এ এক অন্যরকম বন্ধন by হাফিজ মুহাম্মদ
“মানুষ
মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” জগদ্বিখ্যাত শিল্পী ভুপেন হাজারিকার এ
গানের মর্মকথায় অনেকে ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন। ভালোবাসা শব্দটির নানা অর্থ।
নানা ব্যবহার। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে ভালোবাসা বলতে সামনে চলে আসে
তরুণ-তরুণীর ভালোবাসার কথা। সন্তান আর পিতা-মাতার ভালোবাসার কথাও কেউ কেউ
সামনে নিয়ে আসেন। তবে এর বাইরেও মানুষের মাঝে এক অপার্থিব ভালোবাসা রয়েছে।
যেখানে নেই কোনো চাওয়া পাওয়া, টাকার মোহ কিংবা কোনো ধরনের স্বার্থ। এমন একটি ভালোবাসার নাম ‘রক্ত দান’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও)-এর হিসেব মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১১ কোটি ব্যাগ রক্ত স্বেচ্ছায় সংগৃহীত হয়। ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০০ ভাগ রক্ত স্বেচ্ছায় দান থেকে সংগৃহীত হবে বলেও তারা জানান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে; বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। তবে ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের যোগান হয়। যা আসে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন থেকে। আগামী বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চাহিদাও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে সংগৃহীত হবে বলে তারা আশা করেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন। ইন্টারনেটে যোগাযোগ বৃদ্ধি আর সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপাত্যের যুগে এসব সংগঠননের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা নিজেরা রক্ত দান করে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা মিলে রক্তদানের কয়েকশত গ্রুপ, পেইজ। এসব গ্রুপ-পেইজও বিভিন্নভাবে রক্ত প্রদানে সহায়তা করে মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন। গ্রুপের সদস্যরা কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াই নিজদের রক্ত দিয়ে ভালোবাসা পরিশোধ করছেন একে অন্যের মধ্যে। পাচ্ছেন অপার্থিব সব অনুভূতি।
‘বাঁধন’। বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠন। এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রিক সংগঠন পরিচালনা করে এসেছে। বাঁধনের রয়েছে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক। সরকারের রেজিস্ট্রেশনকৃত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন ১৯৯৭ সালের ২৪শে অক্টোবর যাত্রা শুরু করে। ‘একের রক্তে অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাধন’ স্ল্লোগানে তারা ভূমিকাও রাখছে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ফরিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে মানুষ রক্ত শূন্যতায় ভুগে। সঠিক সময়ে রক্ত না পেয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও অনেকে রক্তের সাহায্যের আবেদন জানান। সেসব রোগীদের রক্তপ্রদান করে থাকে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে রক্তের যোগান দেয়ার জন্য বাঁধনের প্রতিটি সদস্য সদা প্রস্তুত থাকে। ফরিজুল আরও বলেন, সারা দেশে ১৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪৫টি সরকারি কলেজে বাঁধনের কার্যক্রম চলছে। বাঁধন ২০১৬ সালে ৫৭ হাজার ৮৩৯ ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে প্রদান করেছে। তবে ২০১৭ সালের হিসেব না করলেও সে সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও ২০১৬ সালে বাঁধন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৭ জনের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করেছে। ফারিজুলের তথ্যমতে, স্বেচ্ছায় রক্তের প্রদানের বাইরেও তারা বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আর এগুলো করেন সদস্যদের সহযোগিতার মাধ্যমেই। বাঁধন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিটের সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান রাজু বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে বাঁধনের কাজ ভালো চলে। আমি এবছর সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছি। ২০১৭ সালে জাহাঙ্গীরনগরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন শাখা ৩ হাজার ৬০০ ব্যাগ রক্ত দান করেছে। তাছাড়া প্রায় ১১ হাজার সদস্যের রক্তের গ্রুপ বিনামূল্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
