ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চিনির বিকল্প স্টেভিয়া
স্টেভিয়া
মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এটি কষ্টসহিষ্ণু বহু বর্ষজীবী এবং ৬০-৭৫
সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা বর্ষাকৃতি, ফুল সাদা এবং বীজ
ক্ষুদ্রাকৃতি। পাতাগুলো বিপরীত দিকে অবস্থিত, খাজকাটা, আঁশালো ও গাঢ় সবুজ।
ফুলগুলো সাদা, নলাকৃতি এবং উভয়লিঙ্গ। পৃথিবীতে ২৪০টির মতো প্রজাতি এবং
৯০টির মতো জাত আছে। গাছটির অনেক শাখা-প্রশাখা হয়। মোটা মূল মাটির নিচের
দিকে যায় এবং চিকন মূলগুলো মাটির উপরে থাকে। গাছগুলো সুগন্ধ ছড়ায় না কিন্তু
পাতাগুলো মিষ্টি। স্টেভিয়ার পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০ গুণ এবং পাতার
স্টেভিয়াসাইড চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি। এটি স্বল্পদীর্ঘ দিবস
উদ্ভিদ। স্টেভিয়ার গাছ সহজে চাষ করা যায়। চিনির বিকল্প হিসেবে জিরো ক্যালরি
স্টেভিয়ার পাতা ব্যবহার করা যায়।
ইতিহাস: স্টেভিয়ার আদি নিবাস প্যারাগুয়ে। ১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু। জাপানে শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে বিশেষত ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে এটি ফসল হিসেবে চাষাবাদ শুরু হয়। ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এম এস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। খাবার মিষ্টি করতে জাপানে ৪০ বছর ধরে স্টেভিয়া ব্যবহার হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকায়ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে। ২০১১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্টেভিয়া ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে। প্যারাগুয়ের গুরানি ইন্ডিয়ান নামক উপজাতি একে বলে ‘কা-হি-হি’ অর্থাৎ ‘মধু গাছ’। আফ্রিকায় এটি ‘মধু পাতা’ বা ‘চিনি পাতা’ নামে পরিচিত। এছাড়া থাইল্যান্ডে ‘মিষ্টি ঘাস’, জাপানে ‘আমাহা সুটেবিয়া’ ও ভারতে ‘মধু পারানি’ নামে অভিহিত। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্র্যাক নার্সারি ‘ব্র্যাক ওষুধি-১১’ নামে এর টিস্যু কালচার চারা বাজারজাত করছে।
গুণাবলি: স্টেভিয়ায় অ্যাসপার্টেম, সেকারিন, সুক্রলস বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় কোন জিনিস নেই। স্টেভিয়ার মধ্যে কোন কার্বোহাইড্রেট কিংবা ক্যালরি নেই। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প। এছাড়া এরমধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান।
উপকারিতা: ক্যালরিমুক্ত এ মিষ্টি ডায়াবেটিস রোগী সেবন করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিবর্তন হয় না। উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ করে। যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও প্লীহায় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। স্টেভিওসাইড অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে। ত্বকের ক্ষত নিরাময় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। ই.কলিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করে। খাদ্য হজমে সহায়তা করে। স্টেভিয়ায় কোন ক্যালরি না থাকায় স্থূলতা রোধ করে। শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। খাবারের গুণাগুণ বাড়ায় ও সুগন্ধ আনে। সুস্থতা ও সতেজতাবোধ সৃষ্টি করে। ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্কিন কেয়ার হিসেবে কাজ করে, বিধায় ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বাড়ায়। স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসেবে কাজ করে।
ব্যবহার: এটি চা, কফি, মিষ্টি, দই, বেকড ফুড, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্টেভিয়ার সবুজ ও শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। পাতার গুঁড়ো দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত এ ওষুধি গাছের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। জাপানে হালকা পানীয় কোকাকোলায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কনফেকশনারি, ক্যান্ডিসহ বিভিন্ন খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চা-কফিতে স্টেভিয়ার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী।
