গুপ্তচর হিসেবে কাজ করবে জলজ প্রাণী!
গুপ্তচর,
অস্ত্র পরিবহন বা সতর্কতা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রাণীদের
ব্যবহারের ইতিহাস পুরনো। তবে সাগরের প্রাণীদের সচল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার
করার পরিকল্পনা অদ্ভুত মনে হতে পারে। সম্প্রতি যখন একটি বেলুগা তিমিকে
মুখের সাথে ফিতা পরানো অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন ধারণা করা হয় যে সেটিকে
রাশিয়ান সেনাবাহিনী গুপ্তচর হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এমনটি অবশ্য যতটা নতুন মনে হচ্ছে আসলে তা নয়। ১৯৬০ এর দশকেই মার্কিন নৌবাহিনী ডলফিনকে প্রশিক্ষণ দিতো সমুদ্রে মাইন শনাক্ত করা এবং ডুবে যাওয়া নৌ সদস্যদের উদ্ধারে। রাশিয়াও একই ধরনের কাজ করতো। এছাড়া, হাঙ্গর, ইঁদুর এবং কবুতরও বহু বছর ধরে এধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউএস ডিফেন্স এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি বা ডারপা সমুদ্রের বড় মাছ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র প্রাণী- সবকিছুকে পানির নিচের সতর্কতা বৃদ্ধির কাজে লাগানোর ওপর গবেষণা করছে।
পার্সিসটেন্ট অ্যাকুয়াটিক লিভিং সেন্সর প্রোজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. লরি অ্যাডোর্নাটো বলেন, "সমুদ্র তলদেশে কোন বাহন চলাচল করলে এসব সামুদ্রিক জীবগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হয় - আমরা সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি।"
ডারপা'র গবেষণায় দেখা গেছে এমনও কিছু সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে যাদের শরীর থেকে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ হয় কোন কিছুর আগমন ঘটলে। তবে তারা সামুদ্রিক জীবের বিভিন্ন পরিবর্তন আরো ভালোভাবে বোঝার জন্যে সাবমেরিন এবং সমুদ্রে নিচে চলার উপযোগী ড্রোন ব্যবহার করেছে।
এমনই একটি প্রোজেক্টের সহ সভাপতি ভার্ন বয়েল বলেন, "আমরা এসব জীবের বিভিন্ন আচরণের পরিবর্তন বুঝতে চাই প্রাকৃতিক কারণ ও মানব সৃষ্ট কারণের মাঝে।"
আর এর জন্যে খুবই উন্নত যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাগরের তলদেশের গোলিয়াথ গ্রুপ- যেগুলো ২.৫ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে বাড়তে পারে- তারা একধরনের শব্দ সৃষ্টি করে যখন ডুবুরিরা নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ করে। কিংবা নতুন কোন বস্তু তাদের আবাসস্থলে ঢোকার চেষ্টা করলেও তারা কৌতূহল দেখায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এমন অনেক প্রজাতির মাছ আছে যারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির জন্যে কিংবা বাইরের কোন বিপদের আশঙ্কা থাকলে শব্দ সৃষ্টি করে।
এই প্রকল্পটির অংশীদার রেদন বিবিএন টেকনোলজির অ্যালিসন লাফেরিয়র বলেন, "যদি কোন নৌযান এসব প্রাণীগুলোর কাছাকাছি আসে, তাহলে মনে করা হচ্ছে যে তারা তাদের আচরণ পরিবর্তন করবে এবং সেটি আমরা পরিমাপ করতে পারবো।"
লাফেরিয়র বলেন যে তারা এখনো এই গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডে চালানো পরীক্ষার তথ্য উপাত্ত তারা বিশ্লেষণ করছেন। তাদের মতে, সামুদ্রিক জীবের আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর গবেষক ড. হেলেন বেইলি বলেন, "আমরা বেশকিছু সেন্সর কিছু মাছের শরীরে লাগিয়ে দিয়েছি। সুতরাং এখন আমরা তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করতে পারছি।"