বাঁধনের বাইরে দেশের আরেকটি স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠনের নাম হচ্ছে ‘সন্ধানী’। মেডিকেল কলেজভিত্তিক এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৭ সালে। বর্তমানে ১৭টি সরকারি এবং ৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সন্ধানীর কার্যক্রম চলছে। সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে পালন করছেন শাহ পরান ইসলাম প্রবাল। তিনি বলেন, আমাদের সংগঠন রক্তদানে কয়েকভাবে কাজ করে থাকে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। এটা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে করি। এসময় রক্তদাতাদের ডোনার কার্ডও দেয়া হয়ে থাকে। যা দিয়ে পরে ওই ব্যক্তি নিজে অথবা পরিবারের সদস্যদের জন্য দেশের যেকোনো সন্ধানী কেন্দ্র থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের সংগঠন রক্তদানে চারটি কার্যক্রম হচ্ছে। বিনিময় প্রথা। যার মাধ্যমে এক গ্রুপের রক্ত দিয়ে অন্য গ্রুপের রক্ত নেয়া যায়। রক্তদানে উৎসাহ প্রদান করাই এর মূল উদ্দ্যেশ্য। তাছাড়া ডোনার কার্ড, শর্ত ব্যতীত ইমার্জেন্সি রক্তদান এবং থ্যালেসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত দান করা হয়ে থাকে। এ সংগঠন দুটির বাইরেও দেশে রক্তদাতাদের আরও অসংখ্য সেবামূলক সংগঠন রয়েছে। এগুলো প্রতিষ্ঠান, নগরী, স্কুল-কলেজ ও বিভাগ ও জেলা শহরে সেবা পরিচালনা করে যাচ্ছে। আর এ সবে তারা ব্যবহার করেছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া। অনেকে আবার ওয়েব সাইট তৈরি করেও রক্ত সংগ্রহ এবং প্রদান করে যাচ্ছেন। যারা সম্পূর্ণ অনলাইনে এ সেবা প্রদান করছে সে গুলো হচ্ছে- ব্লাড ডোনেশন বাংলাদেশ, প্রভাত ব্লাড ডোনেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক, কল ফর ব্লাড, কণিকা, রক্ত দাও জীবন বাঁচাও, হাদী ব্লাড ব্যাংক, আশার আলো ব্লাড ডোনেশন ইত্যাদি। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা শহরে রয়েছে বিনামূল্যে রক্তদাতাদের সংগঠন। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামেও রয়েছে বেশ কিছু রক্তদানের সংগঠন। সিটিজি ব্লাড ব্যাংক, বাংলাদেশ হিউম্যান অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএ), বাংলাদেশ ব্লাড ডোনার্স ফোরাম, রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ও শার্দুলসহ একাধিক সংগঠন। এ বিভাগে উপজেলা পর্যায়েও রক্তদানের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি অনলাইন রক্তদান সংগঠন বগুড়া, ফটিকছড়ি ব্লাড ব্যাংক, বোয়ালখালীর কল্যাণে ইত্যাদি। অন্যদিকে দেশের মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধানী আর বাঁধনের বাইরেও রয়েছে আরো অনেক সংগঠন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বলাকা, চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ব্যাংক। এসবের বাইরেও কোয়ান্টাম মেথড, রেটিনা, রেড ক্রিসেন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে। এদের কার্যক্রম ভিন্নভাবে পরিচালনা হলেও রক্ত দিয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন।
রক্তদাতাদের এমন ভালবাসা সমাজে অতুলনীয়। মাত্র একটি কল কিংবা টেক্সটের মাধ্যমে সংগ্রহ হয়ে যাচ্ছে দরকারি গ্রুপের রক্ত। দেশের রক্তের চাহিদা মেটাতে তরুণরা দ্রুত এগিয়ে আসছে। একসময় রোগীদের স্বজনরা প্রয়োজনীয় রক্তের চিন্তায় মাথা ভাজ ফেলতো। এসব সংগঠনের উদ্যোগে বর্তমানে তার অনেকটাই অবসান হয়েছে। ভালোবাসা আদান-প্রদান হচ্ছে রক্তের বিনিময়ে। অপরিচিত ব্যক্তির একটা ডাকেও তারা চলে যাচ্ছেন রক্ত দিয়ে ভালোবাসা তৈরি করতে। এসব বন্ধন টাকা-পয়সার নয়। শুধুই ভালবাসার।
