগিতার জন্য অনেক দেশ ও সংস্থার Mind থাকলেও Money থাকে না। অথচ এই দুইয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। মারাবীর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়। মুসলিম মিন্দানাওকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর মারাবীর পুনর্বাসন বাংশামরো সরকারের উপর অর্পিত হয়েছে। ফিলিপাইন সরকারের সেনাবাহিনী কার্যতঃ মারাবী ধ্বংস প্রক্রিয়ায় আংশিক জড়িত থাকার কারণে তারা পুনর্গঠনের পূর্ণ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মুসলিম দেশ ও সংস্থাসমূহের এগিয়ে আসা ছাড়া এই বিপণ্ন মুসলমানদের কার্যকর সাহায্যের অন্য কোনও উপায় নেই।
সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক নয়টি ওয়ার্কশপে মারাবী পুনর্বাসনে মুসলিম দেশ এবং সেগুলোর সরকারি বেসরকারি সংস্থাসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় এবং একটি আন্তর্জাতিক কনসর্টিয়ামও গঠন করা হয়। এতে মালয়েশিয়ার কয়েকটি এনজিও যেমন, আমল, Centre for Policy Research of University Science Malaysia (USM), Islamic Economic Development Foundation of Malaysia এবং সেলেঙ্গার রাজ্য সরকারের ইখতিয়ার প্রকল্পের তরফ থেকে এই কনসর্টিয়ামকে অর্থ ও কারিগরি সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বলাবাহুল্য, আমানা ইখতিয়ার মালয়েশিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে গঠিত সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা। তফাৎ হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক সুদ ভিত্তিক। কিন্তু আমানা ইখতিয়ার এই প্রতিষ্ঠানটির সুদের অংশটিকে বাদ দিয়ে সামাজিক সংগঠনের অংশটিকে গ্রহণ করেছে। তারা কুরআনে কর্জে হাসানা অংশটিকে গ্রহণ করেছে। ১৯৮৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা ২,৬২,০০০ ঋণগ্রহীতাকে ২.৩ বিলিয়ন ঋণ প্রদান করেছে। তাদের ঋণ পরিশোধের হার ৯৯.২ শতাংশ। তারা শুধু মহিলাদেরই ঋণ দিয়ে থাকে। পেশাগত পুনর্বাসনে মারাবীতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তা আমানা এখতিয়ারের অনুকরণে কর্জে হাসানা হিসেবে। আলোচনায় জানা গেছে যে, মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ পদ্ধতি আংশিকভাবে গ্রহণ করেছে। যেহেতু সুদ ইসলামে হারাম সেহেতু তারা সুদকে বাদ দিয়ে কর্জে হাসানার মূলনীতিকেই গ্রহণ করেছে যার অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। সুদান এক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
সম্মেলনে বসনিয়া হার্জেগভিনার ওয়াকফ্ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. সেনাজিদ জাজিমবিক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ঐ দেশটির পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে কিভাবে ওয়াকফ্ তহবিল ভূমিকা রেখেছে তার বিবরণ দেন। আমরা পিপিপি (Public Private Partnership) বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। তৃতীয় খাত (সিভিল সোসাইটি) হিসাবে ওয়াকফ সরকারি ও বেসরকারি খাতের সাথে হাত মিলিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বসনিয়া। যুদ্ধ বিগ্রহের দুর্যোগ মোকাবিলায় ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে তারা ওয়াকফকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে। আমরা আমাদের দেশে ওয়াকফকে ব্যবহার করছি না, করলেও বেশির ভাগ মরা মানুষের মাজারকে কেন্দ্র করে করছি। ওয়াকফ কেন্দ্রিক পিপিপি প্রকল্পের ব্যয় কম। হিসেবে মারাবী পুনর্বাসনে BOT (Build Operate and Transfer) ভিত্তিতে ওয়াকফ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং এই তহবিলে অনুদান প্রদানের জন্য দানশীল ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহের নিকট আবেদন করা হয়।
এই সম্মেলনের পরই ছিল আইএফআরডির বার্ষিক সাধারণ সভা। পূর্ব নির্ধারিত ডুয়ং মেরিনা রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষেই তা অনুষ্ঠিত হয়। দশটি দেশ এর সদস্য। এজিএম শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মালয়েশিয়া আগামী মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব, তুরস্ক ডেপুটি প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যথাক্রমে ভাইস চেয়ারম্যান ১ ও ভাইস চেয়ারম্যান ২ পদে নির্বাচিত হয়েছে। তিনজন নির্বাহী সদস্যের মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও সুদান একটি করে পদ পেয়েছে। সম্মেলনগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে।
মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু রাজ্যের পরিবেশও অত্যন্ত ভাল মনে হয়েছে। সেখানে কোনও সামাজিক অপরাধ ও উচ্ছৃঙ্খলতার খবর নজরে পড়েনি। পার্ক, রিসোর্ট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের নোংরামী নেই, রাস্তার ধারে দেয়ালে বাসে কুরুচিপূর্ণ পোস্টার নেই, সেখানে সোমত্ত ছেলেমেয়েরা এক সাথে চলাফেরা করতে গেলে সাথে নিকাহনামা রাখতে হয়। সিনেমা হলে অশ্লীল ছবি দেখানো হয় না, টিভিতেও না। এ পরিবেশ কি আমরা পেতে পারি না?
