শুধু কাশ্মীরী মুসলিম হওয়ার কারণে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে কাশ্মীরীদের by উমর মনজুর শাহ
- “আমি দোয়া করি যেন ভারতের জেলে যাওয়ার আগে মানুষের মৃত্যু হয়। আবু গারিব বা গুয়ান্তানামো বে’র চেয়েও এটা জঘন্য” – নিসার
চলতি
বছরের ২৪ জুলাই ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্য রাজস্থানের একটি আদালত তিন
কাশ্মীরী মুসলিম বন্দীকে বলেছে যে, তারা নিরপরাধ এবং তারা এখন বাড়ি যেতে
পারে। ২৩ বছর কারাগারে বন্দী থাকতে হয়েছে তাদের।
ভারতের রাজধানীতে ২১ মে’র বোমা হামলার ঘটনায় ১৯৯৬ সালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ওই হামলায় ১৩ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছিল।
ভারতের রাজধানীতে ২১ মে’র বোমা হামলার ঘটনায় ১৯৯৬ সালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ওই হামলায় ১৩ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছিল।
শ্রীনগরের একটি বাড়িতে সাউথ এশিয়ান মনিটর প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করছেন মির্জা নিসার |
মোহাম্মদ
আলী ভাট, মির্জা নিসার এবং লতিফ আহমেদ ওয়াজা কোন জামিন বা প্যারোল ছাড়াই
কারাগারে ২৩ বছর কাটিয়েছে। আদালত বলেছে যে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ
করতে পারেনি বাদীপক্ষ এবং সে জন্য তাদেরকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
মোহাম্মদ আলী ভাট
২৩ বছর পর মোহাম্মদ আলী ভাট যখন বাড়িতে পৌঁছায়, সে বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করে, যারা তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। আত্মীয়দের কবরস্থানের পথ দেখানোর অনুরোধ করে সে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে। জানাজা-দাফনে থাকতে না পারায় সে ছিল দারুণ দুঃখী।
কবরস্থানে ৫১ বছর বয়সী ভাটকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো অবস্থা ছিল না। বাবা আর মায়ের কবরের ফলকের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। আর তার চোখ দিয়ে অবিরাম পানি গড়াচ্ছিল। কবরের পাশে মাটিতে শুয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল সে।
যে আত্মীয় তাকে কবরস্থানে নিয়ে গিয়েছিল, তিনি বলেন, “কারোর সাহস ছিল না তার কাছে গিয়ে বলার যে এখন বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে। তার বয়স পঞ্চাশ পেরিযে গেছে, কিন্তু একটা শিশুর মতো কাঁদছিল সে”।
নেপাল থেকে ভাটকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল বিশের কিছু বেশি। সেখানে তার পরিবারের হাতের কাজের ব্যবসায় ছিল।
লতিফ আহমেদ ওয়াজা
আরেক মুক্তিপ্রাপ্ত লতিফ আহমেদ ওয়াজার বাড়ি শ্রীনগরের পুরনো কোয়ার্টারের সংকীর্ণ এক লেনের মধ্যে। ৪২ বছর বয়সী ওয়াজাকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল ১৯। অন্যান্য তরুণ কাশ্মীরীর মতো সেও আরেকটু ভালো জীবনের সন্ধানে নেপাল গিয়েছিল। তার পরিবার কার্পেট তৈরি করতো। ওয়াজা তার ব্যবসাকে আরেকটু বাড়িয়ে ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল।
গ্রেফতারের পর বহু মাস পর্যন্ত ওয়াজা জানতোই না কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওয়াজা জানালো, “আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে কোন চার্জশিট দেয়া হয়নি। আদালতে নেয়ার আগে আমাদের উপর নির্দয় অত্যাচারও করা হয়”।
দুই দশকেরও বেশি সময় পর মুক্ত হযে সে সাউথ এশিয়ান মনিটরকে জানালো, কারাগারের গন্ধটাকে মিস করতো সে। ওয়াজা বললো, “আমার পুরো সত্তাটাই কারাগারের সাথে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, অন্যান্য বন্দী, সকালের ড্রিল এবং লাঞ্চের সময়টার দৃশ্যগুলো আমার কল্পনায় ফিরে ফিরে আসছে”।
সে বললো যখন সে মুক্তি পেয়েছে, এর পর রাতের মাঝামাঝি তার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে দেখতে পায় যে কারাগারের মধ্যে নেই সে। তার সবচেয়ে বড় আফসোস হলো বাবার দাফনের সময় সে থাকতে পারেনি।
ওয়াজা বললো, “আমি এমনকি মায়ের মুখটা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য ভালো না থাকায় হাজার মাইল দূরে গিয়ে কারাগারে আমার সাথে দেখা করতে পারেননি মা”।
কারাগার অবশ্য তার মধ্যে কিছু ভালো গুণের সৃষ্টি করে দিয়েছে। একটি হলো বই পড়ার অভ্যাস। সে জানালো, “আমি এখন ভালো পাঠক হয়ে গেছি। শত শত ইতিহাসের বই পড়েছি আমি। ইসলামের ইতিহাস সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে আমাকে”।
আরেকটি ইতিবাচক যে জিনিসটি সে কারাগার থেকে পেয়েছে, সেটা হলো ফিট থাকার প্রবণতা। সে ফিটনেসের প্রতি আসক্ত হয়ে গেছে। কারাগারের ভেতরে প্রতিদিন নিয়মিত দৌঁড়াতো সে এবং প্রতিদিনই যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করতো।
মির্জা নিসার
মির্জা নিসার এখন তার বন্ধুদের সাথে সাক্ষাতে ব্যস্ত। ৩৯ বছর বয়সী নিসার বাড়ি পৌঁছার পর চারদিন চলে গেছে। তার ছেলেবেলার বন্ধুরা দল বেঁধে তাকে দেখতে আসছে। তাদের সবার নামও মনে নেই নিসারের, তবে তাদের সাথে কি ধরনের মজা করতো সে, সেগুলো মনে আছে তার।
যে সব বন্ধু দেখা করতে আসে তাদের প্রায় সবাইকেই একটা প্রশ্ন করে নিসার, “বিয়ে করেছিস? ছেলেমেয়ে আছে কতগুলো?”
নিসার ক্ষোভের সাথে বললো, “আমাকে যখন গ্রেফতার করে, তখন আমার বয়স ছিল ১৬। কারাগার আমার ছেলেবেলা, আমার তারুণ্য ও এর স্বপ্নগুলো কেড়ে নিয়েছে”।
হাতের কাজের ব্যবসায় শেখার জন্য ১৯৯৬ সালে দিল্লী গিয়েছিল সে। সে জানালো, “আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে, কোন অপরাধ না করেও আমি গ্রেফতার হবো এবং ২৩ বছর আমাকে কারাগারে কাটাতে হবে”।
নিসার বললো, “জেলে আমি নির্যাতনের সত্যিকারের চেহারা এবং সত্যিকারের রং দেখেছি। এর কুৎসিত দিকটি আমি জেলে গিয়েই জানতে পেরেছি। আমি প্রার্থনা করি যাতে ভারতের জেলে যাওয়ার চেয়ে মানুষের মৃত্যু হয়। এটা আবু গারিব আর গুয়ান্তানামো বে’র চেয়েও খারাপ”।
যে তিনজন কাশ্মীরীকে আদালত মুক্তি দিয়েছে, তাদের সবারই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রশ্ন: “কে আমাদের হারানো ২৩ বছর ফিরিয়ে দেবে? আমরা এখন কি করবো, কোথায় যাবো, কিভাবে রোজগার করবো? আমাদের আত্মীয় বন্ধুদের মতো পরিবার কি কখনও আমাদের হবে? মোহাম্মদ আলীর মতে, ‘মুক্ত পৃথিবীতে’ তাদের জন্য খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে।
ভাট বিস্মিত হয়ে বলেন, “আমরা নিরপরাধ বুঝতে তাদের ২৩ বছর লেগে গেলো। পৃথিবীর কোথায় এ রকম বিচার ব্যবস্থা রয়েছে?
নিসার বললেন, তিনি সরকারকে এক শর্তে ক্ষমা করতে পারেন। “এই হারানো ২৩টি বছরের একটি মাত্র দিনকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও, আমি কসম খাচ্ছি, কারাগারে আমার সাথে যা খারাপ আচরণ করা হয়েছে, সব আমি মাফ করে দেবো”।
কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে কুসংস্কার
মুক্তি পাওয়া এই কাশ্মীরী মুসলিমরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বললো যে, কাশ্মীরের মানুষের বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে গভীর বিতৃষ্ণা রয়েছে এবং তারা দাবি করেন যে, তাদের গ্রেফতার করার কারণ হলো প্রথমত তারা মুসলিম, এর উপর কাশ্মীরী।
মির্জা নিসার বলেন, “এমনকি কারাগারের ভেতরেও অন্যান্য বন্দী ও কারা কর্তৃপক্ষের কাশ্মীরী মুসলিমদের ব্যাপারে কুসংস্কার রয়েছে”
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের একটি কোর্ট তিনজন কাশ্মীরীকে নিরপরাধ ঘোষণা করে, যাদের প্রত্যেককে ১২ বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে।
মোহাম্মদ হোসাইন ফাজিলি, রফিক আহমেদ শাহ এবং তারিক আহমেদ দার নামের ওই তিনজনকে ২০০৫ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নয়াদিল্লীতে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার কয়েকদিন পর তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ওই হামলায় ৬৭ জন নিহত হয়েছিল এবং এই নিরপরাধ তিনজনকে হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল ।
তবে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালত ফাজলি ও শাহের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় এবং বলে যে প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদেরকে মুক্ত ঘোষণা করে। দারের বিরুদ্ধে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু এরই মধ্যে কারাগারে ১০ বছর কাটানোর কারণে তাকেও মুক্তি দেয়া হয়।
বিশিষ্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অধিকার কর্মী ভিম সিংয়ের মতে, কম করে হলেও ৪০০ কাশ্মীরী তরুণ তাদের বিচারের অপেক্ষায় আছে এবং ভারতের বিভিন্ন কারাগারে তারা জীবন কাটাচ্ছে। তাদের একমাত্র অপরাধ হলো তারা কাশ্মীরী মুসলিম।
মোহাম্মদ আলী ভাট
২৩ বছর পর মোহাম্মদ আলী ভাট যখন বাড়িতে পৌঁছায়, সে বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করে, যারা তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। আত্মীয়দের কবরস্থানের পথ দেখানোর অনুরোধ করে সে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে। জানাজা-দাফনে থাকতে না পারায় সে ছিল দারুণ দুঃখী।
কবরস্থানে ৫১ বছর বয়সী ভাটকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো অবস্থা ছিল না। বাবা আর মায়ের কবরের ফলকের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। আর তার চোখ দিয়ে অবিরাম পানি গড়াচ্ছিল। কবরের পাশে মাটিতে শুয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল সে।
যে আত্মীয় তাকে কবরস্থানে নিয়ে গিয়েছিল, তিনি বলেন, “কারোর সাহস ছিল না তার কাছে গিয়ে বলার যে এখন বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে। তার বয়স পঞ্চাশ পেরিযে গেছে, কিন্তু একটা শিশুর মতো কাঁদছিল সে”।
নেপাল থেকে ভাটকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল বিশের কিছু বেশি। সেখানে তার পরিবারের হাতের কাজের ব্যবসায় ছিল।
লতিফ আহমেদ ওয়াজা
আরেক মুক্তিপ্রাপ্ত লতিফ আহমেদ ওয়াজার বাড়ি শ্রীনগরের পুরনো কোয়ার্টারের সংকীর্ণ এক লেনের মধ্যে। ৪২ বছর বয়সী ওয়াজাকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল ১৯। অন্যান্য তরুণ কাশ্মীরীর মতো সেও আরেকটু ভালো জীবনের সন্ধানে নেপাল গিয়েছিল। তার পরিবার কার্পেট তৈরি করতো। ওয়াজা তার ব্যবসাকে আরেকটু বাড়িয়ে ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল।
গ্রেফতারের পর বহু মাস পর্যন্ত ওয়াজা জানতোই না কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওয়াজা জানালো, “আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে কোন চার্জশিট দেয়া হয়নি। আদালতে নেয়ার আগে আমাদের উপর নির্দয় অত্যাচারও করা হয়”।
দুই দশকেরও বেশি সময় পর মুক্ত হযে সে সাউথ এশিয়ান মনিটরকে জানালো, কারাগারের গন্ধটাকে মিস করতো সে। ওয়াজা বললো, “আমার পুরো সত্তাটাই কারাগারের সাথে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, অন্যান্য বন্দী, সকালের ড্রিল এবং লাঞ্চের সময়টার দৃশ্যগুলো আমার কল্পনায় ফিরে ফিরে আসছে”।
সে বললো যখন সে মুক্তি পেয়েছে, এর পর রাতের মাঝামাঝি তার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে দেখতে পায় যে কারাগারের মধ্যে নেই সে। তার সবচেয়ে বড় আফসোস হলো বাবার দাফনের সময় সে থাকতে পারেনি।
ওয়াজা বললো, “আমি এমনকি মায়ের মুখটা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য ভালো না থাকায় হাজার মাইল দূরে গিয়ে কারাগারে আমার সাথে দেখা করতে পারেননি মা”।
কারাগার অবশ্য তার মধ্যে কিছু ভালো গুণের সৃষ্টি করে দিয়েছে। একটি হলো বই পড়ার অভ্যাস। সে জানালো, “আমি এখন ভালো পাঠক হয়ে গেছি। শত শত ইতিহাসের বই পড়েছি আমি। ইসলামের ইতিহাস সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে আমাকে”।
আরেকটি ইতিবাচক যে জিনিসটি সে কারাগার থেকে পেয়েছে, সেটা হলো ফিট থাকার প্রবণতা। সে ফিটনেসের প্রতি আসক্ত হয়ে গেছে। কারাগারের ভেতরে প্রতিদিন নিয়মিত দৌঁড়াতো সে এবং প্রতিদিনই যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করতো।
মির্জা নিসার
মির্জা নিসার এখন তার বন্ধুদের সাথে সাক্ষাতে ব্যস্ত। ৩৯ বছর বয়সী নিসার বাড়ি পৌঁছার পর চারদিন চলে গেছে। তার ছেলেবেলার বন্ধুরা দল বেঁধে তাকে দেখতে আসছে। তাদের সবার নামও মনে নেই নিসারের, তবে তাদের সাথে কি ধরনের মজা করতো সে, সেগুলো মনে আছে তার।
যে সব বন্ধু দেখা করতে আসে তাদের প্রায় সবাইকেই একটা প্রশ্ন করে নিসার, “বিয়ে করেছিস? ছেলেমেয়ে আছে কতগুলো?”