সন্ধানীর নিয়মিত রক্তদাতা মাইনুল হাসান বলেন, আমি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত রক্ত দিয়ে আসছি। আমার সংগঠন ছাড়াও প্রয়োজন পড়লে বাইরের কোনো ব্যক্তিকেও রক্ত দিই। রক্তদানের অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। যখন কাউকে রক্ত দিই তার ভালোবাসা এক অন্যরকম পাওয়া। রক্তদাতা আর গ্রহীতার মাঝেও তৈরি হয় অপার্থিব বন্ধন।
যেখানে নেই কোনো চাওয়া পাওয়া, টাকার মোহ কিংবা কোনো ধরনের স্বার্থ। এমন একটি ভালোবাসার নাম ‘রক্ত দান’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও)-এর হিসেব মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১১ কোটি ব্যাগ রক্ত স্বেচ্ছায় সংগৃহীত হয়। ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০০ ভাগ রক্ত স্বেচ্ছায় দান থেকে সংগৃহীত হবে বলেও তারা জানান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে; বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। তবে ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের যোগান হয়। যা আসে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন থেকে। আগামী বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চাহিদাও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে সংগৃহীত হবে বলে তারা আশা করেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন। ইন্টারনেটে যোগাযোগ বৃদ্ধি আর সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপাত্যের যুগে এসব সংগঠননের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা নিজেরা রক্ত দান করে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা মিলে রক্তদানের কয়েকশত গ্রুপ, পেইজ। এসব গ্রুপ-পেইজও বিভিন্নভাবে রক্ত প্রদানে সহায়তা করে মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন। গ্রুপের সদস্যরা কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াই নিজদের রক্ত দিয়ে ভালোবাসা পরিশোধ করছেন একে অন্যের মধ্যে। পাচ্ছেন অপার্থিব সব অনুভূতি।
‘বাঁধন’। বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠন। এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রিক সংগঠন পরিচালনা করে এসেছে। বাঁধনের রয়েছে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক। সরকারের রেজিস্ট্রেশনকৃত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন ১৯৯৭ সালের ২৪শে অক্টোবর যাত্রা শুরু করে। ‘একের রক্তে অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাধন’ স্ল্লোগানে তারা ভূমিকাও রাখছে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ফরিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে মানুষ রক্ত শূন্যতায় ভুগে। সঠিক সময়ে রক্ত না পেয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও অনেকে রক্তের সাহায্যের আবেদন জানান। সেসব রোগীদের রক্তপ্রদান করে থাকে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে রক্তের যোগান দেয়ার জন্য বাঁধনের প্রতিটি সদস্য সদা প্রস্তুত থাকে। ফরিজুল আরও বলেন, সারা দেশে ১৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪৫টি সরকারি কলেজে বাঁধনের কার্যক্রম চলছে। বাঁধন ২০১৬ সালে ৫৭ হাজার ৮৩৯ ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে প্রদান করেছে। তবে ২০১৭ সালের হিসেব না করলেও সে সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও ২০১৬ সালে বাঁধন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৭ জনের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করেছে। ফারিজুলের তথ্যমতে, স্বেচ্ছায় রক্তের প্রদানের বাইরেও তারা বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আর এগুলো করেন সদস্যদের সহযোগিতার মাধ্যমেই। বাঁধন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিটের সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান রাজু বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে বাঁধনের কাজ ভালো চলে। আমি এবছর সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছি। ২০১৭ সালে জাহাঙ্গীরনগরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন শাখা ৩ হাজার ৬০০ ব্যাগ রক্ত দান করেছে। তাছাড়া প্রায় ১১ হাজার সদস্যের রক্তের গ্রুপ বিনামূল্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
