নতুন গণমাধ্যম by ফাহিম ইবনে সারওয়ার

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, জ্ঞান সংগ্রহের জন্য ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা তাদের ছাপানো সংস্করণ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করল। প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে শুধু ডিজিটাল সংস্করণে যাওয়ার মূল কারণ আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বঁাঁচানো। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,


বর্তমানে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার প্রায় চার হাজার প্রিন্ট কপি রয়েছে। এটি শেষ হলে নতুনভাবে আর কোনো সংস্করণ প্রকাশ করা হবে না। ১৭৬৮ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা থেকে সর্বপ্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ছাপানো সংস্করণ প্রকাশ হয়। এটা একদিকে যেমন সূর্যাস্ত, তেমনি সূর্যোদয়ও বলা যেতে পারে। সূর্যাস্ত হচ্ছে ছাপাখানার জন্য আর সূর্যোদয় হলো ছাপাখানা ছাড়াই ছাপা হওয়া অনলাইন মিডিয়ার জন্য। অনলাইন মিডিয়া বা যাকে এখন আখ্যায়িত করা হচ্ছে 'নিউ মিডিয়া' হিসেবে একের পর এক চমক দেখিয়েই চলেছে। 'আরব বসন্ত' কিংবা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকসের কথাই ধরুন। রাজনীতির পাট উল্টেপাল্টে ক্ষমতার মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন ব্লগার ও ফেসবুকার! সরকার টিকে থাকতে পারেনি সেই কম্পনে। ধসে পড়েছে সিংহাসন। আরব বসন্ত মনে হয় প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল নতুন গণমাধ্যমের (নিউ মিডিয়া) সূর্যোদয়ের আলোকছটা। এরপর জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস। মূলত গোপন তথ্য চুরি করাটাই উইকিলিকসের কাজ ছিল। কিন্তু তার ফলে উপকার হয়েছে জনসাধারণের। রাজনীতিবিদ, আমলা, কূটনীতিকদের মনের সোজাসাপ্টা কথা তারা কিছুটা জানতে পেরেছেন এর মাধ্যমে।
আমাদের দেশেও নতুন গণমাধ্যমের প্রভাব লক্ষণীয়। সংসদে দেওয়া কোনো নবীন সাংসদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা, সমাবেশে মুখ ফসকে বেফাঁস কথা বলে ফেলা নেতার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা কিংবা ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রীদের আন্দোলন এখন বাংলা ব্লগ, ফেসবুক, ইউটিউবের মতো বিকল্প মাধ্যমে সর্বত্র সম্প্রচারিত হচ্ছে। সরকার তো বটেই কখনও কখনও মূলধারার গণমাধ্যমের মুখে চপেটাঘাত করছে নতুন এসব গণমাধ্যম। মূল গণমাধ্যমে অন্যদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা সাংবাদিককে প্রশ্নের মুখোমুখি করছে বিকল্প গণমাধ্যম। আর এভাবেই অনলাইনভিত্তিক এসব মিডিয়া ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত, অতিদ্রুত। সময় এবং খরচা বাঁচিয়ে এর উদ্যোক্তারা যেমন পাঠকদের চাহিদা মেটাতে তৎপর, তেমনি পাঠকরাও এখন সকালে কাগজে ছাপা খবরকে মোটামুটি পুরনো বলেই গণ্য করা শুরু করেছেন।
য় শিক্ষার্থী :জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.