পবিত্র কোরআনের আলো-অনিবার্য জেনেও যারা যুদ্ধকে ভয় পায়, তাদের প্রতি তিরস্কার
৭৬. আল্লাযীনা আমানূ ইউক্বাতিলূনা ফী সাবীলিল্লাহি; ওয়াল্লাযীনা কাফারূ ইউক্বাতিলূনা ফী সাবীলিত্ব ত্বগূতি ফাক্বাতিলূ আওলিইয়াআশ শাইত্বানি; ইন্না কাইদাশ শাইত্বানি কানা দ্বা'য়ীফা। ৭৭. আলাম তারা ইলাল্লাযীনা ক্বীলা লাহুম কুফ্ফূ আইদিয়াকুম ওয়া আক্বীমূস সালাতা ওয়া আতুয যাকাতা; ফালাম্মা কুতিবা 'আলাইহিমুল কি্বতালু ইযা
ফারীক্বুম মিন্হুম ইয়াখ্শাওনান্নাসা কাখাশ্ইয়াতিল্লাহি আও আশাদ্দা খাশ্ইয়াহ; ওয়া ক্বালূ রাব্বানা লিমা কাতাব্তা 'আলাইনাল কি্বতাল; লাও লা আখ্খার্তানা ইলা আজালিন ক্বারীব; ক্বুল মাতা'উদ্ দুন্ইয়া ক্বালীলুন; ওয়াল আখিরাতু খাইরুল লিমানিত্তাক্বা; ওয়া লা-তুজ্লামূনা ফাতীলা। [সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ৭৬-৭৭]
অনুবাদ
৭৬. যারা ইমান এনেছে, তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে। আর যারা অবাধ্য হয়েছে, তারা যুদ্ধ করে তাগুতের (মিথ্যা উপাস্য) পথে। অতঃপর তোমরা যুদ্ধ করো শয়তান এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। অবশ্যই শয়তানের ষড়যন্ত্র খুবই দুর্বল।
৭৭. (হে নবী) আপনি কি এদের লক্ষ করে দেখেননি, তাদের আগে যখন বলা হয়েছিল_শান্ত হও, হাত গুটিয়ে রাখো, নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও, তখন তারা জিহাদের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিল। অথচ যখন তাদের ওপর জিহাদের হুকুম নাজিল করা হলো, তখন তাদের একদল তো প্রতিপক্ষের লোকদের এমনভাবে ভয় করতে শুরু করল, যে ধরনের ভয় শুধু আল্লাহকেই করা উচিত। অথবা তারা এর চেয়েও বেশি ভয় করতে লাগল। তারা বলতে শুরু করল, হে প্রতিপালক, তুমি আমাদের ওপর যুদ্ধের হুকুম জারি করলে কেন? কত ভালো হতো, যদি তুমি আমাদের এ থেকে রেহাই দিতে! আপনি বলুন, দুনিয়ার এসব ভোগ্যসামগ্রী অত্যন্ত সামান্য। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ, তার জন্য পরকাল অতি উত্তম। আর তখন তোমাদের ওপর বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হবে না।
ব্যাখ্যা
৭৬ নম্বর আয়াতে জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের দুটি পক্ষের পরিচয় স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে। এর একটি পক্ষ হচ্ছে ইমানদারদের, অন্যটি কাফিরদের। ইমানদার পক্ষ আল্লাহ তথা সত্য ও ন্যায়ের পথে লড়াই করে, আর কাফিরদের পক্ষ যুদ্ধ করে মিথ্যা উপাস্যের পক্ষে। কাফিরদের পথ হচ্ছে শয়তান বা তার সাঙ্গোপাঙ্গদের পথ। সেই পথ বিভ্রান্তি ও অসত্যের। সত্যের পথ আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় চরিত্রের। আর শয়তানের পথ খুবই ভঙ্গুর ও দুর্বল। পৃথিবীতে সত্য, সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিভ্রান্তি, অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা সবার কর্তব্য। এ যুদ্ধ আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে বা মুসলমানদের পক্ষ থেকে সূচিত হয়নি, এটা সূচিত হয়েছে কাফেরদের পক্ষ থেকে। মুসলমানদের ওপর এ যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া। মুসলমানদের যুদ্ধ করতে হয়েছে অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনে।
৭৭ নম্বর আয়াতে যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্বলচিত্তের মানুষের আত্মদ্বন্দ্বের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করা সহজ; কিন্তু যুদ্ধ করা তার চেয়েও খানিকটা কঠিন। বিশেষ করে দুর্বলচিত্তের মানুষের জন্য। আয়াতটির শানে নুজুল এ রকম : মক্কার কুরাইশরা হিজরতের আগে ও পরে মুসলমানদের ওপর যে নিপীড়ন করেছে, তার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মুসলমানরা জিহাদে নামার অনুমতি চাইতেন রাসুল (সা.)-এর কাছে। রাসুল (সা.) তাঁদের বলতেন, ধৈর্য ধরো, এখনো যুদ্ধের সময় হয়নি, অনুমতি আসেনি। হিজরতের পর যখন জিহাদের আদেশ দেওয়া হলো, তখন কারো কারো মধ্যে যুদ্ধের প্রতি অনীহা দেখা গেল। অনেকে মৃত্যুভয়ে ভীত হলেন, কেউ কেউ প্রতিপক্ষের লোকদের ভয় করতে লাগলেন। এ আয়াতে এসব ভীরু ও দোদুল্যমান ব্যক্তিকে তিরস্কার করা হয়েছে। যারা প্রাণের ভয়ে যুদ্ধ থেকে রেহাই চায়, তাদের উদ্দেশ করে এখানে বলা হচ্ছে, জাগতিক ভোগবিলাসের তুলনায় জিহাদের গুরুত্ব ও মহিমা অনেক উঁচু স্তরের। নিজের জীবন তুচ্ছ করে পৃথিবীতে ইসলাম ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ যাঁরা করবেন, তাঁদের মর্যাদা হবে অনেক ওপরে। ইহজগতের ভোগবিলাসের মোহে যারা সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে দূরে সরে গিয়ে নিরাপদে থাকতে চায় তারা দুর্বল ইমানের লোক। তারা খুব তুচ্ছ জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট। জীবনের প্রকৃত মহত্ত্ব ও সার্থকতা তারা বুঝতে পারে না। এ আয়াতে তাদের চৈতন্য দানের চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ
৭৬. যারা ইমান এনেছে, তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে। আর যারা অবাধ্য হয়েছে, তারা যুদ্ধ করে তাগুতের (মিথ্যা উপাস্য) পথে। অতঃপর তোমরা যুদ্ধ করো শয়তান এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। অবশ্যই শয়তানের ষড়যন্ত্র খুবই দুর্বল।
৭৭. (হে নবী) আপনি কি এদের লক্ষ করে দেখেননি, তাদের আগে যখন বলা হয়েছিল_শান্ত হও, হাত গুটিয়ে রাখো, নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও, তখন তারা জিহাদের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিল। অথচ যখন তাদের ওপর জিহাদের হুকুম নাজিল করা হলো, তখন তাদের একদল তো প্রতিপক্ষের লোকদের এমনভাবে ভয় করতে শুরু করল, যে ধরনের ভয় শুধু আল্লাহকেই করা উচিত। অথবা তারা এর চেয়েও বেশি ভয় করতে লাগল। তারা বলতে শুরু করল, হে প্রতিপালক, তুমি আমাদের ওপর যুদ্ধের হুকুম জারি করলে কেন? কত ভালো হতো, যদি তুমি আমাদের এ থেকে রেহাই দিতে! আপনি বলুন, দুনিয়ার এসব ভোগ্যসামগ্রী অত্যন্ত সামান্য। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ, তার জন্য পরকাল অতি উত্তম। আর তখন তোমাদের ওপর বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হবে না।
ব্যাখ্যা
৭৬ নম্বর আয়াতে জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের দুটি পক্ষের পরিচয় স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে। এর একটি পক্ষ হচ্ছে ইমানদারদের, অন্যটি কাফিরদের। ইমানদার পক্ষ আল্লাহ তথা সত্য ও ন্যায়ের পথে লড়াই করে, আর কাফিরদের পক্ষ যুদ্ধ করে মিথ্যা উপাস্যের পক্ষে। কাফিরদের পথ হচ্ছে শয়তান বা তার সাঙ্গোপাঙ্গদের পথ। সেই পথ বিভ্রান্তি ও অসত্যের। সত্যের পথ আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় চরিত্রের। আর শয়তানের পথ খুবই ভঙ্গুর ও দুর্বল। পৃথিবীতে সত্য, সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিভ্রান্তি, অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা সবার কর্তব্য। এ যুদ্ধ আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে বা মুসলমানদের পক্ষ থেকে সূচিত হয়নি, এটা সূচিত হয়েছে কাফেরদের পক্ষ থেকে। মুসলমানদের ওপর এ যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া। মুসলমানদের যুদ্ধ করতে হয়েছে অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনে।
৭৭ নম্বর আয়াতে যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্বলচিত্তের মানুষের আত্মদ্বন্দ্বের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করা সহজ; কিন্তু যুদ্ধ করা তার চেয়েও খানিকটা কঠিন। বিশেষ করে দুর্বলচিত্তের মানুষের জন্য। আয়াতটির শানে নুজুল এ রকম : মক্কার কুরাইশরা হিজরতের আগে ও পরে মুসলমানদের ওপর যে নিপীড়ন করেছে, তার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মুসলমানরা জিহাদে নামার অনুমতি চাইতেন রাসুল (সা.)-এর কাছে। রাসুল (সা.) তাঁদের বলতেন, ধৈর্য ধরো, এখনো যুদ্ধের সময় হয়নি, অনুমতি আসেনি। হিজরতের পর যখন জিহাদের আদেশ দেওয়া হলো, তখন কারো কারো মধ্যে যুদ্ধের প্রতি অনীহা দেখা গেল। অনেকে মৃত্যুভয়ে ভীত হলেন, কেউ কেউ প্রতিপক্ষের লোকদের ভয় করতে লাগলেন। এ আয়াতে এসব ভীরু ও দোদুল্যমান ব্যক্তিকে তিরস্কার করা হয়েছে। যারা প্রাণের ভয়ে যুদ্ধ থেকে রেহাই চায়, তাদের উদ্দেশ করে এখানে বলা হচ্ছে, জাগতিক ভোগবিলাসের তুলনায় জিহাদের গুরুত্ব ও মহিমা অনেক উঁচু স্তরের। নিজের জীবন তুচ্ছ করে পৃথিবীতে ইসলাম ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ যাঁরা করবেন, তাঁদের মর্যাদা হবে অনেক ওপরে। ইহজগতের ভোগবিলাসের মোহে যারা সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে দূরে সরে গিয়ে নিরাপদে থাকতে চায় তারা দুর্বল ইমানের লোক। তারা খুব তুচ্ছ জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট। জীবনের প্রকৃত মহত্ত্ব ও সার্থকতা তারা বুঝতে পারে না। এ আয়াতে তাদের চৈতন্য দানের চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments