মিথ্যা মামলায় কাউকে অযথা হয়রানি করা যাবে না: প্রধান বিচারপতি
প্রধান
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘মিথ্যা মামলায় কেউ যাতে অযথা হয়রানির
শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৃত আসামি কিংবা ঘটনার সঙ্গে
সম্পৃক্ত নয় কিংবা বৃদ্ধ পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনকে মামলায় জড়িত
করার প্রবণতা আমাদের পরিহার করতে হবে।’
সোমবার (৩০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ‘নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি বিষয়ে মতবিনিময়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এ বছরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশের বিচারাধীন নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৮২টি। এর মধ্যে গত বছরেই দায়ের হয়েছে ৫০ হাজার ৩৩২টি মামলা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬৬টি মামলা। সম্প্রতি ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে। ফলে আরও অধিক হারে মামলা নিষ্পত্তি হবে বলে আমি আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘শুধু মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি নয়, গুণাগুণের ভিত্তিতের মামলা নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। এজন্য দরকার সঠিক তদন্ত, পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন, সঠিক ডাক্তারি পরীক্ষা ও মামলা সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগীতা।’
আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয়, সে দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৃত আসামি কিংবা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বৃদ্ধ পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা আত্মীয় স্বজনকে মামলায় জড়িত করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা ছাড়াও নারীর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মাতৃত্বকালীন সেবার উন্নয়নে মহিলা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশাবাদী।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাধারণ মামলার বিচারের সঙ্গে একই ফর্মুলায় ধর্ষণের বিচার করলে সত্যিকারের বিচার কোনোদিনই পাওয়া যাবে না। ধর্ষণের বিষয়টা অন্যরকম, স্পর্শকাতর। ইদানীং কতগুলো সহিংসতা বাড়ছে। আগে ধর্ষণ হতো কিন্তু ধর্ষণের পরও ধর্ষণের শিকার নারী বেঁচে থাকতেন। কিন্তু এখন ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। কারণ যাতে চিনতে না পারে, বলতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভেজালবিরোধী ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়ে জেল দিয়ে দেন। অন্যান্য কিছু অপরাধ আছে স্পট অনুসন্ধান, স্পট সাজা। ধর্ষণের শিকার নারীদের ব্যাপারেও এগুলোর মতো করা যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখা দরকার। ভিক্টিম নিজে সঙ্গে সঙ্গে যাতে বিচারের জায়গায় যেতে পারেন এবং রাত হোক, দিন হোক একজন বিচারক নির্ধারণ করা থাকবেন, ধর্ষণের শিকার কোনও নারী যদি আসে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ডাক্তার ডেকে পরীক্ষা করাবেন। তৎক্ষণাৎ সাক্ষী নেবেন, আসামি ধরা থাকলে তাকে বলা হবে উকিল নিয়োগ করো, তাকে জেরা করো। পলাতক থাকলে পরবর্তীতে তাকে কীভাবে জেরা করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে ভাবতে হবে।’ এ জন্য সমাজবিজ্ঞানী, আইনবিদ ও বিচারকসহ সবার সম্মিলিত প্রয়াস হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমার মতে নারীর নির্যাতনের আসল কারণ স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়ার অভাব। দরিদ্রদের মধ্যে ঝগড়া হয় আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে। অনেক সময় যৌতুকের জন্য নারীকে নির্যাতন করা হয়। আর বিত্তশালী পরিবারগুলোতে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারণে। এর সমাধান হিসেবে বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়েকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ ও পরামর্শ দেওয়া উচিত।’
শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের সমাজ এখন দুভাগে বিভক্ত। আমরা যারা স্বাভাবিক শিক্ষায় শিক্ষিত তারা এক রকম, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের চিন্তাধারা একরকম। আবার যারা মাদ্রাসার শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের মূল্যবোধ আরেক রকম। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলে আমাদের দেশে সেটি নেই। এটা একটা চিন্তার বিষয়।’
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তার পরিচালক জাফরোল হাসান, লিগ্যাল এইড সুপ্রিম কোর্ট শাখার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।
সোমবার (৩০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ‘নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি বিষয়ে মতবিনিময়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এ বছরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশের বিচারাধীন নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৮২টি। এর মধ্যে গত বছরেই দায়ের হয়েছে ৫০ হাজার ৩৩২টি মামলা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬৬টি মামলা। সম্প্রতি ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে। ফলে আরও অধিক হারে মামলা নিষ্পত্তি হবে বলে আমি আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘শুধু মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি নয়, গুণাগুণের ভিত্তিতের মামলা নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। এজন্য দরকার সঠিক তদন্ত, পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন, সঠিক ডাক্তারি পরীক্ষা ও মামলা সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগীতা।’
আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয়, সে দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৃত আসামি কিংবা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বৃদ্ধ পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা আত্মীয় স্বজনকে মামলায় জড়িত করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা ছাড়াও নারীর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মাতৃত্বকালীন সেবার উন্নয়নে মহিলা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশাবাদী।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাধারণ মামলার বিচারের সঙ্গে একই ফর্মুলায় ধর্ষণের বিচার করলে সত্যিকারের বিচার কোনোদিনই পাওয়া যাবে না। ধর্ষণের বিষয়টা অন্যরকম, স্পর্শকাতর। ইদানীং কতগুলো সহিংসতা বাড়ছে। আগে ধর্ষণ হতো কিন্তু ধর্ষণের পরও ধর্ষণের শিকার নারী বেঁচে থাকতেন। কিন্তু এখন ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। কারণ যাতে চিনতে না পারে, বলতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভেজালবিরোধী ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়ে জেল দিয়ে দেন। অন্যান্য কিছু অপরাধ আছে স্পট অনুসন্ধান, স্পট সাজা। ধর্ষণের শিকার নারীদের ব্যাপারেও এগুলোর মতো করা যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখা দরকার। ভিক্টিম নিজে সঙ্গে সঙ্গে যাতে বিচারের জায়গায় যেতে পারেন এবং রাত হোক, দিন হোক একজন বিচারক নির্ধারণ করা থাকবেন, ধর্ষণের শিকার কোনও নারী যদি আসে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ডাক্তার ডেকে পরীক্ষা করাবেন। তৎক্ষণাৎ সাক্ষী নেবেন, আসামি ধরা থাকলে তাকে বলা হবে উকিল নিয়োগ করো, তাকে জেরা করো। পলাতক থাকলে পরবর্তীতে তাকে কীভাবে জেরা করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে ভাবতে হবে।’ এ জন্য সমাজবিজ্ঞানী, আইনবিদ ও বিচারকসহ সবার সম্মিলিত প্রয়াস হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমার মতে নারীর নির্যাতনের আসল কারণ স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়ার অভাব। দরিদ্রদের মধ্যে ঝগড়া হয় আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে। অনেক সময় যৌতুকের জন্য নারীকে নির্যাতন করা হয়। আর বিত্তশালী পরিবারগুলোতে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারণে। এর সমাধান হিসেবে বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়েকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ ও পরামর্শ দেওয়া উচিত।’
শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের সমাজ এখন দুভাগে বিভক্ত। আমরা যারা স্বাভাবিক শিক্ষায় শিক্ষিত তারা এক রকম, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের চিন্তাধারা একরকম। আবার যারা মাদ্রাসার শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের মূল্যবোধ আরেক রকম। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলে আমাদের দেশে সেটি নেই। এটা একটা চিন্তার বিষয়।’
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তার পরিচালক জাফরোল হাসান, লিগ্যাল এইড সুপ্রিম কোর্ট শাখার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।
No comments