বসনিয়া যুদ্ধের দু’দশক, ফাঁকা চেয়ার বিছিয়ে বিভীষিকা স্মরণ
বসনিয়া যুদ্ধ শুরুর দু’দশক পূরা হলো শুক্রবার। এ উপলক্ষে এদিন দেশটির রাজধানী সারায়েভোর প্রধান এভ্যুনিউয়ে বিছিয়ে দেওয়া হয় অসংখ্য লাল চেয়ার। সার্ব অবরোধে নিহত প্রত্যেক নগরবাসীর জন্য রাখা একটি করে ফাঁকা চেয়ার যেন প্রাণঘাতী যুদ্ধের সেই নির্মম বিভীষিকার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
যেন দেশ ও জাতির জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেওয়া মানুষগুলো নীরবে বলে ওঠে, ‘২০ বছর আগে আমরা ছিলাম, কিন্তু যুদ্ধ আমাদের নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে।’
২০ বছর আগের এদিন সভ্যতার লালনভূমি হিসেবে আত্মগৌরবে মহীয়ান ইউরোপের কেন্দ্রেই শুরু হয় ইতিহাসের কুখ্যাত পরিকল্পিত জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। বিগত শতাব্দীর ’৯০ দশকের গোড়াতে শুরু হয়ে মধ্য ’৯০ পর্যন্ত চলা সেই যুদ্ধে নিহত হয় লক্ষাধিক বসনীয়। এদের অধিকাংশই নিরীহ বেসামরিক নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ।
একের পর এক গণহত্যার ন্যক্কারজনক নজির গড়া এ যুদ্ধের ২০তম বার্ষিকী তাই গভীর শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পালন করলো বসনিয়াবাসী।
আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বেদনাময় বসনিয়া গণহত্যা শুরু হয় ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল। এ দিনই নরপিপাসু সার্বরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বসনীয় নারী, শিশু, বৃদ্ধের ওপর। নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ।লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে বৃদ্ধ আর শিশুদের।অত্যাচারের থাবা পৌঁছে যায় কবরে শায়িতার নিথর শরীরেও।
দিবসটি স্মরণে শুক্রবার হাজারো জনতা জড়ো হয় নগরীর প্রধান সড়ক মার্শাল টিটো অ্যাভিনিউয়ে। এ দিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম লক্ষণীয় দিক ছিলো- একটি ক্ষুদ্র অর্কেস্ট্রা দলের সঙ্গীত পরিবেশনা। অবরোধের সেই রক্তাক্ত সময়ে গাথা ১৪টি কম্পোজিশন পরিবেশন করে তারা।
অনুষ্ঠানে ‘তোমরা কেন এখানে নেই?’ শিরোনামের গানটি উৎসর্গ করা হয় অ্যাভ্যুনিউয়ে সারি দিয়ে রাখা ১১ হাজার ৫৪১টি শূন্য চেয়ারের উদ্দেশ্যে। এক একটি চেয়ার যেন হারিয়ে যাওয়া এক জন মানুষের প্রতীক, যারা হারিয়ে গেছে ’৯২-৯৫’র গৃহযুদ্ধের সময়।
কিছু চেয়ারের ওপর মানুষ সাজিয়ে রাখলো কিছু তুষার শুভ্র সাদা গোলাপ। হাজারো চেয়ারের ভিড়ে কিছু ছোট ছোট চেয়ারও রাখা ছিলো সেখানে। সেখানে গোলাপ নয়, বরং রাখা হলো শিশুদের খেলনা, টেডি বিয়ার আর স্কুলের বই খাতা। বড় চেয়ারের ভিড়ে ছোট চেয়ারের সারি বুঝতে তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারোই, সেদিনতো সার্ব পশুদের হাতে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশুরাও। হাজার হাজার শিশুকেও হত্যা করা হয়েছিলো নির্বিচারে।
যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া নগরীর বর্ষীয়ান বাসিন্দা হাজিমা হাডজোভিক বললেন, ‘এ চেয়ারগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়- কি বিভীষিকাময় সময় আমরা কাটিয়েছি এখানে।
‘আমি এসেছি যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া আমার বন্ধুদের স্মরণ করতে। যুদ্ধে আমি এত বেশি বন্ধু হারিয়েছি যে তাদের সবার নামও এক সঙ্গে আর মনে পড়ছে না।’- জানালেন ৫৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দু’টায় পুরো নগরী যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। বেলা দু’টো থেকে এক ঘণ্টার জন্য সব কাজ থেকে বিরত থেকে যুদ্ধ শুরুর বিভিষীকাময় মুহূর্তকে স্মরণ করে সারায়েভোবাসী।
৪৪ মাস ধরে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়ার মদতপুষ্ট বসনীয় সার্বদের হাতে অবরোধের শিকার হয় নগরবাসী। এ সময়ে শহরের বেসামরিক এলাকায় নিত্য গোলাবর্ষণ আর পাহাড়ের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সার্ব স্নাইপারদের গুলিতে পথ চলতি লোকের মৃত্যু ছিলো নিত্য ঘটনা। এ অবরোধ ছিলো আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অবরোধ।
নগরীর অনেক যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবনকে ঠিক ওই রকমই রেখে দেওয়া হয়েছে, যেমন ছিলো যুদ্ধের সময়। এতগুলো বছর পার হয়ে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত অবয়ব ঠিকই ধরে রাখা হয়েছে ভবনগুলোতে। ভবনগুলোর দেওয়ালে দৃশ্যমান ট্যাংক, কামানের গোলা আর বুলেটের ক্ষত যেন কৌতুহলী দর্শকদের প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে গৃহযুদ্ধের বিভিষীকাকে।
