ওবিওআর ভারতের জন্য একটি ‘লাভজনক প্রস্তাবনা’, ভারতীয় চীন-বিশেষজ্ঞের অভিমত by সুবীর ভৌমিক
ভারতের
মিডিয়া ব্যারন এবং চীন-বিশেষজ্ঞ রাঘব বাহলের নতুন চমৎকার একটি বই ‘সুপার
সেঞ্চুরি’তে সুপারিশ করা হয়েছে যাতে তার দেশ চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড
(ওবিওআর) পদক্ষেপের সাথে যুক্ত হয়।
‘সুপার সেঞ্চুরি’ ভারতের বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দীর্ঘ প্রেসক্রিপশানের একটি তালিকাই শুধু নয়, বরং সমসাময়িক এশিয়া ও বিশ্বে ভারতের অবস্থানকে সংহত করার একটা রোডম্যাপও বটে।
বাহল বলেন, “বেইজিংয়ের ওবিওআর ইনিশিয়েটিভের ডিজাইন করা হয়েছে ইউরেশিয়ায় চীনের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কথা মাথায় রেখে। এটা ভারতের জন্যও একটা অর্জন হতে পারে। অথচ দিল্লী চীনের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে অনেক বেশি সন্দিহান ও উদ্বিগ্ন হয়ে আছে”।
তিনি স্বীকার করেন যে, ওবিওআরের অন্যতম প্রধান রুট চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় কারণ এটা পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের উপর দিয়ে গেছে, যেটাকে ভারত নিজেদের দাবি করে।
কিন্তু বাহল যুক্তি দেন যে, এশিয়া ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) নীতিমালায় এ বিষয়টির সমাধান রয়েছে। এতে ওবিওআরের কোন প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, বিবাদমান এলাকাগুলোতে কোন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সেখানকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ওই প্রকল্পের ব্যাপারে অনুমোদন দিতে হবে।
বাহল বলেন, “তাছাড়া, বেইজিং নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারতের অংশগ্রহণের বদলে তারা কিছু ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে, যেটা এই পদক্ষেপকে অনেকখানি চাঙ্গা করবে”। তিনি বলেন, ভারতের উচিত চীনকে ‘বন্ধুপ্রতীম শত্রু’ বিবেচনা করা: “যখনই সম্ভব তাদের আলীঙ্গন করা উচিত, প্রয়োজনে এড়িয়ে চলা উচিত এবং একান্ত বাধ্য হলেই কেবল পাল্টা আঘাত করা উচিত”।
বাহল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোট করার অর্থ এই নয় যে, আমাদেরকে চীন থেকে দূরে থাকতে হবে। ঠিক তার উল্টা, বহুপাক্ষিকতার উদ্দেশ্যই হলো একপক্ষের সাথে গাঁটছাড়া না বেঁধে বিভিন্ন পক্ষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ নিয়ে লেনদেন করা”। তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া আমরা চাইলেও চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারবো না”।
বাহল তার আগের বইয়ে চীন ও ভারতের প্রবৃদ্ধির মধ্যে পারস্পরিক তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেন যে, এশিয়ার বৃহৎ এই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কটা আরও ‘গভীর ও পরিপক্ক’ হয়েছে।
বাহল বলেন, “প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ শীর্ষ পর্যায়ে কূটনীতিক বিনিময় প্রায় নিয়মিত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই নেতার মধ্যেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক রয়েছে। চীনের নেতা ভারতের নেতার প্রতি প্রশংসাসূচক আচরণ দেখিয়েছেন, কারণ পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে মোদির নীতি কিছুটা আগ্রাসী হলেও সেটা স্বচ্ছ”।
তিনি যুক্তি দেখান যে, চীন ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের বেষ্টনি থেকে বের করে নিয়ে আসতে চায় কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য সামরিক জোটের ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন, তা সেটা যদি ন্যাটোর মতো না-ও হয়। তাছাড়া চীনের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন অন্যান্য আসিয়ান দেশগুলোরও এই জোটে যোগ দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা বাজার বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভারতের বিশাল বাজারে প্রবেশের জন্য গভীরভাবে আগ্রহী চীন।
বাহল বলেন, বেশ কতগুলো ইস্যুতে ভারত আর চীন একই জায়গায় রয়েছে।