প্রথম সম্মেলনটিতে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় ৩০টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিঙ্গাপুর, চীন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুদান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, কানাডা, যুক্তরাজ্য, প্রভৃতি প্রধান। এসব দেশের ইসলামী আন্দোলন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরাই মারাবী পুনর্বাসনের এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন। আগেই বলেছি, মারাবী হচ্ছে মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্যতম প্রদেশ লানাও ডেলপুরের রাজধানী। এর জনসংখ্যার শতকরা ১০০ ভাগই ছিল মুসলমান। ফিলিপাইনের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল-এর সহযোগী ইসনিলন হ্যাপিলনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা ২০১৭ সালের মে মাসে শহরটির উপর হামলা করে। খৃস্টান সন্ত্রাসী আবু সায়াফ, ওমর গ্রুপ এবং মাওতি গ্রুপের আবদুল্লাহ মাওতিও এই হামলার নেতৃত্বে ছিল। মুসলিম নামধারী হলেও এদের সবাই খৃস্টান ধর্মাবলম্বী। বলাবাহুল্য অনেকে মনে করেন ফিলিপাইন সরকার মিন্দানাওকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়। তিন বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মুসলিম প্রধান মিন্দানাওকে ফিলিপাইন সরকারের পক্ষ থেকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে তারা স্বীকৃতি দিয়েছে মাত্র। তারই একটি প্রদেশের উপর এই হামলা হলো এবং এই হামলাকে কেন্দ্র করে ফিলিপাইন সেনাবাহিনী তাদের দমনের জন্য সন্ত্রাসীদের উপর হামলা করে। ফলে সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। মারাবী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষ যুদ্ধরত গ্রুপগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। যুদ্ধ ৫ মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং সেপ্টেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতি হয়। এর ফলে বাড়ি ঘর, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দোকান-পাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল, ক্লিনিক ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়। সরকারি জরিপ অনুযায়ী এই যুদ্ধের ফলে গৃহহারা লোকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৬৯,১৯৬ জনে। বাস্তুচ্যুত এই হতভাগ্য লোকেরা লানাও ডেলসুর, লানাও ডেলনরটি, ইলিগান সিটি প্রভৃতি এলাকায় শরণার্থী শিবিরে এখন বসবাস করছে। কিছু কিছু শরণার্থী মারাবী শহরের বাইরে আশপাশ এলাকায় আত্মীয়স্বজন অথবা জানাশোনা লোকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
সরকারি এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ১৬৮ সদস্য, বিদ্রোহী সন্ত্রাসী বাহিনীর ৯২৪ সদস্য, ২৭০ জন পরিচয়হীন ব্যক্তি, ১১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য। এই যুদ্ধে মারাবী শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং মারাবীর মুসলমানরা পথের কাঙ্গালে পরিণত হয়েছেন। মানুষের তৈরি এই মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মারাবীবাসীর অবস্থা গত দু’বছরেও পরিবর্তন হয়নি। হতভাগ্য এই শরণার্থীরা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে এখন বঞ্চিত। বাইরের দুনিয়া তাদের সম্পর্কে খুবই কম জানে। মুসলিম দুনিয়ার অবস্থাও একই রকম। মিল্লাতের একটি অঙ্গের আঘাত ও যন্ত্রণা অন্য অঙ্গে পৌঁছাতে যথেষ্ট সময় লেগেছে। এটা আমাদের যেমন দুর্ভাগ্য তেমনি অযোগ্যতা। সম্মেলনের উদ্যোক্তারা দেরীতে হলেও এই ইস্যুটি মুসলিম জাতির সামনে তুলে এনেছেন এ জন্য তারা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। ২০১৭ সালের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মারাবীর পুনর্বাসনের জন্য ২০১৯ সালে সম্মেলনে বসে তথাপিও আমরা কিছুটা বিব্রত বোধ করেছি।