তিনি বলেন যে, সাগরে প্রতিপক্ষের ডুবোজাহাজের বিপক্ষে গড়ে তোলা সতর্ক ব্যবস্থাকে কম খরচে করা সম্ভব নয়। উড়োজাহাজ, নৌযান, হাইড্রোফোন প্রযুক্তি, তদারকি প্রযুক্তি এর সবই খুবই ব্যয়বহুল এবং এসব দিয়ে সমুদ্রের খুব অল্প অংশেই নজরদারি রাখা সম্ভব।
আর এর পরিবর্তে সাগরতলের কোন নৌযানের উপস্থিতি টের পেতে সমুদ্রের জীবগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে বিশাল অঞ্চলকে তদারকির মধ্যে রাখা যায় বলে মনে করেন লাফেরিয়র।
ধরা যাক অল্প গভীরের চিংড়ির কথা। তারা অনবরত তাদের দুটি দাঁড়া খুলে এবং বন্ধ করে একধরনের শব্দ করতে থাকে। আর বিশেষ লয়ে তৈরি করা এই শব্দ কাছের কোন বস্তুতে প্রতিধ্বনিত হয়ে আবারো ফিরে আসে।
প্রচলিত শোনার সিস্টেমের মতো, শব্দ সংকেত ফিরে আসার সময় পরিমাপ করে বস্তুটির দূরত্ব আকার ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়। পরোক্ষভাবে এমন করেও শত্রু পক্ষের ওপর নজরদারি রাখা যায় বলে মনে করেন লাফেরিয়র।
সুতরাং যদি চিংড়ির একটি বিশাল ঝাঁক থাকে তাহলে কেন আর অনেক অর্থ ব্যয় করে শত্রুর ডুবোজাহাজ শনাক্তের ব্যবস্থা করা?
কিন্তু এইসব প্রকল্প কি আদৌ বাস্তবসম্মত?
গবেষকরা বলছেন যে, বিশ্বব্যাপীই প্রাণীদের এই সংকেত আদান-প্রদান বা তাদের আচরণ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চলছে। তাদের আচরণের পরিবর্তন আমাদের সংকেত দেয়। গৃহপালিত কুকুর বা ক্যানারি পাখির সাহায্যে যা বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে।
তাদের মতে, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত মানুষের তথ্যের ভাণ্ডারে এনে দিতে পারে এক বিশাল বিপ্লব। সূত্র : বিবিসি।
এমনটি অবশ্য যতটা নতুন মনে হচ্ছে আসলে তা নয়। ১৯৬০ এর দশকেই মার্কিন নৌবাহিনী ডলফিনকে প্রশিক্ষণ দিতো সমুদ্রে মাইন শনাক্ত করা এবং ডুবে যাওয়া নৌ সদস্যদের উদ্ধারে। রাশিয়াও একই ধরনের কাজ করতো। এছাড়া, হাঙ্গর, ইঁদুর এবং কবুতরও বহু বছর ধরে এধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউএস ডিফেন্স এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি বা ডারপা সমুদ্রের বড় মাছ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র প্রাণী- সবকিছুকে পানির নিচের সতর্কতা বৃদ্ধির কাজে লাগানোর ওপর গবেষণা করছে।
পার্সিসটেন্ট অ্যাকুয়াটিক লিভিং সেন্সর প্রোজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. লরি অ্যাডোর্নাটো বলেন, "সমুদ্র তলদেশে কোন বাহন চলাচল করলে এসব সামুদ্রিক জীবগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হয় - আমরা সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি।"
ডারপা'র গবেষণায় দেখা গেছে এমনও কিছু সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে যাদের শরীর থেকে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ হয় কোন কিছুর আগমন ঘটলে। তবে তারা সামুদ্রিক জীবের বিভিন্ন পরিবর্তন আরো ভালোভাবে বোঝার জন্যে সাবমেরিন এবং সমুদ্রে নিচে চলার উপযোগী ড্রোন ব্যবহার করেছে।
এমনই একটি প্রোজেক্টের সহ সভাপতি ভার্ন বয়েল বলেন, "আমরা এসব জীবের বিভিন্ন আচরণের পরিবর্তন বুঝতে চাই প্রাকৃতিক কারণ ও মানব সৃষ্ট কারণের মাঝে।"
