ঢাকার ২৫ ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’র তালিকা নিয়ে অভিযানে পুলিশ by নুরুজ্জামান লাবু
রাজধানী
ঢাকায় ২৫ ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’র তালিকা হাতে নিয়ে তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে
পুলিশ। ইতোমধ্যে এই তালিকায় থাকা ৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকি ২২ জনকে
হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
এই ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’রা কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার পর তারা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে থেমে নেই তাদের মাদক ব্যবসা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার শীর্ষ এই ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’রা মাদক ব্যবসা করে কেউ কেউ কোটিপতি বনে গেছে। ঢাকায় তাদের একাধিক বহুতল ভবনও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সরেজমিন খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। চিহ্নিত যেসব মাদক স্পট রয়েছে সেগুলোতে অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতেও অভিযান চালানো হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের হাতে থাকা ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’দের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার ৩ নম্বর পার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা রহিমা বেগম (৪৮)। তার স্বামীর নাম হজরত আলী। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ৫টি ও গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, রহিমা একজন কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ী। ঢাকায় তার অন্তত দশটি বাড়ি রয়েছে। অন্তত বিশ বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসা রহিমা একসময় গাঁজা বিক্রি করত। এখন ইয়াবা ব্যবসা করে। টেকনাফ থেকে সরাসরি ইয়াবা এনে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে সে। নিজে চলাফেরা করে বিলাসবহুল গাড়িতে।
তালিকার দুই নম্বরে রয়েছে সুফিয়া আক্তার ওরফে সুফি (৪৫)। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রহমান, স্বামীর নাম আক্তার হোসেন। যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদের ১০১ ওয়াসা কলোনির বাসিন্দা সুফির বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ৫টি ও শ্যামপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী সে। সুফিও একসময় গাঁজা বিক্রি করত। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছে। ঢাকা শহরে তারও একাধিক বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে।
কমলাপুর রেলওয়ে এলাকার জমিলা খাতুনের (৫০) নাম রয়েছে তালিকার তিন নম্বরে। তার বিরুদ্ধে শাহাজাহানপুর থানায় তিনটি, মতিঝিল থানায় একটি, মুগদা ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় একটি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মামলা রয়েছে। জমিলা সম্পর্কে তেমন তথ্য জানা যায়নি। তবে কমলাপুর রেলওয়ে থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, জমিলা কমলাপুর এলাকায় ভাসমান হিসেবে মাদক বিক্রি করে।
সবুজবাগ থানার ৪৬ নম্বর ওহাব কলোনির বাসিন্দা শামসুন্নাহার চম্পা (৪০)। তার বাবার নাম মৃত নুরু উদ্দিন, স্বামী বাবুল ওরফে ফর্মা বাবুল। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মাদকসহ ১৪টি এবং মতিঝিল থানায় একটি মামলা রয়েছে।
চম্পার মেয়ে তানিয়া বেগমও (৩০) এলাকায় মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। তানিয়ার স্বামীর নাম আরমান। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় ছয়টি ও খিলগাঁও থানায় একটি মামলা রয়েছে। শামসুন্নাহার চম্পা ও তানিয়া রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বসবাস করে। দক্ষিণখান এলাকায় তাদের ছয়তলা বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। সবুজবাগের ওহাব কলোনির আরেক ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’র নাম সুফিয়া আক্তার শোভা (৫০)। তার স্বামীর নাম আইয়ুব আলী, বাবার নাম সুলতান। ১২১নং ওহাব কলোনির বাসিন্দা শোভার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় ১০টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে।
গত বুধবার রাতে পুলিশ সবুজবাগের ওহাব কলোনিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু তালিকাভুক্ত এই তিন নারী মাদক ব্যবসায়ীর কাউকে ধরতে পারেনি। স্থানীয়রা জানান, তারা কেউ কলোনিতে থাকে না। বাইরে থেকেই লোকজন দিয়ে কলোনির মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হলো ফারহানা আক্তার পাপিয়া ওরফে ইয়াবা পাপিয়া। ক্যাম্পের বি-ব্লকের ২৩৯ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার স্বামীর নাম জয়নাল আবেদীন পাচু। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় চারটি মাদক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে।
জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাপিয়া মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে সুপরিচিত। স্বামী পাচুর মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় হাতেখড়ি তার। সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে ইয়াবা ব্যবসা চালায় পাপিয়া।