পরিবেশ: বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু স্টেভিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এদেশে সারা বছরই স্টেভিয়া চাষ করা সম্ভব। সুনিষ্কাশিত ও জৈব পদার্থযুক্ত উঁচু বেলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য ভালো। মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.৫ থাকা ভালো। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। তবে জানুয়ারি-মার্চ (মধ্য পৌষ-মধ্য চৈত্র) মাসে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হয়। জমির অবস্থা ও মাটির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরা করে চাষ করতে হয়। চাষের মাঠ প্রয়োজনে মাঝে কিছুটা উঁচু করে তৈরি করলে ভালো। যাতে বৃষ্টির পানি সহজেই নিচের দিকে গড়িয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা ভালো। পৃথিবীতে স্টেভিয়ার প্রায় ৯০টির মতো জাত আছে। এর বিভিন্ন জাত বিভিন্ন আবহাওয়ার জন্য উপযোগী। স্টেভিয়ার গুণাগুণ নির্ভর করে এর পাতায় বিদ্যমান স্টেভিওসাইডের (মিষ্টি উপাদান) ওপর। পাতায় স্টেভিওসাইড উৎপাদন একই সঙ্গে গাছের বয়স, জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক জাতের পাতায় কমপক্ষে ১০ ভাগ স্টেভিওসাইড থাকতে হয়।
চাষাবাদ: স্টেভিয়া বাণিজ্যিকভাবে সাধারণত বেডে চাষ করতে হয়। বেডের উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি। বেডে সারি থেকে সারি দূরত্ব হবে এক ফুট এবং সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব হবে ৬ ইঞ্চি। ৫ থেকে ৬টি চাষ দিয়ে জমিকে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। মই দিয়ে জমির ওপরের ঢেলা ভেঙে মিহি করে নিতে হবে। স্টেভিয়াকে টিস্যু কালচার পদ্ধতি, স্টেম কাটিং পদ্ধতি এবং বীজের মাধ্যমে বংশ বাড়ানো যায়। তবে টিস্যু কালচার সবচেয়ে ভালো ও লাভজনক পদ্ধতি। কারণ স্টেম কাটিংয়ে সফলতার হার খুবই কম এবং কাটিংয়ে শিকড় গজাতে অনেক বেশি সময় লাগে। বীজ থেকে চারা গজালেও অঙ্কুরোদগমনের হার থাকে খুবই কম। জমিতে গাছের সংখ্যানির্ভর করে মাটি ও আবহাওয়ার ওপর। তবে লাভজনকভাবে চাষের জন্য একর প্রতি ৪০ হাজার গাছ বা হেক্টরপ্রতি এক লাখ গাছ লাগানো উত্তম। স্টেভিয়ার সফলতা নির্ভর করে জমিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের ওপর।
সার: স্টেভিয়া গাছে খুব কম পরিমাণ সার প্রয়োজন হয়। মাটি পরীক্ষার পর প্রয়োজন মতো সার প্রয়োগ করা ভালো। তবে অনুমোদিত গড় সারের মাত্রা হেক্টর প্রতি ১৪০ কেজি ইউরিয়া, ৪২ কেজি টিএসপি এবং ৩৫ কেজি এমপি (বিঘা প্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া, ৬ কেজি টিএসপি, ৫ কেজি এমপি)। জমি চাষের সময় সমুদয় টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমপি সার তিন বারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ১ মাস পর থেকে প্রতি মাসে ইউরিয়া ও এমপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। স্টেভিয়া চাষের জন্য জৈব সারই সর্বোত্কৃষ্ট।
সেচ: সারা বছরই মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা থাকতে হবে। তবে গাছ অতিরিক্ত আর্দ্রতা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত শীতকালে একবার এবং গ্রীষ্মকালে ২-৩ বার ঝাঁঝরির সাহায্যে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসে একবার বেডের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মালচিং (ছায়াযুক্ত পরিবেশ) করলে একই সঙ্গে আগাছা দমন হয়। আবার আর্দ্রতাও সংরক্ষণ হয়। খড়-কুটো, কচুরিপানা বা কম্পোস্ট দিয়ে মালচিং করা যায়, যা গাছের শিকড়কে মাটির সঙ্গে সুসংহত করে। স্টেভিয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই কম হয়ে থাকে। কখনো কখনো সেপটোরিয়া ও স্কেলেরোটিনিয়াজনিত গোড়া পচা রোগ দেখা যায়। চারা অবস্থায় অনেক সময় গাছের গোড়া কেটে দেয়। এছাড়া অনেক সময় এপিড ও সাদামাছির আক্রমণও লক্ষ্য করা যায়। নিম ওয়েল স্প্রে করে অর্গানিক উপায়ে একই সঙ্গে পোকামাকড় ও রোগ-জীবাণু দমন করা যায়। এজন্য ৩০ মি.লি নিম ওয়েল বা লিটার পানি- হারে স্প্রে করতে হবে।
