অবরোধের নামে জনদুর্ভোগ নয়-অচল ঢাকা

ঢাকা মহানগরে যেখানে নিত্য যানজট লেগে থাকে, সেখানে কোনো কারণে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকলে কী অসহনীয় পরিস্থিতি হয়, তার প্রমাণ নগরবাসী পেয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করার পর কোনো উন্নয়নকাজ না হলেও ওই দিন জনদুর্ভোগের প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গিয়েছিল নগরের দুই অংশেই।


ঢাকার উত্তর অংশের মহাখালীর করাইল বস্তি উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে বাসিন্দারা সেদিন সকাল আটটা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাখালী-গুলশান ও বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে রাখে। অন্যদিকে সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ এলাকায় তিন ঘণ্টা ধরে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
দুটি এলাকাই মহানগরের পরিবহনব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃহস্পতিবার ছিল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস এবং এইচএসসি পরীক্ষা চলছিল। সে ক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রী তো বটেই, পরীক্ষার্থীদেরও অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা ধরে মহানগর হয়ে পড়ে অচল।
যেকোনো অজুহাতে মহানগরের সড়ক অবরোধ কিংবা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কয়েক দিন আগে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরেও সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। এগুলো কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। আর সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও খেয়াল রাখতে হবে, তাদের গৃহীত ব্যবস্থা যাতে হিতে বিপরীত হয়ে না দাঁড়ায়। সরকারি জায়গায় অবৈধ বস্তি গড়ে উঠেছে, এই অজুহাতে সেখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করেছে সরকার। কিন্তু সেই কাজটি কি আলোচনার মাধ্যমে করা যেত না? যারা সেখানে ৮-১০ বছর বাস করছে, তাদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করে এভাবে উচ্ছেদ করা যায় না। আন্দোলনের মুখে সরকার আর উচ্ছেদ করা হবে না বলে যে হুকুম জারি করছে, সেটি আগে করলে হয়তো সড়ক অবরোধের প্রয়োজন হতো না, লাখ লাখ মানুষকেও এভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। এই মহানগরে বহু সরকারি জমি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। আইন সবার জন্যই সমান হতে হবে।
সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরাও সংহতি জানাই। এই দেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের গাফিলতি থাকলে তাঁদের শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে সবাইকে এও খেয়াল রাখতে হবে যে, একটি ন্যায়সংগত প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে যাতে জনগণের দুর্ভোগ না হয়।
ক্রমশ জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ এই মহানগরকে সচল রাখার দায়িত্ব সবার। আশা করি, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও নাগরিকেরা সজাগ থাকবে। কোনো অজুহাতেই জনগণের চলাচলের পথ বন্ধ করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.