মাদক ব্যবসা করে পাপিয়াও কোটিপতি বনে গেছে। এর আগে একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছিল সে। কিন্তু গ্রেফতারের কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে এসে আগের মতো মাদক ব্যবসায় ফিরে যায়।
তালিকা অনুযায়ী, মিরপুরের ভাসানটেক এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী মোর্শেদা (৩৩)। ভাসানটেকের ১নং বস্তিতে তার বাস। তার স্বামীর নাম সোহরাব হোসেন আর বাবার নাম আব্দুল হক। ভাসানটেক থানায় তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। ভাসানটেক এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো স্বপ্না (৩১)। তার স্বামীর নাম বাচ্চু মিয়া। ভাসানটেক এলাকার ৩নং ধামালকোটের পাশে রহিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া সে। বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। রূপনগর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো সালেহা বেগম (৪৮)। তার স্বামীর নাম আলেকচাঁন। রূপনগর থানার দুয়ারীপাড়ার ৮ নম্বর সেকশনের ১ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় ২১টি ও পল্লবী থানায় একটি মামলা রয়েছে।
কামরাঙ্গীরচর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো শাহিনুর বেগম ওরফে দিনারা ওরফে মিনারা ওরফে শাহনাজ বেগম ওরফে শাহিনুর (৪২)। তার স্বামীর নাম বাবু ওরফে মোবাইল বাবু আর বাবার নাম আবুল হোসেন ওরফে সেলিম ওরফে জালাল। কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের বি-ব্লকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ১৫টি মাদক মামলা রয়েছে।
কাওরানবাজার এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো শিল্পী (৩০)। তার স্বামীর নাম মাসুদ। তেজগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে সে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। কাওরানবাজার এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো আকলিমা আক্তার (২৫)। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানার মাদক সম্রাজ্ঞী জোৎস্না বেগম (৩১) থাকে পশ্চিম কাফরুলের ২২৮/এ তালতলার রতন মিয়ার টিনশেড বাড়িতে। তার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় ৪টি মাদক মামলা রয়েছে। কাওরানবাজার রেলওয়ে বস্তির আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম মিনা (৩৫)। তার স্বামীর নাম বাদশা বেপারী। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৪টি মামলা রয়েছে।
মরিয়ম বেগম কুট্টি (৩৪) নামে আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর স্বামীর নাম আকতার হোসেন। তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তির বাসিন্দা কুট্টির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দুটি। একই এলাকার মাহমুদা নামে আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর বিরুদ্ধেও তেজগাঁও থানায় মামলা রয়েছে দুটি।
কাঁঠালবাগান এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো শাহনাজ (২৫)। তার স্বামীর নাম শাহজাহান সরদার। ১৬০/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কাঁঠালবাগান বাজার মসজিদের গলিতে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় ৭টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
মাদক সম্রাজ্ঞী খুরশিদা বেগম ওরফে খুশি (৩১) মাদক ব্যবসা করে মিরপুর, নিউমার্কেট ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। মিরপুরের কালাপানি বস্তি, নিউমার্কেট ১ নম্বর গেটে ভাসমান অবস্থায় আর কামরাঙ্গীরচরের নয়াগাঁও ২৫২ নম্বর মুড়ির ফ্যাক্টরির পাশে থাকার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করে সে। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানাতেই ১৫টি মাদক মামলা রয়েছে।
নিউমার্কেট এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো হাসি বেগম (৩৫)। তার স্বামীর নাম ওমর আলী। বাবার নাম মৃত জব্বর হাবিলদার। মিউমার্কেট ১ নম্বর গেটের সামনে ভাসমান অবস্থায় মাদক ব্যবসা করে সে। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে।
হাজারীবাগ এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী বীনা। তার স্বামীর নাম নুর হোসেন। হাজারীবাগ থানাধীন বৌবাজার এলাকার ১৮/বি রানা বেকারির গলিতে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ১১টি মামলা রয়েছে।
মাদকসহ আটক হওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করে সে। হাজারীবাগ এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম নূর নাহার নুন্নী। তার বাবার নাম খোরশেদ আর স্বামীর নাম ইউনূস। হাজারীরবাগ থানাধীন ১৬নং চড়কঘাটা রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ৯টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। নুন্নীও মাদকসহ আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেছে। এই এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী জমিলা ওরফে জামিলা ওরফে জামেলা বেগম (৪৭)। তার স্বামীর নাম সুরেশ লাল। হাজারীবাগ থানার গণকটুলী সুইপার কলোনিতে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে।
পুরান ঢাকার মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম পারুলী রানী (৩৮)। তার স্বামীর নাম সুরেশ লাল। রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ১০/১ কৈলাশ ঘোষ (বুড়িরবাগান) এলাকায় তার বাস। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় ৫টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
