হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে-শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি

শেয়ারবাজারে কী ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছেন, এ সম্পর্কে দেশবাসী শেষ পর্যন্ত কিছু বিষয় জানতে পেল। শেয়ারবাজারে অনিয়ম তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত বৃহস্পতিবার তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনসূত্রে এবং অর্থমন্ত্রী ও তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বরাত দিয়ে দেশে সংবাদমাধ্যম বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।


যেমন, নানা কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। বিদেশে পাচার হয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও প্রতিবেদনে এসেছে, যাঁরা এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তদন্ত কমিটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, শেয়ারবাজারে অনৈতিক কাজ ও কারসাজির জন্য বিভিন্ন কোম্পানি, সম্পদ মূল্যায়নকারী সংস্থা, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডিলার-ব্রোকার ও ইস্যু ব্যবস্থাপকেরা দায়ী। তবে সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি দায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদও সাংবাদিকদের বলেছেন, এসইসির গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটেছে। লক্ষণীয় বিষয়, শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোক যেমন আছেন, তেমনই আছেন বিরোধী দলেরও। তাঁদের মাধ্যমেই মূল কারসাজিগুলো ঘটেছে। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির অকার্যকারিতাও কি তাঁদের কারণে সৃষ্ট?
অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদন থেকে কারসাজির হোতা ব্যক্তিদের নামগুলো বাদ না দিয়ে সেটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চান না; এর পক্ষে তাঁর কী যুক্তি রয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে কিছু নাম সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম এবারের প্রতিবেদনেও আছে। আরও যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম আছে, তাঁদের রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি প্রবল। আর্থিক জোর কারও কারও রাজনৈতিক প্রভাবের ঘাটতিকেও পূরণ করে নিতে পারে। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজারকে রক্ষা করতে হলে, বারবার এমন বিপর্যয়ের পথ বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক ও আর্থিক সকল প্রকার প্রভাব-প্রতিপত্তিকে নিষ্ফল করে দিয়ে কারসাজির হোতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে, বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ১৯৯৬ সালের অপরাধের বিচার করে দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দিলে আজকে শেয়ারবাজারে আবারও বিপর্যয় ঘটতে পারত না। শেয়ারবাজারের কারসাজির হোতাদের শাস্তি ব্যতিরেকে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ যত দিন অবারিত থাকবে, তত দিন শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়ার চেষ্টা চলতেই থাকবে।
তাই দুই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমটি হলো অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া, দ্বিতীয়টি হচ্ছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ঢেলে সাজানো। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ কথাই বলা হয়েছে এবং এসইসির পুনর্গঠনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেসব সুপারিশও কমিটি করেছে। এখন প্রয়োজন আন্তরিকতার সঙ্গে তৎপর হয়ে কাজে নামা।

No comments

Powered by Blogger.