বাহল বলেন, “পশ্চিমা শক্তির কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে সাম্প্রতিককালে উদিত অর্থনীতি হিসেবে ভারত ও চীনের উভয়েরই ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে একটা অভিন্ন হতাশা রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একটা রূপ দিয়েছে। এটার কারণে এআইআইবি এবং ব্রিকস নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের মতো বিকল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে, যেগুলো উদীয়মান দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে”।
“আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন জায়গাটি হলো অর্থনীতি”।
বাহল বলেন, “চীনের ধীরগতি ভারতের সাথে সম্পর্ককে মজবুত করেছে এবং ভারত এখন শুধু স্টিল, সিমেন্ট আর এ ধরনের পণ্যের বিকল্প বাজারই হয়ে ওঠেনি বরং বিচলিত দেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের আকর্ষণীয় বিকল্পও হয়ে উঠেছে”। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, শুধু ২০১৫ সালেই ভারতে চীনের বিনিয়োগ ছয়গুণ বেড়েছে।
বাহল বলেন, “আর সেটা একটা শুরু মাত্র কারণ নতুন চুক্তির কারণে উচ্চগতির রেললাইন, স্মার্ট সিটি, যৌথ প্রযুক্তি পার্কসহ বড় ধরনের সহযোগিতামূলক প্রকল্পের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে”। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, সিপিইসির নাম পরিবর্তনে চীনের প্রস্তাবটি এবং জম্মু ও কাশ্মীর, নাথু লা পাস বা নেপালের ভেতর দিয়ে বিকল্প করিডোর নির্মাণের বিষয়টি ভারতের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত যাতে ওবিওআরের ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগগুলোর মীমাংসা করা যায়।
বাহল লিখেছেন, “ওবিওআর ভারতের নেতৃত্বের জন্য আরেকটি সুযোগ, এবং চীনা মূলধনের বন্যার মধ্যে প্রবেশের আরেকটি পথ। ওবিওআর ছাড়া আমরা ক্রমশ সংযুক্ত হয়ে ওঠা এশিয়াতে আবদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো; এর মাধ্যমে ভারত তার ভয়াবহ অবকাঠামোকে মেরামত করে নিতে পারবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চীন ও দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ব্যাবসার দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে”।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক চক্রবর্তীর সাথে একমত পোষণ করেন তিনি, যিনি বলেছেন যে, ভারতে চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়লে এখানে চীনের স্বার্থ দ্বিগুণ বাড়বে এবং সে ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কখনও অস্থিতিশীল করতে চাইবে না চীন।
বাহল বলেন, “আমার কাছে এই কথাটা খুবই যুক্তিযুক্ত এবং অন্যান্য ভারতীয়ের মতো আমি চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও উদ্বিগ্ন নই”।
বাহলের যুক্তি হলো, সস্তা চীনা পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তাদের সুবিধা হয়েছে কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এটা ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে সৃজনশীল হতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, “চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতিটাকে ভারত নিজেদের সুবিধায় কাজে লাগাতে পারে, এটাকে অর্থনৈতিক কূটনীতির অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারে, যাতে আরও সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি করা যায়”।
পর্তুগিজ রাজনীতিবিদ ও চীনা বিশেষজ্ঞ ব্রুনো মাকায়েস তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: অ্যা নিউ চাইনিজ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বইয়ে যুক্তি দিয়েছেন যে, ওবিওআরের সাফল্যের জন্য এতে ভারতের অংশগ্রহণ জরুরি।
বহু ভারতীয় বিশ্লেষক যুক্তি দিয়েছেন যে, পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ইস্যুতে ভারত ও চীন একসাথে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং মার্কিন বাণিজ্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও তারা একত্র হতে পারে, যেটা তাদের উভয়েরই ক্ষতি করছে।
ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপের রনবীর সমাদার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে একটা বাজার হিসেবে দেখে, মূলত অস্ত্রের বাজার, এবং তারা চায় চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করতে অথচ ভারতের স্বার্থকে তারা গুরুত্বের সাথে দেখবে না। তাই, আমেরিকার হাতের পুতুল হওয়ার কোন দরকার নেই ভারতের। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের যে দুরভিসন্ধী, সেটা আমেরিকার প্রতারণার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ”।
