ভালোবাসা ভালো চোখে দেখে না যে দেশগুলো
আজ
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। মন খুলে মনের কথা বলার
দিন আজ। প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে ঘুরবে, উঠতি তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে প্রেম
নিবেদন করবে, কারও কারও অব্যক্ত কথা জমে থাকবে রূপকথা হয়ে। বিশেষ এই দিবসটি
উদযাপনে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ উš§ুখ হয়ে আছেন। তবে সব দেশ কিন্তু এই
ভালোবাসা দিবসকে ভালো চোখে দেখে না। কিছু দেশ আছে যেখানে এটি একেবারেই
প্রশ্রয় দেয়া হয় না। উল্টো ভালোবাসা দিবস উদযাপনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে
সেখানে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে পাকিস্তানে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনে নিষেধাজ্ঞা
জারি করা হয়েছে। এছাড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরান, ইন্দোনেশিয়া,
মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতারে ইসলাম ধর্মীয় নেতারা ভালোবাসা দিবস পালন ও
নারীদের চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের
ফ্লোরিডা এবং রাশিয়ার বেলগ্রাড প্রদেশের স্থানীয় সরকারও এ দলে যোগ দেয়।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র ইতিহাসকে ঘিরে রয়েছে নানারকম কাহিনী। এর মধ্যে সবচেয়ে
বেশি প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। ধর্মযাজক
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খ্রিস্টধর্ম
প্রচারক। আর রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেবদেবীর পূজায়
বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেবদেবীর পূজা করতে বলা হলে
ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার
খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪
ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান
করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু। পাকিস্তানের অনেক শহরে এক সময়
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ উদযাপন বেশ জনপ্রিয় ছিল। যদিও দেশটির ধর্মীয় দলগুলো
একে অপসংস্কৃতি মনে করে। ২০১৩ সালে পাকিস্তানে প্রথম সাবিন মাহমুদ নামে এক
মানবাধিকার কর্মী ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপনের পক্ষে প্রচারণা শুরু
করেছিলেন। এ জন্য তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় এবং একপর্যায়ে তিনি আÍগোপনে
চলে যান। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৫ সালে রাস্তার পাশে সাবিন মাহমুদকে
গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালে পাকিস্তানে আবদুল ওয়াহিদ নামে এক ব্যক্তি
ভালোবাসা দিবস পালন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আদালতে
মামলা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস ইসলামবিরোধী’। সেই দাবিতে
সম্মতি জানিয়ে আদালত ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার নির্দেশ
দেন। পাশাপাশি দেশের সব সংবাদ মাধ্যমকেও ভালোবাসা দিবস নিয়ে কোনো রকম
প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেন। খবর বিবিসির। মধ্যপ্রাচ্যের কট্টরপন্থী
মুসলিম দেশ ইরান ২০০৮ সালে ভালোবাসা দিবসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইরানের
যুব সমাজকে পশ্চিমা সংস্কৃতির ‘কু-প্রভাব’ থেকে মুক্ত রাখতে ভ্যালেন্টাইন্স
ডে’র উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশটি। সে সময় সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়,
হৃদয়, অর্ধ-হৃদয়ের প্রতীক, লাল গোলাপ এবং এদিন সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম
সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ধরনের কার্যক্রমের কারণে জরিমানা, কারাদণ্ড ও এর চেয়েও
ভয়াবহ সাজা হতে পারে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের কার্ড,
পোস্টার ছাপানো, উপহারসামগ্রী বিপণন, বিতরণ ও প্রদর্শনকে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০০৮ সালের পর থেকে ইরানে প্রকাশ্যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করতে দেখা
যায়নি। রয়টার্স। পৃথিবীজুড়ে অনেক তরুণ-তরুণী যখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন
করছে তখন ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম শিক্ষার্থীরা হাঁটছে উল্টো পথে। ২০১৬ সালের
১৪ ফেব্রুয়ারি দেশটির সোরাবায়া শহরে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র বিরুদ্ধে র্যালি
করেছিল তারা। র্যালিতে অন্তত স্কুলের ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল বলে
জানায় বিবিসি। তাদের দাবি, এটি অবৈধ শারীরিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করে। এছাড়াও
শিক্ষার্থীরা ‘ইসলাম অশ্লীলতা সমর্থন করে না’, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে ইসলামে
হারাম’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড বহন করে। ২০০৯ সালে সৌদি আরবে ‘ভ্যালেন্টাইন্স
ডে’ উদযাপনকে কেন্দ্র করে সৌদি পুলিশের পক্ষে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়,
‘প্রতারক পুরুষদের কবল থেকে সৌদি নারীদের হেফাজত করতে তারা বদ্ধপরিকর। এই
দিনে পুরুষেরা মিথ্যা অনুভূতির আশ্রয় নিয়ে নারীদের সঙ্গে ভালোবাসার ভান
করে। এটা নারীদের প্রকৃত সম্মানের জন্য ক্ষতিকর।’
No comments