ফলন: মাঠে চাষ করলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত স্টেভিয়া গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। মাটির টবে লাগানো গাছ বড় হওয়ার পর সারা বছরই পাতা সংগ্রহ করা যায়। একটি মাটির টবে লাগানো গাছ থেকে ৩০-৪০ গ্রাম সবুজ পাতা সংগ্রহ করা হয়, যা থেকে ৭-১০ গ্রাম শুকনো পাতার গুড়া পাওয়া যায়। মাঠে চাষ করলে গাছে ফুলের কুঁড়ি আসার পূর্বে এবং ফুলের কুঁড়ি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে পাতা সংগ্রহ শুরু করতে হয়। সাধারণত মাটি থেকে ১০-১৫ সে.মি উপরে প্রুনিং (অতিরিক্ত ডাল-পালা ছাটাই) করে ডালসহ পাতা সংগ্রহ করা হয়। সকাল বেলা পাতা সংগ্রহ করলে মিষ্টতা বেশি পাওয়া যায়। গাছের সমস্ত পাতা দুই-তিন বারে সংগ্রহ করা হয়। বিঘা প্রতি ৪৫০-৫৫০ কেজি সবুজ পাতা পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমি থেকে ১৫৫-১৯০ কেজি শুকনা গুড়া পাওয়া সম্ভব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়াতে জন্মানো স্টেভিয়া পাতায় ১৫-২০ ভাগ স্টেভিওসাইড থাকে, যা বিশ্বের অন্যত্র জন্মানো গাছের থেকে ১.৫-২.০ গুণ বেশি। এজন্য এগুলোর বাজারমূল্য বেশি।
পাতা শুকানো: স্টেভিয়া পাতা সংগ্রহের পর সূর্যালোকে বা ড্রায়ারের মাধ্যমে পাতা শুকাতে হবে। পাতা শুকানোর জন্য কমপক্ষে ১২ ঘণ্টার সূর্যালোক প্রয়োজন হয়। পাতা শুকানোর পর ক্রাশ করে পাউডারে পরিণত করা হয়। এক্ষেত্রে কফি গ্রাইন্ডার কিংবা ব্লেন্ডার মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। গরম পানিতে এক চতুর্থাংশ পাউডার মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে স্টেভিয়া সিরাপ তৈরি করা যায়। এ সিরাপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়।
টবে চাষ: বাসা-বাড়িতে টবে বা পটে সহজেই স্টেভিয়া চাষ করা যায়। তবে গাছের টব রোদযুক্ত বারান্দায় বা ছাদে রাখতে হবে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত স্টেভিয়ার ছোট চারা নিষ্কাশনযুক্ত দো-আঁশ মাটিতে অথবা দো-আঁশ ও জৈব সার মিশ্রিত ৮-১০ ইঞ্চি মাটির টবে সারা বছর রোপণ করা যায়। এ গাছের চারা রোপণের ২৫-৩০ দিন পর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল আসার ২৫-৩০ দিন পর থেকে উপরের অংশ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। পরে গাছের গোড়া থেকে একসঙ্গে অনেক চারা বের হতে থাকে এবং ২০-২৫ দিন পর পুনরায় পাতা সংগ্রহ করা যায়।
সম্ভাবনা: স্টেভিয়ার গাছের ছোট চারা কেজিপ্রতি ৫০ টাকা এবং বড়গুলো ১০০ টাকা বিক্রি হয়। পাউডার প্রায় ৪,০০০ টাকা কেজি। স্টেভিয়া চাষ করে হেক্টরপ্রতি বছরে ৬-৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ভারতে বিভিন্ন কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক চাষিদের চারা সরবরাহ করে থাকে এবং তাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে স্টেভিয়া পাতা কিনে নেয়। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুরে একই পদ্ধতিতে তামাক চাষ করা হয়। এসব অঞ্চলে ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে স্টেভিয়া চাষ হতে পারে একটি লাগসই বিকল্প। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেভিয়া চাষ করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প পরিসরে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য স্টেভিয়ার চাষ করা হচ্ছে। এটি ওষুধিগুণ সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ, যা চিনির চেয়ে অনেকগুণ মিষ্টি। ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন রোগে এবং চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’
প্রাপ্তিস্থান: ২০১৮ সালের জুন মাসে গাজীপুরস্থ বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) ‘বিএসআরআই স্টেভিয়া-১’ নামে একটি প্রজাতি বাজারে ছেড়েছে। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের একজন গবেষক ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে গাছ সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি ল্যাবে এটাকে টিস্যু কালচার করা হয়। বর্তমানে স্টেভিয়া কাটিং, টিস্যু কালচার ও বীজের মাধ্যমে উৎপাদন করা যাচ্ছে।’
ড. মো. আমজাদ হোসাইন আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ স্টেভিয়া চাষের জন্য উপযুক্ত। রোগবালাই তেমন হয় না। প্রতি শতক জমি থেকে দুই কেজি পাউডার উৎপাদন সম্ভব। প্রতিকেজির পাউডারের বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা। কৃষকের দ্বোরগোড়ায় না পৌঁছা এবং বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় আমাদের দেশে এটি এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কেউ স্টেভিয়া চাষ বা কিনতে চাইলে বিএসআরআইয়ের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।’
ইতিহাস: স্টেভিয়ার আদি নিবাস প্যারাগুয়ে। ১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু। জাপানে শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে বিশেষত ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে এটি ফসল হিসেবে চাষাবাদ শুরু হয়। ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এম এস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। খাবার মিষ্টি করতে জাপানে ৪০ বছর ধরে স্টেভিয়া ব্যবহার হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকায়ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে। ২০১১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্টেভিয়া ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে। প্যারাগুয়ের গুরানি ইন্ডিয়ান নামক উপজাতি একে বলে ‘কা-হি-হি’ অর্থাৎ ‘মধু গাছ’। আফ্রিকায় এটি ‘মধু পাতা’ বা ‘চিনি পাতা’ নামে পরিচিত। এছাড়া থাইল্যান্ডে ‘মিষ্টি ঘাস’, জাপানে ‘আমাহা সুটেবিয়া’ ও ভারতে ‘মধু পারানি’ নামে অভিহিত। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্র্যাক নার্সারি ‘ব্র্যাক ওষুধি-১১’ নামে এর টিস্যু কালচার চারা বাজারজাত করছে।
গুণাবলি: স্টেভিয়ায় অ্যাসপার্টেম, সেকারিন, সুক্রলস বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় কোন জিনিস নেই। স্টেভিয়ার মধ্যে কোন কার্বোহাইড্রেট কিংবা ক্যালরি নেই। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প। এছাড়া এরমধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান।
উপকারিতা: ক্যালরিমুক্ত এ মিষ্টি ডায়াবেটিস রোগী সেবন করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিবর্তন হয় না। উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ করে। যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও প্লীহায় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। স্টেভিওসাইড অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে। ত্বকের ক্ষত নিরাময় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। ই.কলিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করে। খাদ্য হজমে সহায়তা করে। স্টেভিয়ায় কোন ক্যালরি না থাকায় স্থূলতা রোধ করে। শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। খাবারের গুণাগুণ বাড়ায় ও সুগন্ধ আনে। সুস্থতা ও সতেজতাবোধ সৃষ্টি করে। ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্কিন কেয়ার হিসেবে কাজ করে, বিধায় ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বাড়ায়। স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসেবে কাজ করে।
ব্যবহার: এটি চা, কফি, মিষ্টি, দই, বেকড ফুড, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্টেভিয়ার সবুজ ও শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। পাতার গুঁড়ো দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত এ ওষুধি গাছের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। জাপানে হালকা পানীয় কোকাকোলায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কনফেকশনারি, ক্যান্ডিসহ বিভিন্ন খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চা-কফিতে স্টেভিয়ার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী।