‘সুপার সেঞ্চুরি’ ভারতের বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দীর্ঘ প্রেসক্রিপশানের একটি তালিকাই শুধু নয়, বরং সমসাময়িক এশিয়া ও বিশ্বে ভারতের অবস্থানকে সংহত করার একটা রোডম্যাপও বটে।
বাহল বলেন, “বেইজিংয়ের ওবিওআর ইনিশিয়েটিভের ডিজাইন করা হয়েছে ইউরেশিয়ায় চীনের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কথা মাথায় রেখে। এটা ভারতের জন্যও একটা অর্জন হতে পারে। অথচ দিল্লী চীনের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে অনেক বেশি সন্দিহান ও উদ্বিগ্ন হয়ে আছে”।
তিনি স্বীকার করেন যে, ওবিওআরের অন্যতম প্রধান রুট চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় কারণ এটা পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের উপর দিয়ে গেছে, যেটাকে ভারত নিজেদের দাবি করে।
কিন্তু বাহল যুক্তি দেন যে, এশিয়া ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) নীতিমালায় এ বিষয়টির সমাধান রয়েছে। এতে ওবিওআরের কোন প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, বিবাদমান এলাকাগুলোতে কোন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সেখানকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ওই প্রকল্পের ব্যাপারে অনুমোদন দিতে হবে।
বাহল বলেন, “তাছাড়া, বেইজিং নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারতের অংশগ্রহণের বদলে তারা কিছু ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে, যেটা এই পদক্ষেপকে অনেকখানি চাঙ্গা করবে”। তিনি বলেন, ভারতের উচিত চীনকে ‘বন্ধুপ্রতীম শত্রু’ বিবেচনা করা: “যখনই সম্ভব তাদের আলীঙ্গন করা উচিত, প্রয়োজনে এড়িয়ে চলা উচিত এবং একান্ত বাধ্য হলেই কেবল পাল্টা আঘাত করা উচিত”।
বাহল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোট করার অর্থ এই নয় যে, আমাদেরকে চীন থেকে দূরে থাকতে হবে। ঠিক তার উল্টা, বহুপাক্ষিকতার উদ্দেশ্যই হলো একপক্ষের সাথে গাঁটছাড়া না বেঁধে বিভিন্ন পক্ষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ নিয়ে লেনদেন করা”। তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া আমরা চাইলেও চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারবো না”।
বাহল তার আগের বইয়ে চীন ও ভারতের প্রবৃদ্ধির মধ্যে পারস্পরিক তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেন যে, এশিয়ার বৃহৎ এই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কটা আরও ‘গভীর ও পরিপক্ক’ হয়েছে।
বাহল বলেন, “প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ শীর্ষ পর্যায়ে কূটনীতিক বিনিময় প্রায় নিয়মিত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই নেতার মধ্যেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক রয়েছে। চীনের নেতা ভারতের নেতার প্রতি প্রশংসাসূচক আচরণ দেখিয়েছেন, কারণ পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে মোদির নীতি কিছুটা আগ্রাসী হলেও সেটা স্বচ্ছ”।
তিনি যুক্তি দেখান যে, চীন ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের বেষ্টনি থেকে বের করে নিয়ে আসতে চায় কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য সামরিক জোটের ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন, তা সেটা যদি ন্যাটোর মতো না-ও হয়। তাছাড়া চীনের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন অন্যান্য আসিয়ান দেশগুলোরও এই জোটে যোগ দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা বাজার বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভারতের বিশাল বাজারে প্রবেশের জন্য গভীরভাবে আগ্রহী চীন।
বাহল বলেন, বেশ কতগুলো ইস্যুতে ভারত আর চীন একই জায়গায় রয়েছে।
বাহল বলেন, “পশ্চিমা শক্তির কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে সাম্প্রতিককালে উদিত অর্থনীতি হিসেবে ভারত ও চীনের উভয়েরই ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে একটা অভিন্ন হতাশা রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একটা রূপ দিয়েছে। এটার কারণে এআইআইবি এবং ব্রিকস নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের মতো বিকল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে, যেগুলো উদীয়মান দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে”।
“আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন জায়গাটি হলো অর্থনীতি”।
বাহল বলেন, “চীনের ধীরগতি ভারতের সাথে সম্পর্ককে মজবুত করেছে এবং ভারত এখন শুধু স্টিল, সিমেন্ট আর এ ধরনের পণ্যের বিকল্প বাজারই হয়ে ওঠেনি বরং বিচলিত দেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের আকর্ষণীয় বিকল্পও হয়ে উঠেছে”। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, শুধু ২০১৫ সালেই ভারতে চীনের বিনিয়োগ ছয়গুণ বেড়েছে।
বাহল বলেন, “আর সেটা একটা শুরু মাত্র কারণ নতুন চুক্তির কারণে উচ্চগতির রেললাইন, স্মার্ট সিটি, যৌথ প্রযুক্তি পার্কসহ বড় ধরনের সহযোগিতামূলক প্রকল্পের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে”। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, সিপিইসির নাম পরিবর্তনে চীনের প্রস্তাবটি এবং জম্মু ও কাশ্মীর, নাথু লা পাস বা নেপালের ভেতর দিয়ে বিকল্প করিডোর নির্মাণের বিষয়টি ভারতের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত যাতে ওবিওআরের ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগগুলোর মীমাংসা করা যায়।
বাহল লিখেছেন, “ওবিওআর ভারতের নেতৃত্বের জন্য আরেকটি সুযোগ, এবং চীনা মূলধনের বন্যার মধ্যে প্রবেশের আরেকটি পথ। ওবিওআর ছাড়া আমরা ক্রমশ সংযুক্ত হয়ে ওঠা এশিয়াতে আবদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো; এর মাধ্যমে ভারত তার ভয়াবহ অবকাঠামোকে মেরামত করে নিতে পারবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চীন ও দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ব্যাবসার দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে”।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক চক্রবর্তীর সাথে একমত পোষণ করেন তিনি, যিনি বলেছেন যে, ভারতে চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়লে এখানে চীনের স্বার্থ দ্বিগুণ বাড়বে এবং সে ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কখনও অস্থিতিশীল করতে চাইবে না চীন।
বাহল বলেন, “আমার কাছে এই কথাটা খুবই যুক্তিযুক্ত এবং অন্যান্য ভারতীয়ের মতো আমি চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও উদ্বিগ্ন নই”।
বাহলের যুক্তি হলো, সস্তা চীনা পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তাদের সুবিধা হয়েছে কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এটা ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে সৃজনশীল হতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, “চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতিটাকে ভারত নিজেদের সুবিধায় কাজে লাগাতে পারে, এটাকে অর্থনৈতিক কূটনীতির অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারে, যাতে আরও সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি করা যায়”।
পর্তুগিজ রাজনীতিবিদ ও চীনা বিশেষজ্ঞ ব্রুনো মাকায়েস তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: অ্যা নিউ চাইনিজ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বইয়ে যুক্তি দিয়েছেন যে, ওবিওআরের সাফল্যের জন্য এতে ভারতের অংশগ্রহণ জরুরি।
বহু ভারতীয় বিশ্লেষক যুক্তি দিয়েছেন যে, পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ইস্যুতে ভারত ও চীন একসাথে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং মার্কিন বাণিজ্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও তারা একত্র হতে পারে, যেটা তাদের উভয়েরই ক্ষতি করছে।
ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপের রনবীর সমাদার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে একটা বাজার হিসেবে দেখে, মূলত অস্ত্রের বাজার, এবং তারা চায় চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করতে অথচ ভারতের স্বার্থকে তারা গুরুত্বের সাথে দেখবে না। তাই, আমেরিকার হাতের পুতুল হওয়ার কোন দরকার নেই ভারতের। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের যে দুরভিসন্ধী, সেটা আমেরিকার প্রতারণার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ”।
No comments