বাঁধনের বাইরে দেশের আরেকটি স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠনের নাম হচ্ছে ‘সন্ধানী’। মেডিকেল কলেজভিত্তিক এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৭ সালে। বর্তমানে ১৭টি সরকারি এবং ৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সন্ধানীর কার্যক্রম চলছে। সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে পালন করছেন শাহ পরান ইসলাম প্রবাল। তিনি বলেন, আমাদের সংগঠন রক্তদানে কয়েকভাবে কাজ করে থাকে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। এটা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে করি। এসময় রক্তদাতাদের ডোনার কার্ডও দেয়া হয়ে থাকে। যা দিয়ে পরে ওই ব্যক্তি নিজে অথবা পরিবারের সদস্যদের জন্য দেশের যেকোনো সন্ধানী কেন্দ্র থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের সংগঠন রক্তদানে চারটি কার্যক্রম হচ্ছে। বিনিময় প্রথা। যার মাধ্যমে এক গ্রুপের রক্ত দিয়ে অন্য গ্রুপের রক্ত নেয়া যায়। রক্তদানে উৎসাহ প্রদান করাই এর মূল উদ্দ্যেশ্য। তাছাড়া ডোনার কার্ড, শর্ত ব্যতীত ইমার্জেন্সি রক্তদান এবং থ্যালেসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত দান করা হয়ে থাকে। এ সংগঠন দুটির বাইরেও দেশে রক্তদাতাদের আরও অসংখ্য সেবামূলক সংগঠন রয়েছে। এগুলো প্রতিষ্ঠান, নগরী, স্কুল-কলেজ ও বিভাগ ও জেলা শহরে সেবা পরিচালনা করে যাচ্ছে। আর এ সবে তারা ব্যবহার করেছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া। অনেকে আবার ওয়েব সাইট তৈরি করেও রক্ত সংগ্রহ এবং প্রদান করে যাচ্ছেন। যারা সম্পূর্ণ অনলাইনে এ সেবা প্রদান করছে সে গুলো হচ্ছে- ব্লাড ডোনেশন বাংলাদেশ, প্রভাত ব্লাড ডোনেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক, কল ফর ব্লাড, কণিকা, রক্ত দাও জীবন বাঁচাও, হাদী ব্লাড ব্যাংক, আশার আলো ব্লাড ডোনেশন ইত্যাদি। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা শহরে রয়েছে বিনামূল্যে রক্তদাতাদের সংগঠন। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামেও রয়েছে বেশ কিছু রক্তদানের সংগঠন। সিটিজি ব্লাড ব্যাংক, বাংলাদেশ হিউম্যান অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএ), বাংলাদেশ ব্লাড ডোনার্স ফোরাম, রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ও শার্দুলসহ একাধিক সংগঠন। এ বিভাগে উপজেলা পর্যায়েও রক্তদানের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি অনলাইন রক্তদান সংগঠন বগুড়া, ফটিকছড়ি ব্লাড ব্যাংক, বোয়ালখালীর কল্যাণে ইত্যাদি। অন্যদিকে দেশের মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধানী আর বাঁধনের বাইরেও রয়েছে আরো অনেক সংগঠন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বলাকা, চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ব্যাংক। এসবের বাইরেও কোয়ান্টাম মেথড, রেটিনা, রেড ক্রিসেন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে। এদের কার্যক্রম ভিন্নভাবে পরিচালনা হলেও রক্ত দিয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন।
রক্তদাতাদের এমন ভালবাসা সমাজে অতুলনীয়। মাত্র একটি কল কিংবা টেক্সটের মাধ্যমে সংগ্রহ হয়ে যাচ্ছে দরকারি গ্রুপের রক্ত। দেশের রক্তের চাহিদা মেটাতে তরুণরা দ্রুত এগিয়ে আসছে। একসময় রোগীদের স্বজনরা প্রয়োজনীয় রক্তের চিন্তায় মাথা ভাজ ফেলতো। এসব সংগঠনের উদ্যোগে বর্তমানে তার অনেকটাই অবসান হয়েছে। ভালোবাসা আদান-প্রদান হচ্ছে রক্তের বিনিময়ে। অপরিচিত ব্যক্তির একটা ডাকেও তারা চলে যাচ্ছেন রক্ত দিয়ে ভালোবাসা তৈরি করতে। এসব বন্ধন টাকা-পয়সার নয়। শুধুই ভালবাসার।
সন্ধানীর নিয়মিত রক্তদাতা মাইনুল হাসান বলেন, আমি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত রক্ত দিয়ে আসছি। আমার সংগঠন ছাড়াও প্রয়োজন পড়লে বাইরের কোনো ব্যক্তিকেও রক্ত দিই। রক্তদানের অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। যখন কাউকে রক্ত দিই তার ভালোবাসা এক অন্যরকম পাওয়া। রক্তদাতা আর গ্রহীতার মাঝেও তৈরি হয় অপার্থিব বন্ধন।
No comments