ডলি চৌধুরীর চোখে তখন জল by মুসা বিন মোহাম্মদ
প্রবীণ নিবাস থেকে...
স্বামী
চাকরি করতেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। সেই সুবাদে
দীর্ঘদিন দেশ-বিদেশে আয়েশী জীবন যাপন করেছেন ডলি চৌধুরী। পড়ালেখা করিয়েছেন
চার ছেলে ও এক মেয়েকে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে সবাই এখন দেশান্তরী। কেউ আমেরিকায়,
কেউ কানাডায়, কেউ বা অস্ট্রেলিয়ায়।
সুখী জীবন তাদের। কিন্তু সুখে নেই তাদের বৃদ্ধ মা’র। ভালোবাসার জন্য হাহাকার তার। ঠিকানা আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাস। ২০০৯ সাল থেকেই এখানে আছেন। একটি কক্ষে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন ছোট্ট সংসার। আলাপকালে তিনি মানবজমিনকে বলেন, নিজের লেখাপড়া বাদ দিয়ে সন্তানদের লালন-পালন করেছি। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি। আজ তারা নিজের সুখের জন্য খুব ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততার মধ্যে এখন আমি পাথরের মতো বোঝা হয়ে গেছি। চোখের পানি মুছতে মুছতে ডলি চৌধুরী বলেন, এখন কানে কম শুনি। চোখে তেমন দেখতে পাই না। শরীরটাও খুব দুর্বল। স্বপ্ন ছিল- জীবনের শেষ সময়টুকু সন্তান-নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সুখ ভাগাভাগি করে কাটিয়ে দেব। তা আর ভাগ্যে জুটলো না।
ডলি চৌধুরীর মতোই এই প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দা মীরা চৌধুরী। আমেরিকা প্রবাসী একমাত্র সন্তানের জননী মীরা। তিনি খুবই অসুস্থ। কথা বলতে পারলেও কানে কম শোনেন। প্রায় সময়ই শুয়ে কাটান। ১০ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বৃদ্ধার পৃথিবীর সব ভালোবাসা তার একমাত্র ছেলে। কিন্তু ছেলে এখন তার থেকে অনেক দূরে। স্বামী আর ছেলের ভালোবাসার বিরহে মুমূর্ষু জীবন পার করছেন এই বৃদ্ধা। চোখের জলে বুকের চাপা কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করে নিঃসঙ্গ এই বৃদ্ধা মা বলেন, পৃথিবীতে কোনো ভালোবাসা নেই। আমার কাছ থেকে ভালোবাসা অনেক দূরে। ভালোবাসার একমাত্র ছেলে মাসে দুবার ফোনে কথা বলে। সময় ও ধনসম্পদ ব্যয় করে সন্তানকে বড় করেছি। শেষ বয়সে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেয়ার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই আমাকে চলে যেতে হবে। তার পরও ছেলের সুখ হলে আমার সুখ।
এক সময় বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন যশোরের হামিদুল্লাহ ফারুক। সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে মেয়ে আমেরিকায় চলে যাওয়ায় বড় একা হয়ে যান তিনি। স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বৃদ্ধ বাবার কোনো খোঁজখবর নিতে পারে না মেয়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় তার এখন শেষ আশ্রয়স্থল হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। নিঃসঙ্গ হামিদুল্লাহ ফারুক বলেন, বৃদ্ধাশ্রমে বেঁচে থাকার জন্য সবকিছু আছে। বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু শেষ বয়সে পরিবারের পরম ভালোবাসা পাওয়া যায় না। যার জন্য ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অবদান পরিবারের জন্য ব্যয় করেছি। আজ আমি সবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে নিঃসঙ্গ নিবাসের বাসিন্দা।
মা-বাবা জীবনের সবটুকু দিয়ে সন্তানকে মানুষ করে। নিজের চাওয়াকে বলি দিয়ে সন্তানদের চাওয়া-পাওয়াকে ভালোবাসে বাবা-মা। আর এজন্যই বলা হয়ে থাকে-‘মায়ের মতো আপন কেহ নাই’। সময় ও অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার ভালোবাসাকে ভুলে যাচ্ছে সন্তানরা। পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধাশ্রমে। আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানে নির্মিত এই প্রবীণ নিবাসে ডলি চৌধুরীর মতোই ঠাই হয়েছে ৪৩ জন বয়স্ক বাবা-মায়ের। এরা সবাই তাকিয়ে থাকে তাদের সন্তানদের ভালোবাসার দিকে।