খিলক্ষেত এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো নাজমা বেগম (৪৮)। তার স্বামীর নাম রবিউল ইসলাম রুবেল। বাবার নাম হযরত আলী। খিলক্ষেত থানাধীন বেপারী পাড়ার খ-২১ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় ১৮টি ও কদমতলী থানায় একটি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
এই ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’রা কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার পর তারা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে থেমে নেই তাদের মাদক ব্যবসা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার শীর্ষ এই ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’রা মাদক ব্যবসা করে কেউ কেউ কোটিপতি বনে গেছে। ঢাকায় তাদের একাধিক বহুতল ভবনও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সরেজমিন খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। চিহ্নিত যেসব মাদক স্পট রয়েছে সেগুলোতে অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতেও অভিযান চালানো হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের হাতে থাকা ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’দের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার ৩ নম্বর পার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা রহিমা বেগম (৪৮)। তার স্বামীর নাম হজরত আলী। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ৫টি ও গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, রহিমা একজন কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ী। ঢাকায় তার অন্তত দশটি বাড়ি রয়েছে। অন্তত বিশ বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসা রহিমা একসময় গাঁজা বিক্রি করত। এখন ইয়াবা ব্যবসা করে। টেকনাফ থেকে সরাসরি ইয়াবা এনে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে সে। নিজে চলাফেরা করে বিলাসবহুল গাড়িতে।
তালিকার দুই নম্বরে রয়েছে সুফিয়া আক্তার ওরফে সুফি (৪৫)। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রহমান, স্বামীর নাম আক্তার হোসেন। যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদের ১০১ ওয়াসা কলোনির বাসিন্দা সুফির বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ৫টি ও শ্যামপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী সে। সুফিও একসময় গাঁজা বিক্রি করত। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছে। ঢাকা শহরে তারও একাধিক বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে।
কমলাপুর রেলওয়ে এলাকার জমিলা খাতুনের (৫০) নাম রয়েছে তালিকার তিন নম্বরে। তার বিরুদ্ধে শাহাজাহানপুর থানায় তিনটি, মতিঝিল থানায় একটি, মুগদা ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় একটি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মামলা রয়েছে। জমিলা সম্পর্কে তেমন তথ্য জানা যায়নি। তবে কমলাপুর রেলওয়ে থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, জমিলা কমলাপুর এলাকায় ভাসমান হিসেবে মাদক বিক্রি করে।
সবুজবাগ থানার ৪৬ নম্বর ওহাব কলোনির বাসিন্দা শামসুন্নাহার চম্পা (৪০)। তার বাবার নাম মৃত নুরু উদ্দিন, স্বামী বাবুল ওরফে ফর্মা বাবুল। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মাদকসহ ১৪টি এবং মতিঝিল থানায় একটি মামলা রয়েছে।
চম্পার মেয়ে তানিয়া বেগমও (৩০) এলাকায় মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। তানিয়ার স্বামীর নাম আরমান। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় ছয়টি ও খিলগাঁও থানায় একটি মামলা রয়েছে। শামসুন্নাহার চম্পা ও তানিয়া রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বসবাস করে। দক্ষিণখান এলাকায় তাদের ছয়তলা বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। সবুজবাগের ওহাব কলোনির আরেক ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’র নাম সুফিয়া আক্তার শোভা (৫০)। তার স্বামীর নাম আইয়ুব আলী, বাবার নাম সুলতান। ১২১নং ওহাব কলোনির বাসিন্দা শোভার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় ১০টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে।
গত বুধবার রাতে পুলিশ সবুজবাগের ওহাব কলোনিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু তালিকাভুক্ত এই তিন নারী মাদক ব্যবসায়ীর কাউকে ধরতে পারেনি। স্থানীয়রা জানান, তারা কেউ কলোনিতে থাকে না। বাইরে থেকেই লোকজন দিয়ে কলোনির মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হলো ফারহানা আক্তার পাপিয়া ওরফে ইয়াবা পাপিয়া। ক্যাম্পের বি-ব্লকের ২৩৯ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার স্বামীর নাম জয়নাল আবেদীন পাচু। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় চারটি মাদক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে।
জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাপিয়া মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে সুপরিচিত। স্বামী পাচুর মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় হাতেখড়ি তার। সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে ইয়াবা ব্যবসা চালায় পাপিয়া।
মাদক ব্যবসা করে পাপিয়াও কোটিপতি বনে গেছে। এর আগে একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছিল সে। কিন্তু গ্রেফতারের কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে এসে আগের মতো মাদক ব্যবসায় ফিরে যায়।
