পাখির শব্দে মুখরিত আলিদেওনা গ্রাম by এম. সাখাওয়াত হোসেন
নওগাঁর
মহাদেবপুরে বাঁশ ঝাড় ও গাছে গাছে হাজার হাজার পাখির কিচির-মিচির শব্দে
মুখরিত হয়ে ওঠে আলিদেওনা গ্রাম। জেলার সর্ববৃহৎ পাখি কলোনি আলিদেওনা
গ্রামকে সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়
পরিবেশবিদরা। গ্রামের সাধারণ মানুষের উদ্যোগে সেখানে অনেক আগেই গড়ে তোলা
হয়েছে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে আশ্রয় নেয়া পাখিদের মধ্যে রয়েছে- লাল
বক, সাদা বক, সামখইল, রাতচোরা, সারস, মাছরাঙা, পানি কাউর, বিভিন্ন প্রজতির
ঘুঘুসহ নাম না জানা নানান রংয়ের প্রায় লক্ষাধিক পাখি। গ্রামের
আনাচে-কানাচে বেড়ে ওঠা বাঁশ ও গাছে গাছে সারাক্ষণ হাজার হাজার পাখির
কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামটি। এ কারণে আলিদেওনা গ্রামের নাম
হয়েছে পাখিগ্রাম। ওই গ্রামের সীমানায় কোনো পাখি প্রবেশ করা মানে পাখিটি
নিরাপদ। আর এ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের সবাই। পাখি শিকার রোধে
গ্রামবাসী নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। ফলে শীতকালসহ সারা বছরই সেখানে হাজার হাজার
পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে বাচ্চা উঠানোর মৌসুমে সামখইল ও বকের নয়নাভিরাম এ
দৃশ্য দেখতে গ্রামটিতে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমন ঘটে।
গ্রামটিতে প্রবেশের সময় দেখা যায় সরু রাস্তার দুই ধারে থাকা গাছে গাছে
লাগানো রয়েছে বিভিন্ন পাখির আদলে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডগুলোতে পাখি শিকার
রোধে বিভিন্ন আইন ও সচেতনতামূলক উপদেশ বাণী লেখা রয়েছে। ‘পাখি শিকার করবেন
না, পাখি মারবেন না, পাখিরাও আমাদের মতো বাঁচতে চায়, পাখি এ সমাজের পরম
বন্ধু, তাদের আগলে রাখতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’ ইত্যাদি। পাখি
প্রেমের এমন অনন্য নজির স্থাপন করেছেন গ্রামবাসী। আর এ কাজে গ্রামের
মানুষদের এক কাতারে এনে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছে স্থানীয় আলিদেওনা পাখি
সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল বর্মন। মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে
১২ কি.মি পশ্চিমে খাজুর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত আলিদেওনা পাখিরগ্রাম।
সেখানে গেলেই মুগ্ধ হয়ে উঠে মানুষ। স্থানীয়রা স্ব উদ্যোগে গ্রামটিকে পাখি
শিকার মুক্ত এলাকা ঘোষণা করেছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখির
বাস। ওই পাখিগ্রামের পাখিদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় পাখিপ্রেমী,
সমাজসেবী ও পরিবেশবিদরা সরকারিভাবে অভয়ারণ্য ঘোষণার পাশাপাশি পর্যটন
কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করছেন। সেখানে পাখির খেলায় যেন মেলা বসে।
পাখিদের মেলার কারণে গ্রামটিও যেন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। নতুন প্রাণের
স্পন্দনে জেগে ওঠা গ্রামবাসী পাখিদেরও আগলে রেখেছেন আপন সন্তানের মতোই।
ইচ্ছাকৃতভাবে না হোক, কোনো শিকারী ভুলক্রমেও এ গ্রামে প্রবেশ করলেও তার
কপাল মন্দ। এ বিষয়ে জীব বৈচিত্র্য, বন-বণ্যপ্রাণী ও নদী সংরক্ষণ কমিটি
(জীবন) এর চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত মো. ইউনুসার রহমান
হেফজুল গ্রামটিকে সরকারিভাবে অভয়রণ্য করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে
তোলার দাবি জানান। জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছেন বিবিসিএফ নওগাঁ জেলা কমিটির
সাধারণ সম্পাদক পাখি প্রেমিক এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পাখিদের প্রতি
আলিদেওনা গ্রামের মানুষের মূলত ভালোবাসার কারণেই এখানে পাখিদের আবাসভূমি
গড়ে উঠেছে। তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বা অন্য কোনো কারণে বাসা থেকে
পড়ে যাওয়া বাচ্চাগুলোকে গ্রামবাসী যত্ন সহকারে মা পাখিদের বাসায় পৌঁছে দেয়।
তিনি পাখির প্রতি আন্তরিকতার জন্য বিবিসিএফ নওগাঁ জেলা কমিটির পক্ষথেকে
নির্মল বর্মনসহ গ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা
নির্বাহী অফিসার মো. মোবারক হোসেন পারভেজ জানান, নওগাঁ জেলার আলিদেওনা
গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী পাখিগ্রাম হিসেবে সারা দেশের মানুষের মনে স্থান করে
নিয়েছে। পাখির অভয়রণ্যসহ গ্রামটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য
আমরা চেষ্টা করছি।
No comments