পরিবেশ: বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু স্টেভিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এদেশে সারা বছরই স্টেভিয়া চাষ করা সম্ভব। সুনিষ্কাশিত ও জৈব পদার্থযুক্ত উঁচু বেলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য ভালো। মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.৫ থাকা ভালো। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। তবে জানুয়ারি-মার্চ (মধ্য পৌষ-মধ্য চৈত্র) মাসে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হয়। জমির অবস্থা ও মাটির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরা করে চাষ করতে হয়। চাষের মাঠ প্রয়োজনে মাঝে কিছুটা উঁচু করে তৈরি করলে ভালো। যাতে বৃষ্টির পানি সহজেই নিচের দিকে গড়িয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা ভালো। পৃথিবীতে স্টেভিয়ার প্রায় ৯০টির মতো জাত আছে। এর বিভিন্ন জাত বিভিন্ন আবহাওয়ার জন্য উপযোগী। স্টেভিয়ার গুণাগুণ নির্ভর করে এর পাতায় বিদ্যমান স্টেভিওসাইডের (মিষ্টি উপাদান) ওপর। পাতায় স্টেভিওসাইড উৎপাদন একই সঙ্গে গাছের বয়স, জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক জাতের পাতায় কমপক্ষে ১০ ভাগ স্টেভিওসাইড থাকতে হয়।
চাষাবাদ: স্টেভিয়া বাণিজ্যিকভাবে সাধারণত বেডে চাষ করতে হয়। বেডের উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি। বেডে সারি থেকে সারি দূরত্ব হবে এক ফুট এবং সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব হবে ৬ ইঞ্চি। ৫ থেকে ৬টি চাষ দিয়ে জমিকে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। মই দিয়ে জমির ওপরের ঢেলা ভেঙে মিহি করে নিতে হবে। স্টেভিয়াকে টিস্যু কালচার পদ্ধতি, স্টেম কাটিং পদ্ধতি এবং বীজের মাধ্যমে বংশ বাড়ানো যায়। তবে টিস্যু কালচার সবচেয়ে ভালো ও লাভজনক পদ্ধতি। কারণ স্টেম কাটিংয়ে সফলতার হার খুবই কম এবং কাটিংয়ে শিকড় গজাতে অনেক বেশি সময় লাগে। বীজ থেকে চারা গজালেও অঙ্কুরোদগমনের হার থাকে খুবই কম। জমিতে গাছের সংখ্যানির্ভর করে মাটি ও আবহাওয়ার ওপর। তবে লাভজনকভাবে চাষের জন্য একর প্রতি ৪০ হাজার গাছ বা হেক্টরপ্রতি এক লাখ গাছ লাগানো উত্তম। স্টেভিয়ার সফলতা নির্ভর করে জমিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের ওপর।
সার: স্টেভিয়া গাছে খুব কম পরিমাণ সার প্রয়োজন হয়। মাটি পরীক্ষার পর প্রয়োজন মতো সার প্রয়োগ করা ভালো। তবে অনুমোদিত গড় সারের মাত্রা হেক্টর প্রতি ১৪০ কেজি ইউরিয়া, ৪২ কেজি টিএসপি এবং ৩৫ কেজি এমপি (বিঘা প্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া, ৬ কেজি টিএসপি, ৫ কেজি এমপি)। জমি চাষের সময় সমুদয় টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমপি সার তিন বারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ১ মাস পর থেকে প্রতি মাসে ইউরিয়া ও এমপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। স্টেভিয়া চাষের জন্য জৈব সারই সর্বোত্কৃষ্ট।
সেচ: সারা বছরই মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা থাকতে হবে। তবে গাছ অতিরিক্ত আর্দ্রতা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত শীতকালে একবার এবং গ্রীষ্মকালে ২-৩ বার ঝাঁঝরির সাহায্যে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসে একবার বেডের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মালচিং (ছায়াযুক্ত পরিবেশ) করলে একই সঙ্গে আগাছা দমন হয়। আবার আর্দ্রতাও সংরক্ষণ হয়। খড়-কুটো, কচুরিপানা বা কম্পোস্ট দিয়ে মালচিং করা যায়, যা গাছের শিকড়কে মাটির সঙ্গে সুসংহত করে। স্টেভিয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই কম হয়ে থাকে। কখনো কখনো সেপটোরিয়া ও স্কেলেরোটিনিয়াজনিত গোড়া পচা রোগ দেখা যায়। চারা অবস্থায় অনেক সময় গাছের গোড়া কেটে দেয়। এছাড়া অনেক সময় এপিড ও সাদামাছির আক্রমণও লক্ষ্য করা যায়। নিম ওয়েল স্প্রে করে অর্গানিক উপায়ে একই সঙ্গে পোকামাকড় ও রোগ-জীবাণু দমন করা যায়। এজন্য ৩০ মি.লি নিম ওয়েল বা লিটার পানি- হারে স্প্রে করতে হবে।
