তরুণীর চোখের মণিতে কৃমি
অ্যাবি
বেকলি। ২৪ বছরের হাসিখুশি ছটফটে তরুণী। ভালোবাসেন ঘুরে বেড়াতে। এবার ছুটি
কাটিয়ে আসার পর থেকেই চোখে অস্বস্তি হচ্ছিল তার। পানিতে ধুয়ে ও হাত দিয়ে
কচলেও লাভ হচ্ছিল না। এর পর একদিন নিজেই চোখের মণি থেকে টেনে বার করলেন আধ
ইঞ্চি লম্বা কৃমি! স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান অ্যাবি। তিনিও চোখ থেকে
বের করে আনলেন আরও দুটি কৃমি। সুতার মতো দেখতে ছিল কৃমিগুলো। কিন্তু আগে
কখনও চোখের মণিতে কৃমি দেখেননি। এর পর অন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে ওরেগনের
ব্রুকিংস শহরের অ্যাবি বেকলি ছুটে যান চোখের ডাক্তারের কাছে। তিনিও অ্যাবির
চোখ থেকে তিনটি কৃমি বের করে আনেন। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে অ্যাবি
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসির একটি কেন্দ্রে হাজির হন। সেখানকার
গবেষকরা জানালেন, অ্যাবির চোখের কৃমিগুলো থেলাজিয়া পরিবারের। সেখানে আরও
আটটি কৃমি বের করা হয়। এভাবে ২০ দিনে ১৪টি কৃমি বের করা হয়। ২০১৬ সালে এ
ঘটনার পর অবশ্য এতদিনেও চোখ নিয়ে আর কোনো সমস্যা হয়নি। ভালো আছেন অ্যাবি।
কয়েক দিন আগেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মজাদার স্নোম্যানের ছবি। সিডিসির
বিজ্ঞানীরা অ্যাবির চোখে বাসা বাধা কৃমির কাহিনী তুলে ধরেছেন ‘ট্রপিক্যাল
মেডিসিন’ ও ‘হাইজিন’ পত্রিকায়। ওই গবেষকদের অন্যতম রিচার্ড ব্র্যাডবেরি
বলেন, চোখের মধ্যে কিলবিল করছে কিছু কৃমি।
এটি ছিল খুবই বিচ্ছিরি, শিউরে
ওঠার মতো ব্যাপার। তরুণী অ্যাবিকে ওই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারলেও
অনেক প্রশ্নের মুখে পড়েন সিডিসির গবেষকরা। কয়েক মাস পর তারা ঠিক করে চিনতে
পারেন ওই জঘন্য পরজীবীগুলো আসলে ‘থেলাজিয়া গুলোসা’, যা থাকে গরুর চোখে।
কখনও কখনও বেড়াল বা কুকুরেরও। মূলত চোখে বসা মাছিদের মাধ্যমে ছড়ায় এই
কৃমির লার্ভা। ওই মাছিরা চোখের পানি খেয়ে বাঁচে। খাওয়ার সময়ে চোখে চলে যায়
কৃমির লার্ভা। সেখানেই বড় হতে থাকে কৃমিগুলো। তাই বলে মানুষের চোখে
‘থেলাজিয়া গুলোসা’! মানুষের চোখ এতই তৎপর যে, কাছাকাছি কিছু এলেই চোখের পলক
পড়ে যায়। তাই প্রশ্ন দেখা দেয় চোখে মাছি বসল কীভাবে-শুরু হয় খোঁজ।
অ্যাবির কাছ থেকে গবেষকরা জানতে পারেন, তার চোখের মণিতে কৃমি ধরা পড়ার কয়েক
দিন আগে দক্ষিণ ওরেগনে এক জায়গায় ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন তিনি। এলাকাটি
গবাদিপশু পালনের জন্য বিখ্যাত। সেখানেই ঘোড়ায় চড়ার সময়ে কোনো মাছি এত
দ্রুত এসে চোখে পড়েছিল যে, চোখের পাতাও তা আটকাতে পারেনি। গবেষক
ব্র্যাডবেরি বলেন, এটি খুবই বিরল ঘটনা। আর মানুষের চোখে ‘থেলাজিয়া গুলোসা’
হয়েছে বিশ্বে এই প্রথম ঘটেছে। অবশ্য এর আগে থেলাজিয়া পরিবারেরই অন্য দুই
প্রজাতির কৃমি দেখা গেছে মানুষের চোখে। ইউরোপ ও এশিয়ায় ১৬০টি এবং আমেরিকায়
১১টি ঘটনার তথ্য মিলেছে। চিকিৎসা না করালে এগুলো কর্নিয়ার ক্ষতি, এমনকি
অন্ধও করে দিতে পারে। তবে সব কৃমি বের করে ফেললে স্থায়ী সমস্যা বা উপসর্গ
থাকে না।
No comments