পোড়াদহ মেলায় লাখ টাকার শত কেজির বাঘাইড়
শত
কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে কেউ এককভাবে না
কিনলে করলে কেটে বিক্রি করা হবে। সকাল ১০ টার দিকে ৮০ কেজি ওজনের বাঘাইড়
মাছ কেটে বিক্রি শুরু হয়। প্রতিকেজি ১২ শ' টাকা দরে বিক্রি চলছে। গাবতলীর
ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা বসেছে আজ বুধবার। মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে
উঠা এই মেলা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। হাজারো
মানুষের মেলায় এক মাছের দাম হাঁকা হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। স্থানীয় মাছের ৬
ব্যবসায়ী গাবতলীর চকমড়িয়ায় ভোলা, কাশেম, লাল মিয়া, নান্নু, জলিল, মোস্তা
বিশাল আকৃতির মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। যমুনা নদীর ৮০ কেজি ওজনের বাঘাইড় কেটে
বিক্রি করছেন ১২ শ' টাকা কেজি দরে। আর ১ শ' কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির মাছটি
বিক্রি হবে ১২ শ' ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া এই মেলায় ১৭ কেজি ওজনের বোয়াল
মাছের দাম হাঁকা হয়েছে প্রতি কেজি ১৬ শ' টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের কাতলা
মাছ ২২ শ' টাকা কেজি, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১২ শ’ টাকা, ১০
কেজির উপরে আইড় মাছ ১২ শ' থেকে ১৫ শ' টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রুই,
পাঙ্গাস, ব্রিগেড অন্যান্য জাতের মাছ উঠেছে মেলায়। গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী
পোড়াদহ মেলা আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মিলন
মেলায় পরিনত হয় এ মেলা প্রাঙ্গন। তবে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা এবার
ভিন্নস্থানে স্বল্প জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে
বিরোধে মন্ডল পরিবারের জমির মালিকেরা এবার পোড়াদহ মেলার নির্ধারিত স্থানে
আগেভাগেই বোরো ধানের চারা রোপন করেছেন। প্রায় ২ শ' বছর আগে থেকে সন্ন্যাসী
পূজা উপলক্ষে গাবতলীর গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদীর পশ্চিম পাশে
ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে এক দিনের জন্য মেলাটি হয়ে আসছে। আদালতের
আদেশক্রমে মন্ডল পরিবারের ২২ জন জমির মালিকের যেকোনো একজন মেলাটি পরিচালনার
জন্য ইজারাদার হিসেবে স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লাইসেন্স
নবায়নের অনুমতি পেয়ে থাকেন। এ লক্ষ্যে মেলাটি সুসম্পন্ন হওয়ার জন্য
জোতদাররা প্রতিবছরই বোরো মৌসুমের আগে প্রায় শত বিঘা জমি ফাঁকা রেখে দেন।
কিন্তু বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান গত বছর মন্ডল পরিবারের জোতদারদেরকে বাদ
দিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তির নামে লাইসেন্স প্রদান করে তিনি নিজেই মেলাটি
পরিচালনা করেছিলেন। মূলত এ কারণেই এবছর মন্ডল পরিবারের লোকজন পোড়াদহ মেলার
নির্ধারিত স্থানে তাদের জমিতে আগেভাগেই বোরো ধানের চারা রোপন করেছেন। ২ শ'
বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা এবার একেবারেই স্বল্প জায়গায় ভিন্ন স্থানে
অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে স্বল্প পরিসরে হলেও উৎসাহের কমতি নেই। জানা যায়, প্রতি
বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে
বগুড়াবাসীর মিলনমেলা।
পোড়াদহ নামক স্থানে হয় বলে এ মেলার নাম হয়ে যায়
পোড়াদহ মেলা। মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ মেয়ে ও মেয়ে
জামাইকে নিমন্ত্রণ দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। এ কারণে স্থানীয়রা আবার এ
মেলাকে জামাই মেয়ে মেলা বলে থাকেন। মেলার জন্য ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির
মিষ্টি তৈরী করেছেন ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ। মহিষাবান এলাকার ব্যবসায়ী লতিফের
দোকানে এ মিষ্টির দাম হাঁকা হয়েছে ৪ হাজার টাকায়। এছাড়া এক কেজি, দুই
কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। ২ শ'
মণ মিষ্টি রয়েছে এ দোকানে। এ মেলায় মাছ, মিষ্টি, ফর্নিচার, বড়ই, পান
সুপারী, তৈজসপত্র, খেলনা থাকলেও কালক্রমে মাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে আসছে।
মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাসসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা চলছে। মেলায়
মাছ ক্রয় করতে আসা বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী ও তরুন রাজনীতিবীদ
রাশেদুল আলম শাওন জানান, তিনি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৮ কেজি ওজনের একটি কাতলা
মাছ প্রতি কেজি ১২ শ' টাকা দরে ক্রয় করেছেন। স্থানীয় সমাজসেবক লুৎফর রহমান
সরকার স্বপন জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। তবে
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির কারনে এবার স্বল্প পরিসরে মেলা বসেছে। তারপরও
উৎসব থেমে নেই। জামাই মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা
এলাকা। গাবতলী মডেল থানার ওসি খায়রুল বাসার বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও
সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে কঠোর
নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো প্রকার জুয়া কিংবা অশ্লীল নাচ-গান
করার চেষ্টা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
No comments