তালিকা অনুযায়ী, মিরপুরের ভাসানটেক এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী মোর্শেদা (৩৩)। ভাসানটেকের ১নং বস্তিতে তার বাস। তার স্বামীর নাম সোহরাব হোসেন আর বাবার নাম আব্দুল হক। ভাসানটেক থানায় তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। ভাসানটেক এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো স্বপ্না (৩১)। তার স্বামীর নাম বাচ্চু মিয়া। ভাসানটেক এলাকার ৩নং ধামালকোটের পাশে রহিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া সে। বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। রূপনগর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো সালেহা বেগম (৪৮)। তার স্বামীর নাম আলেকচাঁন। রূপনগর থানার দুয়ারীপাড়ার ৮ নম্বর সেকশনের ১ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় ২১টি ও পল্লবী থানায় একটি মামলা রয়েছে।
কামরাঙ্গীরচর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো শাহিনুর বেগম ওরফে দিনারা ওরফে মিনারা ওরফে শাহনাজ বেগম ওরফে শাহিনুর (৪২)। তার স্বামীর নাম বাবু ওরফে মোবাইল বাবু আর বাবার নাম আবুল হোসেন ওরফে সেলিম ওরফে জালাল। কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের বি-ব্লকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ১৫টি মাদক মামলা রয়েছে।
কাওরানবাজার এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো শিল্পী (৩০)। তার স্বামীর নাম মাসুদ। তেজগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে সে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। কাওরানবাজার এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো আকলিমা আক্তার (২৫)। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানার মাদক সম্রাজ্ঞী জোৎস্না বেগম (৩১) থাকে পশ্চিম কাফরুলের ২২৮/এ তালতলার রতন মিয়ার টিনশেড বাড়িতে। তার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় ৪টি মাদক মামলা রয়েছে। কাওরানবাজার রেলওয়ে বস্তির আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম মিনা (৩৫)। তার স্বামীর নাম বাদশা বেপারী। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৪টি মামলা রয়েছে।
মরিয়ম বেগম কুট্টি (৩৪) নামে আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর স্বামীর নাম আকতার হোসেন। তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তির বাসিন্দা কুট্টির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দুটি। একই এলাকার মাহমুদা নামে আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর বিরুদ্ধেও তেজগাঁও থানায় মামলা রয়েছে দুটি।
কাঁঠালবাগান এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো শাহনাজ (২৫)। তার স্বামীর নাম শাহজাহান সরদার। ১৬০/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কাঁঠালবাগান বাজার মসজিদের গলিতে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় ৭টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
মাদক সম্রাজ্ঞী খুরশিদা বেগম ওরফে খুশি (৩১) মাদক ব্যবসা করে মিরপুর, নিউমার্কেট ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। মিরপুরের কালাপানি বস্তি, নিউমার্কেট ১ নম্বর গেটে ভাসমান অবস্থায় আর কামরাঙ্গীরচরের নয়াগাঁও ২৫২ নম্বর মুড়ির ফ্যাক্টরির পাশে থাকার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করে সে। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানাতেই ১৫টি মাদক মামলা রয়েছে।
নিউমার্কেট এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো হাসি বেগম (৩৫)। তার স্বামীর নাম ওমর আলী। বাবার নাম মৃত জব্বর হাবিলদার। মিউমার্কেট ১ নম্বর গেটের সামনে ভাসমান অবস্থায় মাদক ব্যবসা করে সে। তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে।
হাজারীবাগ এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী বীনা। তার স্বামীর নাম নুর হোসেন। হাজারীবাগ থানাধীন বৌবাজার এলাকার ১৮/বি রানা বেকারির গলিতে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ১১টি মামলা রয়েছে।
মাদকসহ আটক হওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করে সে। হাজারীবাগ এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম নূর নাহার নুন্নী। তার বাবার নাম খোরশেদ আর স্বামীর নাম ইউনূস। হাজারীরবাগ থানাধীন ১৬নং চড়কঘাটা রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ৯টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। নুন্নীও মাদকসহ আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেছে। এই এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী জমিলা ওরফে জামিলা ওরফে জামেলা বেগম (৪৭)। তার স্বামীর নাম সুরেশ লাল। হাজারীবাগ থানার গণকটুলী সুইপার কলোনিতে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে।
পুরান ঢাকার মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম পারুলী রানী (৩৮)। তার স্বামীর নাম সুরেশ লাল। রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ১০/১ কৈলাশ ঘোষ (বুড়িরবাগান) এলাকায় তার বাস। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় ৫টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
খিলক্ষেত এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী হলো নাজমা বেগম (৪৮)। তার স্বামীর নাম রবিউল ইসলাম রুবেল। বাবার নাম হযরত আলী। খিলক্ষেত থানাধীন বেপারী পাড়ার খ-২১ নম্বর বাসায় থাকে সে। তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় ১৮টি ও কদমতলী থানায় একটি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
No comments