মিন্দানাও তথা বাংসামারো স্বায়ত্তশাসিত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং মারাবীর অন্যতম বাস্তুহারা ড. সাফরুল্লাহ এবং তার স্ত্রী ড. নুরুন্নাহার আমাদের সাথে ছিলেন। দু’জনই ধ্বংসযজ্ঞের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হৃদয়বিদারক।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখে ফিলিপাইন সেনাবাহিনী যৌথ টাস্কফোর্স ভেঙ্গে দেয় এবং মারাবী পুনর্বাসনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। এরপর সেই দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদের জন্য যুদ্ধাঞ্চল বহির্ভূত এলাকার পুনর্বাসন কল্পে ৫৩ বিলিয়ন পেসো ব্যয় সাপেক্ষ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এই বছরের মে মাসে বাংগন মারাবী টাস্কফোর্স সমগ্র বিধ্বস্ত এলাকার জন্য ৮০ বিলিয়ন পেসোর একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর আলোকে ফিলিপাইন সরকার তার জাতীয় বাজেটে মারাবী পুনর্বাসনের বিপরীতে ২০১৭ সালে ৫ বিলিয়ন, ২০১৮ সালে ১০ বিলিয়ন পেসো বরাদ্দ করে। এছাড়াও এজন্য থোক বরাদ্দ থেকে প্রদান করা হয় পাঁচ বিলিয় পেসো অর্থাৎ সরকারিভাবে পুনর্বাসনের জন্য প্রাক্কলিত ৮০ বিলিয়ন পেসোর বিপরীতে দুই বছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে ২০ বিলিয়ন পেসো। এছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মারাবীর ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়। এদের মধ্যে রয়েছে কানাডা, চীন, জার্মানী, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এডিবি, অক্সফাম প্রভৃতি। লক্ষণীয় যে, দুর্ভাগ্যবশতঃ এই প্রতিশ্রুতি দাতাদের মধ্যে মুসলিম দেশ নাই বললেই চলে। তবে মালয়েশিয়ার আমল, তুরস্কের জানসুয়ু, ইয়াহাহা প্রভৃতি এনজিও যুদ্ধের শুরু থেকে সেখানে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে নিয়োজিত আছে বলে জানা গেছে।
তবে ‘গ্রাউন্ড জিরো’ নামে অভিহিত এই মুসলিম নগরীটি এখন একটি ভুতুড়ে নগরীই রয়ে গেছে বলা যায়। নগরীর ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভবনসমূহের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভগ্নাংশসমূহ এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে সরানো হয়নি। দু’বছর ধরে এ কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তচ্যুত লোকসমূহের প্রায় ২০ শতাংশ হচ্ছে মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ। এদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ লোককে আশপাশের বারাঙ্গাই সমূহের স্কুল ও হাসপাতালসমূহে রাখা হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে আরো ১৮ মাস সময় লাগবে। আবার শুধু ভবনসমূহ পুনঃনির্মাণে ৯০০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। অর্থ অনেকেই দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অর্থ আসছে না। কেউ কেউ বলছেন যে, মারাবী মুসলিম নগরীর পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের জন্য দু’টি M-এর দরকার। একটি M হচ্ছে Mind অন্যটি হচ্ছে Money. মুসলমানদের দুঃসময়ে সহযোগিতার জন্য অনেক দেশ ও সংস্থার Mind থাকলেও Money থাকে না। অথচ এই দুইয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। মারাবীর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়। মুসলিম মিন্দানাওকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর মারাবীর পুনর্বাসন বাংশামরো সরকারের উপর অর্পিত হয়েছে। ফিলিপাইন সরকারের সেনাবাহিনী কার্যতঃ মারাবী ধ্বংস প্রক্রিয়ায় আংশিক জড়িত থাকার কারণে তারা পুনর্গঠনের পূর্ণ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মুসলিম দেশ ও সংস্থাসমূহের এগিয়ে আসা ছাড়া এই বিপণ্ন মুসলমানদের কার্যকর সাহায্যের অন্য কোনও উপায় নেই।
সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক নয়টি ওয়ার্কশপে মারাবী পুনর্বাসনে মুসলিম দেশ এবং সেগুলোর সরকারি বেসরকারি সংস্থাসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় এবং একটি আন্তর্জাতিক কনসর্টিয়ামও গঠন করা হয়। এতে মালয়েশিয়ার কয়েকটি এনজিও যেমন, আমল, Centre for Policy Research of University Science Malaysia (USM), Islamic Economic Development Foundation of Malaysia এবং সেলেঙ্গার রাজ্য সরকারের ইখতিয়ার প্রকল্পের তরফ থেকে এই কনসর্টিয়ামকে অর্থ ও কারিগরি সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বলাবাহুল্য, আমানা ইখতিয়ার মালয়েশিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে গঠিত সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা। তফাৎ হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক সুদ ভিত্তিক। কিন্তু আমানা ইখতিয়ার এই প্রতিষ্ঠানটির সুদের অংশটিকে বাদ দিয়ে সামাজিক সংগঠনের অংশটিকে গ্রহণ করেছে। তারা কুরআনে কর্জে হাসানা অংশটিকে গ্রহণ করেছে। ১৯৮৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা ২,৬২,০০০ ঋণগ্রহীতাকে ২.৩ বিলিয়ন ঋণ প্রদান করেছে। তাদের ঋণ পরিশোধের হার ৯৯.২ শতাংশ। তারা শুধু মহিলাদেরই ঋণ দিয়ে থাকে। পেশাগত পুনর্বাসনে মারাবীতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তা আমানা এখতিয়ারের অনুকরণে কর্জে হাসানা হিসেবে। আলোচনায় জানা গেছে যে, মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ পদ্ধতি আংশিকভাবে গ্রহণ করেছে। যেহেতু সুদ ইসলামে হারাম সেহেতু তারা সুদকে বাদ দিয়ে কর্জে হাসানার মূলনীতিকেই গ্রহণ করেছে যার অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। সুদান এক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
সম্মেলনে বসনিয়া হার্জেগভিনার ওয়াকফ্ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. সেনাজিদ জাজিমবিক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ঐ দেশটির পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে কিভাবে ওয়াকফ্ তহবিল ভূমিকা রেখেছে তার বিবরণ দেন। আমরা পিপিপি (Public Private Partnership) বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। তৃতীয় খাত (সিভিল সোসাইটি) হিসাবে ওয়াকফ সরকারি ও বেসরকারি খাতের সাথে হাত মিলিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বসনিয়া। যুদ্ধ বিগ্রহের দুর্যোগ মোকাবিলায় ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে তারা ওয়াকফকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে। আমরা আমাদের দেশে ওয়াকফকে ব্যবহার করছি না, করলেও বেশির ভাগ মরা মানুষের মাজারকে কেন্দ্র করে করছি। ওয়াকফ কেন্দ্রিক পিপিপি প্রকল্পের ব্যয় কম। হিসেবে মারাবী পুনর্বাসনে BOT (Build Operate and Transfer) ভিত্তিতে ওয়াকফ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং এই তহবিলে অনুদান প্রদানের জন্য দানশীল ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহের নিকট আবেদন করা হয়।
এই সম্মেলনের পরই ছিল আইএফআরডির বার্ষিক সাধারণ সভা। পূর্ব নির্ধারিত ডুয়ং মেরিনা রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষেই তা অনুষ্ঠিত হয়। দশটি দেশ এর সদস্য। এজিএম শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মালয়েশিয়া আগামী মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব, তুরস্ক ডেপুটি প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যথাক্রমে ভাইস চেয়ারম্যান ১ ও ভাইস চেয়ারম্যান ২ পদে নির্বাচিত হয়েছে। তিনজন নির্বাহী সদস্যের মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও সুদান একটি করে পদ পেয়েছে। সম্মেলনগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে।
মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু রাজ্যের পরিবেশও অত্যন্ত ভাল মনে হয়েছে। সেখানে কোনও সামাজিক অপরাধ ও উচ্ছৃঙ্খলতার খবর নজরে পড়েনি। পার্ক, রিসোর্ট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের নোংরামী নেই, রাস্তার ধারে দেয়ালে বাসে কুরুচিপূর্ণ পোস্টার নেই, সেখানে সোমত্ত ছেলেমেয়েরা এক সাথে চলাফেরা করতে গেলে সাথে নিকাহনামা রাখতে হয়। সিনেমা হলে অশ্লীল ছবি দেখানো হয় না, টিভিতেও না। এ পরিবেশ কি আমরা পেতে পারি না?
No comments