সুখী জীবন তাদের। কিন্তু সুখে নেই তাদের বৃদ্ধ মা’র। ভালোবাসার জন্য হাহাকার তার। ঠিকানা আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাস। ২০০৯ সাল থেকেই এখানে আছেন। একটি কক্ষে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন ছোট্ট সংসার। আলাপকালে তিনি মানবজমিনকে বলেন, নিজের লেখাপড়া বাদ দিয়ে সন্তানদের লালন-পালন করেছি। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি। আজ তারা নিজের সুখের জন্য খুব ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততার মধ্যে এখন আমি পাথরের মতো বোঝা হয়ে গেছি। চোখের পানি মুছতে মুছতে ডলি চৌধুরী বলেন, এখন কানে কম শুনি। চোখে তেমন দেখতে পাই না। শরীরটাও খুব দুর্বল। স্বপ্ন ছিল- জীবনের শেষ সময়টুকু সন্তান-নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সুখ ভাগাভাগি করে কাটিয়ে দেব। তা আর ভাগ্যে জুটলো না।
ডলি চৌধুরীর মতোই এই প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দা মীরা চৌধুরী। আমেরিকা প্রবাসী একমাত্র সন্তানের জননী মীরা। তিনি খুবই অসুস্থ। কথা বলতে পারলেও কানে কম শোনেন। প্রায় সময়ই শুয়ে কাটান। ১০ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বৃদ্ধার পৃথিবীর সব ভালোবাসা তার একমাত্র ছেলে। কিন্তু ছেলে এখন তার থেকে অনেক দূরে। স্বামী আর ছেলের ভালোবাসার বিরহে মুমূর্ষু জীবন পার করছেন এই বৃদ্ধা। চোখের জলে বুকের চাপা কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করে নিঃসঙ্গ এই বৃদ্ধা মা বলেন, পৃথিবীতে কোনো ভালোবাসা নেই। আমার কাছ থেকে ভালোবাসা অনেক দূরে। ভালোবাসার একমাত্র ছেলে মাসে দুবার ফোনে কথা বলে। সময় ও ধনসম্পদ ব্যয় করে সন্তানকে বড় করেছি। শেষ বয়সে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেয়ার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই আমাকে চলে যেতে হবে। তার পরও ছেলের সুখ হলে আমার সুখ।
এক সময় বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন যশোরের হামিদুল্লাহ ফারুক। সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে মেয়ে আমেরিকায় চলে যাওয়ায় বড় একা হয়ে যান তিনি। স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বৃদ্ধ বাবার কোনো খোঁজখবর নিতে পারে না মেয়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় তার এখন শেষ আশ্রয়স্থল হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। নিঃসঙ্গ হামিদুল্লাহ ফারুক বলেন, বৃদ্ধাশ্রমে বেঁচে থাকার জন্য সবকিছু আছে। বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু শেষ বয়সে পরিবারের পরম ভালোবাসা পাওয়া যায় না। যার জন্য ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অবদান পরিবারের জন্য ব্যয় করেছি। আজ আমি সবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে নিঃসঙ্গ নিবাসের বাসিন্দা।
মা-বাবা জীবনের সবটুকু দিয়ে সন্তানকে মানুষ করে। নিজের চাওয়াকে বলি দিয়ে সন্তানদের চাওয়া-পাওয়াকে ভালোবাসে বাবা-মা। আর এজন্যই বলা হয়ে থাকে-‘মায়ের মতো আপন কেহ নাই’। সময় ও অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার ভালোবাসাকে ভুলে যাচ্ছে সন্তানরা। পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধাশ্রমে। আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানে নির্মিত এই প্রবীণ নিবাসে ডলি চৌধুরীর মতোই ঠাই হয়েছে ৪৩ জন বয়স্ক বাবা-মায়ের। এরা সবাই তাকিয়ে থাকে তাদের সন্তানদের ভালোবাসার দিকে।
No comments