আসামি দুই সহস্রাধিক-সংখ্যালঘুদের বাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিন মামলা

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায় দুটি গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে করা এসব মামলায় ৯৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উসকানিমূলক সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে স্থানীয় একটি দৈনিকের সংবাদদাতার বিরুদ্ধে একই সময়ে মামলা হয়েছে।


কালীগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আবদুল হাকিমের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং জিয়াদ আলী মীর ও তাঁর চার ছেলের বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক কে এম মোশারফ হোসেনসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। জিয়াদ আলী মীরের জামাতা হাবিবুর রহমান এ মামলা করেছেন।
ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মিতা রানী হাজরা ও লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডলের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা করেছেন কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াসিন আলম চৌধুরী। এ মামলায় জাতীয় পার্টির কর্মী ফতেপুর গ্রামের জুলফিকার আলীকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া চাকদাহ গ্রামের সাত সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে মামলা করেছেন কালীগঞ্জ থানার এসআই লস্কর জাহিদুল হক। এ মামলায় স্থানীয় শিবিরকর্মী মাসুম বিল্লাহসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
এসআই জাহিদুল হক জানান, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত ২৭ মার্চ ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঞ্চস্থ নাটকে মহানবী হজরত মুহামঞ্চদ (সা.)কে নিয়ে কটূক্তি-সম্পর্কিত ঘটনায় অতিরঞ্জিত করে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার কালীগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর সংবাদদাতা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক নীলকণ্ঠপুর গ্রামের খলিলুর রহমান এ মামলা করেছেন।
সহকারী পুলিশ সুপার (কালীগঞ্জ সার্কেল) নজরুল ইসলাম চারটি মামলার বিষয় নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলেছে।
সরেজমিন: গতকাল শুক্রবার ফতেপুর ও চাকদাহ গ্রামে গেলে অনেকেই আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেন। চাকদাহ গ্রামে শ্যামাপদ সরদার বলেন, ‘আমি কল্পনায় আনতে পাচ্ছিনে, ওরা কেন আমাদের ওপর এমন নির্দয় হলো।’
ফতেপুর গ্রামের কৃষ্ণপদ মণ্ডল বলেন, ‘এ গ্রামের আমাদের সাত পুরুষের বসবাস। এমনভাবে ওরা আমাকে নিঃস্ব করে দিল।’
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় কালীগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঞ্চস্থ হয় প্রথিতযশা লেখক আবুল মনসুর আহমদের লেখা হুযুর কেবলা নাটকটি। নাটকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ২৯ মার্চ দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের আবু জাফর সাঁপুই বাদী হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজোয়ান হারুন, সহকারী প্রধান শিক্ষক মিতা রানী হাজরা ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনার জের ধরে ৩১ মার্চ ফতেপুর গ্রামে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের পাঁচটি বাড়িসহ ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের আরও ১৫-১৬টি বাড়িতে লুটপাট করা হয়। পরদিন ১ এপ্রিল ফতেপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চাকদাহ গ্রামের সাতটি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের পরিবারের বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর করে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এসব ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার অভিযোগে ৩ এপ্রিল সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ও কালীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ ফরিদউদ্দিনকে বদলি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.