ফলন: মাঠে চাষ করলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত স্টেভিয়া গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। মাটির টবে লাগানো গাছ বড় হওয়ার পর সারা বছরই পাতা সংগ্রহ করা যায়। একটি মাটির টবে লাগানো গাছ থেকে ৩০-৪০ গ্রাম সবুজ পাতা সংগ্রহ করা হয়, যা থেকে ৭-১০ গ্রাম শুকনো পাতার গুড়া পাওয়া যায়। মাঠে চাষ করলে গাছে ফুলের কুঁড়ি আসার পূর্বে এবং ফুলের কুঁড়ি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে পাতা সংগ্রহ শুরু করতে হয়। সাধারণত মাটি থেকে ১০-১৫ সে.মি উপরে প্রুনিং (অতিরিক্ত ডাল-পালা ছাটাই) করে ডালসহ পাতা সংগ্রহ করা হয়। সকাল বেলা পাতা সংগ্রহ করলে মিষ্টতা বেশি পাওয়া যায়। গাছের সমস্ত পাতা দুই-তিন বারে সংগ্রহ করা হয়। বিঘা প্রতি ৪৫০-৫৫০ কেজি সবুজ পাতা পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমি থেকে ১৫৫-১৯০ কেজি শুকনা গুড়া পাওয়া সম্ভব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়াতে জন্মানো স্টেভিয়া পাতায় ১৫-২০ ভাগ স্টেভিওসাইড থাকে, যা বিশ্বের অন্যত্র জন্মানো গাছের থেকে ১.৫-২.০ গুণ বেশি। এজন্য এগুলোর বাজারমূল্য বেশি।
পাতা শুকানো: স্টেভিয়া পাতা সংগ্রহের পর সূর্যালোকে বা ড্রায়ারের মাধ্যমে পাতা শুকাতে হবে। পাতা শুকানোর জন্য কমপক্ষে ১২ ঘণ্টার সূর্যালোক প্রয়োজন হয়। পাতা শুকানোর পর ক্রাশ করে পাউডারে পরিণত করা হয়। এক্ষেত্রে কফি গ্রাইন্ডার কিংবা ব্লেন্ডার মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। গরম পানিতে এক চতুর্থাংশ পাউডার মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে স্টেভিয়া সিরাপ তৈরি করা যায়। এ সিরাপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়।
টবে চাষ: বাসা-বাড়িতে টবে বা পটে সহজেই স্টেভিয়া চাষ করা যায়। তবে গাছের টব রোদযুক্ত বারান্দায় বা ছাদে রাখতে হবে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত স্টেভিয়ার ছোট চারা নিষ্কাশনযুক্ত দো-আঁশ মাটিতে অথবা দো-আঁশ ও জৈব সার মিশ্রিত ৮-১০ ইঞ্চি মাটির টবে সারা বছর রোপণ করা যায়। এ গাছের চারা রোপণের ২৫-৩০ দিন পর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল আসার ২৫-৩০ দিন পর থেকে উপরের অংশ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। পরে গাছের গোড়া থেকে একসঙ্গে অনেক চারা বের হতে থাকে এবং ২০-২৫ দিন পর পুনরায় পাতা সংগ্রহ করা যায়।
সম্ভাবনা: স্টেভিয়ার গাছের ছোট চারা কেজিপ্রতি ৫০ টাকা এবং বড়গুলো ১০০ টাকা বিক্রি হয়। পাউডার প্রায় ৪,০০০ টাকা কেজি। স্টেভিয়া চাষ করে হেক্টরপ্রতি বছরে ৬-৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ভারতে বিভিন্ন কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক চাষিদের চারা সরবরাহ করে থাকে এবং তাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে স্টেভিয়া পাতা কিনে নেয়। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুরে একই পদ্ধতিতে তামাক চাষ করা হয়। এসব অঞ্চলে ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে স্টেভিয়া চাষ হতে পারে একটি লাগসই বিকল্প। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেভিয়া চাষ করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প পরিসরে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য স্টেভিয়ার চাষ করা হচ্ছে। এটি ওষুধিগুণ সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ, যা চিনির চেয়ে অনেকগুণ মিষ্টি। ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন রোগে এবং চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’
প্রাপ্তিস্থান: ২০১৮ সালের জুন মাসে গাজীপুরস্থ বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) ‘বিএসআরআই স্টেভিয়া-১’ নামে একটি প্রজাতি বাজারে ছেড়েছে। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের একজন গবেষক ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে গাছ সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি ল্যাবে এটাকে টিস্যু কালচার করা হয়। বর্তমানে স্টেভিয়া কাটিং, টিস্যু কালচার ও বীজের মাধ্যমে উৎপাদন করা যাচ্ছে।’
ড. মো. আমজাদ হোসাইন আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ স্টেভিয়া চাষের জন্য উপযুক্ত। রোগবালাই তেমন হয় না। প্রতি শতক জমি থেকে দুই কেজি পাউডার উৎপাদন সম্ভব। প্রতিকেজির পাউডারের বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা। কৃষকের দ্বোরগোড়ায় না পৌঁছা এবং বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় আমাদের দেশে এটি এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কেউ স্টেভিয়া চাষ বা কিনতে চাইলে বিএসআরআইয়ের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।’
No comments