নিসার ক্ষোভের সাথে বললো, “আমাকে যখন গ্রেফতার করে, তখন আমার বয়স ছিল ১৬। কারাগার আমার ছেলেবেলা, আমার তারুণ্য ও এর স্বপ্নগুলো কেড়ে নিয়েছে”।
হাতের কাজের ব্যবসায় শেখার জন্য ১৯৯৬ সালে দিল্লী গিয়েছিল সে। সে জানালো, “আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে, কোন অপরাধ না করেও আমি গ্রেফতার হবো এবং ২৩ বছর আমাকে কারাগারে কাটাতে হবে”।
নিসার বললো, “জেলে আমি নির্যাতনের সত্যিকারের চেহারা এবং সত্যিকারের রং দেখেছি। এর কুৎসিত দিকটি আমি জেলে গিয়েই জানতে পেরেছি। আমি প্রার্থনা করি যাতে ভারতের জেলে যাওয়ার চেয়ে মানুষের মৃত্যু হয়। এটা আবু গারিব আর গুয়ান্তানামো বে’র চেয়েও খারাপ”।
যে তিনজন কাশ্মীরীকে আদালত মুক্তি দিয়েছে, তাদের সবারই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রশ্ন: “কে আমাদের হারানো ২৩ বছর ফিরিয়ে দেবে? আমরা এখন কি করবো, কোথায় যাবো, কিভাবে রোজগার করবো? আমাদের আত্মীয় বন্ধুদের মতো পরিবার কি কখনও আমাদের হবে? মোহাম্মদ আলীর মতে, ‘মুক্ত পৃথিবীতে’ তাদের জন্য খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে।
ভাট বিস্মিত হয়ে বলেন, “আমরা নিরপরাধ বুঝতে তাদের ২৩ বছর লেগে গেলো। পৃথিবীর কোথায় এ রকম বিচার ব্যবস্থা রয়েছে?
নিসার বললেন, তিনি সরকারকে এক শর্তে ক্ষমা করতে পারেন। “এই হারানো ২৩টি বছরের একটি মাত্র দিনকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও, আমি কসম খাচ্ছি, কারাগারে আমার সাথে যা খারাপ আচরণ করা হয়েছে, সব আমি মাফ করে দেবো”।
কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে কুসংস্কার
মুক্তি পাওয়া এই কাশ্মীরী মুসলিমরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বললো যে, কাশ্মীরের মানুষের বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে গভীর বিতৃষ্ণা রয়েছে এবং তারা দাবি করেন যে, তাদের গ্রেফতার করার কারণ হলো প্রথমত তারা মুসলিম, এর উপর কাশ্মীরী।
মির্জা নিসার বলেন, “এমনকি কারাগারের ভেতরেও অন্যান্য বন্দী ও কারা কর্তৃপক্ষের কাশ্মীরী মুসলিমদের ব্যাপারে কুসংস্কার রয়েছে”
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের একটি কোর্ট তিনজন কাশ্মীরীকে নিরপরাধ ঘোষণা করে, যাদের প্রত্যেককে ১২ বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে।
মোহাম্মদ হোসাইন ফাজিলি, রফিক আহমেদ শাহ এবং তারিক আহমেদ দার নামের ওই তিনজনকে ২০০৫ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নয়াদিল্লীতে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার কয়েকদিন পর তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ওই হামলায় ৬৭ জন নিহত হয়েছিল এবং এই নিরপরাধ তিনজনকে হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল ।
তবে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালত ফাজলি ও শাহের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় এবং বলে যে প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদেরকে মুক্ত ঘোষণা করে। দারের বিরুদ্ধে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু এরই মধ্যে কারাগারে ১০ বছর কাটানোর কারণে তাকেও মুক্তি দেয়া হয়।
বিশিষ্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অধিকার কর্মী ভিম সিংয়ের মতে, কম করে হলেও ৪০০ কাশ্মীরী তরুণ তাদের বিচারের অপেক্ষায় আছে এবং ভারতের বিভিন্ন কারাগারে তারা জীবন কাটাচ্ছে। তাদের একমাত্র অপরাধ হলো তারা কাশ্মীরী মুসলিম।
No comments