আর এর জন্যে খুবই উন্নত যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাগরের তলদেশের গোলিয়াথ গ্রুপ- যেগুলো ২.৫ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে বাড়তে পারে- তারা একধরনের শব্দ সৃষ্টি করে যখন ডুবুরিরা নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ করে। কিংবা নতুন কোন বস্তু তাদের আবাসস্থলে ঢোকার চেষ্টা করলেও তারা কৌতূহল দেখায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এমন অনেক প্রজাতির মাছ আছে যারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির জন্যে কিংবা বাইরের কোন বিপদের আশঙ্কা থাকলে শব্দ সৃষ্টি করে।
এই প্রকল্পটির অংশীদার রেদন বিবিএন টেকনোলজির অ্যালিসন লাফেরিয়র বলেন, "যদি কোন নৌযান এসব প্রাণীগুলোর কাছাকাছি আসে, তাহলে মনে করা হচ্ছে যে তারা তাদের আচরণ পরিবর্তন করবে এবং সেটি আমরা পরিমাপ করতে পারবো।"
লাফেরিয়র বলেন যে তারা এখনো এই গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডে চালানো পরীক্ষার তথ্য উপাত্ত তারা বিশ্লেষণ করছেন। তাদের মতে, সামুদ্রিক জীবের আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর গবেষক ড. হেলেন বেইলি বলেন, "আমরা বেশকিছু সেন্সর কিছু মাছের শরীরে লাগিয়ে দিয়েছি। সুতরাং এখন আমরা তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করতে পারছি।"
তিনি বলেন যে, সাগরে প্রতিপক্ষের ডুবোজাহাজের বিপক্ষে গড়ে তোলা সতর্ক ব্যবস্থাকে কম খরচে করা সম্ভব নয়। উড়োজাহাজ, নৌযান, হাইড্রোফোন প্রযুক্তি, তদারকি প্রযুক্তি এর সবই খুবই ব্যয়বহুল এবং এসব দিয়ে সমুদ্রের খুব অল্প অংশেই নজরদারি রাখা সম্ভব।
আর এর পরিবর্তে সাগরতলের কোন নৌযানের উপস্থিতি টের পেতে সমুদ্রের জীবগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে বিশাল অঞ্চলকে তদারকির মধ্যে রাখা যায় বলে মনে করেন লাফেরিয়র।
ধরা যাক অল্প গভীরের চিংড়ির কথা। তারা অনবরত তাদের দুটি দাঁড়া খুলে এবং বন্ধ করে একধরনের শব্দ করতে থাকে। আর বিশেষ লয়ে তৈরি করা এই শব্দ কাছের কোন বস্তুতে প্রতিধ্বনিত হয়ে আবারো ফিরে আসে।
প্রচলিত শোনার সিস্টেমের মতো, শব্দ সংকেত ফিরে আসার সময় পরিমাপ করে বস্তুটির দূরত্ব আকার ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়। পরোক্ষভাবে এমন করেও শত্রু পক্ষের ওপর নজরদারি রাখা যায় বলে মনে করেন লাফেরিয়র।
সুতরাং যদি চিংড়ির একটি বিশাল ঝাঁক থাকে তাহলে কেন আর অনেক অর্থ ব্যয় করে শত্রুর ডুবোজাহাজ শনাক্তের ব্যবস্থা করা?
কিন্তু এইসব প্রকল্প কি আদৌ বাস্তবসম্মত?
গবেষকরা বলছেন যে, বিশ্বব্যাপীই প্রাণীদের এই সংকেত আদান-প্রদান বা তাদের আচরণ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চলছে। তাদের আচরণের পরিবর্তন আমাদের সংকেত দেয়। গৃহপালিত কুকুর বা ক্যানারি পাখির সাহায্যে যা বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে।
তাদের মতে, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত মানুষের তথ্যের ভাণ্ডারে এনে দিতে পারে এক বিশাল বিপ্লব। সূত্র : বিবিসি।
গুপ্তচর, অস্ত্র পরিবহন বা সতর্কতা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রাণীদের ব্যবহারের ইতিহাস পুরনো - সংগৃহীত |
No comments