সড়ক যখন মৃত্যুকূপ by জসিম মজুমদার
এ বছর দফায় দফায় প্রবল বৃষ্টিপাতে খাগড়াছড়ি জেলায় ৩টি মহাসড়ক এবং ৪২টি
আন্তঃউপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ও ধস দেখা দিয়েছে। এতে
সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন
এলাকাবাসী ও পর্যটকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এই
অবস্থা চলতে থাকলে সড়কগুলোতে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে
পারে। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে
সড়কগুলোতে সংস্কার কাজ চলছে।
খাগড়াছড়ি
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, পার্বত্য চট্টগ্রাম
উন্নয়ন বোর্ড, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা
যায়, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর মধ্যে ৩টি মহাসড়কের মধ্যে খাগড়াছড়ি হতে
রাঙামাটি পর্যন্ত মহাসড়কের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার, খাগড়াছড়ি থেকে
চট্টগ্রাম মহাসড়কের দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার এবং খাগড়াছড়ি থেকে ফেনী
মহাসড়কের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এই তিনটি মহাসড়কের পাশাপাশি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২টি আন্তঃউপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন সড়ক। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে
বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে যাওয়ার সড়কগুলোর মধ্যে মহালছড়ি উপজেলায় রয়েছে
৪টি, মাটিরাঙা উপজেলায় ৬টি, গুইমারা উপজেলায় ৫টি, মানিকছড়ি উপজেলায় ৭টি,
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৫টি, রামগড় উপজেলায় ৭টি, পানছড়ি উপজেলায় ৪টি এবং
দীঘিনালা উপজেলায় ৪টি আন্তঃউপজেলা সড়ক রয়েছে, যা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
মহাসড়কগুলোর
৩৩০ কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। আর ৭০
কিলোমিটার রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করছে সেনাবাহিনীর ইসিবি। এছাড়া অন্যান্য
সংস্থা প্রায় এক হাজার কিলোমিটার আয়তনের ৬৬টি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
এরমধ্যে ৪২টি রাস্তার অনেক স্থানে প্রবল বর্ষণের কারণে ভেঙে যাওয়ায় বা ধসে
যাওয়ায় রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাগুলো ভাঙার কারণে চরম
ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীসাধারণ, পর্যটক ও পরিবহন মালিকেরা।
মাটিরাঙা উপজেলার ট্রাকচালক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘খাগড়াছড়ি থেকে
আসা-যাওয়ার প্রত্যেকটি রাস্তার অবস্থাই খারাপ হওয়ায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।
বিভিন্ন সময় গাড়ি নষ্ট হচ্ছে, সময় নষ্ট হচ্ছে।’
খাগড়াছড়ি
সদর উপজেলার মাইক্রোচালক মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা খুবই
খারাপ। রাস্তা মেরামত না করাই বর্ষা মৌসুমে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ঢাকার পল্লবী থেকে সাজেকগামী পর্যটক সামছুল আরেফিন বলেন, ‘অনেক রাস্তারই বেহাল অবস্থা। অনেক জায়গায় পর্যটকবাহী গাড়ি আটকে যায়। অনেক স্থানে পাহাড় ধসে গেছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তাগুলোর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। যাতায়াতে আগের তুলনায় সময় বেশি লাগছে। এ বছর বর্ষায় রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। ’
ঢাকার পল্লবী থেকে সাজেকগামী পর্যটক সামছুল আরেফিন বলেন, ‘অনেক রাস্তারই বেহাল অবস্থা। অনেক জায়গায় পর্যটকবাহী গাড়ি আটকে যায়। অনেক স্থানে পাহাড় ধসে গেছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তাগুলোর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। যাতায়াতে আগের তুলনায় সময় বেশি লাগছে। এ বছর বর্ষায় রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। ’
খাগড়াছড়ি
এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, ‘এলজিইডির
তত্ত্বাবধানে থাকা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো সংস্কারে বিগত ২৭ জুন
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠিতে আমরা ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা
চেয়েছি। টাকা বরাদ্দ পেলে রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করবো।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী
বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে মহাসড়কগুলোর অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে
বিভিন্ন জায়গায় সংস্কার কাজ চলছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আশা করি আগামী
দুই মাসের মধ্যে রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শেষ হবে।’
No comments