তবে এই ক্ষত আর ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি নগরবাসীকে শুধু বেদনাহতই করে না বরং করে তোলে উদ্দীপ্ত। মাসের পর মাস তার অবরোধের বিরুদ্ধে লড়েছে। অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, তবুও শহর ছেড়ে যায়নি তারা। তাই এই ভবনগুলো হয়ে উঠেছে বসনিয়াবাসীর প্রেরণার উৎস। তাদের মনোবলের প্রতীক।
২০ বছর আগের এদিন সভ্যতার লালনভূমি হিসেবে আত্মগৌরবে মহীয়ান ইউরোপের কেন্দ্রেই শুরু হয় ইতিহাসের কুখ্যাত পরিকল্পিত জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। বিগত শতাব্দীর ’৯০ দশকের গোড়াতে শুরু হয়ে মধ্য ’৯০ পর্যন্ত চলা সেই যুদ্ধে নিহত হয় লক্ষাধিক বসনীয়। এদের অধিকাংশই নিরীহ বেসামরিক নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ।
একের পর এক গণহত্যার ন্যক্কারজনক নজির গড়া এ যুদ্ধের ২০তম বার্ষিকী তাই গভীর শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পালন করলো বসনিয়াবাসী।
আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বেদনাময় বসনিয়া গণহত্যা শুরু হয় ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল। এ দিনই নরপিপাসু সার্বরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বসনীয় নারী, শিশু, বৃদ্ধের ওপর। নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ।লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে বৃদ্ধ আর শিশুদের।অত্যাচারের থাবা পৌঁছে যায় কবরে শায়িতার নিথর শরীরেও।
দিবসটি স্মরণে শুক্রবার হাজারো জনতা জড়ো হয় নগরীর প্রধান সড়ক মার্শাল টিটো অ্যাভিনিউয়ে। এ দিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম লক্ষণীয় দিক ছিলো- একটি ক্ষুদ্র অর্কেস্ট্রা দলের সঙ্গীত পরিবেশনা। অবরোধের সেই রক্তাক্ত সময়ে গাথা ১৪টি কম্পোজিশন পরিবেশন করে তারা।
অনুষ্ঠানে ‘তোমরা কেন এখানে নেই?’ শিরোনামের গানটি উৎসর্গ করা হয় অ্যাভ্যুনিউয়ে সারি দিয়ে রাখা ১১ হাজার ৫৪১টি শূন্য চেয়ারের উদ্দেশ্যে। এক একটি চেয়ার যেন হারিয়ে যাওয়া এক জন মানুষের প্রতীক, যারা হারিয়ে গেছে ’৯২-৯৫’র গৃহযুদ্ধের সময়।
কিছু চেয়ারের ওপর মানুষ সাজিয়ে রাখলো কিছু তুষার শুভ্র সাদা গোলাপ। হাজারো চেয়ারের ভিড়ে কিছু ছোট ছোট চেয়ারও রাখা ছিলো সেখানে। সেখানে গোলাপ নয়, বরং রাখা হলো শিশুদের খেলনা, টেডি বিয়ার আর স্কুলের বই খাতা। বড় চেয়ারের ভিড়ে ছোট চেয়ারের সারি বুঝতে তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারোই, সেদিনতো সার্ব পশুদের হাতে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশুরাও। হাজার হাজার শিশুকেও হত্যা করা হয়েছিলো নির্বিচারে।
যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া নগরীর বর্ষীয়ান বাসিন্দা হাজিমা হাডজোভিক বললেন, ‘এ চেয়ারগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়- কি বিভীষিকাময় সময় আমরা কাটিয়েছি এখানে।
‘আমি এসেছি যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া আমার বন্ধুদের স্মরণ করতে। যুদ্ধে আমি এত বেশি বন্ধু হারিয়েছি যে তাদের সবার নামও এক সঙ্গে আর মনে পড়ছে না।’- জানালেন ৫৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দু’টায় পুরো নগরী যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। বেলা দু’টো থেকে এক ঘণ্টার জন্য সব কাজ থেকে বিরত থেকে যুদ্ধ শুরুর বিভিষীকাময় মুহূর্তকে স্মরণ করে সারায়েভোবাসী।
৪৪ মাস ধরে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়ার মদতপুষ্ট বসনীয় সার্বদের হাতে অবরোধের শিকার হয় নগরবাসী। এ সময়ে শহরের বেসামরিক এলাকায় নিত্য গোলাবর্ষণ আর পাহাড়ের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সার্ব স্নাইপারদের গুলিতে পথ চলতি লোকের মৃত্যু ছিলো নিত্য ঘটনা। এ অবরোধ ছিলো আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অবরোধ।
নগরীর অনেক যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবনকে ঠিক ওই রকমই রেখে দেওয়া হয়েছে, যেমন ছিলো যুদ্ধের সময়। এতগুলো বছর পার হয়ে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত অবয়ব ঠিকই ধরে রাখা হয়েছে ভবনগুলোতে। ভবনগুলোর দেওয়ালে দৃশ্যমান ট্যাংক, কামানের গোলা আর বুলেটের ক্ষত যেন কৌতুহলী দর্শকদের প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে গৃহযুদ্ধের বিভিষীকাকে।
তবে এই ক্ষত আর ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি নগরবাসীকে শুধু বেদনাহতই করে না বরং করে তোলে উদ্দীপ্ত। মাসের পর মাস তার অবরোধের বিরুদ্ধে লড়েছে। অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, তবুও শহর ছেড়ে যায়নি তারা। তাই এই ভবনগুলো হয়ে উঠেছে বসনিয়াবাসীর প্রেরণার উৎস। তাদের মনোবলের প্রতীক।
No comments